বাংলাদেশ ক্রিকেট ও চার জন ব্যক্তির অবদান…

Mehrab Elahi
  • প্রকাশিত সময় : শনিবার, ৩০ মে, ২০২০
  • শেয়ার করুন

  • Facebook

প্রথম ব্যক্তি রবিন মারলারঃ- স্বাধীনতার আগে থেকেই এ অঞ্চলে ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা ছিলো অনেক। ১৯৭১ সালে মাহান স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে ইউসুফ আলী ও মোজাফফর হোসেন খানকে যথাক্রমে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক করে বাংলাদেশ ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড গঠিত হয়।এবং দেশের প্রথম প্রতিযোগীতামূলক ক্রিকেট শুরু হয় ১৯৭৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে। ক্লাবভিত্তিক ক্রিকেটের নক আউট টুর্নামেন্ট ছিল সেটি। ১৯৭৪-৭৫ থেকে জাতীয় পর্যায়ে ক্লাব ক্রিকেটের লীগ শুরু হয় যা প্রায় প্রতি মৌসুমেই অনুষ্ঠিত হয়েছে এখন পর্যন্ত। যদিও এই টুর্নামেন্ট কখনোই প্রথম শ্রেণীর মর্যাদা পায়নি।

ঠিক এর পর এই একজন বন্ধুর দেখা পায় বাংলাদেশ।

তিনি হলেন ব্রিটিশ ক্রিকেটার ও ক্রীড়া সাংবাদিক রবিন মারলার। সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের নামও যখন অনেকে জানেন না, সে সময় তিনি আঁচ করেছিলেন বাংলাদেশে ক্রিকেটের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ। সানডে টাইমস পত্রিকায় আগ্রহ নিয়ে লিখেছিলেন ‘উইদার বাংলাদেশ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন। ১৯৭৬ সালে প্রকাশিত সেই যুগান্তকারী প্রতিবেদন মাধ্যমে বাংলাদেশিদের ক্রিকেটপ্রীতি জানল বিশ্ব। এবং বিশ্ব ক্রিকেট প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের ক্রিকেট সম্পর্কে পেলো বিশদ ধারণা।
তার এই ধারাবাহিকতায় ১৯৭৫-৭৬ ঘরোয়া ক্রিকেটের মৌসুম শেষে বাংলাদেশ ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কনফারেন্সের (এখনকার ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল ) কাছে আবেদন করল সহযোগী সদস্য পদের জন্য। ১৯৭৬ সালের জুনে আইসিসির সভায় উঠল বাংলাদেশের সদস্য পদ পাওয়ার বিষয়টি। আইসিসি বিসিসিবিকে পরামর্শ দিল মেলবোর্ন ক্রিকেট ক্লাবকে (এমসিসি) আমন্ত্রণ জানাতে। এমসিসির ট্যুর রিপোর্টের ওপর নির্ভর করবে আইসিসির সিদ্ধান্ত। বিসিসিবি আমন্ত্রণ জানাল এমসিসিকে।

তার এই ধারাবাহিকতায় ১৯৭৬-৭৭ মৌসুমে এমসিসির একটি দল বাংলাদেশে আসে। এ সময়ই বাংলাদেশের জাতীয় দল গঠন করা হয় প্রথমবারের মতো।এমসিসি বেশ কয়েকটি ম্যাচ খেলে বাংলাদেশে। এমসিসি জাতীয় দল ছাড়াও আরো কিছু ম্যাচ খেলে। এই ম্যাচগুলো যদিও প্রথম শ্রেণীর মর্যাদা পায়নি।বাংলাদেশ প্রথম ক্রিকেট ম্যাচ খেলে ১৯৭৭ সালে ৭ই জানুয়ারি ইংল্যান্ড এর ঐতিহ্যবাহী মেরিলিবোন ক্রিকেট ক্লাব এর বিপক্ষে। ঢাকা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ৩ দিনের ম্যাচটি শেষ পর্যন্ত ড্র হয়। ঢাকায় ঐতিহাসিক সেই ম্যাচে খেলার সুযোগ হয় শামীম কবির (অধিনায়ক), রকিবুল হাসান, মাঈনুল হক, সৈয়দ আশরাফুল হক, ওমর খালেদ রুমি, এ.এস.এম.ফারুক, শফিকুল হক হীরা, ইউসুফ রহমান বাবু, দৌলতউজ্জামান, দীপু রায় চৌধুরী ও নজরুল কাদের লিন্টু এই এগার জনের। এছাড়া ১৬ জনের দলে ছিলেন শাকিল কাশেম, এনায়েত হোসেন সিরাজ, খবির, নাজমুর নুর রবিন ও আহমেদ ইকবাল বাচ্চু।

