১৩ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

স্যার রিচার্ড হ্যাডলি- চোখজুড়ানো ফাস্ট বোলিং এর শেষকথা

প্রতিবেদক
Marajul Islam
শুক্রবার, ৩ জুলাই , ২০২০ ১০:৪৭

‘আমার মনে আছে, ড্রেসিং রুমে যখন আমি মিউজিক চালিয়ে নাচতাম-গাইতাম, সবাইকে মাতিয়ে রাখতাম, কোচ বব কিউনিস এসে বলতেন, ‘যতটা ভালো নাচো, ততটা ভালো যদি বোলিং করতে পারতে!’ আমি তখন বলতাম, ‘কোচ, আমরা তো আর রিচার্ড হ্যাডলি হতে পারব না, নাচেই ভালো হই!’

উপরের কথা গুলো বলেছেন বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় তারকা ভাষ্যকার ড্যানি মরিসন। তিনি শুধু একজন ভাষ্যকারই নয়, নিউজিল্যান্ডের সাবেক তারকা ফাস্ট বোলার। অবশ্য এটা সকলেরেই জানা! উপরে তার উল্লিখিত কথাগুলো দিয়ে স্যার রিচার্ড হ্যাডলীর গ্রেটনেস যাচাই করা যায়। নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেটে তাকে কোন তারকা না বলে, সেদেশের ক্রিকেটের সূর্য বললেও ভুল হবে না। আর শুধু নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট কেনো তাকে ধরা হয় পাকিস্তানের ইমরান খান, ভারতের কপিল দেব চার ইংল্যান্ডের ইয়ান বোথামের সাথে ফেব্যুলাস ফোরের একজন। বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম সেরা বোলার আর সময়ের সেরা অলরাউন্ডার।

রক্তে যার বাস করে ক্রিকেট

১৯৫১ সালের ৩ জুলাই ক্রাইস্টচার্চের সেন্ট আলবানস এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন স্যার রিচার্ড হ্যাডলি। তার বাবা ওয়াল্টার আর্নল্ড হ্যাডলিও ছিলেন নিউজিল্যান্ডের স্বনামধন্য ক্রিকেটার। ১৯৩৭ থেকে ১৯৫১ সাল পর্যন্ত ১১টি টেস্ট ম্যাচ খেলে তিনি ৩০.১৬ গড়ে ৫৪৩ রান করেন।রিচার্ড হ্যাডলির বাবার পাশাপাশি তার দুই ভাই ব্যারি হ্যাডলি এবং ডেইল হ্যাডলিও নিউ জিল্যান্ডের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেছেন। বাবা আর দুই ভাইয়পর পাশাপাশি তার সহধর্মিনী ক্যারেন হ্যাডলিও ১৯৭৮ সালে নিউজিল্যান্ড নারী ক্রিকেট দলের হয়ে একটি একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছিলেন।

১৯৭১ সালে ক্যান্টাবুরির হয়ে ঘরোয়া ক্রিকেটে তার অভিষেক হয় এবং ধারাবাহিক সাফল্যের স্বরুপ ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে ওয়েলিংটন টেস্টে তার অভিষেক হয়। সেখানে ১১২ রান দিয়ে ম্যাচে ২ উইকেট নেন। ক্যারিয়ারের প্রথম পাঁচ বছরে খুব বেশি একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি তিনি। ১৯৮১ সাল পর্যন্ত ৩৪টি একদিনের ম্যাচে শিকার করেছিলেন ৩৮টি উইকেট। টেস্ট ক্রিকেটে ১৯৭৩ সাল থেকে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত ১৭ ম্যাচে শিকার করেছিলেন ৬১টি উইকেট, যা তার মতো গ্রেট বোলারের পুরো ক্যারিয়ার বিবেচনায় খুব একটা আহামরি কিছু ছিল না। উইকেট প্রতি তিনি খরচ করেছিলেন প্রায় ৩৬ রান।

