টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপ-২১ প্রোফাইল: শরিফুল ইসলাম।

ডেস্ক নিউজ
  • প্রকাশিত সময় : রবিবার, ১৭ অক্টোবর, ২০২১
  • শেয়ার করুন

  • Facebook

বাংলাদেশ স্পিনারদের উর্বরভূমি। ক্রিকেটের শুরুর দিক থেকেই বাংলাদেশ দল স্পিন বোলিং নির্ভর দল ছিল। সেখান থেকে এখন বাংলাদেশ দলে স্পিনারদের সাথে পাল্লাদিয়ে পেস বোলারও তৈরী করছে। মাশরাফি-রাসেলদের অনুসরণ করে শুরু থেকেই পেস বোলিং প্রেকটিস করে ক্যারিয়ার আগানোর অনেক গল্প শুনেছি। তাদের সাথে এখন যোগ হয়েছে আরো একটি নাম মুস্তাফিজুর রহমান। তবে আজকে মুস্তাফিজুর রহমানকে নিয়ে কিছু বলতে চাচ্ছি না। মুস্তাফিজকে অনুসরণ করে আজ বাংলাদেশ দলে মুস্তাফিজের সাথে জুটি বেধে খেলে যাওয়া এক ক্রিকেটারের কথা বলবো।

আইডল? স্পোর্টসে সবার আগে একজন আইডল সেট করে নেওয়া অনেক গুরুত্বপূর্ণ। যাকে দেখে নিজের বোলিংয়ে উন্নতি করার অনুপ্রেরণা জাগবে। মুস্তাফিজুর রহমান! বাংলাদেশ ক্রিকেটে অনেক বড় একটি নাম। বাংলাদেশ দলের বোলিং ডিপার্টমেন্টের প্রধান অস্ত্র বলা চলে। সেই মুস্তাফিজুর রহমানকে অনুসরণ করে ক্রিকেট ক্যারিয়ার শুরু করা একজন শরিফুল ইসলাম। ২০১৫ সালে ভারতের বিপক্ষে নিজের অভিষেক সিরিজেই ৩ ম্যাচে ১৩ উইকেট নিয়ে প্লেয়ার অফ দ্যা সিরিজ। ২০১৫ সালে নিজের এলাকার মউমারি বাজারে গিয়ে মুস্তাফিজুর রহমানের বোলিং দেখেন শরিফুল। সেদিন থেকেই মুস্তাফিজুর রহমানের ফ্যান হয়ে উঠেন শরিফুল। স্বপ্ন দেখেন জাতীয় দলে মুস্তাফিজুর রহমানের সাথে জুটি বেধে বোলিং করার। আজ সেই স্বপ্ন পূরন হয়েছে শরিফুলের।

জন্মবৃত্তান্ত:- শরিফুলের জন্ম ২০০১ সালের ৩রা জুন পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার দণ্ডপাল ইউনিয়নের মৌমারী গ্রামে। বাঁহাতি পেসার শরিফুল ইসলামের জীবনেরই একটি অংশ যেন কবি নজরুলের অমর পঙ্‌ক্তিখানায় ফুটে উঠেছে, ‘হে দারিদ্র্য, তুমি মোরে করেছ মহান। তুমি মোরে দানিয়াছ খ্রীস্টের সম্মান/ কণ্টক-মুকুট শোভা’। বাবা দুলাল মিয়া পেশায় ছিলেন একজন ভূমিহীন কৃষক। মা বুলবুলি বেগম পেশায় গৃহিণী। গ্রামে মাত্র ১৯ শতক জমি সেখানেই তাদের আশ্রয়। নিজ গ্রামে অভাবের কারণে সংসার চলছিল না বলে পরিবার নিয়ে শরিফুলের বাবা পাড়ি জমান সাভারে। সেখানে রিকশা চালিয়ে পরিবারের মুখে খাবার যোগাতেন শরিফুলের বাবা। কিছুদিন পর আর্থিক অবস্থার উন্নতি ঘটায় আবারো নিজ গ্রামে ফিরে আসেন শরিফুলের বাবা। সেখানেই বড় হোন শরিফুল।

পড়াশোনা:- সাভারের একটি সরকারি বিদ্যালয় থেকে পাঠশালা পাশ করেন শরিফুল। সাভার থেকে নিজ গ্রামে যখন ফিরেন তখন তিনি সপ্তম শ্রেনীর ছাত্র। সাভার থেকে ফেরার পর গ্রামের পাশে কালীগঞ্জ এসপি উচ্চবিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেনীতে ভর্তি করানো হয় শরিফুলকে। সেখানে পড়াশোনা ফাঁকি দিয়ে শরিফুল চলে যেতেন ক্রিকেট মাঠে। অর্থের অভাবে ব্যাট/বল কেনার সামর্থ্য না থাকায় নিজের বন্ধুদের ব্যাট/বল নিয়ে খেলতেন শরিফুল।

আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার বিশ্লেষণ (টি-টোয়েন্টি):-

শরিফুলের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের যাত্রা শুরু হয়েছিল টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট দিয়ে। এরপর টেস্ট এবং ওয়ানডেতেও দেশের পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ হয়েছে তার। তবে এখনো পর্যন্ত টি-টোয়েন্টিতেই তিনি বেশী সফল।

শরিফুল ইসলাম লাল-সবুজের জার্সিতে ১১টি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলে ১৭টি উইকেট নিয়েছেন। বোলিং ইকোনমি ৭.৯৭, বেষ্ট বোলিং ৩/৩৩।

প্রতিপক্ষের বিপক্ষে শরিফুলের পারফরম্যান্সঃ-

অস্ট্রেলিয়া- ৪ ম্যাচে ৭ উইকেট, ইকোনমি ৬.৩৮ & বেষ্ট বোলিং ২/১৯।

নিউজিল্যান্ড- ৪ ম্যাচে ৪ উইকেট, ইকোনমি ১০.৩৮ & বেষ্ট বোলিং ২/৪৮।

জিম্বাবুয়েঃ- ৩ ম্যাচে ৬ উইকেট, ইকোনমি ৭.০০ & বেষ্ট বোলিং ৩/৩৩।

বিভিন্ন দেশের মাটিতে শরিফুলের পারফরম্যান্সঃ-

বাংলাদেশ- ৫ ম্যাচে ৯ উইকেট, ইকোনমি ৭.৭০ & বেষ্ট বোলিং ২/১৯।

নিউজিল্যান্ড- ৩ ম্যাচে ২ উইকেট, ইকোনমি ৯.৬৬ & বেষ্ট বোলিং ১/১৬।

জিম্বাবুয়ে- ৩ ম্যাচে ৬ উইকেট, ইকোনমি ৭.০০ & বেষ্ট বোলিং ৩/৩৩।

এখনো পর্যন্ত শরিফুল দুইজন অধিনায়কের অধিনে খেলেছেন। অধিনায়কের অধিনে শরিফুলের পারফরম্যান্সঃ-

লিটন দাসঃ- ১ ম্যাচে ১ উইকেট, ইকোনমি ১০.৫০ & বোলিং ফিগার ১/২১।

মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ- ১০ ম্যাচে ১৬ উইকেট, ইকোনমি ৭.৮২ & বোলিং ফিগার ৩/৩৩।

শরিফুল। বাংলাদেশ ক্রিকেটের নতুন সূর্য। এখনো পর্যন্ত নিজেকে বেশ ভালো ভাবেই প্রমান করেছেন শরিফুল। মুস্তাফিজের সাথে জুটি বেধে গড়ের মাঠে অস্ট্রেলিয়া সিরিজে নিজেকে দারুণ ভাবে মেলে ধরেছিলেন শরিফুল। মিরপুরে মুস্তাফিজ-শরিফুলের যুগলবন্দী বেশ উপভোগ্য ছিল বলাই চলে। বয়স সবেমাত্র বিশ হলেও ক্রিকেট মাঠে তার আগ্রাসন দেখে কেউ এক মুহুর্তের জন্যও ভাবতে পারবে না এই ছেলের বয়স বিশ/একুশ।

বিশ্বকাপে শরিফুলের উপর প্রত্যাশা? শরিফুল এখনো ২০ বছরের তরুন ক্রিকেটার। এবারের বিশ্বকাপটা শরিফুলের প্রথম আন্তর্জাতিক বিশ্বকাপ। প্রথম বিশ্বকাপেই শরিফুলের মতো তরুনের থেকে আপাতত অতিরিক্ত প্রত্যাশা করার মতো কিছু নেই। যেহেতু ওমান/দুবাইয়ে তিনজন পেসার খেলানোর সম্ভাবনা সেহেতু মুস্তাফিজ, সাইফউদ্দিনের সাথে তৃতীয় পেসার হবেন তাসকিন অথবা শরিফুল। শরিফুল যদি তৃতীয় পেসার হিসেবে মুল একাদশে সুযোগ পান তাহলে প্রত্যাশা একটাই শুধু প্রতিপক্ষের রান আটকে রাখা। এইটুকু বয়সে সবসময় উইকেট নেওয়ার মতো প্রত্যাশা শরিফুল থেকে করতে পারিনা। যাইহোক, প্রত্যাশার চাপকে পিছনে ফেলে নিজের প্রথম বিশ্বকাপে শরিফুল খেলুক নিজের মতো করে।

 

মন্তব্য করুন

এই বিভাগের আরো খবর