ক্রিকেট মাঠ থেকে বাস্তব জীবনের অলরাউন্ডার

Arfin Rupok
  • প্রকাশিত সময় : সোমবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০২১
  • শেয়ার করুন

  • Facebook
Andrew Flintoff celebrates after England won the Ashes series 2-1 after the 5th Ashes Test match between England and Australia at the Oval, London, England on the 12th of September 2005. (Photo by Philip Brown/Popperfoto via Getty Images/Getty Images)
অ্যান্ড্রুর জোড়ালো আবেদন!
(Photo by Philip Brown/Popperfoto via Getty Images/Getty Images)

দ্য ফ্রেদি! ক্রিকেটে কতশত নাম, কতশত উপাধি; কিন্তু ফ্রেদি নামটি কার? উত্তরে আপনি যাকে খুঁজে পাবেন সে ছিলেন বাইশ গজে ব্যাটে-বলে তাণ্ডব চালানো এক দুরন্ত অলরাউন্ডার। উদ্ধতপূর্ণ চেহারা, তীক্ষ্ণ দৃষ্টি, উইকেট পেয়ে দু’হাত মেলিয়ে উল্লাস কিংবা পাওয়ারফুল হিটিংয়ে দর্শকদের মুগ্ধ করা এক ক্রিকেটার। ছিলেন স্লিপ ফিল্ডার হিসেবেও পরিচিত, আইসিসির অলরাউন্ডার র‍্যাংকিংয়ে যার নাম থাকতো উপরের দিকেই। বারবার ইঞ্জুরিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে মাঠে ফেরা। কিংবা ২০০৫ অ্যাশেজে তার বীরত্বে শিরোপা জয়ের উল্লাসে মেতেছিলো ইংল্যান্ড! বলছি ল্যাঙ্কাশায়ারের প্রেস্টন এলাকায় জন্মগ্রহণকারী অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফের কথা।

ক্রিকেট নামক নেশা ফ্রেদিকে ঘিরে নিয়েছিলো, ক্রিকেটের বাইশ গজের নেশা তাকে দেখিয়ছিলো স্বপ্ন! ফ্রেদিও পিছুটান হননি, ক্রিকেটের মায়ায় নিজেকে জড়িয়ে স্বপ্নকে করেছেন তাড়া। ক্যারিয়ার শেষে ফ্রেদি ঠিকই পৌঁছেছেন সাফ্যলে; যেখানে তাকে বলতে হয় ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডারের একজন।

একটা সময় বোথামের সাথে ডার দূরত্বটাও ছিলো অল্পই; জ্যাক ক্যালিসের সঙ্গে তার লড়াইটাও জমেছিলো বেশ। ক্যালিস-ফ্রেদির পুরোনো স্মৃতিতে ফিরতে চাইলে ফিরতে হয় ১৯৯৮ সালে; প্রথমাবের মতো ক্যালিসের মুখোমুখি হয়েছিলেন ফ্রেদি। এর পর আরও কয়েকটা বছর কেটে যায়। এরমাঝে দু’জনের মুখোমুখি লড়াইও হয়েছিলো কয়েকবার। বাইশ গজের লড়াইয়ে ক্যালিসকে আউটও করেছিলেন চারবার। কিন্তু এবারের লড়াইটা ছিলো ভিন্ন, কিছুটা রোমাঞ্চও বটে!

নিজেদের ছাড়িয়ে যাওয়ার মিশনে দুরন্ত ফ্রেদি:

এজবাস্টনে মুখোমুখি ক্যালিস-ফ্রেদি! বছর দশেক আগেও তাদের মুখোমুখি লড়াই হয়েছিলো এই এজবাস্টনেই। কিন্তু এবারের লড়াইটা ভিন্ন, লড়াইটা নিজেদের ছাড়িয়ে যাওয়ার। সেই লড়াইয়ে ব্যাটার ফ্রেদিকে আউট করতে পারেনি ক্যালিস, আউট করতে পারেনি আফ্রিকার কোনো বোলারই। কিন্তু বোলার ফ্রেদি ছিলেন ভয়ংকর; একপ্রান্তে দারুণ সব বাহারি শটে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছিলেন ক্যালিস। ঠিক তখনই ফ্রেদির ছুটে চলা শুরু….