যেদিন প্রথম টেস্ট দেখল গ্রেট হ্যাডলিকে

১৯৭৬ সালে ওয়েলিংটন টেস্টে ভারতের বিপক্ষে ইনিংস ব্যবধানে জয় পায় নিউজিল্যান্ড।সেই সময়কার ভারত দল বেশ শক্তিশালী ছিল। সুনীল গাভাস্কার, দিলিপ ভেংসরকার, মহিন্দর আমারনাথ, গুন্ডাপ্পা বিশ্বনাথদের নিয়ে ভারতীয় ব্যাটিং লাইনআপ বরাবরের মতো শক্তিশালী ছিল। স্যার রিচার্ড হ্যাডলির বিধ্বংসী বোলিংয়ে ভারত ২য় ইনিংসে মাত্র ৮২ রানে গুটিয়ে যায়।২য় ইনিংসে সাত উইকেট সহ ম্যাচে ১১ উইকেট শিকার করেন তিনি।

৪৮ তম বারে ইংলিশ সিংহ বধ

এক বার না পারিলে দেখ শত বার। এই মন্ত্রে দিক্ষীত হয়ে হয়ত সেদিন মাঠে নেমেছিল হ্যাডলি এন্ড কোং। ততদিনে নিজেকে সেরা প্রমাণ করে ফেলেছেন। কিন্তু আগের ৪৭ বার ইংল্যান্ড এর বিরুদ্ধে জয় পাওয়া হয় নি। ৪৮ তম বারে গিয়ে ১৯৭৮ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়েলিংটন টেস্টে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয়ের নায়ক তিনি। হ্যাডলি প্রথম ইনিংসে চার উইকেট শিকারের পর দ্বিতীয় ইনিংসে ছয় উইকেট শিকার করেন। নিউজিল্যান্ডের দেওয়া মাত্র ১৩৭ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নামা ইংল্যান্ড রিচার্ড হ্যাডলির বোলিং তোপের মুখে মাত্র ৬৪ রানেই গুটিয়ে যায়।

১ উইকেটের আক্ষেপ নাকি ৯ উইকেটের আনন্দ!

২৩.৪ ওভারে ৪ মেইডেনে ৫২ রানে ৯ উইকেট। এটি যে কোন বোলারের জন্যই স্বপ্নের মত ফিগার। কিন্তু ১০ উইকেট পেলে হয়ত আরও সুন্দর দেখাত। কিন্তু ভন ব্রাউন জিওফ লসনের উইকেটটা নিয়ে তা আর হতে দিল কই। কিন্তু ব্যাটিংয়ে নেমে ৭৫ রানের দুর্দান্ত ইনিংস আর পরের ইনিংসে আরও একবার ৫ উইকেট নিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে বলতে গেলে একাই হারিয়ে দেন তিনি।

এটি ছিল অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে নিউজিল্যান্ডের ১ম টেস্ট জয়। ব্রিসবেনের গাবা যা এমনিতেই পেসারদের জন্য স্বর্গরাজ্য। সেখানে তার এমন আগুনে বোলিং উইজডেন অ্যালমনাকের তাকে নিয়ে করা উক্তিটিকে তাই যর্থার্থই ছিল বলা যায়।
উক্তিটি,
There has been no greater fascination in modern cricket than watching an over from Richard Hadlee when there was some response from the pitch or some help in the atmosphere.

