১৩ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের পেস বোলারদের গল্প!

প্রতিবেদক
Naim
শুক্রবার, ২৬ জুন , ২০২০ ৬:১৫

লম্বা রান আপ নিয়ে বোলিং করার উদ্দেশ্যে বোলার আস্তে আস্তে পৌঁছালেন তার বোলিং প্রান্তে, লম্বা রান আপ নিয়ে বল করলেন। বলটি মিডিল স্ট্যাম্পে পিচ করে বেড়িয়ে গেলো অফ স্ট্যাম্প মিস করে। আহ্! কতোই না শ্রুতি মাধুরিপূর্ণ সেই মুহুর্তটা! কখনো বল টা অফ স্টাম্পের বাইরে পিচ করে বল খুঁজে নিচ্ছে তার আপন জায়গা কিংবা কখনো অফ স্টাম্পে বল পিচ করে করে সুইং করে বেড়িয়ে যাওয়ার আগে ব্যাটে চুমু দিয়ে বলটি তালুবন্দি হচ্ছে উইকেটরক্ষকের গ্লাভস যুগলে। কিংবা গতির ঝড়ে কখনোবা নাভিশ্বাস ছাড়ানো বাউন্সারে ব্যাটসম্যান যেনো সবুজাভ বিস্তর উদ্যানের বুকে জেগে উঠা ২২ গজের চরে রানের জন্যে হাঁসফাঁস করছে।

আহ্ কি অনিন্দ্য সুন্দর মুহুর্তের স্মৃতিচারণা! মুহুর্ত গুলোর মাধুর্যতার আড়ালে ভেসে আসা নাম গুলো রাতের আকাশের এক একটা জলন্ত তারা। তারায় যেনো আলোকিত এই ধরনীর বুকে জেগে উঠে প্রতিটা ২২ গজের বুক। ২২ গজের বুকে এমন ঝড় উঠলেই আপনার চোখে ভাসে হালের জিমি এন্ডারসন, টিম সাউদি কিংবা ট্রেন্ট বোল্ট, পাট কামিন্স এর মতো তারকাদের নাম।

লম্বা রান আপ নিয়ে বোলিং করার উদ্দেশ্যে বোলার আস্তে আস্তে পৌঁছালেন তার বোলিং প্রান্তে, লম্বা রান আপ নিয়ে বল করলেন। বলটি মিডিল স্ট্যাম্পে পিচ করে বেড়িয়ে গেলো অফ স্ট্যাম্প মিস করে। আহ্! কতোই না শ্রুতি মাধুরিপূর্ণ সেই মুহুর্তটা! কখনো বল টা অফ স্টাম্পের বাইরে পিচ করে খুঁজে নিচ্ছে তার আপন জায়গা কিংবা কখনো অফ স্টাম্পে বল পিচ করে করে সুইং করে বেড়িয়ে যাওয়ার আগে ব্যাটে চুমু দিয়ে বলটি তালুবন্দি হচ্ছে উইকেটরক্ষকের গ্লাভস যুগলে। কিংবা গতির ঝড়ে কখনোবা নাভিশ্বাস ছাড়ানো বাউন্সারে ব্যাটসম্যান যেনো সবুজাভ বিস্তর উদ্যানের বুকে জেগে উঠা ২২ গজের চরে রানের জন্যে হাঁসফাঁস করছে।

কিন্তু আপনার ভাবনার আকাশে অস্ত্র বিহীন ছেদন কাটবে যখন চিন্তার অতল গহব্বরে মগ্ন হবেন এই নিমিত্তে; এমন তারা কি বাংলাদেশের আকাশে নেই? নাকি কালো মেঘের আড়ালে ডাকা পড়ে নিজেকে খোঁজে, নাকি আদতেও তাদের জন্যে নেই সুযোগ সুবিধের বালাই? অবহেলা অনাদরে কিংবা ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে সে তারায় আলোকিত কিংবা অন্ধকার ভুবন গুলোর আলোচনার যাত্রা চলুন শুরু করা যাক-

ক্রিকেটের কুলীন এই ফরম্যাটে বাংলাদেশের পথচলার শুরু টা হয় ২০০০ সালে। এরপর থেকে বাংলাদেশ খেলেছে ১১৯ টি টেস্ট ম্যাচ। তার মধ্যে জয় এসেছে মাত্র ১৪ ম্যাচে। ১১৯ টেস্ট ম্যাচে বাংলাদেশের জার্সিতে খেলেছে ৩৯ জন পেস বোলার। ৩৯ জন পেস বোলারের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ৫৬.৪৩ গড়ে এবং ৯২.৩ স্ট্রাইক রেইটে উইকেট এসেছে ৪৯১ টি!

তন্মধ্যে সবচেয়ে উইকেটের দিক থেকে সবচেয়ে সফল কাপ্তান মাশরাফি বিন মর্তুজা। ৩৬ টেস্ট ম্যাচে মাশরাফি বিন মর্তুজার সংগ্রহে আছে ৭৮ উইকেট। তার ঠিক পরেই ৭২ উইকেট নিয়ে আছেন শাহাদত হোসাইন রাজিব। যদি এভারেজ এবং স্ট্রাইক রেটের দৃষ্টিকোণ থেকে বসানো হয় মাপকাঠি তাহলে দেখা যায় জাতীয় দলে কমপক্ষে ১০ ম্যাচ খেলেছেন এমন খেলোয়াড়দের মধ্যে সবেচয়ে ভালো মুস্তাফিজুর রহমানের বোলিং এভারেজ এবং বোলিং স্ট্রাইক রেইট। মুস্তাফিজুর রহমানের বোলিং গড় এবং স্ট্রাইক রেট যথাক্রমে ৩৫.১৭ এবং ৬৫.৮।

