২২ গজের আদ্যোপান্ত ব্যাটিংয়ের নায়করা

Marajul Islam
  • প্রকাশিত সময় : সোমবার, ৩ আগস্ট, ২০২০
  • শেয়ার করুন

  • Facebook

‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলরে’-

রবীন্দ্রনাথের এই অমর গানটি যদি ক্রিকেটের বেলায় মানি তাহলে হতাশই হতে হবে। আগাগোড়া টিমওয়ার্কের ফসল ক্রিকেট খেলাতে হয়ত কেউ একা ম্যাচ জিতাতে পারবেন কিন্তু একার পক্ষে কোনকিছুরই আদতে সম্ভব না। রান করতে গেলে বিপরীত পাশে আরেকজন পার্টনার লাগবে, বোলিং-এর সময়ও একই কথা।

আর ব্যাটিংয়ের সময় যখন কোন ওপেনার ইনিংসের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ক্রিজে থাকে মানে তাকে আউট করা যায় না সেটাকে ক্রিকেটীয় ভাষায় বলে ‘ক্যারিং দ্যা ব্যাট। শুধুমাত্র ওপেনাররা এই রেকর্ড করতে পারে। একলা চলরে গানটার সুরে সে তাল মিলালেও শেষ পর্যন্ত সে আর পারে না। হতাশ হয়ে ফিরতে হয় তাকে প্যাভিলিয়নে। কিন্তু এই হতাশার মধ্যে রয়েছে গৌরবের ছোঁয়া। কেননা ক্রিকেট ইতিহাসে খুব কম ব্যাটসম্যানেরই (ওপেনার) এই কীর্তির রেকর্ড আছে।

ওয়ানডেতে হিসেব করলে এই রেকর্ড আছে মাত্র ১২ জনের। চলুন সেই ১২ জন কারা সেটা জেনে আসি,

১/ গ্রান্ট ফ্লাওয়ার (জিম্বাবুয়ে)

ওয়ানডেতে ‘ক্যারিং দ্যা ব্যাটের সর্বপ্রথম নজিরটি করেন জিম্বাবুয়ের গ্রান্ট ফ্লাওয়ার। ১৯৯৪ সালে ১৫ ই ডিসেম্বর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিডনিতে তিনি ওপেন করতে নেমে শেষ ব্যাটসম্যান আউট হওয়ার পরও অপরাজিত থাকেন ৮৪ রানে। জিম্বাবুয়ে সংগ্রহ করে ২০৫ রান। জবাবে ইংল্যান্ড অলআউট হয় ১৯২ রানে। জিম্বাবুয়ে ম্যাচটি ১৩ রানে জিতে নেয়। ম্যাচসেরা হন গ্রান্ট ফ্লাওয়ার।

উল্লেখ্য এই ম্যাচে গ্রান্টের ওপেনিং পার্টনার ছিল তার ভাই এন্ড্রি ফ্লাওয়ার।

২/ সাইদ আনোয়ার (পাকিস্তান)

প্রথম ‘ক্যারিং দ্যা ব্যাট জিম্বাবুয়ের হয়ে ঘটলেও পরের বার হয় জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। ১৯৯৫ সালের ২২ শে ফেব্রুয়ারিতে জিম্বাবুয়ে সফরের ১ম ওয়ানডেতে স্বাগতিকদের ২১৯ রানের জবাবে পাকিস্তান ব্যাটিংয়ে নামে। সাইদ আনোয়ার ছাড়া আর কেউ বলার মত খেলতে পারে নি। সাইদ আনোয়ার প্রথম বল থেকে শেষ উইকেট পরা পর্যন্ত উইকেটে থাকে। করেন ১৩১ বলে ১০৩ রান। তারপরও জিতাতে পারেননি দলকে। ম্যাচটি শেষ পর্যন্ত টাই হয়।

৩/ নিক নাইট (ইংল্যান্ড)

পাকিস্তানের হয়ে ব্যাট ক্যারি করার পর এবার পাকিস্তানের বিপক্ষে ক্যারি করার পালা। ১৯৯৬ সালের ১লা সেপ্টেম্বর নটিংহ্যামশায়ারে সেই কাজটিই করেন ইংল্যান্ডের নিক নাইট। ইংল্যান্ডের করা ২৪৬ রানের মধ্যে তিনি করেন অপরাজিত ১২৫ রান।

৪/ রিডলি জ্যাকবস (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)

আগের তিন বার ধারাবাহিকতা রক্ষা হলেও এবার আর তা ঘটে নি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের রিডলি জ্যাকবস তা করতে দেননি। ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে রিডলি জ্যাকবস অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ইনিংসের শুরু থেকে ব্যাট করে শেষ ব্যাটসম্যান আউট হওয়ার পরও অপরাজিত থেকে করেন ৪৯ রান। আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের মোট সংগ্রহ ছিল ১১০ রান।

৫/ ডেমিয়েন মার্টিন (অস্ট্রেলিয়া)

আবার ধারাবাহিক হওয়ার পালা! অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হয়েছে এবার কোন অস্ট্রেলিয়ান এর করার পালা। আর এই কাজটিই করেন ডেমিয়েন মার্টিন। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অকল্যান্ডে ২০০০ সালে তিনি ইনিংসের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ব্যাট করে করেন ১১৬ রান। অস্ট্রেলিয়া অলআউট হয় ১৯১ রানে।