অলরাউন্ডার হ্যাডলি এবং অপরাজেয় ক্যারিবীয়দের বধ

অপারাজেয় শব্দটি ক্রিকেটে ব্যবহার করলে শূন্য দশকের অস্ট্রেলিয়ার কথাই আগে মাথায় আসবে। এক্ষেত্রে কম যায় না ১৯৭৫ থেকে ১৯৮৩ সালের ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলটাও। কিন্তু হ্যাডলি নামক সিংহ শুনিয়েছেন সেই অপারজেয় দলটির বিপক্ষেও গর্জন।১৯৮০ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের নিউজিল্যান্ড সফর ১ম টেস্টে, ১ম ইনিংসে পাঁচ উইকেট শিকারের পর ২য় ইনিংসে ছয় উইকেট শিকার করেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের দেয়া ১০৪ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নামা নিউজিল্যান্ড মাত্র ৫৪ রানে সাত উইকেট হারিয়ে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে। সেখান থেকে ১৭ রানের গুরুত্বপূর্ণ এবং সময়োপযোগী এক ইনিংস খেলেন হ্যাডলি। সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে রিচার্ড হ্যাডলি তার টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম শতক হাঁকান। মাত্র ৯২ বলে ১০৩ রান করেন তিনি, যার সুবাদে দ্বিতীয় টেস্ট ড্র হয়। শেষ টেস্টেও ড্র করে সিরিজ নিজেদের করে নেয় ব্ল্যাক ক্যাপসরা।

১৯৮৭ সালের শ্রীলঙ্কা সফর এবং ব্যাটসম্যান হ্যাডলীর ম্যাচ বাচানো

শ্রীলঙ্কার ৩৯৭ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নামা নিউজিল্যান্ড মাত্র ১৬০ রানে পাঁচ উইকেট হারিয়ে বসে। সেখান থেকে দলের হাল ধরেন রিচার্ড হ্যাডলি এবং অধিনায়ক জেফ ক্রো। দুজনে ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে অবিচ্ছিন্ন ২৪৬ রানের জুটি গড়েন। রিচার্ড হ্যাডলি তার ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় শতক হাঁকিয়ে ২৪০ বলে ১৫১* রান করেন। তার শতকের উপর ভর করে নিউজিল্যান্ড ম্যাচটি ড্র করে। প্রথম টেস্ট শেষ হওয়ার পর নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট দলের অবস্থানরত হোটেলের পাশে বোমা বিস্ফোরণ ঘটলে সিরিজের বাকি ম্যাচগুলো না খেলেই শ্রীলঙ্কা ত্যাগ করে তারা।

বাইরের দেশ থেকে উপমহাদেশের সফলতম ফাস্ট বোলার

উপমহাদেশের বাইরের পেসারদের মধ্যে উপমহাদেশের মাটিতে সবচেয়ে বেশি উইকেট শিকার করেছেন সাউথ আফ্রিকান পেসার ডেল স্টেইন। তিনি ২০ ম্যাচে ২২.৬৬ বোলিং গড়ে ৯০ উইকেট শিকার করেছেন। উইকেট সংখ্যায় হ্যাডলিকে পিছনে ফেললেও অন্যান্য বিষয়ে তাকে পিছনে ফেলতে পারেননি স্টেইন কিংবা অন্য কেউ। উপমহাদেশের কন্ডিশনে যেখানে অন্যান্য ফাস্ট বোলারদের ঘাম ছুটে যায় উইকেট পেতে, সেখানে হ্যাডলির শিকার ১৩ ম্যাচে ২১.৫৮ বোলিং গড়ে ৬৮টি উইকেট । সিমিং কন্ডিশন থেকে সম্পূর্ণ বিপরীত উপমহাদেশের কন্ডিশনে এই রেকর্ড যে কোন বোলারকে ঈষাণ্বিত করবে।

৪০০ উইকেটের মাইলফলক

১৯৯০ সালের ভারতের নিউজিল্যান্ড সফর। ১ম টেস্ট। বরাবরের মত সে টেস্টেও হ্যাডলি নিল ৯ উইকেট। আর নিউজিল্যান্ডও জয়লাভ করল ১০ উইকেটের ব্যবধানে। এর মধ্যে ২য় ইনিংসে সঞ্জয় মান্ঞ্জেকারকে আউট করে ক্যারিয়ারের ৪০০ তম উইকেট শিকার করেন তিনি। টেস্ট ইতিহাসে এটিই ছিল টেস্টে প্রথম কোন বোলারের ৪০০ তম উইকেট।

৪৩১ এ শেষ!