৬৪ রানে অপরাজিত ক্যালিস, বল হাতে ফ্রেদি; দর্শকরাও যেনো কিছুটা বিচলিত, অপেক্ষায় দুই সেরার লড়াইয়ের। লড়াইয়ের শুরুর বলটা যেনো ক্যালিসকে একটা আভাস দিয়ে গিয়েছিলো। কিন্তু শেষ বলটায় রক্ষা হয়নি ক্যালিসের। দুর্দান্ত এক ইয়র্কারে অফস্ট্যাম্প ছত্রখান; ততক্ষণে ফ্রেদি উল্লাসে মত্ত। কি দুর্দান্ত এক ওভার, সেরাদের লড়াই বুঝি এমনই হয়!

জ্যাক ক্যালিসের স্ট্যাম্প ততক্ষণে ছত্রখান!
(Photo by Philip Brown/Popperfoto via Getty Images/Getty Images)

২০০৫ সাল; এক অ্যাশেজেই ইতিহাস!

এবারের স্মৃতিটা বড্ড সুন্দর, ইংরেজরা হয়তো বাঁধায় করে রেখেছেন সোনালী অতীতের স্মৃতিতে। যেই গল্পে নায়ক ফ্রেদি; দুরন্ত ফ্রেদি।

ছোট্ট একটা ট্রফি, সেটিই যেনো একটা বীরত্বের প্রতীক! যেখানে কখনো রাজা অস্ট্রেলিয়া আবার কখনোবা ইংল্যান্ড। কিন্তু ফ্রেদি যখন অ্যাশেজ মাতাতে মাঠে নেমেছিলেন তখন রাজা ঐ অস্ট্রেলিয়া, তাদের রাজত্ব চলছে প্রায় ১৯ বছর ধরে। ফ্রেদি হয়তো অতীত জানতেন, কিন্তু ফ্রেদি যে এভাবে রাজত্ব পুনরুদ্ধার করবে সেটি কেউই কল্পনা করেনি হয়তো! যাই গল্পে ফিরি…

ব্যাট হাতে ৪০২, বল হাতে ২৪ উইকেট; ততক্ষণে ইংল্যান্ডের জার্সিতে ইতিহাস রচিত করেছিলেন ফ্রেদি। কেননা প্রথম কোনো ইংরেজ ক্রিকেটার হিসেবে অ্যাশেজে এক সিরিজে ৪০০+ রান ও ২০+ উইকেট শিকারের নজীর সৃষ্টি করেছিলেন ফ্রেদি। সেই অ্যাশেজে অস্ট্রেলিয়াকে ২-১ ব্যবধানে হারিয়ে ১৯ বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়েছিলো ইংল্যান্ড। যেখানে নায়ক ছিলেন ফ্রেদি। অথচ অ্যাশেজের নায়ক বনে যাওয়া তো দূরের কথা কাঁধের ইনজুরিতে পরে অ্যাশেজটাই মিস করার সম্ভাবনা ছিলো ফ্রেদির! আহ স্মৃতি; কত্তো সুন্দর।

ক্রিকেট সুন্দর হয়ে উঠে এমন দৃশ্যেই!
(Photo by Tom Jenkins/Getty Images)

