টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপ-২১ প্রোফাইল : মুস্তাফিজুর রহমান

ডেস্ক নিউজ
  • প্রকাশিত সময় : রবিবার, ১৭ অক্টোবর, ২০২১
  • শেয়ার করুন

  • Facebook

কিউরিয়াস কেস অফ মুস্তাফিজুর রহমান
MUSTA IS NEVER COMI’NG BACK…………!

“I’m gonna make him an offer he can’t refuse- Don Vito Corleone.’

ছিপছিপে শরিরের মুস্তাফিজ ব্যাটারদের দারুণ দারুণ সব স্লোয়ার বলের অফার দিতেন। সাথে ফ্রি তে থাকতো কাটার। বিষয়টা ব্যাপক সৌন্দর্য এর। ব্যাটাররাও সেই অফার হাতছাড়া করতেন না। করতে চাইতেন মাঠছাড়া আর তাতেই বাঁধতো বিপত্তি। হয়তো মিসটাইমিং হয়ে বোল্ড কিংবা এজড হয়ে ক্যাচ আউট। এমন লোভনীয় অফারেও যদি কেউ কিছু করতে না পারে সে বাপু রীতিমতো হতাশার৷ বেচারা আন্দ্রে রাসেল কত সালের আইপিএলে জানি মুস্তাফিজের ইয়র্কার মোকাবেলা করতে গিয়ে স্ট্যাম্প ভেঙে মাটিকে চুমু খেয়ে প্যাভিলিয়নের পথে হাঁটলেন। বিষয়টা এই টি২০ মাস্টারের জন্য ভিষণ লজ্জাজনক। এই হ্যাংলা পাতলা ছেলেটা ২০১৫ সালে ভারতকে একাই যে নাকানিচুবানিটা খাইয়েছে তা দাদাবাবুদের জন্য ভীষণ কষ্টদায়ক ছিলো। আর মুস্তাফিজ এর কপালই বটে; এপ্রিলের ২৪ তারিখ শচিন টেন্ডুলকার আর আমার জন্মদিনের দিন পাকিস্তানের বিপক্ষে টি২০ অভিষেকে এসেই আউট করে দিলো সবার প্রিয় শহীদ আফ্রিদিকে। ব্যাপারটা মেনে নেয়া আসলেই কষ্টকর।

এই ভদ্রলোক নাকি কাটার মাস্টার! ভারতের বিপক্ষে সবেমাত্র অভিষেক ম্যাচে নামলেন তিনি। যেহেতু প্রথম ম্যাচ কোনো রকম প্রি প্ল্যানিং ছাড়াই নামলেন দাদাবাবুরা। হয়তো ভেবেছিলো এই উপমহাদেশীয় উইকেটে কিই বা করতে পারবে!!!!! ধরাটা খেলো এখানেই ; তাও আবার রোহিত শর্মা। লেগ স্ট্যাম্পের ফুল লেংথ বল খেলতে গিয়ে হলো লিডিং এজ। বেচারা গুটি গুটি পায়ে এগুচ্ছিলো সেঞ্চুরির দিকে কিন্তু তা হতে দিলো মুস্তাফিজ। বড্ড নিরামিষ এই ছেলেটা। যেমনটা সে কোনো এক টিভি চ্যানেলের ইন্টারভিউ এর সময় ইন্টারভিয়ারকে বলে ছিলেন, “এ আমাকে দিয়ে হবেনা; আমি পারবোনা।” দাদাবাবুরা আসলেই পারেননি মুস্তাকে খেলতে। পুরো সিরিজ জুড়ে নাকানিচুবানি খাইয়েছে এই ছেলেটা।