১৯৯০ সালে বার্মিংহামে ইংল্যান্ড বনাম নিউজিল্যান্ডের ৩য় টেস্ট। না ;সেই ম্যাচে মোট ৮ উইকেট পেয়েও নিউজিল্যান্ডকে জিতাতে পারল না হ্যাডলি। কিন্তু নিউজিল্যান্ডের হারের চেয়েও বড় বিষয় ছিল হ্যাডলির অবসর। শেষ ইনিংসে বল হাতে নেন ৩৬ তম বারের মত ৫ উইকেট। এমনকি শেষ বলেও তুলে নেন উইকেট। কিন্ত ৮৬ টেস্টের ক্যারিয়ারে এখানেই দাড়ি দিতে হয় তার, উইকেটের হিসেবে থেমেছেন ৪৩১ জন ব্যাটসম্যানকে শিকার করে।

যিনি সাঁতার জানেন তার জন্য সমুদ্র, নদী কোন বিষয় না!

স্যার রিচার্ড হ্যাডলি যেমন তার সময়ে টেস্টের সেরা বোলার ছিলেন, তেমনি কম যাননি ওয়ানডেতে। তিনি ১১৫টি একদিনের ম্যাচ খেলে ১৫৮টি উইকেট শিকার করেছেন। ইনিংসে পাঁচ উইকেট শিকার করেছেন পাঁচবার। ১৯৯০ সাল পর্যন্ত কমপক্ষে একশো উইকেট শিকার করা বোলারদের মধ্যে হ্যাডলির বোলিং গড় চতুর্থ সর্বনিম্ন। তিনি প্রতি উইকেটের পিছনে খরচ করেছেন ২১.৫৬ রান! নিখুঁত লাইন লেংথ বজায় রেখে বল করার কারণে তিনি ছিলেন মিতব্যয়ী। ওভারপ্রতি রান দিয়েছেন মাত্র ৩.৩০! বিশ্বকাপে তিনি ১৩ ম্যাচে ২২ উইকেট শিমি রেট ছিল মাত্র ২.৮৮।

নটিংহ্যামশায়ারের রাজা

কাউন্টি ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সফল দল হিসেবে বিবেচনা করা হয় নটিংহ্যামশায়ারকে। আর সেই দলের হয়ে অবিশ্বাস্য রকম ভালো খেলেছেন স্যার হ্যাডলি। সব কিছু বিবেচনায় তাকে বলাই যায় নটিংহ্যামশায়ারের রাজা। মোট ১৪৮ টি ম্যাচ খেলে ১১ শতক আর ৩৮.৭৬ গড়ে করেছেন ৫৮৫৪ রান। শুধুমাত্র এতটুকুই যে কোন লোয়ার মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানের জন্য দারুন পরিসংখ্যান বলাই যায়। কিন্তু তিনি যে রিচার্ড হ্যাডলি। ঐ ৫৮৫৪ রানের সাথে তিনি নিয়েছেন ১৪.৫১ গড়ে ৬২২ উইকেট। তাহলে তাকে তো নটিংহ্যাম এর রাজা বলাই যায়!

বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর, সবার আমি শিক্ষক!

মোট ৮৬ টেস্টে ৪৩১ উইকেট। শুধু এটুকে দেখলেই যে কেউ তাকে এক বাক্যে গ্রেট বলে শিকার করে নেবে। তবে তার পরিসংখ্যান ঘাটলে আরও কিছু পাওয়া যায়। মোট ৮৬ টেস্টের মধ্যে তিনি সমান ৪৩ টি করে ম্যাচ খেলেন ঘরের মাঠে এবং বাইরে দেশের মাঠে। তার মধ্যে ৪৩ ম্যাচে ২২.৯৬ গড়ে নেন ২০১ টি উইকেট। যেখানে ছিল ১৫ ইনিংসে ৫ উইকেট আর ২ ম্যাচে ১০ উইকেট।

