বিশ্ব ক্রিকেট মাতানোর অপেক্ষায় এবি ডি ২.০!

Arfin Rupok
  • প্রকাশিত সময় : শনিবার, ৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২২
  • শেয়ার করুন

  • Facebook
(Photo by Matthew Lewis-ICC/ICC via Getty Images)

পরিস্থিতি কিংবা পিচের সাথে মানিয়ে নেওয়া, বলের গুণাগুণ বিচার করে কখনো ড্রাইভ আবার কখনো বা পুল শট! মূহুর্তেই ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরে বল সীমানার ওপারে আঁচড়ে ফেলা, ইয়র্কার বলটিও অবলীলায় গ্যালারীতে পাঠানো। এই সবগুলো স্মৃতিতে আপনি যাকে খুঁজে পাবেন তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার কিংবদন্তি এবি ডি ভিলিয়ার্স। আজকের গল্পটি এবিডিকে নিয়ে নয়, তবে অনেকাংশই এবিডির মতো ব্যাটিং করা এক বিস্ময় বালককে নিয়ে। যাকে ‘বেবি এবি’ কিংবা এবি ডি ২.০ নামে ইতিমধ্যেই চিনেছে বিশ্ব। বলছি আফ্রিকার জার্সিতে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ মাতানো ডিওয়াল্ড ব্রেভিসয়ের কথা।

শৈশবে প্রেমে পড়েছিলেন ক্রিকেটের, সেটিও এবি ডি’কে দেখেই। সেই ছোট বেলা থেকেই এবিডিকে আইডল মেনে আসা ব্রেভিস স্কুল জীবন কাটিয়েছেন প্রিয় ক্রিকেটারের হোয়ার সেউনস্কুলেই। এখানেই শেষ নয়, ছোট বেলায় এবিডির ব্যাটিং দেখে ঠিক সেভাবেই ব্যাটিং করার চেষ্টাও চালিয়েছেন অনবরত। অবশেষে যেনো এবিডি হয়েই হাজির হয়েছেন যুবাদের বিশ্বমঞ্চে। ব্যাটিং স্ট্যান্স, পাওয়ার হিটিং, শট সিলেকশন সবকিছুতেই অসাধারণ সাদৃশ্য ভিলিয়ার্সের সাথে। এটিকে আপনি দুর্দান্ত বলতেই পারেন।

স্বপ্নবাজরা পরিশ্রমী হয়, ত্যাগ কিংবা সাধনায় গড়ে তোলেন নিজেদের। ব্রেভিসও যেনো তেমনই এক স্বপ্ন বাজ। এবিডিকে আইডল মেনে লালন করেছেন হৃদয়মাঝে, পরিশ্রম আর অধ্যবসায়ে বিশ্ব ক্রিকেটকে বাধ্য করেছেন নিজেকে আলোচনায় আনতে। আহ কি দুরন্ত ব্রেভিস!

একজন কিংবদন্তি হাজারো তরুণের আইড হবে এটি অস্বাভাবিক কিছুই নয়, তাই বলে একজন আইডলের ছায়া হয়ে নিজেকে প্রমান করা চাট্টিখানি কথা নয়! বিশ্বমঞ্চে আফ্রিকার জার্সিতে ৬ ম্যাচ প্রমাণের সুযোগ পাওয়া ব্রেভিস ৮৪.৩৩ গড়ে করেছেন ৫০৬ রান! যেখানে তার ইনিংসগুলো ৬৫, ১০৪, ৯৬, ৯৭, ৬ ও ১৩৮। নার্ভাস নাইন্টিনে দু-দুবার আউট না হলে যুব বিশ্বকাপে হ্যাটট্রিক সেঞ্চুরির উদযাপনে মাততেন তিনি। সেঞ্চুরি মিসের আফসোস থাকলেও এবিডির মতো ছক্কা হাঁকানোয় পিছিয়ে ছিলেন না তিনি! আসরে ১৮ ছক্কা হাঁকিয়ে গড়েছেন রেকর্ড। এক বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ছক্কার সাথে সর্বোচ্চ রানেও রেকর্ডও এখন এবিডি ২.০ এর দখলে।

এ যেনো ডাবল এবি ডি!

ব্যাটার এবিডি বল হাতেও ছিলেন পারদর্শী, ব্রেভিসও নেই পিছিয়ে! তবে ব্রেভিস মিডিয়াম পেসার নয়, লেগ স্পিনার হিসেবে গড়ে তুলেছেন নিজেকে। আসরে পকেটে পুড়েছেন ৭ উইকেট। এবিডিকে আদর্শ মানা ব্রেভিস যেনো এবিডির ছায়া হয়েই আফ্রিকার জার্সি জড়িয়েছেন গায়ে।

ইতিমধ্যেই বিশ্ব ক্রিকেটে নজর কেড়েছেন ব্রেভিস! সতীর্থরা ডাকে ‘বেবি এবিডি’ নামে। এরমাঝে যুব বিশ্বকাপে আফ্রিকার কোচ হয়ে আসা কনরাড জানান, “ব্রেভিস এমন একজন খেলোয়াড় যে এখন সবার মুখে মুখে। তিনি এবি ডি ভিলিয়ার্স ২.০। সে দারুণ একজন প্রতিভাবান।”

