দীর্ঘ ১১৭ দিনের অবসান কাটিয়ে গত ৮-ই জুলাই ক্রিকেট ফিরেছে মাঠে। ইংরেজদের মাঠে আগমন হয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের। ইতিহাসের খাতায় যুক্ত হয়েছে নতুন পাতা। স্টোকস-হোল্ডারের নেতৃত্বে ওরা ২২ জন নিজেদের নামটি তুলেছে রেকর্ড বুকে। ৫ দিনের ম্যাচে নানা চড়াই উৎরাই পেরিয়ে পঞ্চম ও শেষ দিনের শেষ বিকেলে জয়ের হাসি হেসেছে হোল্ডার বাহিনী।
এর আগে ৮-ই জুলাই ৩ ম্যাচ টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচে অধিনায়ক হিসেবে অভিষিক্ত স্টোকস টস জিতে নিয়েছিল ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত। তার সিদ্ধান্ত যে ভুল ছিলো সেটি প্রমাণ হয়ে গেছে অনেক আগেই। যদিও প্রথম ইনিংসের ব্যর্থতা কাটিয়ে নিজেদের দ্বিতীয় এবং দলীয় তৃতীয় ইনিংসে ঘুরে দাঁড়িয়েছিলো স্টোকস বাহিনী। অপরদিকে বর্তমান সময়ের সাদা পোশাকের নাম্বার ওয়ান অলরাউন্ডার হোল্ডারের নেতৃত্বে বিদেশের মাটিতে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করে চমকে দিয়েছে ক্রিকেটপ্রেমীদের।
নিজেদের প্রথম ইনিংসে হোল্ডারের বোলিং তোপে খেই হারিয়ে বসা ইংল্যান্ডের পক্ষে সর্ব্বোচ্চ ৪৩ রানের ইনিংস খেলে দলকে সম্মানজনক স্কোর এনে দেন স্টোকস। এরপর নিজেদের প্রথম ইনিংসে ব্র্যার্থওয়েটের ব্যাটে ভর করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ এগিয়ে যায় বিশাল ব্যবধানে! ব্যাট হাতে ইংল্যান্ডকে এগিয়ে নেওয়া স্টোকস এবার বোলিংয়েও চার উইকেট নিয়ে বনে গেলেন ইংল্যান্ডের পক্ষে সর্ব্বোচ্চ উইকেট শিকারী বোলার।
১১৪ রানে পিছিয়ে থেকে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ঘুরে দাঁড়ায় স্টোকস বাহিনী। বানার্স-সিভ্লীর দুর্দান্ত শুরুর পর ক্রলির দারুণ ব্যাটিং! সেই সাথে ৩ রানেরর জন্য ফিফটি মিসের আক্ষেপে পুড়েছিলো স্টোকস। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসের ৬ উইকেট শিকারী বোলার হোল্ডারকে টপকিয়ে এবার ইংল্যান্ডের ৫ সৈন্যকে পকেটে পুড়ে ইনিংসের সেরা বোলার বনে গেলেন গ্যাব্রিয়েল! নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ৩১৩ রানে অলআউট হয় ইংল্যান্ড। ওয়েস্ট ইন্ডিজের সামনে জয়ের লক্ষ্যমাত্রা কাঁটায় কাঁটায় ২০০ রান!
লক্ষ্যমাত্রা ২০০ রান! বিশাল লক্ষ্য না হলেও এমন উইকেটে চতুর্থ ইনিংসে ব্যাটিং করা মোটেও সহজ ব্যাপার ছিলোনা। এমন চাপ মাথায় নিয়ে খেলতে নামা ওয়েস্ট ইন্ডিজের দুই ওপেনার সাবধানী শুরু করলেও রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে সাজঘরে ফেরেন ক্যাম্পবেল! এরপর ২৭ রানের মধ্যেই ৩ ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে বসে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সেই সাথে ম্যাচ হারের সম্ভাবনা জেগে উঠে। ঠিক তখনি দলকে এগিয়ে নিতে থাকেন ব্ল্যাকউড এবং চেজ। দুইজনের ব্যাটে ঘুরে দাঁড়ায় ক্যারিবিয়ানরা।
এরপর আর্চার, উড, জেমিদের বিপক্ষে দুর্দান্ত ব্যাটিং করে দলকে জয়ের দিকে নিয়ে যাওয়া ব্ল্যাকউড মাত্র ৫ রানের জন্য ছুঁতে পারেনি করোনা পরবর্তী সময়ে প্রথম সেঞ্চুরির রেকর্ডটি। যদিও আউট হওয়ার আগেই দলকে নিয়ে এসেছেন জয়ের প্রান্তে! সেই সাথে রিটায়ার্ড হার্ট হওয়া ক্যাম্পবেল ব্যাট হাতে দলকে রক্ষা করতে ধরেছিলেন বাজি!
শেষ বিকেলে অধিনায়ক হোল্ডারের দায়িত্বশীল ব্যাটিং আর ক্যাম্পবেল ত্যাগে স্বাগতিক ইংল্যান্ড ঘরের মাঠে হলো ধরাশায়ী। ৩ ম্যাচ সিরিজের প্রথম ম্যাচে ৪ উইকেটের জয়ে ১-০ তে এগিয়ে গেলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
সংক্ষিপ্ত স্কোরকার্ড:
ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস: ২০৪/১০
স্টোকস ৪৩, বাটলার ৩৫, বেস ৩১*
হোল্ডার ২০-৬-৪২-৬, গ্যাব্রিয়েল ১৫.৩-৩-৬২-৪
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১ম ইনিংস: ৩১৮/১০
ব্র্যাথওয়েট ৬৫, ডওরিচ ৬১
স্টোকস ১৪-৫-৪৯-৪, এন্ডারসন ২৫-১১-৬২-৩
ইংল্যান্ড ২য় ইনিংস: ৩১৩/১০
ক্রলি ৭৬, সিভ্লী ৫০, স্টোকস ৪৬
গ্যাব্রিয়েল ২১.২-৪-৭৫-৫, জোফেস ১৮-২-৪৫-২
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২য় ইনিংস: ২০০/৬
ব্ল্যাকউড ৯৫, চেজ ৩৭
আর্চার ১৭-৩-৪৫-৩, স্টোকস ১০.২-১-৩৯-২
ফলাফল: ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৪ উইকেটে জয়ী।
সিরিজ ফলাফল: ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১-০ ইংল্যান্ড।
ম্যাচ সেরা: গ্যাব্রিয়েল (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)
