মোহাম্মদ আশরাফুল। ছোট বেলায় মায়ের মুখে বলতে শুনতাম আশার ফুল। আমাদের দেশে এখন সুপারষ্টার আছেন, স্টারদেরও ছড়াছড়ি। তবে আমার শৈশবকালে আমাদের ক্রিকেট আকাশে আমি শুধু একটাই তারা দেখতাম জ্বলজ্বল করে জ্বলছে। ঠিক ধ্রুবতারার মতো। এই তারাটাই আশরাফুল।
টপ অর্ডার কিংবা মিডল অর্ডার মুড়ি মুড়কির মতো গুড়িয়ে যাওয়ার দিনেও আশরাফুলের একটা কাভার ড্রাইভ এবং স্ট্রেইট ড্রাইভে বল বাউন্ডারি সীমানার দিকে ছুটছে দেখে সব দুঃখ ভুলে গিয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে যেতাম। হ্যাঁ, উনার খেলা না দেখলে হয়তো ক্রিকেটের সাথে প্রেমটাই হতোনা।
আমি আশরাফুলের অভিষেক শতক দেখিনি। কিন্তু ভারতের বিপক্ষে টেস্টে ১৫৮, কার্ডিফের অস্ট্রেলিয়া বধের শতক, হার্মিসন-ফ্লিনটফদের নাকের পানি – চোখের পানি এক করে দেওয়া ৯৪ রানের ইনিংস থেকে শুরু করে শ্রীলংকার বিপক্ষে ১৯০ রানের ইনিংস প্রতিটা বল বাই বল দেখেছি। শুধু দেখেছি নয়, অনুভব করেছি প্রতিটা মুহূর্ত।
আমার ছোট্ট কৈশোর মনে খেলোয়াড় আশরাফুলের একটা বিরাট প্রভাব আছে। ব্যক্তি আশরাফুলকে অনেকে ফিক্সার বলেন, তাতে আমার আপত্তি নেই। আমার সেই চিন্তা করতে বয়েই গেছে। অমন হলে ২০-২২ গড়ের একজন খেলোয়াড়কে এতটা ভালোবাসতে পারতাম না।
আমি এখনো যতবার পুরনো হাইলাইটস দেখি একজন খেলোয়াড় আশরাফুলের আমি ততবার মন থেকে মুছে ফেলি ব্যক্তি আশরাফুলের প্রতিটা ভুল ত্রুটি। পাওয়া না পাওয়ার সমস্ত গ্লানি। দেশের এই ক্রান্তি লগ্নে সুপারস্টার সাকিব আল হাসান নিলামে তুলে নিজের ঐতিহাসিক ব্যাট বিক্রি করেছেন ২০ লক্ষ টাকায়।
আরেক নক্ষত্র মুশফিকও ইতিহাসের প্রথম ডাবল শতক হাঁকানো ব্যাট এবং গ্লাভস নিলামে বিক্রি করবেন, আশা করি সম্মানজনক দামও পাবেন। তবে আমি বিশ্বাস করি এই দুইয়ের চেয়ে ইতিহাসের সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে শতক হাঁকানো আশরাফুলের ব্যাটের মূল্য কোন অংশেই কম নয়, তুলনামূলক বিচারে খানিকটা বেশি। আশরাফুল নিলামে তুলছেন ইতিহাস লেখা সেই ব্যাট এবং কার্ডিফের ম্যান অফ দা ম্যাচ পাওয়া শ্যাম্পেনের বোতল।
আলোর মশালটা এই আশরাফুলরাই তুলে দিয়েছিলেন সাকিবদের হাতে। কার্ডিফের পুরষ্কার পাওয়া শ্যাম্পেনের বোতলটা হয়তো অনেকের কাছেই নেহায়েত একটা স্যুভেনির, কিন্তু আমার মতো গুটি কয়েক ভক্তের কাছে আশরাফুল নামটাই অনেক কিছু হয়তোবা ৯৮ সংখ্যাটিও।