তিন দিনের ঐ টেস্টে বাংলাদেশ দল শক্তিশালী এমসিসির বিপক্ষে ড্র করে। ব্যাট হাতে ইউসুফ রহমান বাবু (৭৮), শামীম কবির (৩০ ও ২৫), ওমর খালেদ রুমি (২৮ ও ৩২) অবদান রাখেন। বল হাতে নজরুল কাদের লিন্টু ৪ , দৌলতউজ্জামান ৩ ও দীপু রায় চৌধুরী ২ উইকেট পান।
বাংলাদেশের ক্রিকেটকে সামনে এগিয়ে নিতে ঐ ম্যাচের ভূমিকা ছিলো অনস্বীকার্য।এমসিসির এ ম্যাচ গুলোর উদ্দেশ্য ছিলো
বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশগ্রহণের যোগ্য কিনা সেটা পরীক্ষা করা।
সে পরিক্ষায় পাশ করার ফলস্বরূপ ১৯৭৭ সালের ২৬ জুলাই মেরিলিবোন ক্রিকেট ক্লাবের গঠনমূলক সুপারিশ এর প্রেক্ষিতেই বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল এর সহযোগী সদস্যপদ লাভ করার মাধ্যমে এক নতুন যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ ক্রিকেট।

দ্বিতীয় ব্যক্তির কাছে যাওয়ার আগে এর মাঝের ক্রিকেট সম্পর্কে একটু আলোচনা

১৯৭৮ সালের জানুয়ারিতে প্রথমবারের মতো শ্রীলংকা বাংলাদেশে আসে পূর্ণ আন্তর্জাতিক দল হিসেবে। সেসময় শ্রীলংকা টেস্ট স্ট্যাটাস না পেলেও চার বছর পরই পেয়ে যায়। তবে ম্যাচগুলো প্রথম শ্রেনীর মর্যাদা পায়নি।এবং এ বছরই এমসিসি আবার বাংলাদেশে আসে, ৬টি ম্যাচ খেলে জাতীয় দলের বিপক্ষে। এবারও কোন ম্যাচ প্রথম শ্রেণীর মর্যাদা পায়নি।

১৯৭৯ সালে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত আইসিসি ট্রফি বাংলাদেশের প্রথম আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট ছিল। গ্রুপ পর্বে প্রথম ম্যাচে ফিজি ও মালয়শিয়াকে হারালেও, কানাডা ও ডেনমার্কের কাছে হেরে গ্রুপ পর্বেই শেষ হয় বাংলাদেশের যাত্রা।

১৯৮২ সালে আইসিসি ট্রফি আবারো ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত হয়। গ্রুপ পর্বে বাংলাদেশ মালয়েশিয়া আর নেদারল্যান্ডের বিপক্ষে জেতে ও বারমুডার কাছে হেরে বৃষ্টির কল্যাণে সেমিফাইনালে ওঠা বাংলাদেশ।সেমিফাইনালে জিম্বাবুয়ের কাছে ও তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচেও পাপুয়া নিউগিনির হেরে টুর্নামেন্টে চতুর্থ হয় বাংলাদেশ।