ইউ ক্যান নট প্লে মুস্তাফিজ বিকজ —
১. পেসার মানে আমরা বুঝি গতি এবং সুইংয়ের একটা সুন্দর মিশেল। আউট সুইং, ইনসুইং ইত্যাদি। বাতাসে বল সুইং হয় কিন্তু পিচে ফেলার পর বল ঘোরানোর সিস্টেমটাই হলো কাটার। এক এক কাটারের জন্য এক এক রকমের বলের গ্রিপ ধরের বোলাররা। আবার বলের সিম স্ট্রেইট রেখে পিচে ফেলে বল ঘুরানোও এক প্রকারের কাটার। ঘাষযুক্ত কোমল পিচে যখন কোনো বোলার কাটার ছুঁড়ে আর সেটি যদি একদম নিঁখুত হয় তাহলেই হলো৷

২. কাটার আর স্লোয়ারের প্রেমঃ এই একজিনিস ক্রিকেট ইতিহাসের এক দূর্লভ বিষয় হলো যখন কোনো পেসার একই সাথে কাটার আর স্লোয়ার বল করে। এন্ড মুস্তা ইজ ওয়ান অফ দিস বিউটি। ব্যাটার সাহেব যখন ভাবাবার কথা বল পিচে পড়ে স্ট্যাম্পে ঢুকবে নাকি বাহিরে যাবে তার আগে তাকে ভাবা লাগে বলের গতি নিয়ে। বল পিচে পড়ে সুইং করবে তা না বল আসতেই দেরি করতেসে। নিষ্ঠুর এই বল। বোলারেরই কষ্ট এতে। দূর থেকে দৌড়ে এসে করতে হচ্ছে স্পিন বল। মুস্তার স্লো-কাটার আর স্টক ডেলিভারি এর বল গ্রিপিং কাইন্ড অফ সিমিলার। কখন কোনটা করতেসে সেটা বুঝার জন্য অপেক্ষা করা লাগে বল রিলিজ হওয়া পর্যন্ত আর ততক্ষণে কিচ্ছু করার থাকেনা।

৩. মুস্তাফিজ কি রিস্ট স্পিনারঃ? এই লোক এমন এক অদ্ভুত বোলার যিনি কিনা রিস্টের উলটা দিক দিয়ে কাটার করান এবং শেষ দিকে একটা ঝাঁকি খায় কবজি। এই ক্ষমতা কাইন্ডফ গড গিফটেড তার জন্য। তিনি নিজেও জানেন না কিভাবে এইটা হয়। এই কারণে ব্যাটারদের কিচ্ছু করার থাকেনা।

৪. এই লোক স্টক ডেলিভারিও করেন গ্রিপ ধরে। কোনটা কাটার আর কোনটা স্টক বুঝাও যায় না। আবার খাড়া সিমেও করে আবার সিম স্ক্র‍্যাম্বলড ভাবেও করে। ব্যাটসম্যান শট খেলতে গিয়ে আগে মেরে বসেন নাইলে আবার ওয়েট করতে করতে এজড হয়ে যায়। যা তা অবস্থা। ব্যাটার দেখতেসে বোলার খুব জোরে দৌড়ে আসতেসে, এরপর ১৪০ এ বল করা বোলার বল করলেন ১২৫ এর স্লোয়ার আবার সেই স্লোয়ার নামলো ১১০ এ। বেচারা ব্যাটারের কান্না করা ছাড়া কি উপায় আর বলেন!!!

আচ্ছা এনামুল হক বিজয় লাস্ট কবে জাতীয় দলে খেলেছেন? মনে আছে কিছু? আমার আসলেই মনে নেই। তবে মজার বিষয় এই এনামুলই কিন্তু মুস্তাফিজ এর কাটারের প্রথম শিকার। সেদিন শেরে বাংলায় নেট বোলিংয়ে এনামুল মুস্তাকে বললো,”কিরে স্লোয়ার করতে পারিস না!?” এরপর সেইখানেই মুস্তা কাটার করলো আর এনামুল প্রথম বলেই আউট। এক বার না বার বারই আউট করেছিলেন সেদিন।

২০১৫ থেকে ২০২১ঃ কল্পনাতীত শুরু; মাঝখানে ইঞ্জুরির ছোবল এখন আবার সেই পুরোনো ভয়ঙ্কর রুপ। আমরা এখন তার কিছু ক্যারিয়ার স্ট্যাটস দেখবো। যেহেতু সামনে টি২০ বিশ্বকাপ সেহেতু সেটি নিয়েই একটু কথা বলি।

