১৯শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

কারেন পরিবার সমাচার

প্রতিবেদক
Arfin Rupok
শুক্রবার, ১৭ জুলাই , ২০২০ ৮:৪৪

ক্রিকেটের শুরুটা আজকের নয়, যুগ যুগ আগের। সেই পথচলায় ক্রিকেট ইতিহাসে সাক্ষী হয়ে আছে অফুরন্ত রেকর্ড। ঠিক তেমনি বাবা-ছেলে কিংবা দুই ভাই একই দলের হয়ে মাঠ মাতানোর ঝুড়ি ঝুড়ি উদাহরণ রয়েছে। কিন্তু ক্রিকেট ইতিহাসে একটি রেকর্ড হয়েছিল যেটির উৎপত্তি এই কারেন ফ্যামিলির মধ্য দিয়েই। আচ্ছা কি সেই রেকর্ড? যেটি ক্রিকেট ইতিহাসে ঘটেছিলো প্রথমবার! আচ্ছা আসুন জানতে থাকি।

কেভিন কারেন; জিম্বাবুয়ের সাবেক ক্রিকেটার। যিনি জিম্বাবুয়ের হয়ে ১৯৮৭ এবং ৯৩ বিশ্বকাপ মাতিয়েছেন। এই নামটির সাথে যুক্ত আছে অসংখ্য রেকর্ড! যুক্ত আছে কাউন্টি ক্রিকেটে টানা ৫ সিজনে ১০০০ রানের মাইলফলক। কেভিন ব্যাট-বল হাতে ক্রিকেটের ২২ গজে নিজেকে প্রমাণ করেছেন; নিজের নামটি নিয়েছেন রেকর্ড বুকে। এইসবের বাইরে কারেন পরিবারের সদস্যরা এমন এক রেকর্ড গড়েছেন তা ছিলো ক্রিকেট ইতিহাসে প্রথমবার। আর সেটি বাবা-ছেলে দুই দেশের জার্সিতে মাঠ মাতিয়েছেন!

কেভিন কারেনের ছিলো তিন সন্তান। তিন সন্তানের দুইজন এখন ইংল্যান্ডের হয়ে মাঠ মাতাচ্ছেন। আচ্ছা তারা দুইজন কে! মনে করতে পারছেন কিছু? আচ্ছা আমিই বলে দিচ্ছি তারা হলেন, টম কারেন এবং স্যাম কারেন! আরেকজন বেন কারেন যিনি ইংল্যান্ডের ঘরোয়া ক্রিকেট খেললেও এখনো সুযোগ পাননি ইংল্যান্ডের জাতীয় দলে।

বাবা-ছেলে দুই দেশের পতাকা বহন করেছেন! কিন্তু এমনটা হবার কথা ছিলো না। কেননা মাত্র ৫৩ বছর বয়সেই কেভিন কারেন দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করেছিলেন। এরে পরের গল্পটা ছিলো তিন ভাইয়ের জন্য অনেকটা হতাশার। তবে এই গল্পটা কারেন পরিবারকে ইতিহাসে জায়গা করে দেয়নি। কারেন পরিবারকে ইতিহাস রচিত করতে ভূমিকা রেখেছিলো ২০০৪ সালে ঘটে যাওয়া এক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। সেই সময়টায় মুগাবে সরকার কারেন পরিবারকে নিজ ফার্ম থেকে উচ্ছেদ করেছিলো।

২০০৪ সালে যখন ফার্ম হারিয়ে দিশেহারা কারেন পরিবার। তখনি তাদের পাশে দাঁড়িয়েছিলো সেই সময়ের জিম্বাবুয়ে দলের কোচ তথা অস্ট্রেলিয়ার সাবেক ক্রিকেটার জিওফ মার্শ। পরিবারের এমন পরিস্থিতিতে কেভিনের বড় ছেলে টম কারেন দক্ষিণ আফ্রিকার এক কলেজে এডমিশনের পাশাপাশি ক্রিকেট প্র্যাকটিস করতে থাকেন। আচ্ছা এখন একটা প্রশ্ন আসতে পারে! দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুশীলন করে ইংল্যান্ডের হয়ে কিভাবে সুযোগ হলো তাদের? অবশ্য এটা এমনি এমনি সম্ভব হয়নি। এর পেছনেও আছে এক মজার গল্প। আসুন এবার সেই গল্প জানার চেষ্টা করি….

