“দিনটা ১৮৭৭ সালের ১৫ই মার্চ, অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ড সেদিন অপেক্ষায় ছিল ইতিহাসের অংশ হতে। কারন ঝিঝিপোকার ভিন্ন অর্থ দিতে সেদিনই যে দুনিয়ায় সূচনা হয়েছিল ‘ক্রিকেট’ নামের ভদ্রলোকের বিনোদনের এক নতুন মাধ্যমের !”
দুনিয়ায় প্রতাপ ছড়ানো সম্রাজবাদী বৃটিশরা ঐ দিন ইতিহাসের প্রথম অফিশিয়াল কোন ক্রিকেট ম্যাচ খেলতে আতিথেয়তা নেয় তাদেরই আভিবাসিত জাতি অস্ট্রেলিয়ানদের ডেরায়। বর্তমান সময়ের এই ক্রিকেটীয় জৌলুসের ছিটেফোঁটাও হয়ত সেদিন ছিলনা, কিন্তু নিছক বিনোদনের নতুন মাধ্যমের সন্ধান করা রুচিশীলদের প্রায় শ খানেক প্রতিনিধি ঠিকই উপস্থিত ছিলেন সেদিন।
১৫ই মার্চ যখন ব্যাট হাতে ২৫ বছরের এক তরুন মাঠে নেমে স্ট্রাইকিং এন্ড-এ দাঁড়িয়েছেন তখনই আলফ্রেড শ এর ছোড়া প্রথম বলটি সামলে নেয়ার মধ্যদিয়ে ক্রিকেটের প্রথম বল মোকাবেলা করা ইতিহাসের প্রথম ব্যাটসম্যান হওয়ার গৌরবটি পুড়ে নিয়েছিলেন নিজের ঝুলিতে। ইতিহাসটা এখানেই থেমে যেতে পারত, কিন্তু উনার জন্মটাই হয়ত হয়েছিল যুগে যুগে ক্রিকেটপ্রেমী তরুণের মুখে মুখে নিজের নামকে জীবন্ত করে রাখার জন্য। হ্যা, হয়ত বলছি কেনো? উনার জন্মই হয়েছিল নিজেকে ক্রিকেট ইতিহাসে বাঁচিয়ে রাখতে!
ক্রিকেট ইতিহাসের প্রথম বল মোকাবেলা করার কৃতিত্বধারী ব্যাক্তিটি ফিরে যেতে পারতেন নিজের রান দু অংকের ঘরে তোলার আগেই। সৌভাগ্যক্রমে ক্যাচটি ড্রপ হওয়ায় বেচে যান। আর এই বেচে যাওয়াই তাকে চিরস্মরণীয় করে রাখে। ইংল্যান্ড এর বোলারদের স্বাচ্ছন্দ্যের সাথে মোকাবেলা করে ক্রিকেট ইতিহাসের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসাবে নিজের রানকে তিন অংকের ঘরে নিয়ে বনে যান ক্রিকেটের প্রথম সেঞ্চুরিয়ান! অসাধারণ ব্যাটিং প্রদর্শন করে মাঠে উপস্থিত শ খানেক দর্শকের চাওয়া সেই ‘নতুন বিনোদন’ তিনি ঠিকই দিতে পেরেছিলেন। ব্যাটিংরত অবস্থায় জর্জ ইউলিটের বলে আহত হয়ে মাঠ ছাড়ার আগে করেছিলেন ১৬৫ রান! অস্ট্রেলিয়ার অন্য কোন ব্যাটসম্যান সেই ম্যাচে ২০ রানের বেশি করতে না পারলেও ঐ ব্যানারম্যানের জাদুকরি নৈপূন্যে অস্ট্রেলিয়া ইতিহাসের প্রথম টেষ্ট ম্যাচটি জয়লাভ করে ৪৫ রানে।
মজার ব্যাপার হচ্ছে ক্রিকেট ইতিহাসের হওয়া প্রথম তিনটি টেস্ট ম্যাচ খেলে ২৩৯ রান পেলেও চার্লস ব্যানারম্যানের ছোট্ট ক্যারিয়ারে সেঞ্চুরি বা তিন অংক ছোয়ার ঘটনা ছিল ঐ একটিই। ১৮৫১ সালের ৩ জুলাই ইংল্যান্ড এর কেন্টে জন্ম নেয়া ব্যানারম্যান বাবা মা’র সাথে শৈশবেই পাড়ি জমিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ায়। প্রথম তিন ম্যাচ খেলার পর শারীরিক স্বাস্থ্যের অবনতি, তারকাখ্যাতির প্রভাবে নতুন ভাবে নিজেকে আরও ছাড়িয়ে যাওয়ার বদলে জুয়াখেলায় ঋণগ্রস্ত ও অত্যধিক মদ্যপানে আসক্তিসহ নানা কারনে আর জাতীয় দলে ফিরতে পারেন নি। তবে ১৮৮৮ সাল পর্যন্ত প্রথম শ্রেনীর ক্রিকেট খেলেছেন, ছিলেন আম্পায়ারও। ২০ আগষ্ট ১৯৩০ সালে ইতিহাসের প্রথম সেঞ্চুরিয়ান মৃত্যুবরণ করেন।