টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপ-২১ প্রোফাইল : নাসুম আহমেদ

ডেস্ক নিউজ
  • প্রকাশিত সময় : রবিবার, ১৭ অক্টোবর, ২০২১
  • শেয়ার করুন

  • Facebook

কিছুদিন আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটা স্ক্রিনশট খুব ভাইরাল হয়েছিলো। সেই স্ক্রিনশট অনুযায়ী পোস্টদাতার ভাষ্য ছিলো এমন – ২০১৫ সালের এইচপি ইউনিটের সবাই যখন ভালো ভালো জায়গায় খেলছেন তখন শুধু তিনি অনুশীলনই করে যাচ্ছেন। অবজ্ঞার শিকার হয়েছেন কাছের মানুষদের৷ অনেক বেশী বিষন্নতায় ডুবে ছিলেন তিনি।

পোস্টটা ছিলো বাংলাদেশ দলের বাঁ হাতি স্পিনার নাসুম আহমেদ এর। শুধুই কি তাই? হাওড়ের বাতাসে বড় হওয়া নিজ জেলা সুনামগঞ্জ এর জেলা ক্রিকেটে হয়ে আছেন বহিস্কৃত। অথচ তিনিই কিনা টি টোয়েন্টির বিশ্ব আসরে লাল সবুজের প্রতিনিধি। পরিশ্রম, অধ্যবসায়, চেষ্টা, হাল না ছাড়ার মনোভাব থাকলেই বোধহয় নাসুম হওয়া সম্ভব৷

জাতীয় দলের গ্ল্যামারে বদলে যাননি নাসুম৷ দিন কয়েক আগে মনোনীত হয়েছেন আইসিসি প্লেয়ার অব দ্য মান্থ এর সেরা তিনে। এর জবাবে এক ইন্টারভিউতে তার সহজ সরল স্বীকারোক্তি, তিনি এখনো বুঝেই উঠতে পারেননি জিনিসটি আসলে কি!

২০১১ তে প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষিক্ত হলেও খুব বেশী দিন আগেও খুব বেশী মানুষ তাকে চিনতেন না। সময়ের পরিক্রমায় তিনিই ভূমিকা রেখেছেন আমাদের টি টোয়েন্টি ইতিহাসের সেরা দুই সিরিজ জয়ে।

তবে গত বঙ্গবন্ধু টি টোয়েন্টি কাপে মাঠে মুশফিকের মেজাজ হারানোয় আলোচনায় আসেন। যতটা না বোলিং এর কারণে, বরং তার চেয়ে বেশী মুশফিকের আচরণের কারণেই নজরে আসা। তবে যে যেভাবেই নেক, নাসুম এটিকে পেশাদারি মনোভাবেই দেখেছেন, নিজের ভুল বুঝতে পেরেছেন৷

অষ্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ড দুই দেশের বিপক্ষে হোম সিরিজে তিনি ছিলেন অনবদ্য। অজিদের বিপক্ষে সিরিজে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী৷ কিউইদের বিপক্ষে সিরিজটায় সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী না হলেও বাংলাদেশের হয়ে ছিলেন সর্বোচ্চ। তবে উইকেট সংখ্যা সমান ৮ টি করে।

অজিদের বিপক্ষে সাড়ে এগারো গড়ে, ৫ ইকোনমি আর ১১.৭ স্ট্রাইক রেটে ৫ ইনিংসে ৮ উইকেট। সেরা বোলিং প্রথম টি টোয়েন্টি তে ১৯ রানে ৪ উইকেট। সে ম্যাচে হয়েছিলেন ম্যান অব দ্য ম্যাচ।

প্রথমবার অজিদের হারানোর ম্যাচে ম্যাচ সেরার পুরস্কার। এই কীর্তি আর চাইলেও আর কারো পক্ষে নিজের করে নেওয়া সম্ভব নয়। এছাড়া সিরিজ জুড়ে বাকী ম্যাচ গুলোতেও ছিলেন মিতব্যয়ী। রান আটকেছেন, ব্রেক থ্রু এনে দিয়েছেন। সব মিলিয়ে অসাধারণ এক সিরিজ কাটিয়েছিলেন।

কিউইদের বিপক্ষে এসে পরিসংখ্যান গত ভাবে আর মাঠের ক্রিকেটে সব জায়গাতেই দারুণ সফল। ৫ ইনিংসে গড় মাত্র ৮.৩৭ গড়ে ৮ উইকেটে, ইকোনমি আরো কমে ৪.৭৮, স্ট্রাইক রেট মাত্র সাড়ে দশ আর সেরা বোলিং ১০ রানে ৪ উইকেট। সেটি সিরিজের চতুর্থ ম্যাচে, ৪ ওভারে ২ মেইডেনে মাত্র ১০ রানে ৪ উইকেট। সআথে প্রথমবার কিউইদের বিপক্ষে টি টোয়েন্টি সিরিজ জয়ে ম্যান অব দ্য ম্যাচ। এই বোলিং ফিগার এবছর কিউইদের বিপক্ষে বিদেশের মাটিতে টি টোয়েন্টি তে কোনো বাঁহাতি বোলারের সেরা বোলিং ফিগার।