সময়টা ছিলো ২০১২ সাল; টম কারেনের সুযোগ হয়েছিলো কলেজ কমপিটিশনে খেলার। সেবার টমের প্রতিপক্ষ ছিলো অস্ট্রেলিয়ার এক কলেজ দল। যেই দলটির তৎকালীন কোচ ছিলেন ইয়ান গ্রেগ, যিনি ইংলিশ কাউন্টি সারের হয়ে মাঠ মাতিয়েছেন। সেই টুর্নামেন্টে টমের প্রতিভা মুগ্ধ করে ইয়ান গ্রেগকে। দেশে ফিরে টমে বিষয়টি আলোচনা করেন সারের অথোরিটিদের সাথে। এরপর টমের বিষয়টি পর্যালোচনা করে ইংল্যান্ডে নিয়ে যাওয়া হয় টম কারেনকে।

এবার ইংল্যান্ডে এসে বদলে গেলো টমের সবকিছু। বাবার মৃত্যুর ধাক্কা সামলাতে পাশে পেয়েছিলো সারের অথরিটিদের। তিন ভাই তথা টম, বেন এবং স্যাম কারেনের জন্যই বন্দোবস্ত হয়েছিলো ইংল্যান্ডে স্পেশাল স্কলারশিপের। এভাবেই এগিয়ে যেতে থাকলো কারেন পরিবার। সময়ের সাথে সাথে এগিয়ে যেতে থাকলো ইতিহাসের দিকে। এবং অবশেষে টম কারেনের হাত ধরেই ইতিহাসে যুক্ত হয়েছিলো নতুন এক অধ্যায়। বাবা ছেলে বহন করেছিলো দুই দেশের পতাকা! আচ্ছা আসুন এবার টম কারেনের ইংল্যান্ডের জার্সি গায়ে দেবার পেছনের রহস্য জানি।

ইংল্যান্ড যাত্রায় একটা দিক দিয়ে টম খুব তাড়াতাড়ি নজর কেড়েছেন সবার। কেননা ২০১৫ সিজনে সারের হয়ে কাউন্টিতে সবাইকে তাক লাগিয়ে ১০৫ টি উইকেট শিকার করে বেস্ট ইয়ং প্লেয়ার অফ দ্যা সিজনের খেতাবটি নিজের পকেটে পুরেছিলেন টম কারেন। অবশ্য ইংল্যান্ডে পাড়ি জমানোর আগেই জিম্বাবুয়ের ঘরোয়া ক্রিকেটে সুযোগ হয়েছিলো ছোট্ট স্যামের! এবার ইংল্যান্ডে আসার পর ছোট্ট স্যামের প্রতিভায় মুগ্ধ সারের অথরিটি। তাইতো মাত্র ১৭ বছর বয়সেই স্যাম কারেনের সুযোগ হয়েছিলো সারের হয়ে খেলার। সেই সিজনে ৪৪ টি উইকেট নিয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলো স্যাম। এছাড়াও ২০১৫ কাউন্টি সিজনে ৬৫ বছরের কাউন্টি ইতিহাসে নর্দাম্পটনশায়ারের বিপক্ষে এক ইনিংসে প্রথমবারের মতো দুই ভাই মিলিয়ে ১০ উইকেট শিকার করে ইতিহাস লিখেছিলো নতুন করে। অপরদিকে বেন কারেন খুব একটা সুবিধা করতে না পারলেও মেরিলিবোন ক্রিকেট ক্লাবের হয়ে খেলে যাচ্ছেন। একটা সময় জায়গা করে নিয়েছিলো কাউন্টি দল নটিংহ্যামশায়ারের সেকেন্ড ইলেভেনে।

এরপরের গল্পটা ছিলো কারেন পরিবারের জন্য এক ইতিহাসের গল্প। কাউন্টিতে ধারাবাহিক পারফরম্যান্স করে ২০১৭ সালের ২৩ জুন দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টি-২০ জার্সিতে অভিষেক হয়েছিলো টম কারেনের। এই সময়টা ছিলো কারেন পরিবারের জন্য দারুণ এক মূহুর্ত। কেননা টমের ইংল্যান্ডের জার্সি গায়ে দেওয়া সাথে সাথে ক্রিকেট ইতিহাসে যুক্ত হয়েছিলো নতুন এক অধ্যায়। টমের পর খুব তাড়াতাড়ি ইংল্যান্ডের হয়ে খেলার সুযোগ হয় স্যাম কারেনের। বর্তমানে তারা দুইজন ইংল্যান্ডের সেরা ক্রিকেটারে ভূমিকা পালন করে থাকেন।

এইসব গল্পের পিছনের নায়ক কেভিন কারেন। যিনি ক্রিকেট মাঠে দারুণ ভাবে প্রমান করেছেন নিজেকে। ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়ে পরবর্তী সময়ে দায়িত্ব পালন করেছেন প্রধান কোচের। ক্রিকেট মাঠের কারেন ছিলে ব্যাট-বলের মতো ফিল্ডিংয়েও পারদর্শী। দারুণ ফিল্ডিংয়ে নজরেও এসেছিলেন অনেকের। বিশ্বকাপের ম্যাচে কারেনের দারুণ পারফরম্যান্সে জিম্বাবুয়ে হারিয়েছিলো অস্ট্রেলিয়াকে! ক্রিকেট মাঠে কেভিন ছিলেন দুর্দান্ত। যদিও তার ক্রিকেট ক্যারিয়ারের চেয়ে বেশী আলোচনায় এসেছেন এই বাবা-ছেলের গল্পে।

সবমিলিয়ে ক্রিকেট ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আছে এই কারেন পরিবার। পরবর্তী সময়ে যদি এমন কোনো রেকর্ড হয় সেটির পথ প্রদর্শক হবে এই কারেন পরিবার।

, ,

মতামত জানান :