এবার আরেকটু পিছনে ফিরে ২০০৪ সালের স্মৃতিতে যেতে চাই। যেই স্মৃতিতেও ফ্রেদি ছিলেন দুর্দান্ত; দুরন্ত। পাওয়ারফুল ব্যাটিংয়ে ততোদিনে ফ্রেদি এসেছিলেন আলোচনায়। কিন্তু পাওয়ারফুল ব্যাটিংয়েও এমন অনবদ্য ইনিংস খেলা যায়? উত্তরটা ফ্রেদিই ভালো বলতে পারবে।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এজবাস্টনে ৭ নাম্বারে নেমে ১৭ বাউন্ডারি আর ৭ ওভার বাউন্ডারিতে ১৬৭ রানের অসাধারণ এক ইনিংস। সাদা পোশাকের এই ম্যাচেও ফ্রেদির স্ট্রাইকরেট ছিলো প্রায় ৮৮; এদিকে দুর্দান্ত না বলে উপায় নেই। এজবাস্টনের এই ইনিংসটিই ছিলো সাদা পোশাকে ফ্রেদির সেরা ইনিংস।

অ্যাশেজের আগে ফ্রেদি যে আলোচনায় ছিলো না তা নয়! ওয়েস্টের বিপক্ষে ক্যারিয়ার সেরা ইনিংসের আগে ২০০২ সালে কিউইদের বিপক্ষে অনবদ্য ১৩৭ ও পরের বছর আফ্রিকার বিপক্ষে লর্ডসে খেলেছিলেন দুর্দান্ত এক ইনিংস। যদিও তার একার লড়াইটা স্মরণীয় করে রাখতে পারেনি, তবে ঠিকই লর্ডসের অনার্স বুকে নিজের নামটি লিখেছেন ফ্রেদি। ২০০৫ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৩ উইকেটের জয়ের ম্যাচেও সেঞ্চুরির উদযাপন করেছিলেন ফ্রেদি। অস্ট্রেলিয়া, ভারত, আফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো দলের বিপক্ষেও ফ্রেদি ছিলেন বেশ পরিক্ষিত পারফর্মার।

ব্যাটার ফ্রেদির কথা বাদ দিলে আসবে বোলার ফ্রেদির গল্প। যেই গল্পে বল হাতে গতি আর লাইন লেন্থের মিশলে দুর্দান্ত সব রিভার্স সুইংয়ে লিখেছেন সাফল্যের গল্প। টেস্ট ক্যারিয়ারে ৩ বার ফাইফারের উদযাপনে মাতা ফ্রেদি হারের তিন ম্যাচের একটিতেও দেখেনি হারের মুখ! বোলার ফ্রেদির রূপকথার গল্পটা ২০০৪ সালেই হয়েছিলো রচিত। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৫৮ রানে ৫ উইকেট শিকার করে ধ্বস নামিয়েছিলেন বিপক্ষের ব্যাটিং লাইনআপে। সেই ম্যাচটিতে ৭ উইকেট শিকারী ফ্রেদির ইংল্যান্ড জিতেছিলো ৮ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে।

ইকোনমিক ১.২৭!

ফ্রেদি যে শুধু বাউন্সি উইকেটেই বল হাতে তাণ্ডব চালিয়েছেন তা নয়! মুম্বাইয়ে ভারতের বিপক্ষে মাত্র ১৪ রানে পকেটে পুড়েছিলেন ৩ উইকেট। দারুণ সব ইয়র্কার আর রিভার্স সুইংয়ে নিজেদের দ্বিতীয় ও সবমিলিয়ে চতুর্থ ইনিংসে ১১ ওভার হাত ঘুরিয়ে মাত্র ১৪ রান খরচ করেছিলেন ফ্রেদি; ম্যাচটিতে দুই ইনিংসেই ফিফটির দেখা পাওয়া অধিনায়ক ফ্রেদি জিতেছিলেন ম্যাচ সেরার পুরষ্কার। ইহাকে আপনি দুর্দান্ত বলতেই পারেন।

সাদা পোশাকে যেসব রেকর্ডে আছে ফ্রেদির নাম:

• টেস্ট ক্রিকেট অলরাউন্ডারদের রেকর্ডের কমতি নেই। এর মাঝে কিছু রেকর্ড রয়ে যায় স্মৃতির মাতায়; প্রথম পাতায়। এই গল্পেও রয়েছে ফ্রেদি। ৫/৬ ম্যাচের টেস্ট সিরিজে ৪০০+ রান ও ২০+ উইকেট শিকারী আট অলরাউন্ডারের একজন তিনি।

• এক ক্যালেন্ডারে ৫০/৫০+ উইকেটের ঘটনা ১০৫ বার। যেখানে এক ক্যালেন্ডার ইয়ারে (২০০৫ সাল) ৬৮ উইকেট নিয়ে ফ্রেদি রয়েছেন ২২ নাম্বারে!

