১৯শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

দ্যা এমডিঙ্গি এক্সপ্রেস!

প্রতিবেদক
Arfin Rupok
সোমবার, ৬ জুলাই , ২০২০ ৮:১৩

আপনাকে যদি প্রশ্ন করা হয় দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা পেসার কে? তাহলে আপনার উত্তরে আসবে শন পোলক, অ্যালান ডোনাল্ড বা স্টেইনের নাম! কিন্তু এদের বাহিরেও একজন আছেন যিনি বল হাতে ক্রিকেট মাঠে কেড়ে নিয়েছিল বাঘা বাঘা ব্যাটসম্যানদের চোখের ঘুম। আচ্ছা সে কে? যদি বলি সে মাখায়া এনটিনি তাহলে কি খুব বেশী অবাক হবেন! অবশ্য আপনি অবাক হলেও মাখায়ার পরিসংখ্যান সেরাদের কাতারে রাখতে বাধ্য করবে।

মাখায়া এনটিনি; দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট ইতিহাসের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ খেলোয়াড় হিসেবে পরিচিত হয়ে আছেন সবার কাছে। ৫ ফুট ৯ ইঞ্চির ডানহাতি ফাস্ট বোলার এনটিনি ক্রিকেট মাঠে দ্যা এমডিঙ্গি এক্সপ্রেস নামে পরিচিত ছিলেন। কিন্তু মাখায়ার শুরুটা এমন ছিলো না; ছিলো বিতর্কে ভরা। গুরুতর অভিযোগে দল থেকে বাদ, খেলা হয়নি ৯৯ এর বিশ্বকাপ! হয়তো সেদিনের পর আর জাতীয় দলে খেলার সুযোগ হতোনা তার। কিন্তু পরবর্তী সময়ে সব চড়াই উৎরাই পেরিয়ে নিজেকে সঠিক প্রমাণ করে ফিরেছেন ক্রিকেটে, ২২ গজে চালিয়েছেন বোলিং তাণ্ডব। নিজের নামটি নিয়েছেন সেরাদের কাতারে। হয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার সেরা পেসারদের একজন।

অবশ্য এনিটিনির আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের শুরুটা হয়েছিল বিতর্কিত ঘটনার আগেই তথা ১৬-ই জানুয়ারি ১৯৯৮ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে রঙ্গিন পোশাকে অভিষেকের মাধ্যমে। এরপর ১৯ মার্চ ১৯৯৮ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সাদা পোশাকেও অভিষেক হয় এনিটিনির। এরপরের গল্পটা হতে পারতো সাফল্যে ভরা কিন্তু তা আর হয়েছিল কই? নানান বিতর্ক ঘিরে ধরেছিল এনিটিনিকে। তবে! সবকিছু ছাপিয়ে ফিরেছেন ক্রিকেটে, লড়াই করেছেন। ক্যারিয়ার শেষে নিজের নামটি নিয়েছেন অনেক উপরে। ১১ বছরের ক্রিকেট ক্যারিয়ারে যুক্ত করেছেন অসংখ্য রেকর্ড। আচ্ছা আসুন এবার ক্রিকেট মাঠে এনিটিনির কিছু সাফল্যের গল্প জানতে থাকি।