১৯৮৩-৮৪ সালে বাংলাদেশ প্রথম কোনো টুর্নামেন্টের হোস্ট হয়। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ান টুর্নামেন্টে জাতীয় দল খেলে হংকং, সিংগাপুর এবং বিসিবি অনুর্ধ্ব-২৫ দলের বিরুদ্ধে। এই টুর্নামেন্টে ফাইনালে হংকংকে তিন উইকেটে হারিয়ে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো কোনো আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট জেতে বাংলাদেশ ।
১৯৮৪-৮৫ সালে নিউজিল্যান্ড দল আসে বাংলাদেশে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিসিবি অনুর্ধ্ব-২৫ দলের বিরুদ্ধে দুটি স্বল্প ওভারের ম্যাচ খেলে নিউজিল্যান্ড। মার্চে শ্রীলংকা একটি তিনদিনের ম্যাচ খেলার জন্য বাংলাদেশে আসে, সেই ম্যাচ ড্র হয়।

১৯৮৬ সালের ৩১ মার্চ কখন ও ভুলবে কি বাংলাদেশ। কারন এ দিনেই যে প্রথমবারের মতো লিস্ট-এ ম্যাচ খেলে বাংলাদেশ।
শ্রীলংকার টাইরনে ফার্নান্দো স্টেডিয়ামে গাজী আশরাফের নেতৃত্বে পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচটি ছিলো এশিয়া কাপে বাংলাদেশ প্রথম ম্যাচ। পাকিস্তান টসে জিতে প্রথমে ব্যাটিং এ পাঠায় বাংলাদেশ কে।
বাংলাদেশ সহিদুর রহমান এর
৬০ বলে ৩৭ রানে ভর করে ৩৫ ওভার ৩ বল খেলে ৯৪ রানে অল আউট হয়।জবাবে পাকিস্তান ৩২ওভার ১ বলে ৩ উইকেট হারিয়ে জয় তুলে নেয়।লিস্ট এ বা আন্তজার্তিক ক্রিকেটে বাংলাদেশ হয়ে প্রথম উইকেট নেন জাহাঙ্গীর শাহ্।শ্রীলংকার কাছেও একই ব্যাবধানে হারে বাংলাদেশ।১৯৮৮ সালে বাংলাদেশ এশিয়া কাপের আয়োজক হয় বাংলাদে এবং প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হয় ওডিআই ম্যাচ। ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকার সাথে সবগুলো ম্যাচ হেরে।

#দ্বিতীয় ব্যক্তি আহম মুস্তফা কামালঃ-১৯৯০ সালে আইসিসি ট্রফিতে হারের পর ১৯৯১ সালের এশিয়া কাপে ও সবগুলো ম্যাচ হেরে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নেয় বাংলাদেশ। এই পই এই যেনো নতুন করে এক উত্থান হয় বাংলাদেশ ক্রিকেট। ক্রিকেট নিয়ে দীর্ঘমেয়াদে পরিকল্পনা করা শুরু হয়।
তখন বাংলাদেশের ক্রিকেট কর্তারা বুঝতে পারে যে ঘরোয়া পর্যায়ে উন্নতি না করলে কখন ও বাংলাদেশ ক্রিকেটের উন্নতি হবে না।আর ১৯৯২ বিশ্বকাপের পর জিম্বাবুয়ে টেস্ট স্ট্যাটাস লাভ করলে বাংলাদেশ সহযোগী দেশগুলার ভেতর বেশ শক্তিশালী হয়ে পড়ে।জিম্বাবুয়ে না থাকায় আইসিসি ট্রফি জয়ের মাধ্যমে বিশ্বকাপে খেলার পথটা সোজা হয়ে যায়। সেই সাথে আইসিসি ঘোষনা দেয় শুধু চ্যাম্পিয়ন না আইসিসি ট্রফির প্রথম তিন দলই বিশ্বকাপে খেলবে। এই ঘোষনার পরেই বিসিবি টার্গেট করে ১৯৯৬ বিশ্বকাপ।

১৯৯৬ সালের বিশ্বকাপ কে টার্গেট রেখে ঘরোয়া পর্যায়ে বিরাট পরিবর্তন আসে। বাংলাদেশ ক্রিকেটের অবকাঠামো শক্তিশালী, বাংলাদেশে ক্রিকেটের প্রসার এবং জনপ্রিয় করে তোলার পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের। আর সেখানে অগ্রনী ভূমিকা পালন করে আবাহনী। ’৯২ বিশ্বকাপের পরেই আবাহনীর তৎকালীন প্রধান অর্থদাতা আহম মুস্তফা কামাল (সাবেক আইসিসি এবং বিসিবি সভাপতি) প্রচুর অর্থ খরচ করে বিদেশি খেলোয়াড় আনা শুরু করেন।
এর ফলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খেলছে বা কিছুদিনের ভেতর খেলবে এমন ক্রিকেটারদের সাথে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের খেলার সুযোগ হয় এবং দেশের প্লেয়ারদের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সাথে অভ্যস্ত হওয়া,অবিজ্ঞতা বৃদ্ধি ও পেশাদার হয়ে ওঠে।