আর দেশের বাইরে তিনি আরও বেশী সফল। এক্ষেত্রে তিনি এখন পর্যন্ত সেরা। দেশের বাইরে ৪৩ টেস্টে নেন ২৩০ উইকেট। যেখানে গড় মাত্র ২১.৭২। ৫ উইকেট নেন ২১ ইনিংসে আর দশ উইকেট ৮ ম্যাচে। দেশের বাইরে তার চেয়ে বেশী ৫ উইকেট নেন মুত্তিয়া মুরালিধরন। তাও ৮০০ উইকেট নেওয়া মুরালিধরন তার চেয়ে মোট একবার বেশী নেন।

এছাড়া তার খেলা মোট ৮৬ টেস্টে নিউজিল্যান্ড জয় পায় ২২ ম্যাচে। সেই জয়ী ম্যাচে তিনি ১৩.০৬ গড়ে নেন ১৭৩ উইকেট। ৫ উইকেট ছিল মোট ১৭ ইনিংসে।

পাঁচ উইকেট, দশ উইকেট কিংবা অবিশ্বাস্য গড়!

স্যার রিচার্ড হ্যাডলি টেস্টে মোট ৩৬ ইনিংসে ৫ উইকেট নেন। ৫ উইকেট প্রাপ্তদের তালিকায় তার উপরে রয়েছেন শুধু শেন ওয়ার্ন আর মুত্তিয়া মুরালিধরন। তারা দুজনেই খেলেন ১০০ এর অধিক টেস্ট। সেই হিসেবে বলাই যায় তার ৫ উইকেট পাওয়ার হার সবচেয়ে ভাল ছিল। আর ফাস্ট ক্লাসে তিনি মোট ১০২ ইনিংসে নেন ৫ উইকেট।

আর গড়ের রাজা তো তাকেই বলা যায়। ফাস্ট ক্লাস ক্রিকেটে তার বোলিং গড় ছিল ১৮.১১।টেস্ট ক্রিকেটে ২১.৫৬ যা টেস্ট ক্রিকেটে ৪র্থ সেরা। নটিংহ্যামশায়ারের হয়ে তার বোলিং গড় ছিল ১৪.৫১। আর টেস্টে নিউজিল্যান্ডের হয়ে জয়ী ম্যাচে ছিল ১৩.০৬। সবকিছু মিলিয়ে তাই স্বীকার করতেই বোলিং গড় দিয়ে তিনি ছিলেন সেরাদের সেরা।

কপিল, ইমরান নাকি বোথাম অথবা হ্যাডলি!

এট আসলেই অনেক কষ্টদায়ক যে ৮০ এর দশকে কে ছিল সেরা অলরাউন্ডার। কপিল, ইমরান, বোথাম, হ্যাডলি এই চারজনের মধ্যে ব্যাটিংয়ে সবচেয়ে পিছিয়ে ছিলেন স্যার হ্যাডলি। কিন্তু বোলিংয়ে কোন তর্ক ছাড়াই তাকে সেরা বলা যাবে। অন্যরাও ভালো ছিল কিন্তু হ্যাডলি ছিল অনন্য। তাছাড়া ম্যাচ জয়ে তার ভূমিকাও ছিল বেশী। বোলিংয়ের পাশাপাশি জয়ী ম্যাচগুলোতে তার ব্যাটিং রেকর্ডও ছিল চোখে পড়ার মত। তাই এই চারজনের মধ্যে সেরাজনকে বাছাই করা কষ্টকর হলেও ইফেক্টিভ হিসেবে স্যার হ্যাডলির নাম নিতেই হয়।

ক্রিকেটে হ্যাডলির পরিসংখ্যান

৮৬টি টেস্ট ম্যাচ খেলে ২৭.১৬ ব্যাটিং গড়ে ৩,১২৪ রান করেছেন দুটি শতক এবং ১৫টি অর্ধশতকের সাহায্যে। তৎকালীন টেস্ট ক্রিকেটে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি রিচার্ড হ্যাডলি ২২.২৯ বোলিং গড়ে শিকার করেন ৪৩১ টি উইকেট।