এনিটিনি দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে সাদা পোশাকে খেলেছেন ১০১ টি ম্যাচ! যেখানে ২০,৮৩৪ টি বলের বিনিময়ে তুলে নিয়েছেন ৩৯০ টি উইকেট। ইনিংসে ৫ উইকেট নিয়েছেন ১৮ বার সাথে ম্যাচে ১০ উইকেট শিকার করেছেন ৪ বার! এমন সাফল্য ভরা টেস্ট ক্যারিয়ারে ৩৭ রানে তুলে নিয়েছেন ৭ উইকেট; যা টেস্ট ক্রিকেটে তার ব্যক্তিগত সেরা বোলিং ফিগার। শুধু তাই নয় ম্যাচে ১৩২ রানে ১৩ উইকেট শিকারের রেকর্ডও রয়েছে তার। আচ্ছা আসুন এবার কিছু সেরা বোলিং ফিগার দেখে নেওয়া যাক:
.
৬৬/৬ বনাম নিউজিল্যান্ড:
অভিষেকের পর ৬ টি ম্যাচ খেলার সুযোগ হলেও শিকার করা হয়নি ইনিংসে ৫ উইকেটের মাইলফলক। অবশ্য এরই মাঝে দেখেছিলেন ক্যারিয়ারের বাজে মূহুর্তের। এরপর ২০০০ সালে ফিরেছেন ক্রিকেটে। বিতর্কের পর নিজের দ্বিতীয় ম্যাচেই বাজিমাৎ করে বসেন এনটিনি। সেদিন নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মাত্র ৬৬ রানে ৬ উইকেট শিকার করেছিলেন তিনি।
.
প্রথমবার ১০ উইকেট:
সময়টা ২০০৩ সাল। সাদা পোশাকে ৩২ টি ম্যাচ খেললেও ম্যাচে ১০ উইকেট শিকার করা হয়নি তখনো। কিন্তু নিজের ৩৩ তম ম্যাচে শক্তিশালী ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বাজিমাৎ করে বসে। সেদিন প্রথম ইনিংসে ৭৫ রানে ৫ উইকেটের পর দ্বিতীয় ইনিংসে ১৪৫ রানে ৫ উইকেট শিকারের মাধ্যমে টেস্ট ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো ১০ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করেন তিনি।
.
২০০৫ সাল; সেরা বোলিং ফিগার:
টেস্ট ক্যারিয়ারে ১৮ বার ইনিংসে ৫ উইকেটের দেখা পেলেও ৭ উইকেটের দেখা পেয়েছেন মাত্র ১ বার। সেদিন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটসম্যানদের বিপক্ষে বল হাতে চালিয়েছিলেন তাণ্ডব; নিজের সাফল্যের খাতায় যুক্ত করেছিলেন নতুন রেকর্ড। সেদিন মাত্র ৩৭ রানে ৭ উইকেট শিকার করেছিলেন এনটিনি। যা সাদা পোশাকে তার সেরা বোলিং ফিগার।
.
১৩২ রানে ১৩ উইকেটের গল্প:
সময়টা সেই ২০০৫ সাল, প্রতিপক্ষ সেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ। যেই ম্যাচে গড়েছিলো টেস্ট ক্যারিয়ারের সেরা বোলিং ফিগার! অবশ্য এনটিনি সেই ম্যাচেই গড়েছিলো ম্যাচসেরা বোলিং ফিগার। সেদিন প্রথম ইনিংসে ৬ উইকেটের পর দ্বিতীয় ইনিংসে ৭ উইকেট শিকার করেন। এরই সাথে টেস্টে ম্যাচ সেরা বোলিং ফিগার স্পর্শ করেন, যা ক্যারিয়ারের সেরা ম্যাচসেরা বোলিং ফিগার।

সাদা পোশাকে এনটিনির ক্যারিয়ার যেমন বেশ লম্বা ছিলো ঠিক তেমনি রঙ্গিন পোশাক তথা ওয়ানডে ক্রিকেটেও তার ক্যারিয়ার বেশ লম্বা ছিলো। দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে ১৭১ টি ম্যাচে খেলার সুযোগ হয়েছিল তার। এই ১৭১ ম্যাচে নিজেকে নিয়ে গেছেন আফ্রিকার সেরা পেসারদের কাতারে। নামের পাশে যুক্ত করেছেন ২৬৬ উইকেট। যেখানে ইনিংসে ৫ উইকেট শিকার করেছিল ৪ বার। এবার আসুন ওয়ানডে ক্রিকেটে এনটিনির সেরা কিছু সাফল্যের স্মৃতিচারণ করা যাক!
.
৩৭ রান ৫ উইকেট!
৩৭ রানটি এনটিনির জন্য লাকি বলায় যায়! কেননা টেস্ট ক্রিকেটেও ৩৭ রানে ৭ উইকেট রয়েছে তার। অবশ্য রঙ্গিন পোশাকে ২ উইকেট কম নিয়ে ৩৭ রানে ৫ উইকেট শিকার করেন তিনি। যেদি ছিলো এনগিনির রঙ্গিন পোশাকে প্রথম বারের মতো ৫ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করার ঘটনা।
.
২২ রানে ৬ উইকেট!
সময়টা ২০০৬ সাল, প্রতিপক্ষ শক্তিশালী অস্ট্রেলিয়া। অপরদিকে এনটিনি কাটাচ্ছিলেন নিজের ক্রিকেট ক্যারিয়ারের সেরা সময়। ২০০৫ এর পর ২০০৬ এ এসেও চালিয়েছিলেন বোলিং তান্ডব। সেদিন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মাত্র ২২ রানে ৬ উইকেট শিকার করেন তিনি। যেটি ওয়ানডে ক্রিকেটে এনটিনির সেরা বোলিং পারফরম্যান্স!