৬/ হার্শেল গিবস (সাউথ আফ্রিকা)

পাকিস্তানের পাওনাটা এবার বুঝে নেবার পালা।
ডেমিয়েন মার্টিনের ক্যারি দ্যা ব্যাটের ২৫ দিন পর বিশ্ব ক্রিকেট আরেক বার দেখল এই কীর্তি। পাকিস্তানের বিপক্ষে হার্শেল গিবস শুরু থেকে ব্যাট করে শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন ৫৯ রানে। তবে এই ইনিংসে সাউথ আফ্রিকা অলআউট হয়নি। ওপেনার গ্যারি কারস্টেন শুরুতে রিটায়ার্ড হাট হলে আর ব্যাট করতে নামেন নি। সেই ম্যাচে পাকিস্তান ১৬৮ রান করলেও শোয়েব আকতারের বোলিং তোপে সাউথ আফ্রিকা ১০১ রানে থেমে যায়।

৭/ এলেক স্টুয়ার্ট (ইংল্যান্ড)

২০০০ সালকে ক্যারি দ্যা ব্যাটের বছর বললে ভুল হবে না। কারণ এই বছরে মোট তিনবার ক্যারি দ্যা ব্যাটের ঘটনা ঘটে। উক্ত বছরে শেষ বারের মত ঘটনাটি ঘটান ইংল্যান্ডের এলেক স্টুয়ার্ট। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ১৯৫ রানের জবাবে ইংল্যান্ড সেই ম্যাচে অলআউট হয় ১৯২ রানে। ওপেনিংয়ে নেমে ১৪৭ বলে ১০০ রানের ইনিংস খেলে অপর প্রান্তে অপরাজিত থাকলেও, স্টুয়ার্টকে শেষ পর্যন্ত দেখতে হয় দলের হার।

৮/ জাভেদ ওমর বেলিম (বাংলাদেশ)

এবার বাংলাদেশের পালা। আর সেই কাজটি বেলিম গোল্লা ছাড়া আর কেই বা করতে পারে! জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওপেনিং করতে নেমে শেষ ব্যাটসম্যান আউট হওয়া পরও তিনি অপরাজিত থাকেন ৩৩ রানে। বাংলাদেশের মোট সংগ্রহ ছিল ১০৩ রান। ক্যারি দ্যা ব্যাটের ক্ষেত্রে তার করা ৩৩ রানই সর্বনিম্ন।

৯/ আজহার আলি (পাকিস্তান)

জাভেদ ওমর ২০০১ সালে ক্যারি দ্যা ব্যাটের কীর্তি করেন। তারপর ওয়ানডেতে এই কীর্তি দেখতে অপেক্ষা করতে হয় আরও ১১ বছর। ২০১২ সালে পাকিস্তানের আজহার আলি শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এই রেকর্ড করেন। ইনিংসের শুরুতে নেমে শেষ ব্যাটসম্যান আউট হওয়া পর্যন্ত তিনি করেন অপরাজিত ৮১ রান।

১০/ টম লাথাম (নিউজিল্যান্ড)

২০১৬ সালের ১৬ ই অক্টোবর ধর্মশালায় ভারতের বিপক্ষে ক্যারি দ্যা ব্যাটের কীর্তি করেন টম লাথাম। শুরু থেকে ব্যাট করতে নেমে শেষ উইকেট পড়ার পর পর্যন্ত অপরাজিত থেকে তিনি করেন অপরাজিত ৭৯ রান।

১১/ উপুল থারাঙ্গা (শ্রীলঙ্কা)

১৬ অক্টোবর ২০১৭ সালে থারাঙ্গা এই কীর্তি গড়েন। পাকিস্তানের ২১৯ রানের জবাবে শ্রীলঙ্কা অলআউট হয় ১৮৭ রানে। ওপেনিংয়ে নামা উপুল থারাঙ্গাকে আউট করতে পারেনি পাকিস্তানের কোন বোলার। শেষ পর্যন্ত তিনি ১৪৪ বল খেলে ১১২ রানে অপরাজিত থাকেন।

১২/ দিমুখ করুণারত্নে (শ্রীলঙ্কা)

১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপের পর আবারও বিশ্বকাপে ক্যারি দ্যা ব্যাটের নজির দেখা যায়। এবার করেন শ্রীলঙ্কার দিমুখ করুণারত্নে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে কার্ডিফে ব্যাট করতে নেমে শ্রীলঙ্কা অলআউট হয় ১৩৬ রানে। শুরু থেকে ক্রিজে থেকে শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থেকেই প্যাভিলিয়নে যান তিনি। করেন অপরাজিত ৫২ রান।

শেষ করার আগে একটা মজার তথ্য জানিয়ে যাই, ওয়ানডেতে যারা ‘ক্যারিং দ্যা ব্যাটের কীর্তি করেছে তাদের সবাই ওপেনার। আর কোন বোলারই সেদিন তাদের আউট করতে পারেনি।

 

মন্তব্য করুন

এই বিভাগের আরো খবর