এর আগে প্রথম ম্যাচে ২ ওভারে ৫ রানে ২ উইকেট শিকার করে হয়েছে এক্সাইটিং প্লেয়ার অব দ্য ম্যাচ৷ কারণ কিউইরা মাত্র ৯ রানে হারায় ৪ উইকেট, যার দুটিই নাসুমের শিকার৷ এ বছর কিউইদের বিপক্ষে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী বোলারও তিনি, ১০ টি।

ক্যারিয়ার এর শুরুটা এবছরের মার্চে৷ কিউইদের রান বন্যার ম্যাচে ছিলেন যথেষ্ট ইকোনমিক্যাল। ৪ ওভারে ৩০ রানে ২ উইকেট।

নাসুমের বোলিংয়ে সবচাইতে বড় গুন এটিই। রান আটকাতে পারা। এক প্রান্ত থেকে রান আটকালে অন্য প্রান্ত থেকে উইকেট তুলতেও সুবিধা হয় অন্য বোলারদের। আবার মাঝে মাঝে তাকে খেলতে গিয়ে উইকেট দিয়ে আসেন বোলার।

গত বছর বঙ্গবন্ধু টি টোয়েন্টি কাপে ১০ ম্যাচে উইকেট ছিলো মাত্র ৪ টি। কিন্তু ম্যানেজমেন্ট তাকে খেলিয়েছে সব ম্যাচেই। কারণটা আর কিছু নয়, রান আটকানো কিংবা ইনিংসের শুরু থেকেই ইকোনমিক্যাল স্পেল। ইকোনমি ছিলো সাড়ে ছয়।

এর আগে বঙ্গবন্ধু বিপিএল ২০১৯ -এ ১৩ ইনিংসে মাত্র ৬ উইকেট, তবুও সব ম্যাচ খেলে যাওয়া। কারণটা পাওয়ার প্লে তে রান আটকানো কিংবা গুরুত্বপূর্ণ উইকেট তুলে নেওয়া। অনেক বিদেশ ব্যাটসম্যানদের চার ছক্কার আসরে ইকোনকি সাতের একটু বেশী।

তবে সর্বশেষ ডিপিএল টি টোয়েন্টি তে উইকেটও পেয়েছিলেন অনেক। ১৫ ইনিংসে ১৬ উইকেট, ইকোনমি মাত্র সাড়ে পাঁচ। আন্তর্জাতিক টি টোয়েন্টি তে নাসুমের একটি রেকর্ড আছে, এক ম্যাচে সর্বোচ্চ মেইডেন যৌথাভাবে আছেন শীর্ষে। কিউইদের বিপক্ষে এক ইনিংসে মেইডেন নেন ২ টি।

বিশ্বকাপে এই বাঁহাতি স্পিনার হবেন বাংলাদেশের ট্রাম্পকার্ড৷ বিশ্বকাপের উইকেট হবে অনেকটা স্পিন সহায়ক। যেখানে মঞ্চটা নাসুমের জন্য তৈরি।

আর্ম বল তার মূল অস্ত্র, উচ্চতার ৬ ফুট হওয়াতে বাউন্সটাও একটু বেশীই পান, লাইন লেন্থ ঠিক রেখে, ক্ষুরধার টেকনিক আর বুদ্ধিদীপ্ত বোলিং, সাথে বাঁহাতি স্পিনে নতুন বলে বল করা। সব মিলিয়ে অসাধারণ এক প্যাকেজ। সব এক সাথে সামলে এসেছেন বিগত ম্যাচ গুলোতে৷

অভিজ্ঞতাও এখন বেড়েছে অনেক। সাকিব দলে না থাকায় দলে এসেছিলেন বাঁহাতি বোলিং এর অপশন হিসেবে৷ এরপর পারফর্ম দেখিয়ে দলে করে নিয়েছেন নিজের আলাদা জায়গা৷ এবার সময় বিশ্বকাপে সাকিবের সাথে কাঁধে কাঁধ রেখে, একসাথে খেলে দলকে নিজের সেরাটা দেওয়ার৷ ব্যক্তিগত ভাবে এই বিশ্বকাপে তিনি আমার ট্রাম্পকার্ড৷

 

মন্তব্য করুন

এই বিভাগের আরো খবর