টেস্ট এবং ওয়ানডে ক্রিকেটে এনটিনি যতোটা সফল! ঠিক তাতোটাই ব্যর্থ হয়েছেন ক্রিকেটের ছোট ফরম্যাট টি-২০ ক্রিকেটে। এই ফরম্যাটে মাত্র ১০ ম্যাচ খেলার সুযোগ হয় তার। এই ১০ ম্যাচে সাফল্যের খাতায় যুক্ত করতে পারেনি বড় কোনো সাফল্য, কেননো অভিষেকের পর টানা ৩ ম্যাচ ছিলেন উইকেট শূন্য! এরপর উইকেট পেলেও ঝুলিতে পুড়তে পারেনি খুব বেশী উইকেট। অবশ্য ক্রিকেটের ছোট্ট এই ফরম্যাটের কারণে খুব বেশী সময়ও পাননি এনটিনি। সবমিলিয়ে ক্যারিয়ারের গোধূলি লগ্নে হিসেবের খাতায় যা যুক্ত করেছে সেটাই বা কম কিসে?

মাখায়া এনটিনি; দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে তিন ফরম্যাট মিলিয়ে তৃতীয় সেরা উইকেট শিকারি বোলার। যিনি তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে ৬৬১ টি উইকেট শিকার করে রয়েছেন ক্যালিস, ডোনাল্ডের উপরে। এনটিনি অবশ্য পিছিয়ে আছে পোলক এবং স্টেইনের। তবুও তিনি যেখানে শেষ করেছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ার সেখানেই রয়েছেন রাজার বেশে।

SIGNED PHOTO DISPLAY – GENUINE CRICKET AUTOGRAPH

এনটিনি শুধুমাত্র দক্ষিণ আফ্রিকা জাতীয় দলেই সীমাবদ্ধ ছিলেন না। খেলেছেন বর্ডার, ওয়ারিয়র্স, ওয়ারউইকশায়ার, চেন্নাই সুপার কিংস, কেন্টের মতো দলগুলোতে। সেখানেও দারুণ ভাবে মেলে ধরেছেন নিজেকে। দিনশেষে বলি ক্যারিয়ার শেষেই বলি, মাখায়া যেনো মাখিয়ে গেছে ক্রিকেটটাকে। নামের পাশে যুক্ত করেছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার জনপ্রিয় ক্রিকেটার হিসেবে ক্রীড়াবিদের মর্যাদা! এছাড়াও আইসিসির বোলিং র‍্যাংকিংয়ে দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসাও তো কম কিছু ছিলো না।

১৯৯৮ সালে ক্রিকেটে পা দেওয়া এনটিনি ২০০৯ সালে খেলেছিলেন নিজের শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ। অবসরের পরেও যুক্ত আছেন ক্রিকেটের সাথে। পেয়েছিলেন জিম্বাবুয়ের বোলিং কোচের দায়িত্ব। সবমিলিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটের এক তারকার নাম ছিলো মাখায়া এনটিনি। যেই এনটিনিকে আগামীতেও মনে রাখবে দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট, মনে রাখবে কোটি ভক্ত।

, , ,

মতামত জানান :