টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের বেহাল দশা। দেশের মাটিতে অল্প কিছু সাফল্য পেলেও ঘরের বাহিরে সাফল্য নেই বললেই চলে। এবার দেশ ও দেশের বাহিরে ভালো করার ছক কষছে বিসিবি। যেটির প্রথম ধাপ হিসেবে বেছে নিয়েছে জাতীয় ক্রিকেট লীগ – এনসিএলকে।
জাতীয় ক্রিকেট লীগের ইতিহাস বেশ পুরোনো হলেও প্রাপ্তির খাতায় যুক্ত হয়নি খুব বেশী সাফল্য। স্পিন স্বর্গ উইকেট বানিয়ে চারদিনের ম্যাচের ফলাফল আসে দেড় বা দুই দিনেও। ব্যাটারদের ব্যর্থতার বিপরীতে স্পিনারদের জয়জয়কার। এবার সময় এসেছে স্পোর্টিং উইকেটে আমাদের ব্যাটার ও বোলারদের তৈরি হবার। দেরিতে হলেও উন্নতি করার উপায় খুঁজে পেয়েছে বিসিবি। তাইতো আসন্ন এনসিএলে বেড়েছে ম্যাচ ফি, পিচে দেখা যাবে ঘাস, ইয়ো – ইয়ো টেস্টের বেঞ্চমার্ক বাড়ানোর সাথে স্পোর্টিং উইকেটে দেখা যাবে ডিউক বল। এনসিএলের পরিকল্পনা নিয়ে গণমাধ্যমে কথা বলেছেন বিসিবির প্রধান নির্বাচক এবং এনসিএলে কমিটির ম্যানেজার।
আগামী ১০ অক্টোবর মাঠে গড়াবে এবারের আসর। যেটির পর্দা নামবে ১৭ নভেম্বর। এক মাসের বেশী সময় ধরে হওয়া এই টুর্নামেন্টের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে ইতিমধ্যেই। গত ৫ সেপ্টেম্বর বিভিন্ন বিভাগীয় দলে ডাক পাওয়া ক্রিকেটাররা প্রথম ধাপের ইয়ো-ইয়ো টেস্ট শেষে ৩ সপ্তাহের ক্যাম্পে নিজেদের ফিটনেস নিয়ে কাজ করছেন। যেটির শেষ পরীক্ষা ২৫ সেপ্টেম্বর। এবারের ইয়ো-ইয়ো টেস্টের পাস মার্ক ধরা হয়েছে ১৮.১। গত বছর যেটি ধরা হয়েছিলো ১৭.৪। এই পরীক্ষায় যে সকল খেলোয়াড়রা উত্তীর্ণ হতে পারবে তাদেরকে দেখা যাবে এনসিএলে। এছাড়াও ফিটনেস টেস্ট বা ইয়ো-ইয়ো টেস্টে পাস করা ক্রিকেটারদের নিয়ে টুর্নামেন্ট শুরুর আগে দুই সপ্তাহের একটি স্কিল ক্যাম্প অনুষ্ঠিত হবে।
এবারের এনসিএলে বেড়েছে ম্যাচ ফি!
জাতীয় ক্রিকেট লিগে প্রথম স্তরের ক্রিকেটে ম্যাচ ফি ছিলো ৬০ হাজার ও দ্বিতীয় স্তরের ম্যাচ ফি ছিলো ৫০ হাজার টাকা। ২০১৯ সালের আগে ২৫ হাজার করে ম্যাচ ফি পেলেও ২০১৯ সালে ৭১% পর্যন্ত ম্যাচ ফি বাড়িয়েছিলো বিসিবি। এবার সেটির সাথে আরও ৪০% ম্যাচ ফি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিসিবি।
চ্যাম্পিয়ন দলের খেলোয়াড়রা পাবেন লাখ টাকা করে, রানার্স আপ দলের সদস্যরা ৮০ হাজার, তৃতীয় ও চতুর্থ হওয়া দলের খেলোয়াড়রা পাবেন যথাক্রমে ৭০ ও ৬০ হাজার টাকা।
দ্বিতীয় স্তরের চ্যাম্পিয়ন ও রানার্স আপ দলের খেলোয়াড়রা পাবেন ৬০ ও ৫৫ হাজার টাকা এবং তৃতীয় ও চতুর্থ দলের সকল সদস্যরা পাবেন ৫০ হাজার টাকা করে।
খেলা গড়াবে স্পোর্টিং উইকেট ও ডিউক বলে
এনসিএলে সাধারণত স্পিনারদের জয়জয়কার দেখা গেলেও এবার পিচ কিছুটা স্পোর্টিং ও হালকা ঘাস থাকবে বলে জানা গিয়েছে। ইংলিশ কন্ডিশনে লংগার ভার্সনে ১০ মিলিমিটার এর মতো গ্রাস রাখা হয় পিচে। এমন আদর্শ পেস কন্ডিশন নিশ্চিত করতে ৮ মিলি গ্রাস রাখতে চাইছে বিসিবি। এছাড়াও দেখা যাবে ডিউক বল। মূলত বিদেশের মাটিতে টেস্ট ক্রিকেটে সাফল্য পেতে মরিয়া বিসিবি। তাই ডিউক বলে বোলার ও ব্যাটারদের প্রস্তুত করতে চায় বিসিবি। এর আগে এসজি বলের ব্যবহার দেখা গিয়েছিলো এনসিএলে। এই বিষয়ে নান্নু বলেন, ‘ডিউক এবং এসজি বলের মধ্যে পার্থক্য সীম এবং আকৃতির দিক থেকে বিশাল। ডিউক বলের সাথে আগামী দিনে অনেক আন্তর্জাতিক খেলা রয়েছে এবং আমরা এই বলের সাথে কিছু হোম সিরিজও খেলতে পারি, তাই আমাদের খেলোয়াড়দের সঠিকভাবে প্রস্তুত করার জন্য এই বলটি চালু করা হবে।’
সাধারণত ডিউক বলে স্থায়িত্ব কম হয়, দ্রুতই বল পুরনো হয়ে যায়। সেকারণে ৮০ ওভার শেষে সব দলকেই নতুন বল বল নিতে হবে, এটি বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে।
সবমিলিয়ে বিসিবির নতুন পরিকল্পনায় কতোটা লাভবান হবে বাংলাদেশ ক্রিকেট সেটির উত্তর পেতে সময় লাগলেও এই পরিকল্পনাগুলো যদি সঠিক ভাবে কাজে লাগানো যায় তবেই দেশের বাহিরে সাদা পোশাকে রঙ্গিন দিনের দেখা মিলবে।