টেস্ট ক্রিকেট কেনো রাজকীয় সেটির উত্তর নতুন করে জানতে আপনাকে ফিরতে হবে ট্রেন্ট ব্রীজে! যেখানে আপনি দেখবেন দুই লড়াকু সৈন্যকে। যার একজনের অনুপ্রেরণায় থাকতে পারে স্টোকসের নাম, আর বেয়ারেস্টোকে অনুপ্রেরণা দেওয়া স্টোকসের অনুপ্রেরণা তো ঐ ইডেন থেকেই নেওয়া…
[১]
সময় আপনাকে দ্বিতীয়বার সুযোগ দিবে, আর সেটি লুফে নিতে হবে বেয়ারেস্টোর মতো করে! সর্বশেষ ৯ ইনিংসে সর্বোচ্চ রান ২৯; সে-ই কি না ২৯৯ রানের লক্ষ্যকে বানিয়ে দিলেন মামুলি! যতক্ষনে ক্রিজে এসেছিলেন ততক্ষণে ৩ সতীর্থ সাজঘরে, জয় তো দূরের কথা হার থেকে বাঁচার দিকেই যেনো মনোযোগ বেশী। একে তো রানে নেই, দুইয়ে চাপকে জয় করার দায়িত্ব। এরই মাঝে ফিরলেন আরেক সতীর্থ; জয় থেকে ইংল্যান্ডের দূরত্ব তখনও ২০৬ রান!
স্টোকসের সংস্পর্শে যেনো বদলে গেলেন বেয়ারেস্টো, চাপকে জয় অতঃপর লক্ষ্যে অবিচল থেকে এগিয়ে নিতে থাকলেন রানের চাকা। ততক্ষণে ফিফটির উদযাপন, বেশ সাদামাটা। মুখে প্রাপ্তির ছাপ নিয়ে পরের গল্পটা সাজিয়েছেন নিজের মতো করে। প্রথম ৫১ বলে ৫১ রান করা বেয়ারেস্টো সেঞ্চুরির উদযাপনে মাতলেন ৭৭ বলে; ইংল্যান্ডের টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে দ্বিতীয় দ্রুততম সেঞ্চুরি; দুর্দান্ত….
দুর্দান্ত, দুরন্ত, দূর্বার; যেটাই বলি না কেন; বেয়ারেস্টোর ইনিংসটি প্রকাশ করা যেনো অসম্ভব। ১৩৬ রানে যখন সাজঘরে ফিরলেন তখন ইংল্যান্ড জয়ের খুব কাছাকাছি, বেয়ারেস্টো এবার হতাশা নিয়ে ফিরেননি, ফিরেছেন মহাকাব্যিক এক ইনিংস খেলে। তাইতো ব্যাট উঁচিয়ে আকাশ পানে চেয়ে বিধাতাকে স্মরণ করেছেন নিশ্চয়ই! বেয়ারেস্টো এবার জিতেছেন, জিতিয়েছেন….
[২]
যার হারানোর কিছুই নেই; হারিয়েছেন সেই ইডেনে! পরের গল্পে তিনি মহানায়ক। যিনি অসাধ্য সাধন করে চলছেন নিয়মিতই। একে অধিনায়ক, দুয়ে দলের হার এড়ানোর দায়িত্ব! কিসের কি? তিনি নিজের মতো করে সাজিয়ে নিলেন সবকিছু! যার কাছে চাপ বলে কোন শব্দ আছে কি না সেটির উত্তর পাওয়া মুশকিল! দলের চার চারটা ব্যাটার সাজঘরে, জয় থেকে ইংল্যান্ডের দূরত্ব ২০৬….
স্টোকস এলেন, দেখলেন; অতঃপর ব্যাটের পরশে লিখলেন মহাকাব্য। ‘অ্যাটাক ইজ দ্য বেস্ট ডিফেন্স’ শব্দটি হয়তো স্টোকসের জন্যই ব্যবহার করা উচিত। নিজের ১০ম বলটিই পাঠিয়ে দিলেন সীমানার ওপারে! অথচ একটা ভুল ইংল্যান্ডকে হারিয়ে দিতে যথেষ্ট ছিলো। কিন্তু স্টোকস যা করলেন সেটি অতুলনীয়। ২৯৯ রানের টার্গেটও যেনো সহজ বানিয়ে দিলেন! অধিনায়ক তো এমনই হওয়া উচিত!
[৩]
“অ্যাটাক ইজ দ্য বেস্ট ডিফেন্স!” আসলেই?
এবার আপনি ট্রেন্ট ব্রিজে ফিরুন, ঘড়ির কাঁটা বলছে স্থানীয় সময় বিকাল ৩ টা ৪০ মিনিট থেকে ৪ টা ৪৫ মিনিট, তথা ৬৫ মিনিটে জনি-স্টোকস জুটি রান তুলেছে ১০২! অথচ এই জুটি যখন ক্রিজে ততক্ষণে চার চারটা ব্যাটার সাজঘরে, জয়ের দূরত্ব ২০৬ রান! সেখান থেকে দেখেশুনে খেলে দলকে বাঁচাবেন এটাই তো স্বাভাবিক চিত্র হবার কথা, কিন্তু স্টোকসের ভাবনায় হারার কিছু ছিলোনা, পাবার ছিলো!
স্টোকস – বেয়ারেস্টোর জুটিতে বদলে গেলো সবকিছু, কিউইরা আরও একবার কপোকাত ঐ স্টোকসে, এবার স্টোকসের চেয়ে কাজটা বেশী করেছেন বেয়ারেস্টো। কিন্তু মহাকাব্যের ভীত গড়ার কারিগর ঐ স্টোকসই!
ক্রিকেট সুন্দর, গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা। আর সেটি বারবার প্রমাণ করে চলছে স্টোকস! বেয়ারেস্টোর আজকের ইনিংসটি তাকে এগিয়ে নিবে খানিকটা পথ। স্টোকসের এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা তো ঐ ইডেন থেকেই থেকেই নেওয়া!