জাতীয় লিগের উন্নতিকল্পে নান্নুর বিশেষ প্রস্তাবনা |

  • প্রকাশিত সময় : শনিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১
  • শেয়ার করুন

  • Facebook

১৯৯৯ সালে ঘরোয়া পর্যায়ের ক্রিকেটকে ত্বরান্বিত করতে চালু করা হয়েছিলো জাতীয় লিগ। বছরের দীর্ঘ সময় জুড়ে চলা এই টুর্নামেন্ট এতো বছরেও শক্তিশালী ভিত্তি তৈরী করতে পারেনি। বাংলাদেশে প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় এই লিগ পরিনত হয়েছে বিসিবির রুটিন কাজে! প্রতিবছর নির্দিষ্ট সময়ে শুরু ও শেষ করা পর্যন্তই যেনো বোর্ডের দায়িত্ব। জবাবদিহিতা করতে হয়না কাউকেই; দায়সারাভাবেই সারা হয় এই টুর্নামেন্ট। প্রথমদিকে ম্যাচসংখ্যা বেশী থাকলেও লিগটিকে দুটি ভাগে (দুই টায়ার) ভাগ করায় কমেছে ম্যাচসংখ্যা। অথচ এই লিগের মাধ্যমেই চলে দেশের সিংহভাগ ক্রিকেটারের জীবন। এসব কিছু পর্যালোচনা করে বিসিবির কাছে জাতীয় লিগের সংস্কারের লিখিত প্রস্তাব দিয়েছেন প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নু। তিনি জানিয়েছেন আগামী মৌসুম থেকে ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন হতে পারে সুপারিশগুলোঃ

•জাতীয় লিগে ঢাকা মেট্রোর পরিবর্তে ময়মনসিংহ বিভাগের অন্তর্ভুক্তি:
দেশে বিভাগসংখ্যা আটটি হলেও লিগে অংশ নেয় সাতটি বিভাগীয় দল। অষ্টম দল হিসেবে ঢাকা মেট্রো অংশ নেয়। এক্ষেত্রে মেট্রো দল বিলুপ্ত করে ময়মনসিংহ বিভাগীয় দল গঠনের সুপারিশ করেছেন নান্নু। দেশের সবশেষ গঠিত এই বিভাগের নামে দল গঠিত হলে নিশ্চিতভাবে আরো বেশী আন্তরিকতা নিয়ে খেলবেন মাহমুদউল্লাহ, মোসাদ্দেক, আব্দুল মজিদ, পিনাক, শুভাগত, রকিবুল হাসানের মতো ক্রিকেটাররা।

হোম এন্ড এওয়ে ভেণ্যুতে ম্যাচ খেলা:
জাতীয় লিগ চালু হয়েছিলো হোম এন্ড এওয়ে ভিত্তিতে, যাতে ক্রিকেটাররা বেশী ম্যাচ খেলার সুযোগ পায়। কিন্তু দুই টায়ারে ভাগ হওয়ায় ম্যাচ কমে গেছে। হোম এবং এওয়ে ভিত্তিতে খেললে ভিন্ন কন্ডিশনে খেলার অভ্যাস গড়ে উঠার পাশাপাশি বেশী ম্যাচ পাবেন ক্রিকেটাররা। গত কয়েকবছরে শিথিল হয়ে পড়া নিয়মটা আবারো মূলধারায় আনার অনুরোধ নান্নুর।

প্রতিটি বিভাগীয় দলের সাথে অনুর্ধ্ব-২৩ দল আবশ্যিক রাখা:
নান্নুর প্রস্তাবনায় মূল বিষয় এটি। প্রতিটি বিভাগীয় দলে অন্তর্ভুক্ত হবে অনুর্ধ্ব-২৩ দল। জাতীয় লিগের সমান্তরালে চলবে বয়সভিত্তিক দলটির খেলা। সিনিয়র দল হোম ম্যাচ খেললে জুনিয়র দল খেলবে এওয়ে ম্যাচ। অনুর্ধ্ব-২৩ দলে তিনজন করে সিনিয়র ক্রিকেটার থাকবেন। জুনিয়র দলটি থেকে চাহিদামতো খেলোয়াড় মূল দলে নেয়া যাবে। সেক্ষেত্রে মূল দলে বাজে পারফরম্যান্স করা ক্রিকেটারদের অবনমন হবে জুনিয়র দলে।