ব্রেভিস যেনো সবার মুখে মুখে! নজরে এসেছেন আইসিসির নামীদামী চোখেও। ব্রেভিসের ব্যাটিং দেখে আইসিসির পন্ডিত নাটালি জার্মানোস বলেন, “ব্রেভহস অনেক মেধাবী ক্রিকেটার। আমি তার ক্রিকেটীয় উত্থানের অনেক গল্প শুনেছি, এবং তাকে কিছুটা দেখেছি। আমরা সবাই জানি সে এবি ডি ভিলিয়ার্সের মতো খেলে, তার মতোই বল স্ট্রোক করে। বল ও ব্যাট হাতে টুর্নামেন্টে তিনি উজ্জ্বল। তিনি একজন ভবিষ্যত তারকা, আমি সত্যিই মনে করি সে দক্ষিণ আফ্রিকার ভবিষ্যত।”

এখানেই শেষ নয়, ব্রেভিসের ব্যাটিং নিয়ে আইসিসির ধারাভাষ্যকার অ্যালান উইলকিন্স বলেন, “তিনি দারুণ একজন ব্যাটার, অনেক দুঃসাহসী শট খেলেন। তার পাওয়ার হিটিং এবং শট সিলেকশন অসাধারণ। দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটের জন্য একটি শক্তিশালী অস্ত্র হতে চলছে। আমি মনে করি ব্রেভিস সেই পথেই হাঁটছে।”

বয়সটা ১৯ ছুঁই ছুঁই; ইতিমধ্যেই বিশ্ব ক্রিকেটের সৌন্দর্য হয়ে উঠার আভাস দিয়েছেন ব্রেভিস! অবশ্য এর পেছনে রয়েছে অনেক গল্প। গল্পগুলো জানিয়েছেন ব্রেভিস নিজেই। ব্রেভিস আইসিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “আমি মনে করি খেলার প্রতি আবেগ এবং ভালোবাসা নিয়ে জন্মেছি। আমি এবং আমার ভাই সবসময় বাড়ির পিছনের দিকের ক্রিকেট খেলতাম, খেলার জন্য তারও উচ্চাকাঙ্ক্ষা ছিল, প্রচুর আবেগ ছিল, প্রচুর হাসি ছিল, প্রচুর কান্না করছিল।
আমার মা সবসময় আমাকে বিশ্বাস করতে বলেছিলেন যে আমি কিছু করতে যাচ্ছি। সেটি ক্রিকেট নিয়ে, যেটি আমি করতে চাই। এটাই আমাকে চালিত করে সবসময়।”

কিভাবে এবি ডির প্রেমে পড়া? উত্থানের গল্পে কতোটা জায়গা জুড়ে রয়েছে এবি ডি? কিংবা কতোটা কাছাকাছি এবি ডির! এমন সব প্রশ্নের জবাবও দিয়েছেন ব্রেভিস! জানিয়েছেন, “আমার বেড়ে ওঠার যুগে এবি ডি ভিলিয়ার্সকে চেনা, ছোটবেলা থেকেই সে আমার জন্য আদর্শ। বড় হয়ে ওকে সুপারস্পোর্ট পার্কে প্রথমবারের মতো টিভিতে লাইভ দেখেছিলাম। আমি সবসময় তার ব্যাটিং উপভোগ করি, ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরে বোলারদের মোকাবেলা করা, আক্রমণাত্মক হওয়া পছন্দ করতাম। এবি ডির সাথে আমার দারুণ সম্পর্ক, আমি তার সাথে অনেক কথা বলি। সে আমাকে উন্নতির জন্য পরামর্শ দেন। আমি তার অনেক সাহায্য পেয়েছি যা আমাকে এগিয়ে নিয়েছে। আমি এবি ডির অনেক শট পছন্দ করলেও আমাকে অল্প কিছু শট বেছে নিতে হয়। যার একটি স্ট্রেইট ড্রাইভ আর একটি ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরে খেলা।”

এবি ডি’কে দেখে ক্রিকেটের প্রেমে পড়া, এবি ডিকে অনুসরণ করে বাইশ গজে পা রাখা। ব্যাটিং স্যান্স, কিংবা শট; সবকিছুই যেনো মনে করিয়ে দেয় এবি ডি ভিলিয়ার্সের কথা। ব্রেভিস এবি ডিকে আইডল মেনে গায়ে জড়িয়েছেন ঠিক ১৭ নাম্বার জার্সিটিও। হয়তো এবিডির মতো একদিন বিশ্ব ক্রিকেটে রাজত্ব করার তীব্র বাসনা রয়েছে তার। ইতিমধ্যেই নাম লিখিয়েছিলেন আইপিএলের নিলামে, এবার যদি কোনো দলে সুযোগ পেয়ে যান তাহলে এক এবিডির শূন্যতা এবি ডি ২.০ দিয়ে ঘুচানোর কিছুটা সুযোগ থাকবে হয়তো!

 

, , , , , ,

মন্তব্য করুন

এই বিভাগের আরো খবর