• টেস্টে সর্বনিম্ন ৩৫০০ রান করা ক্রিকেটারদের মাঝে সর্বোচ্চ স্ট্রাইকরেটে রান করা ক্রিকেটারদের তালিকায় ফ্রেদির অবস্থান ৭ম স্থানে।

• টেস্ট ক্যারিয়ারে সর্বোচ্চ ছক্কা হাঁকানো ব্যাটারদের তালিকায় ৮২ ছক্কা হাঁকিয়ে ফ্রেদি আছেন ১০ম স্থানে।

এমন আরও বেশকিছু রেকর্ডে রয়েছে ফ্রেদির নাম। আজ না হয় সেদিকে না যাই।

সাদা পোশাকের গল্প বাদ দিয়ে রঙিন পোশাকে তাকালে দেখা যায় ফ্রেদি রঙিন পোশাকেও ছিলেন দারুণ এক অলরাউন্ডার। ১২২ ম্যাচে ৩২ গড়ে ৩৩৯৪ রান ও ২৪.৩৮ গড়ে ১৬৯ উইকেটের পরিসংখ্যান অন্তত এটাই বলে।

রঙিন পোশাকে রঙিন অভিষেক হয়েছিলো ফ্রেদির, সেটিও দেশের বাহিরে! শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে পাকিস্তানে নিজের অভিষেক ম্যাচে ৬ নাম্বারে নেমে ফিফটির দেখা পেলেও দলকে জয়ের স্বাদ দিতে পারেনি ফ্রেদি। তবে নিজের অভিষেকটা মন্দ ছিলোনা তার।

রঙিন পোশাকে জয়ী ম্যাচে ফ্রেদি ছিলেন বেশ রঙিন! ৬৯ টি জয়ী ম্যাচে ৪৫ গড়ে ১৮২৮ রান ও ১০৮ উইকেট অন্তত সেটিই বলে। স্ট্রাইকরেটও ছিলো ১০০ পেরিয়ে। যদিও জয়ী ম্যাচে ফ্রেদির সেঞ্চুরি মাত্র ১ টি, রয়েছে একটি ৯৯ রানের ইনিংসও।

২০০৩ সালের স্মৃতিতে ফিরলে আপনি যেই ফ্রেদিকে দেখতে পাবেন সেই ফ্রেদিকে নিয়ে একটা মহাকাব্য লেখা সম্ভব। ১২ ম্যাচে ৬৫ গড়ে রান; চার ফিফটি। যেখানে ছিলো হ্যাটট্রিক ফিফটির রেকর্ডও। শুধু তাই নয়, জয়ী ম্যাচে ২০০০ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত ১০০+ স্ট্রাইকরেটে রান করেছিলেন ফ্রেদি! এবার অন্য গল্পে ফেরা যাক।

৫৪/৩ থেকে ২৮০/৭; ফ্রেদির ১২৩…

ফিরে যাই ২০০৪ সালে, প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বোলারদের বোলিং তোপে ৫৪ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ধুঁকছিলো ইংল্যান্ড। সেদিন পাঁচ নাম্বারে নেমে ১০৪ বলে ৪ চার ও ৭ ছক্কায় ১২৩ রানের অসাধারণ এক ইনিংস খেলেছিলেন, দলকে এনে দিয়েছিলেন লড়াকু পুঁজি। যদিও গেইল তাণ্ডবে জয় পাওয়া হয়নি ফ্রেদির। এটিই ছিলো ফ্রেদির ওয়ানডে ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ স্কোর! সেদিন দলের জয় পাওয়া না হলেও লর্ডসের অনার্স বুকে নাম লিখিয়েছিলেন ফ্রেদি, ঠিক ঐ টেস্টের মতো।