ঘরোয়া ক্রিকেট জমজমাট হয়ে ওঠার ফলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ভালো করার সম্ভাবনা তৈরী হতে থাকে বাংলাদেশ,

দেশের প্লেয়ারদের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সাথে অভ্যস্ত করার জন্য ১৯৯২ সালে ‘সার্ক চারজাতি টুর্নামেন্ট’ আয়োজন করে বাংলাদেশ যেখানে বাংলাদেশ জাতীয় দল ভারত, পাকিস্তান এবং শ্রীলংকার এ দলের বিপক্ষে খেলে।শ্রীলংকা ও পাকিস্তানের কাছে হারলে ও ভারতের সাথে ম্যাচটি পরিত্যক্ত হয়।
১৯৯৪ কেনিয়ায় আইসিসি ট্রফিতে কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত যায় বাংলাদেশ। ডিসেম্বরে আবারো সার্ক টুর্নামেন্টের আয়োজন করে বাংলাদেশ। এবার ফাইনাল পর্যন্ত গেলেও ভারত এ দলের কাছে হেরে যায় বাংলাদেশ। ১৯৯৫ সালে শারজায় অনুষ্ঠিত এশিয়া কাপে বাংলাদেশ খেলে। কিন্তু আগের মতোই সব ম্যাচ হেরে যায়।

এ টুর্নামেন্ট গুলো হারলে ও ঘরোয়া ক্রিকেট ভালো হওয়ায় ভালো করার ভীত তৈরি হতে থাকে বাংলাদের।যার ফল পায় ১৯৯৭ সালে।
#তৃতীয় ব্যক্তি গর্ডন গ্রিনিজঃ- ভালো শিক্ষক ব্যতিত কখন ও ভালো ফল আশা করা যায় না।
এসিসি ট্রফির সাফল্যের পরপরই বাংলাদেশ ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড আটঘাট বেঁধে নামে জাতীয় দলকে বিশ্বকাপে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে। খুঁজতে থাকে বাংলাদেশ এর জন্য একজন ভালো কোচ।যিনি পারবেন পুরো জাতি বিশ্বকাপ খেলার স্বপ্নকে পূরন করতে। যিনি এদেশের ক্রিকেটকে সাফল্যের মন্ত্রে উজ্জীবিত করে নিয়ে যাবেন সপ্নের মঞ্চ বিশ্বকাপে।হবেন বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের অনুপ্রেরণার উৎস।