৪৯১ উইকেটের মধ্যে ৩৯ বোলার মিলে দেশের মাঠিতে সংগ্রহ করেছেন ২০৭ উইকেট এবং দেশের বাইরে সংগ্রহের তালিকায় আছে ২৮৪ উইকেট। দেশের মাঠিতে টাইগার পেসারদের সংগ্রহের নৈপথ্যে আছে ৫৫.৩৯ বোলিং গড় এবং ৯৪.৭ বোলিং স্ট্রাইক রেট। দেশের বাইরে যথাক্রমে বোলিং গড় এবং বোলিং স্ট্রাইক রেট ৫৭.১৯ এবং ৯০.৬।

প্রশ্ন টা যখন দেশের বাইরে কিংবা দেশের মাটিতে উইকেটের হিসেব নিয়ে উঠেছে, সেখানে এশিয়ার মাটিতে কিংবা উপমহাদেশের মাটিতে টাইগারদের পেইস বোলারদের পারফরম্যান্স কেমন ছিলো এ নিয়ে প্রশ্ন উঠাটা নয় অস্বাভাবিক কিছুই। বাংলাদেশের ৩৯ পেইসার সর্বসাকুল্যে ৪৯১ উইকেটের মধ্যে এশিয়ার মরা পিচে নিয়েছেন ৩১০ উইকেট বাকি ১৬১ উইকেট নিয়েছেন উপ-মহাদেশের পেস বোলিং স্বর্গের পিচ সমূহে! ভাবতে অবাক হলেও সত্যি এশিয়ার মরা পিচেই সফল বাংলাদেশী পেসাররা৷

নথিপত্র কিংবা স্ট্যাট বলে বাংলাদেশী পেস বোলাররা সবচেয়ে বেশি সফল জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। এমনকি জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশী পেস বোলারদের বোলিং গড় ৪০.৮৭। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশী বোলারদের উইকেট সংগ্রহের তালিকায় আছে ৯৩ টি শিকার, বিপরীতে রয়েছে ১৭ ম্যাচ। কিন্তু শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২০ ম্যাচ টেস্ট খেলেও তাদের বিপক্ষে বাংলাদেশী পেসারদের সংগ্রহ ৯০ উইকেট।

জয়ী ম্যাচে টাইগার পেস বহরের পারফরম্যান্স যেনো ছন্নছাড়া এক কবিতার মতো। ১৪ টেস্ট জয়ে বাংলাদেশের পেস ইউনিটের সহায়তায় ছিলো মাত্র ৪৮ উইকেট। ড্র হওয়া ১৬ টি ম্যাচে বাংলাদেশের পেসারদের সংগ্রহ মাত্র ৪৬ উইকেট। পরিসংখ্যান জানান দেয় টেস্টে টাইগার পেসারদের ৪৯১ উইকেটের মধ্যে ৩৯৭ উইকেট এই ছিলো পরাজিত ম্যাচে।

উইকেটের হিসেবে বাংলাদেশের পেস বোলিং উইনিটের সবচেয়ে স্বর্ণালি সময় ছিলো ২০০৮ সাল। ২০০৮ সালে পেস বোলিং থেকে সবচেয়ে বেশি উইকেট এসেছে। ২০০৮ সালে বাংলাদেশের পেস বোলিং বহরের সৈনিকরা উইকেট শিকার করেন ৪৯ টি। এমনকি চলতি বছর ছিলো বাংলাদেশের পেস বোলিং এর বোলিং গড় এবং বোলিং স্ট্রাইক রেটের জন্যে সেরা।

বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে সর্বসাকুল্যে ৫ উইকেট এর দেখা পেয়েছে মোট ৫৮ বার। তন্মধ্যে পেসারদের সংগ্রহ শালায় আছে মাত্র ৮ বার ৫ উইকেট নেওয়ার কৃতিত্ব৷ পেসারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশিবার ৫ উইকেট নিয়েছেন শাহাদাত হোসেন রাজিব; ৪ বার৷

পেসার অসহায়ত্ব টা পরিষ্কার করার জন্যে চলুন আরো কিছু স্পিন বোলিং নিয়ে কিছু জেনে নেওয়া যাক। আমাদের টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে স্পিনার হিসেবে হাত ঘুরিয়েছেন এমন বোলার রয়েছেন মুটামুটি ৪৪ জন। তাদের সংগ্রহের তালিকা বলে ৪৪ জনে নিয়েছেন ৮২৪ উইকেট। যেখানে এক ম্যাচে ১০ উইকেটের রেকর্ড রয়েছে ৬ বার এবং ৫ উইকেটের রেকর্ড আছে ৫০ বার। আর পেসারদের ক্ষেত্রে ১০ উইকেট তো নস্যি ব্যাপার, ইনিংসে ৫ উইকেট এসেছে মাত্র ৮ বার বার এবং ইনিংসে বেস্ট বোলিং স্কোর ৬/২৭।

পাওয়া না পাওয়ার হিসেবের শেষে বাংলাদেশের পেস বোলিং উইনিট থেকে না পাওয়ার গল্প রচিত হয়েছে অনেক; হয়েছে অনেক আক্ষেপের গল্পের অতলে হারিয়ে অনেক সম্ভাবনার অপমৃত্যু। বাংলাদেশের পেস বোলিং উইনিট মানেই যেনো এখন ব্যর্থতার কাভারে এক আক্ষেপের চিঠির খাম। সেই খাম থেকে কবে আকাশে উদিত হবে তারা এই প্রত্যাশায় শুভাকামনা বাংলাদেশের পেসারদের জন্যে।

, ,

মতামত জানান :