গল্পটা বেদনার; তীব্র আকাঙ্খার!
আবারও সেই ২০০৪ সালের স্মৃতি, এবারের স্মৃতিটি দলীয় হতাশার না হলেও ফ্রেদির জন্য ছিলো হতাশার। ভারতের বিপক্ষে ঘরের মাঠে ব্যাট হাতে দুরন্ত ফ্রেদি! দারুণ সব শটে মুগ্ধ করে চলছিলেন দর্শকদের। ফিফটির উদযাপন শেষে সেঞ্চুরির দ্বারপ্রান্তে! ঠিক ৯৯ রানে ব্যাট করতে থাকা ফ্রেদি আউট হয়েছিলেন ঐ ৯৯ রানেই। ১ রানের আক্ষেপ ফ্রেদিকে পুড়িয়েছিলো বেশ!

ওয়ানডে ক্রিকেট ফিফটি বা সেঞ্চুরি দিয়ে শুধু ফ্রেদিকে মাপা ভুল হবে। কেননা ৫-৭ নাম্বারে ব্যাটিংয়ে নামা ফ্রেদি দলের প্রয়োজন মিটিয়েছিলেন বেশ। রয়েছে বেশকিছু ক্যামিও! যেগুলো দলের জয়ে রেখেছিলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। ফ্রেদিও ঠিকই পৌঁছে গেছে কিংবদন্তিদের কাতারে। বনে গেছেন অন্যতম সেরা এক অলরাউন্ডার!

ওয়ানডে ক্রিকেটে যেসব রেকর্ডের সাথে যুক্ত ফ্রেদি..

• একই ম্যাচে ফিফটি ও চার উইকেট নেওয়ার ঘটনা ৫৩ বার! যেখানে একটি জায়গা নিজের করে নিয়েছেন ফ্রেদি। বাংলাদেশের বিপক্ষে ২০০৪ সালে ব্যাটে হাতে অপরাজিত ৫৫ রানের সাথে বল হাতে নিয়েছিলেন ১৪ রানে চার উইকেট!

• ওয়ানডে ক্রিকেটে হ্যাটট্রিকের ঘটনা ৪৭ বার, যার একটি করেছেন ফ্রেদি।

• ওয়ানডে ক্রিকেটে টানা ১৭ ইনিংসে কমপক্ষে ১ টি উইকেট শিকার করেছেন ফ্রেদি!

• ম্যাচে ফ্রেদির রানের চেয়ে বিপক্ষের রান সংখ্যা ছিলো কম! ওয়ানডে ক্রিকেটে ৬৮ বার ঘটেছে এমন ঘটনা। যেখানে রয়েছে ফ্রেদির নামও!

হঠাৎ-ই ফ্রেদির বিদায়!

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বল হাতে দুর্দান্ত তিনি, টপ অর্ডারের দুই ব্যাটারকে ততক্ষণে পকেটে পুড়েছেন। কিন্তু শেষের গল্পটা রাজকীয় হবে কেউই ভাবেনি হয়তো। সেদিন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করে বসেন ফ্রেদি। ম্যাচে মাত্র ১৯ রানে ৫ উইকেট নিয়ে ফ্রেদি যেনো জানান দিয়েছিলেন বয়সটা বাড়লেও ফুরিয়ে যাননি তিনি। নিজের শেষ ম্যাচে ক্যারিয়ার সেরা বোলিং করা ফ্রেদি হঠাৎ-ই অবসর ঘোষণা দেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে। ঠিক যেমন স্কুলকে না বলেছিলেন ভালো ফলাফলের পরেও!