বিশ্বকাপ খেলার লক্ষ্যকে সফল করতে অসাধারণ এক পদক্ষেপ নিলো বিসিবি, তৎকালীন বোর্ড সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টাতেই বাংলাদেশের কোচ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া ক্যারিবীয় গ্রেট গ্রিনিজকে।তার অধিনেই ১৯৯৭ সালে মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত আইসিসি ট্রফি থেকে শুরু হয় বাংলাদেশ ক্রিকেটের জয়যাত্রা। গ্রুপ পর্বের পাঁচটি ম্যাচ জিতে কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠে বাংলাদেশ। কোয়ার্টার ফাইনাল ছিল লীগ, যেখানে নেদারল্যান্ড আর হংকংকে পরাজিত করে আর আয়ারল্যান্ডের সাথে ম্যাচ বৃষ্টিতে পরিত্যাক্ত হয়। গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হিসেবে সেমিফাইনালে ওঠে বাংলাদেশ। সেমিফাইনালে স্কটল্যান্ডকে ৭২ রানে হারিয়ে ফাইনালে উঠে যায় বাংলাদেশ।সেমিফাইনালে ওঠার পথে গ্রুপ পর্বের সবচেয়ে কঠিন ম্যাচটা ছিল হল্যান্ডের বিপক্ষে; পেন্ডুলামের মতো দুলছিল সে ম্যাচের গতি-প্রকৃতি। হল্যান্ডের মামুলি টার্গেট তাড়া করতে নেমে মাত্র ১৫ রানেই প্রথম ৪ উইকেট হারিয়ে রীতিমতো ধুঁকছিল বাংলাদেশ। পরবর্তীতে বৃষ্টির আনাগোনা, ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়ে বাদ পড়ার আশঙ্কা, মিলিয়ে ভয়ংকর স্নায়ুক্ষয়ী এক ম্যাচ ছিল সেটি। এই ম্যাচ হারলে যে বিশ্বকাপ স্বপ্নটাও ধূলিসাৎ হয়ে যেত! অধিনায়ক আকরাম খানের অনবদ্য ৬৮ রানের ইনিংসের সৌজন্যে হল্যান্ড বাধা পেরিয়ে সেমিফাইনালে উঠে বিশ্বকাপ স্বপ্ন পূরণের পথে অনেক দূর এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। সেমিতে স্কটল্যান্ডকে সহজেই হারিয়ে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে বাংলাদেশ। আজন্ম লালিত স্বপ্ন পূরণ হয় বাংলাদেশের অগণিত ক্রিকেটভক্তের। ফাইনালে কেনিয়ার বিপক্ষে আরও এক ইতিহাস গড়ে বাংলাদেশ। বৃষ্টিবিঘ্নিত উত্তেজনাপূর্ণ ও মজার ব্যাপার হলো বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচটি হয়েছিল দু’দিন ধরে। কেনিয়া প্রথমে ব্যাট করে ২৪১ রান করে। বৃষ্টির কারণে বাংলাদেশ ব্যাট করতে নামে পরের দিন, টার্গেট দাঁড়ায় ২৫ ওভারে ১৬৬। ইনিংসের প্রথম বলেই উইকেট হারালেও মিডল অর্ডারের দৃঢ়তায় ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। শেষ পর্যন্ত শেষ বলে রান নিয়ে এক ঐতিহাসিক জয় পায় বাংলাদেশ।
একের পর এক স্নায়ুক্ষয়ী সেই মুহূর্তগুলো বাংলাদেশ সফলভাবে উতরাতে সমর্থ হয়েছিল কেবল গ্রিনিজের দূরদর্শিতা আর অভিজ্ঞতার গুণেই। বাংলাদেশ দলের ড্রেসিংরুমে অভিভাবক হিসেবে তাঁর মতো একজন ক্রিকেট ব্যক্তিত্বের উপস্থিতি দলের চেহারাটাই বদলে দিয়েছিল। চাপের মুহূর্তে মাঠের বাইরে থেকে যেভাবে তিনি খেলোয়াড়দের উৎসাহ দিতেন, মনে সাহস জোগাতেন তা আজও অনেক ক্রিকেটারের স্মৃতিতে অম্লান। দলের প্রত্যেক খেলোয়াড়কে নিজের সন্তানের মত স্নেহ করতেন গর্ডন।মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত ‘৯৭ আইসিসি ট্রফির পুরোটা সময় জুড়ে গ্রিনিজ ছিলেন বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে। আইসিসি ট্রফি জয়ের স্বীকৃতিস্বরূপ গ্রিনিজকে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে সম্মানসূচক নাগরিকত্ব ও বাংলাদেশী পাসপোর্ট দেয়া হয়।

আইসিসি ট্রফি জয়ের পর ১৯৯৭ সালের ১৭-১৯ নভেম্বর বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো অফিশিয়াল প্রথম শ্রেণীর ম্যাচ খেলে, নিউজিল্যান্ডের সেডন পার্কে, নর্দান কনফারেন্স টিমের বিপক্ষে। ইনিংস এবং ১৫১ রানে হেরে সে ম্যাচটি মোটেও স্মরণীয় করে রাখতে পারেনি বাংলাদেশ।
১৯৯৮ সালে বাংলাদেশ আয়োজন করে আইসিসি নকআউট ট্রফির। সবগুলো টেস্ট খেলুড়ে দেশ নিয়ে ছিল সে টুর্নামেন্ট, যেটি এখন পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকার একমাত্র বড় টুর্নামেন্ট জয়।

