টেস্টে চতুর্থ ইনিংসে রান তাড়া করে জয়ে সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ হল ৪১৮ রান। ২০০৩ সালের ৯ মে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওয়েস্ট ইন্ডিজ এই রান করে জয়ের রেকর্ড করেন। কিন্তু যদি বলি চতুর্থ ইনিংসে সর্বোচ্চ রান কত? তাহলে হয়ত এটাকেই বলবে অনেকে। কিন্তু চতুর্থ ইনিংসে সর্বোচ্চ রান হল ১৯৩৯ সালের ৩ মার্চ শুরু হওয়া সাউথ আফ্রিকা বনাম ইংল্যান্ডের ম্যাচে,ইংল্যান্ডের করা চতুর্থ ইনিংসে ৫ উইকেটে ৬৫৪ রানটি। হয়তবা যদি জাহাজটা তাদের জন্য অপেক্ষা করত আর একদিনের জন্য তাহলে এই ইনিংসেই রচনা হত সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ডটি।
ইতিহাসের শেষ টাইমলেস টেস্ট ছিল এই ম্যাচটি। এছাড়াও সেই ম্যাচটি ছিল সবচেয়ে লম্বা সময় ধরে চলা কোন ক্রিকেট ম্যাচ। সেই টেস্ট ম্যাচটি সম্পর্কে জানার চেষ্টা করব আজ। তার আগে আরেকটু বলে নেই সেই সময় বিমান যাতায়াত এত সহজলভ্য ছিল না। ফলে এক দেশ থেকে আরেক দেশ কিংবা দুরের কোন স্থানে যাবার জন্য নৌপথ ব্যবহার করা হত।
১৯৩৯ সালে যখন ইংল্যান্ড দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যায় তখন দুই দলই একটা সিদ্ধান্ত নেয় যে।,যদি পঞ্চম অথাৎ শেষ ম্যাচ শুরু আগে যদি সিরিজে কোন দল ১-০ তে এগিয়ে যায় বা ঐ ম্যাচ শুরু হবার আগে সিরিজে সমতা থাকে তাহলে শেষ ম্যাচটি হবে টাইমলেস। তৃতীয় টেস্ট ইংল্যান্ড ইনিংস ব্যবধানে জিতে নিলে এবং চতুর্থ টেস্ট ড্র হলে পঞ্চম তথা শেষ টেস্টটিতে কোন সময় নির্ধারন করা হয়নি।
টাইমলেস টেস্ট অস্ট্রেলিয়ান দল বেশী খেলেছেন। তাদের অভিজ্ঞতা থেকে সাউথ আফ্রিকান অধিনায়ক প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন। কারণ যেই দল আগে ব্যাট করে সেই দলেরেই ম্যাচ জেতার সম্ভাবনা বেশী থাকে। তার উপরে পিচটি ছিল একদম ব্যাটিং স্বর্গ।
টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে দক্ষিণ আফ্রিকা ২০২.৬ ওভারে সব উইকেট হারিয়ে করে ৫৩০ রান। উল্লেখ্য যে তখন ওভার হত ৮ বলে। আফ্রিকার হয়ে ভেন ডার ভিজিল ১২৫ এবং নোউস করেন ১০৩ রান। এছাড়া,উইকেটকিপার গ্রিবেসন করেন ৭৫ রান। আর ইংল্যান্ডের হয়ে রেগ পার্কস নেন ৫ উইকেট। জবাবে ১২২.৬ ওভারে ৩১৬ রানে অলআউট হয় ইংল্যান্ড। লেস আমেস ইংল্যান্ডের হয়ে সর্বোচ্চ ৮৪ রান করেন এবং সাউথ আফ্রিকার ডাল্টন নেন ৪ উইকেট। ২১৪ রানের লিড নিয়ে আবার ব্যাট করতে নামে দক্ষিণ আফ্রিকা।সেখানে ১৪২.১ বলে সব উইকেট হারিয়ে করে ৪৮১ রান। অধিনায়ক এলান মেলেডিন করেন ১০৩ এবং আগের ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান ভিজিল ৯৭ রান করে আউট হয়ে যান।
এর ফলে চতুর্থ ইনিংসে ইংল্যান্ডের জয়ের জন্য টার্গেট দাড়ায় ৬৯৬ রান। অাফ্রিকানরা হয়ত ভেবেছিল তারা ম্যাচটি জিতে যাবে খুব সহজে। ইংল্যান্ড ব্যাটিং করতে নামলে ৭৮ রানে তাদের প্রথম উইকেট পড়ে। তারপরই ইংল্যান্ড অধিনায়ক চমক দেখান। ৩ নম্বরে ব্যাটিংয়ের জন্য পাঠান বিল ইদ্রিচকে। যে আগের ইনিংসে ৬ নম্বরে ব্যাট করেছেন।আর এই ইনিংসের আগে তার সর্বোচ্চ রান ছিল ২৮। তিনিই রুদ্রমূর্তি ধারণ করেন। তারপর ব্যাট হাতে সেই ইনিংসে করেন ২১৯ রান। তার সাথে অধিনায়ক ওয়ালি হেমেন্ডের ১৪৩ এবং পল গিব এর ১২০ রানে ইংল্যান্ড ৫ উইকেটে ৬৫৪ রান করে ফেলেন। তারপর আলোক সল্পতায় ১২ তম দিনের খেলা শেষ হয়।
কিন্তু সেই টেস্ট আর ১৩ তম দিনে গড়ায় নি।কারণ সেদিনই ইংল্যান্ডে যাবার জাহাজ ছেড়ে দেবে। আর পরবর্তী এক মাসে ইংল্যান্ডে যাবার আর কোন জাহাজ নেই। ফলে ম্যাচের সমাপ্তি ঘটিয়ে ইংল্যান্ড দলকে জাহাজ ধরার জন্য যেতে হল। উল্লেখ্য যে এই বিষয়টি সবাই জানত কিন্ত বৈরী আবহাওয়ার জন্য রান সেভাবে করা যাচ্ছিল না। আসলে এই টেস্টের প্রতিটা দিনেই বৃষ্টি হানা দিয়েছে। আর ৫ তারিখ এবং ১২ তারিখে উইকেন্ডের কারণে কোন খেলা হয়নি।
এই ম্যাচটিতে মোট রান হয়েছে ১৮৮১। মোট বল করা হয়েছে ৫৪৪৭ টি যা বর্তমান সময়ের ৮ টি ওয়ানডে ম্যাচের সমান। ইংল্যান্ডের বোলার হেডলি ভ্যারটি এই ম্যাচে মোট ৭৬৬ টি বল করেছেন। যা বর্তমানের ৩ টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ থেকেও কিছু বল বেশী। আর টেস্টে এক দিন এবং দেড় সেশন মিলিয়ে এত বল করা হয়। আর পুরো টেস্ট ম্যাচ জুড়ে ১২ বার নতুন বল নেয়া হয়েছে।
অনেক সময় কিছু জিনিসের অপূর্ণতা ভালো লাগে। ইতিহাসের শেষ টাইমলেস টেস্টে অনেক ধরনের রেকর্ড হলেও ৪২ রান আক্ষেপ হয়ে থাকবে। কিন্তু এই অপূর্ণতা টাই দুই দলকে সমান ভাবে জয়ী করেছে।