ইনজুরি যেনো অ্যান্ড্রুর নিত্যদিনের সঙ্গী!
(Photo by Philip Brown/Popperfoto via Getty Images/Getty Images)

পরবর্তী সময়ে অবশ্য ক্রিকেটে ফিরেছিলেন ফ্রেদি, টি-২০ ব্লাস্টে দলকে তুলেছিলেন ফাইনালে। শিরোপা উল্লাস করা না হলেও ফ্রেদির দু’টি ছক্কা যেনো বলছিলো ক্রিকেটকে আরোও কিছু দেবার আছে তার! যদিও শেষ পর্যন্ত ২০১৪ সালে সব ধরনের ক্রিকেটকে বিদায় জানান তিনি।

ব্যক্তিজীবনে অলরাউন্ডার ফ্রেদি!

শুধু ক্রিকেট মাঠেই নন, ফ্রেদি ব্যক্তিজীবনেও অলরাউন্ডার তিনি। কেননা ক্রিকেটকে বিদায় বলার পরে তিনি যুক্ত হয়েছিলেন পেশাদার বক্সিংয়ে, যেখানে ২০১২ সালে বক্সিং রিংয়ে অভিষেক হয়েছিলো তার। রিংয়েও ফ্রেদিকে হারাতে পারেনি কেউই, কেননা ক্যারিয়ারে একটি ম্যাচ খেলা ফ্রেদি উদযাপনে মেতেছিলো জয়ের। এখানেই শেষ নয়, ফ্রেদি ইংল্যান্ডের বড় একজন টেলিভিশন ব্যক্তিত্বও! টক শো কিংবা ক্রিকেট মাঠে এখনো দেখা যায় ফ্রেদিকে….

যেসব পুরষ্কারের সংস্পর্শ পেয়েছেন ফ্রেদি:

• এনবিসি ডেনিস কম্পটন পুরস্কার – ১৯৯৭ সাল।
• ক্রিকেট লেখক ক্লাব যুব বর্ষসেরা ক্রিকেটার – ১৯৯৮ সাল।
• ওয়াল্টার লরেন্স ট্রফি – ১৯৯৯ সাল।
• বিবিসি বর্ষসেরা ক্রীড়াব্যক্তিত্ব ৩য় স্থান – ২০০৪ সাল।
• উইজডেন বর্ষসেরা ক্রিকেটার – ২০০৪ সাল।
• আইসিসি বর্ষসেরা ওডিআই ক্রিকেটার – ২০০৪ সাল।
• উইজডেন বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ক্রিকেটার – ২০০৫ সাল।
• পিসিএ বর্ষসেরা খেলোয়াড় – ২০০৪ ও ২০০৫ সাল।
• আইসিসি বর্ষসেরা ক্রিকেটার – ২০০৫ সাল।
• কম্পটন-মিলার পদক – ২০০৫ সাল।
• বিবিসি বর্ষসেরা ক্রীড়াব্যক্তিত্ব – ২০০৫ সাল।
• এমসিসি স্পিরিট অব ক্রিকেট পুরস্কার – ২০০৫ সাল।
• অর্ডার অব দ্য ব্রিটিশ এম্পায়ার (এমবিই) – ২০০৬ সাল।

ছোট্ট বেলা থেকেই ফ্রেদি ছিলেন ক্রিকেট নামক নেশায় আসক্ত! পিটার স্লিপের সংস্পর্শে নিজেকে গড়ে তুলেছিলেন ফ্রেদি। সেদিন হয়তো পিটারও ফ্রেদিকে নিয়ে এতো আশা করেনি, কিন্তু ফ্রেদি ঠিকই নিজেকে নিয়েছেন অনন্য উচ্চতায়। ফ্রেদি ১৯৭৭ সালের আজকের দিনে বাবা মায়ের কোলে এসেছিলেন ল্যাঙ্কাশায়ারের প্রেস্টন এলাকায়। যার মানে আজ ফ্রেদির জন্মদিন। আজকের এই শুভ দিনে ফ্রেদিকে জানাই জন্মদিনের শুভেচ্ছা।

শুভ জন্মদিন ফ্রেদি।

 

, ,

মন্তব্য করুন

এই বিভাগের আরো খবর