২০১৫-২০২১ পর্যন্ত তার টোটাল বোলিং স্ট্যাটসঃ
ম্যাচ-৫২
ইনিংস-৫২
ওভারস – ১৮৯.৩
উইকেটস – ৭৬
বেস্ট – ৫/২২

মুস্তাফিজ এর অভিষেকের কাছাকাছি সময়ে অভিষিক্ত দুইজন ডেডলি বোলার হলেন কাগিসো রাবাদা এবং জাসপ্রিত বুমরাহ। সো তাদের ২০১৫-২০২১ এর মাঝের একটু বোলিং স্ট্যাটস দেখে নেই।
জাসপ্রিত বুমরাহ(২০১৬-২০২০)ঃ
ম্যাচঃ ৫০
ইনিংসঃ ৪৯
ওভারসঃ ১৭৯.১
উইকেটসঃ ৫৯
বেস্টঃ ৩/১১

কাগিসো রাবাদা (২০১৪-২০২১)ঃ
ম্যাচঃ ৩৫
ইনিংসঃ ৩৫
ওভারসঃ ১২৬.১
উইকেটসঃ ৪১
বেস্টঃ ৩/৩০

এই পরিসংখ্যানের বিবেচনায় বাকি দুইজনের চেয়ে ঢের এগিয়ে মুস্তাফিজ। অভিষেকের পর দুইটা বছর ১০+ ম্যাচ করে খেলেছেন মুস্তা (২০১৮/২০২১)। আর এই দুই বছরে তার উইকেট শিকারের সংখ্যা যথাক্রমে ২১ আর ১৮। এর মাঝে ২০১৬ সালে ৮ ম্যাচ খেলে উইকেট নিয়েছেন ১৬টি।

স্ট্যাটস থেকে বের হই এবার!!! স্ট্যাটস তো সবসময় কথা বলে না৷ একটু ফিরি মুস্তার ছোট বেলায়।
সেই ছোটকাল থেকে বই খাতার বদলে ব্যাট বল নিয়ে পড়ে থাকতেন তিনি। বাবা মা জোর করে পড়তে বসাতে চাইতেন। সেজো ভাই মোখলেসুর রহমান আর মেঝো ভাই জাকির হোসেন এলাকায় টেপ টেনিসের ক্রিকেট খেলতেন। তখন নিয়ে যেতো তাকেও। কিন্তু ভদ্রলোকের বোলিংয়ের প্রতি ছিলোনা কোনো আগ্রহ। কোনো এক খেলায় বিপক্ষ দলের ব্যাটসম্যানকে যখন কেউ আউট করতে পারছিলো না কেউ তখন ভাই বল তুলে দেয় মুস্তার হাতে। বোলিংয়ে এসে আউট করে দেন সেই ব্যাটসম্যানকে। এরপর থেকে যাত্রা শুরু মুস্তার।

শেন ওয়ার্ন তার বোলিং রান আপের পুরোটা সময় আসতেন হেঁটে, তিনি নাকি সময় দিতেন ব্যাটারদের ভাবতে,” চিন্তা করো কি আসছে এবার”। আর এই কারণেই ম্যাক্সিমাম সময় শেন ওয়ার্ন হয়ে উঠতেন আন প্লেয়েবল। পেস বোলিং একটা শিল্প, যেটা গতি বাউন্সে নাকাল করে ব্যাটসম্যানকে। তবে মিডিয়াম পেসাররা একটু ভিন্ন, গতি কম তবে পরিকল্পনা তাদের মূল হাতিয়ার। আর মুস্তাও সেরকমই একজন। এবারের টি২০ বিশ্বকাপে কতটা ভয়ংকররুপে পাবো মুস্তাকে সেটাই দেখার বিষয়।

 

মন্তব্য করুন

এই বিভাগের আরো খবর