সপ্নের বিশ্বকাপের খেলার আগে আন্তজার্তিক ওয়ানডে ম্যাচে প্রথম জয় ১৯৯৮ সালের ১৭ই মে তাঁর হাত ধরেই কেনিয়ার বিপক্ষে পেয়েছিল বাংলাদেশ।
টস জিতে কেনিয়া প্রথমে ব্যটিং করে ৪৯ ওভারে ২৩৬ রানে অল আউট হয়।বাংলাদেশ পক্ষে মোহাম্মদ রফিক নেন তিন উইকেট এবং খালেদ মাহমুদ ও এনামুল হক নেন দুটি করে উইকেট।
ব্যাটিং এ নেমে মোহাম্মদ রফিকের ৮৭ বলে ৭৭,আতার আলী খানের ৯১ বলে ৪৭ ও আকরাম খানের ৫১ বলে ৩৯ রানে বর করে ৪৮ ওভারেই ৬ উইকেটে জয় লাভ করে বাংলাদেশ।

১৯৯৯ সালে শুরু হয় বাংলাদেশের বিশ্বকাপ যাত্রা ও এক অপ্রত্যাশিত ঘটনা। বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ ছিল নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে, পরের ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দুটি ম্যাচই বাজেভাবে হারে বাংলাদেশ। তৃতীয় ম্যাচে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম জয় আসে স্কটল্যান্ডের বিরুদ্ধে ২২ রানে। নিজেদের শেষ ম্যাচে পাকিস্তানকে ৬২ রানে হারিয়ে নিজেদের প্রথম বিশ্বকাপটা স্মরণীয় করে রাখে বাংলাদেশ।
কিন্তু ঐতিহাসিক জয়ের সেই ম্যাচটির কয়েক ঘণ্টা আগে গ্রিনিজের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল বরখাস্তের নোটিশ। চাকরি হারানো গ্রিনিজ তবু সেদিন এসেছিলেন মাঠে; দেখা করে গিয়েছিলেন প্রানপ্রিয় শিষ্যদের সঙ্গে। যে কিনা দলটার পেছনে এতো পরিশ্রম করল, অথচ এত বড় একটা বিজয় উদযাপিত হয়েছিল সেই মানুষটিকে ছাড়াই!

#চার নাম্বার জগমোহন ডালমিয়াঃ- ক্রিকেটের সব থেকে মর্যাদার ফরম্যাট টেষ্টে খেলার অর্জনে তিনিই পালন করেন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা, তিনি এই হলেন জাগমোহন ডালমিয়া।পেশাদার ক্রিকেটার না হওয়া সত্ত্বেও ক্রিকেটকে বিকশিত করায় ইস্পাত দৃঢ় আত্মবিশ্বাস হৃদয়ে লালন করা ব্যক্তিটির সপ্ন ছিলো ২২ গজের ব্যাট-বলের ক্রীড়াকে সর্বোচ্চ চূড়ায় প্রতিস্থাপন করা।

