আহহহ অবিশ্বাস্য! কি অসাধারণ! কি দুর্দান্ত!! কোন শব্দে বর্ণণা করবো মিরাজের আজকের ইনিংসটাকে?কোন উপমায় পূর্ণতা পাবে দুঃসাহসিক মিরাজের এই হার না মানা ক্রিকেট যুদ্ধ। তীরে গিয়ে ডুবতে যাওয়া নৌকাটাকে কি নিপুণ ভাবে তীরে ভেরালেন মিরাজ। মুস্তাফিজদের মতো বিশ্বস্ত সৈনিকদের পাশে পেলে তো এই মিরাজ অসাধ্য কে বারবার সাধন করবেন। হে সিরিজের প্রথম ওডিয়াইতে ভারতের বিপক্ষে ১ রানের জয়কে আপনার বিশ্বাস করতেই হবে।
তথাকথিত অভিজ্ঞ পঞ্চপাণ্ডবের তকমা গায়ে জড়িয়েও ম্যাচটা যেভাবে ভারতের হাতে ছেড়ে এসেছিলেন মুশফিক-মাহমুদউল্লাহ, সমালোচনার বিষ তীর তো তাদের প্রাপ্য। মোস্তাফিজকে সাথে নিয়ে ১০ম উইকেট জুটিতে রেকর্ড গড়ে ভারতের বিপক্ষে ১ উইকেটের যে অবিস্মরণীয় জয় এনে দিয়েছেন মিরাজ, সিনিয়রদের তো বলতেই হয় এবার মিরাজের থেকে শিখো।
৪ ই ডিসেম্বর রবিবার প্রায় ১০ মাস পর ঘরের মাঠে খেলতে নামে বাংলাদেশ। ইনজুরির কারণে সিরিজ শুরুই আগেই ছিটকে যায় নিয়মিত অধিনায়ক তামিম ইকবাল। দেশের ১৫ তম অধিনয়াক হিসাবে টস করতে নেমে টসে জিতে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন লিটন কুমার দাস। রহস্য ঘেরা মিরপুরে সাকিব- এবাদতের বোলিয়ের সামনে মাথা তুলে দাঁড়াতে ব্যর্থ শক্তিশালী ভারতের ব্যাটাররা। ভারতকে মাত্র ১৮৬ রানে থামিয়ে দেয়ার পিছনে সাকিবের অবদান ৩৬/৫। ভারতের বিপক্ষে যা যেকোনো বাঁ হাতি স্পিনারের সেরা বোলিং। এবাদতও শিকার করেছেন ৪ উইকেট।
১৮৭ রানের লক্ষ্যটা ছোট মনে হলেও ম্যাচ জিততে এই রানই ছিলো পাহাড়সম। ব্যর্থ ওপেনারদের পর লিটন-সাকিব ৪৭ রানের জুটি গড়লেও পিচে রান করার চেয়ে যেনো ঠিকে থাকাটাই ছিলো কষ্টের। ৬১ বলে ৪৩ রান করে দলীয় ৭৪ রানে ওয়াশিংটন সুন্দরের শিকার হন লিটন দাস। ওয়াশিংটন সুন্দরের দ্বিতীয় শিকার সাকিব আল হাসান। দুর্দান্ত খেলতে থাকা এই অলরাউন্ডার বিরাট কোহলির দুর্দান্ত ক্যাচে পরিণত হয়ে ফিরেন ৩৮ বলে ২৯ রান করে।
৯৫ রানে ৪ উইকেট হারালে ম্যাচের দায়িত্ব পরে মাহমুদউল্লাহ-মুশফিকের কাঁধে। এ দু’জনের জুটিতে সময় যত গড়িয়েছে ডটের পাল্লা তত ভারী হয়েছে। ভারতীয় বোলারদের বিপক্ষে তাদের ৮০ বলের ইনিংসে ছিলো না কোন ৪ বা ছয়ের মার। অথচ তাদের দুজনের ঝুলিতে রয়েছে ৪৫০ ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা। ৮০ বলে দুজনের ৩০ রানের পার্টনারশিপ ভাঙে দলীয় ১২৮ রানে। তাদের ব্যাক টু ব্যাক বিদায়ের পর মাত্র ৮ রানেই ৫ উইকেট পরে যাওয়া বাংলাদেশের হারটা তখন সময়ের ব্যবধান ছিলো। তবে ১০ ম উইকেট জুটিতে মুস্তাফিজকে নিয়ে মিরাজ যা করে দেখালেন তা তো টাইগার ভক্তদের ভাসিয়েছে আনন্দদের সহস্রধারায়।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ভারত: ১৮৬/১০ (৪১.২ ওভার)
রোহিত ২৭, ধাওয়ান ৭, কোহলি ৯, শ্রেয়াস ২৪, রাহুল ৭৩, ওয়াশিংটন ১৯, শাহবাজ ০, শার্দুল ২, চাহার ০, সিরাজ ৯, কুলদিপ ২*
মিরাজ ৪৩/১, সাকিব ৩৬/৫, ইবাদত ৪৭/৪
বাংলাদেশ: ১৮৭/৯ (৪৬.০ ওভার)
লিটন ৪১, শান্ত ০, এনামুল ১৪, সাকিব ২৯, মুশফিক ১৮, মাহমুদউল্লাহ ১৪, আফিফ ৬, মিরাজ ৩৮, ইবাদত ০, হাসান ০, মুস্তাফিজ ১০;
চাহার ৩২/১, সিরাজ ৩২/৩, কুলদিপ ৩৭/২, ওয়াশিংটন ১৭/২, শার্দুল ২১/১
ফল: বাংলাদেশ ১ উইকেটে জয়ী।
ম্যান অব দা ম্যাচ: মেহেদী হাসান মিরাজ।