১১৫টি একদিনের ম্যাচে ২১.৬১ ব্যাটিং গড়ে ১,৭৫১ রান এবং ২১.৫৬ বোলিং গড়ে নেন ১৫৮ টি উইকেট।

ফাস্ট ক্লাস ক্রিকেটে ৩৪২ ম্যাচে ৩১.৭১ ব্যাটিং গড়ে করপন ১২,০৫২ রান। ক্যারিয়ারে ১৪টি শতকের পাশাপাশি করপন ৫৯টি অর্ধশতক। আর ফাস্ট ক্লাসে তার ঝুলিতে জমা করেছেন ১,৪৯০ টি উইকেট। ইনিংসে পাঁচ উইকেট শিকার করেন ১০২ বার এবং ম্যাচে দশ উইকেট শিকার ১৮ বার। লিস্ট-এ ক্যারিয়ারে ৩১৭ ম্যাচে ৪৫৪ উইকেট শিকারের পাশাপাশি ৫,২৪১ রান করেন তিনি।

ক্রিকেটে যেমন রয়েছে তার বিস্তর সাফল্য তেমনি হয়েছেন বিভিন্ন ক্ষেত্রে পুরষ্কৃত। তার পুরষ্কারের লিস্ট দিয়েতো একটি আস্ত রচনা লিখা যাবে। তার উল্লেখযোগ্য পুরষ্কার গুলো হল,

১. ১৯৮২ সালের উইজডেন ক্রিকেটার অব দ্য ইয়ার
২. ১৯৯০ সালে ইংল্যান্ডের রাণী কাছ থেকে নাইটহুড ফর সার্ভিস ইন ক্রিকেট, এর ফলে তার নামের শেষে যুক্ত হয় স্যার
৩. নিউজিল্যান্ড স্পোর্টস পার্সন অব দ্য ইয়ার মোট তিনবার , ১৯৮০, ১৯৮৬ এবং ১৯৮৭ সাল
৪. গত শতকের আশির দশকে নিউ জিল্যান্ডের সেরা স্পোর্টস পার্সন – ১৯৮৯ সাল
৫. ১৯৮১ সালের M.B.E ফর সার্ভিসেস টু নিউজিল্যান্ড স্পোর্টস পুরষ্কারজয়ী
৬. উইন্সর কাপের অ্যাওয়ার্ড জিতেন ১৩ বার
৭. নিউজিল্যান্ডের বর্ষসেরা ক্রিকেটারদের যে এওয়ার্ড দেওয়া হয় তাও তার নামে।

রিচার্ড হ্যাডলি পূর্ববর্তী নিউজিল্যান্ড দলের অর্জন বলতে তেমন কিছুই ছিল না। তিনি যখন পারফর্মেন্স করতে শুরু করলেন তখন নিউজিল্যান্ড ধারাবাহিক ভাবে সাফল্য পেতে শুরু করে। অবসরের আগ পর্যন্ত তিনি নিউজিল্যান্ড দলকে শক্ত অবস্থানে রেখে যান। যার ফলে নিউজিল্যান্ড পরিণত হয় বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম ধারাবাহিক দলে।

একজন প্লেয়ার হিসেবে তাকে মূল্যায়ন করতে গেলে তার পরিসংখ্যান গুলোই যথেষ্ট। কিন্তু শুধুমাত্র পরিসংখ্যান দিয়ে তার ক্যারিয়ার মূল্যায়ন করা যাবে না। প্রতিটা বল তিনি করতেন পূর্ণ আত্মবিশ্বাস নিয়ে। তার এই আচরণই যথেষ্ট ছিল ব্যাটসম্যানদের বুকে কাপন ধরিয়ে দিতে। তার সাথে দুর্দান্ত ইনসুইং সাথে গতিময় ফাস্ট বোলিং। বর্তমান যুগের ব্যাটসম্যানরা তাই তাদের ভাগ্যবান মনে করতেই পারে, তাকে ফেইস করে নি বলে।

, , ,

মতামত জানান :