১৯৯৭ সালে বিশ্ব ক্রিকেটের সর্বোচ্চ সংস্থা আইসিসির সভাপতি পদে নির্বাচিত হলেন ডালমিয়া। ক্রিকেটকে নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে ছড়িয়ে দিতে হবে বিশ্বময়। তাঁর সেই মন্ত্রের জোরেই ক্রিকেট দুনিয়ায় নিজেদের অবস্থান করে নিল বাংলাদেশ। ২০০০ সালে আইসিসির সভাপতি পদে থাকা অবস্থায় তাঁরই প্রচ্ছন্ন মদদে বাংলাদেশ অধিষ্ঠিত হলো একটি টেস্ট খেলুড়ে দেশের মর্যাদায়।
ক্রিকেট শক্তি হিসেবে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পেছনে তাঁর মদদই কেবল ছিল না, ছিল এক ধরনের প্রশ্রয়ও। টেস্ট খেলুড়ে দেশ হিসেবে জায়গা করে নেওয়ার পর বাংলাদেশের মাঠের পারফরম্যান্স ছিল তথৈবচ। ব্যাপারটা নিয়ে সমালোচনাও কম হয়নি। ক্রিকেট উন্নাসিকেরা অনেকেই বলতেন, আইসিসিতে কেবল প্রভাব-বলয় প্রতিষ্ঠিত করার জন্যই, টেস্ট খেলুড়ে জাতি হিসেবে প্রস্তুতিহীন বাংলাদেশকে টেস্ট খেলার অধিকার দিয়ে দেওয়া হয়েছে। ডালমিয়া সেই অভিযোগ খণ্ডন করেছিলেন বাংলাদেশের মাথায় প্রশ্রয়ের হাত রেখে। বলেছিলেন, এই উপমহাদেশ থেকে তিনটি দেশ বিশ্বকাপ জিতেছে। চতুর্থ দেশ হিসেবে বিশ্বকাপ জিতবে বাংলাদেশও। দেশটিকে একটু সময় দিতে হবে।

সুধু তাই নয় ১৯৯৮’ র অক্টোবরে উইলস ইন্টারন্যাশনাল কাপ নামে পরিচিত সেই প্রতিযোগিতাই পরবর্তীতে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি আয়োজন করতে দিয়ে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজও সমাধা করলেন এই ক্রিকেট প্রশাসক। ক্রিকেট দুনিয়াকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন টেস্ট খেলুড়ে দেশগুলোর বাইরেও এত বড় একটি প্রতিযোগিতা সাফল্যের সঙ্গে হতে পারে। সারা দুনিয়ার কাছে পরিচিত করে তুললেন বাংলাদেশের ক্রিকেট-সক্ষমতাকে, অন্তত প্রশাসনিক দিক দিয়ে।

টেস্ট মর্যাদার জন্য যখন বাংলাদেশের আবেদন করে,
তখন বাংলাদেশের দুটি পূর্ণ সদস্য দেশের সমর্থন প্রয়োজন ছিল।
আর সে সময় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের মোড়ল দেশগুলো বাংলাদেশের মতো দলের টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার বিপক্ষে থাকার পর ও বাংলাদেশের পক্ষে দাঁড়িয়ে ছিলেন জগমোহন ডালমিয়া এবং এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল।ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা বাংলাদেশ কে সমর্থন করে।
তার এই ধারাবাহিকতায় ২০০০ সালের জুন মাসে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল বা আইসিসির পূর্ণ সদস্যপদ পায় বাংলাদেশ।

২০০০ সালের ১০ নভেম্বর ঢাকার ভারতের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট ম্যাচটি খেলতে নামে বাংলাদেশ।
আমিনুল ইসলামের ১৪৫ ও নাঈমুর রহমান ৬ উইকেটের পর ও দ্বিতীয় ইনিংস এর ব্যাটিং ব্যর্থতায় ৯ উইকেটর পরাজয় বরণ করতে হয় বাংলাদেশকে।

কিন্তু এর পর ও ১০ই নভেম্বর ২০০০ তারিখটি ও বাংলাদেশের একজন প্রকৃত বন্ধু জগমোহন ডালমিয়া নাম যে বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা হয়ে যায়।

☞প্রথম ছবিতে ১৯৭৭ সালের ৭ই জানুয়ারি এমসিসির বিপক্ষে খেলা বাংলাদেশ দল।
☞দ্বিতীয় ছবিতে বাংলাদেশের প্রথম জয় ফিজির বিপক্ষে ১৯৭৯ সালে
☞তৃতীয় ছবিতে ১৯৯৭ সালে আইসিসি ট্রফি জয়
☞চতুর্থ ছবিতে বাংলাদেশের প্রথম টেষ্ট এর টস এর সময়
☞এর পরে যথাক্রমে রবিন মারলার, আহম মুস্তফা কামাল, গর্ডন গ্রিনিজ,জগমোহন ডালমিয়া।

#Cricketkhor_Writing_Competition
#গর্জনের_৭_বছর

 

মন্তব্য করুন

এই বিভাগের আরো খবর