২২শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

একজন চ্যাম্পিয়ন ক্রিকেটার অ্যালান বর্ডার

প্রতিবেদক
Arfin Rupok
সোমবার, ২৭ জুলাই , ২০২০ ১০:১৭

অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট ইতিহাস ঘাঁটতে গেলে শুরুর দিকে যেই নামগুলো আসবে তাদের একজন অ্যালান বর্ডার৷ তাকে বলা হয় সেই সময়ের চ্যাম্পিয়ন ব্যাটসম্যান। টিম অস্ট্রেলিয়াকে মরুভূমি থেকে নতুন সোনার যুগে আগমন ঘটাতে এই মানুষটির অবদান অনেক। সাদা পোশাকে অবসরের সময় ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক। শুধু তাই নয়, টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে অধিনায়ক হিসেবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়েছেন দলকে। একমাত্র ব্যাটসম্যান হিসেবে সাদা পোশাকের এক ম্যাচের দুই ইনিংসে ১৫০+ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেছেন তিনি। এমন অনেক গল্পের সাক্ষী হয়ে আছেন বর্ডার। আজকের গল্পে থাকছে একজন বর্ডারের জানা-অজানা নানান বিষয়।

সিডনির উপকণ্ঠে নর্থ শোর এলাকার ক্রিমোর্নে এক ক্রীড়াপ্রেমী পরিবারে জন্ম হয় বর্ডারের। পরিবারের সাথেই কাটতে থাকে বর্ডারের শৈশবকাল। কিন্তু ক্রীড়াপ্রেমী পরিবারের ছেলে ক্রিকেট দীক্ষা করবে না তা কি হয়? না হয়না, তাইতো পড়াশোনার পাশাপাশি শুরু হয় বর্ডারের ক্রিকেট চর্চা। সেই সময়ে মোজম্যান বেসবল ক্লাবে ফিল্ডিংয়ের পাশাপাশি সোজা ব্যাটে ব্যাটিং করার পারদর্শিতা অর্জন করেন বর্ডার। মোজম্যানের হয়ে অভিষেক হওয়া বর্ডার সেই সময় ব্যাটিং করতেন ৯ নাম্বারে, সেই সাথে বাঁহাতি স্পিনার হিসেবে নিজেকে মেলে ধরতে থাকেন। এরপর সময়ের সাথে সাথে কম্বাইন্ড হাইস্কুল দলের হয়ে মনোনীত হন আন্তঃরাজ্য প্রতিযোগিতায়। সেই সময়ে ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের সাবেক ক্রিকেটার ব্যারি নাইটের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছিলেন থাকেন বর্ডার।

Sport, Cricket, pic: March 1991, 1st Test Match, at Sabina Park, Jamaica, West Indies v Australia, Allan Border, Australia (Photo by Bob Thomas/Getty Images)

এভাবেই চলতে থাকে বর্ডারের ক্রিকেট দীক্ষা। পাশাপাশি পড়াশোনাও চালিয়ে যেতে থাকেন তিনি। কিন্তু ক্রিকেট ছিলো তার জীবনের অংশ। তাইতো ক্রিকেটকেই মনেপ্রাণে ধারণ করে এগিয়ে যেতে থাকেন তিনি। ব্যারির তত্বাবধানে নিজেকে তৈরি করতে থাকেন সেরা রূপে। লক্ষ্য একটাই হতে হবে সেরা ব্যাটসম্যান, খেলতে হবে অস্ট্রেলিয়ার জার্সিতে। সেই লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়া বর্ডার ১৯৭৫-৭৬ মৌসুমে স্তরভিত্তিক ক্রিকেটে ছয় শতাধিক রান করে জানান দিয়েছিলেন ব্যাটিং দক্ষতার। এই ব্যাটিং ধারাবাহিকতা চলতে থাকে, পরের বছরের শুরুতে ধারাবাহিকভাবে দুইটি সেঞ্চুরি করে নিউ সাউথ ওয়েলস দলের হয়ে মনোনীত হন বর্ডার। এরপর ১৯৭৭ সালে গ্লুচেস্টারশায়ারের হয়ে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপক্ষে খেলেছিলেন অপরাজিত ১৫৯ রানের ঝকঝকে এক ইনিংস। এখানেই শেষ নয়, ১৯৭৭-৭৮ মৌসুমে শেফিল্ড শিল্ডে ৩৬.২৯ গড়ে ৬১৭ রান করে ধারাবাহিকতার প্রমাণ রাখেন বর্ডার। এরপর আবারো ইংলিশ লীগে ইস্ট ল্যাঙ্কাশায়ারের হয়ে মাঠ মাতাতে দেখা যায় বর্ডারকে। সেই লীগে ব্যাট হাতে ১১৯১ রান এবং বল হাতে ৫৪ উইকেট শিকার করে চমকে দেন সবাইকে।