•বয়সভিত্তিক দলের জন্য কাঠামো:
অনুর্ধ্ব-২৩ দল খেলবে তিন দিনের প্রথম শ্রেণির ম্যাচ। প্রথম ইনিংস হবে একশো ওভারের এবং দ্বিতীয় ইনিংস হবে ৪০ ওভারের। যাতে করে টেস্ট এবং ওয়ানডে উভয় ফরম্যাটের ক্রিকেটের উত্তেজনা থাকে খেলোয়াড়দের মাঝে।

কোচিং স্টাফ/ টিম ম্যানেজমেন্ট:
বিভাগীয় দলগুলোর কোচিং স্টাফ নেই স্থায়ীভাবে। লিগ শুরুর দিনকয়েক আগে বিসিবির কোচেরা দলগুলোর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এক্ষেত্রে নান্নু মত দিয়েছেন স্থায়ীভাবে দুবছরের জন্য কোচিং স্টাফ রাখার ব্যাপারে, সাত সদস্যের কোচিং স্টাফ থাকবেন দলের সঙ্গে। দু’বছর পরপর তাদের মূল্যায়ন করা হবে

বিভাগীয় স্টেডিয়ামগুলোতে সুবিধাদি বাড়ানো:
বিভাগীয় স্টেডিয়ামগুলোর প্রতিটায় আবাসিক সুবিধা নিশ্চিত করার পাশাপাশি ন্যূনতম চারটি আউটার পিচের সুবিধা রাখা। দুটিতে ফাস্ট বোলিং কন্ডিশন, একটি স্পিন ট্র‍্যাক ও একটি ব্যাটিং ফ্রেন্ডলি পিচ রাখতে হবে। সাথে ইনডোর, জিম এসব সুবিধা গড়ে তুলতে হবে।

ম্যাচ ফি:
বর্তমানে দুই টায়ারে খেলা হয় লিগটি। টায়ার ওয়ানের ম্যাচে ৬০ হাজার ও টায়ার টু’এর ম্যাচে ৪০ হাজার টাকা ম্যাচ ফি। হোম এন্ড এওয়ে ভিত্তিতে খেলা হলে দিনের ভিত্তিতে নির্ধারণ হবে ম্যাচ ফি! ভারতের রঞ্জি ট্রফির মতো দিনপ্রতি প্রত্যেক খেলোয়াড়ের জন্য ১৫ হাজার টাকা করে থাকবে ম্যাচ ফি। চারদিনের ম্যাচ তিনদিনে শেষ হলে জয়ী দল চারদিনের ম্যাচ ফি’ই পাবে; তবে পরাজিত দল পাবে তিন দিনের ফি।

মাসিক সম্মানীঃ বিভাগীয় জুনিয়র প্রতিটি দলে ১৫ জন ক্রিকেটারের স্কোয়াড থাকবে। একজন ক্রিকেটার প্রতি মৌসুমে অন্তত ৩ ম্যাচ খেলে ভালো পারফর্ম করলে পরবর্তীতে মাসিক ভিত্তিতে সম্মানী প্রদান করা।

নির্বাচন পদ্ধতিঃ দল নির্বাচনের দায়িত্ব থাকবে বিসিবি নির্বাচক প্যানেল এবং প্রতি দলের প্রধান কোচ। প্রতি দুই ম্যাচ পরপর গঠিত দলের রিভিউ করা

এমন অভিনব সব প্রস্তাবের ব্যাপারে নান্নুর অভিমত, ” এই প্রস্তাবনা বাস্তবায়ন করা গেলে লিগের প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাড়বে। কোচিং স্টাফদের জবাবদিহি থাকবে। কেউ খারাপ করলে নিচে নেমে আসবে, ভালো করলে সিনিয়র দলে যাবে৷ ম্যাচ ফি’র জন্য হলেও তারা জিততে চেষ্টা করবে।
বিসিবি আমার প্রস্তাবটা নিয়েছে। ধাপে ধাপে কার্যকর করা হবে। বিভাগীয় ক্রিকেট কমিটি বানাতে হবে প্রথমে৷ জাতীয় লিগের উন্নতি করতে হলে এই প্রক্রিয়ায় যেতে হবেই। আট দল হোম এন্ড এওয়ে খেললে ১৪টি ম্যাচ পাবে। ম্যাচ বেশী খেললে ক্রিকেটাররা যেমন আর্থিকভাবে লাভবান হবে, তেমনি পারফর্ম্যান্সের উন্নতি হবে।’

সম্মানী তেমন না বাড়লেও হোম এন্ড এওয়ে ভিত্তিতে এক টায়ারেই খেললে ক্রিকেটারদের সিরিয়াসনেস বাড়ার পাশাপাশি আসল লাভটা হবে দেশের ক্রিকেটেরই।

 

,

মন্তব্য করুন

এই বিভাগের আরো খবর