ঘরোয়া ক্রিকেটে একজন বর্ডারের সাফল্য মন জয় করে নিয়েছিল অস্ট্রেলিয়ার নির্বাচকদের। তাইতো তার ডাক এলো জাতীয় দলের জার্সিতে খেলার। ২৯ ডিসেম্বর ১৯৭৮ সাল সেই সময়ের শক্তিশালী দল ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সাদা পোশাকে অভিষেক হয়ে যায় বর্ডারের। অভিষেকের পর নিজেকে দারুণ ভাবে মেলে ধরেন ২২ গজের ক্রিকেটে। সাদা পোশাকে পারফর্ম করা বর্ডারের সুযোগ হয় রঙ্গিন পোশাক গায়ে দেবার। সাদা-রঙ্গিন পোশাকে সুযোগ পেয়ে নিজেকে প্রমাণ করতে থাকা বর্ডার সময়ের সাথে সাথে নিজের নামটি নিয়ে গেছেন অনন্য এক উচ্চতায়। যেখানে তাকে একজন চ্যাম্পিয়ন ক্রিকেটার হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। একজন বর্ডার শুধু চ্যাম্পিয়ন ব্যাটসম্যানই ছিলেন না ছিলেন সেই সময়ের সেরা একজন অধিনায়কও। যিনি অস্ট্রেলিয়াকে দেখিয়েছিলেন এগিয়ে যাওয়ার রাস্তা।

একজন বর্ডার ক্রিকেটের ২২ গজে সাক্ষী হয়ে আছেন নানান চড়াই উৎরাইয়ের। নিজের নামটি নিয়েছেন রেকর্ড পাতায়। আচ্ছা আসুন এবার একজন বর্ডারের ক্রিকেট মাঠের রেকর্ডগুলো একনজরে দেখে নেওয়া যাক:

১. ওয়ানডে ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে ১৫ টি কট এন্ড বোউলড করে এই তালিকায় শীর্ষে আছেন বর্ডার।

২. ওয়ানডে ক্রিকেটে এক গ্রাউন্ডে ১৫০০+ রান করছেন বর্ডার। এক গ্রাউন্ডে বেশী রান করা ব্যাটসম্যানে তালিকায় আছেন ১৯ নাম্বারে।

৩. সাদা পোশাকে এক টেস্টের দুই ইনিংসে সেঞ্চুরি রয়েছে বর্ডারের।

৪. টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসের একমাত্র ব্যাটসম্যান হিসেবে এক টেস্টের দুই ইনিংসে ১৫০+ রানের ইনিংস খেলেছেন বর্ডার।

৫. টেস্টে দুই বার এক ক্যালেন্ডার ইয়ারে ১০০০+ রান করেছেন বর্ডার।

৬. সাদা পোশাকে ৫০.৫৬ গড়ে রান করেছেন বর্ডার। অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে ২০০+ ইনিংসে ব্যাটিং করা ব্যাটসম্যানদের গড়ের তালিকায় আছেন ৩ নাম্বারে।

৭. একটি নির্দিষ্ট দলের বিপক্ষে সবচেয়ে বেশী সেঞ্চুরি করা ব্যাটসম্যানদের তালিকায় ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৮ টি সেঞ্চুরি করে রয়েছেন ১৬ নাম্বারে।

৮. এক ক্যালেন্ডার ইয়ারে সাদা পোশাকে ৫ টি সেঞ্চুরি রয়েছে বর্ডারের।

৯. এক ক্যালেন্ডার ইয়ারে টেস্ট ক্রিকেটে বেশী ক্যাচ নেওয়া ফিল্ডারের তালিকায় আছেন ৩৫ নাম্বারে।

১০. অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে অধিনায়ক হিসেবে ম্যাচ সেরা বোলিং ফিগার বর্ডারের দখলে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ম্যাচে ৯৬ রানে ১১ উইকেট শিকার করেন তিনি।

১১. ৩৭ বছর ৩৬০ তম দিনে সাদা পোশাকে ডাবল সেঞ্চুরি করেছেন বর্ডার। সবচেয়ে বেশী বয়সে ডাবল সেঞ্চুরি করা ব্যাটসম্যানের তালিকায় আছেন ১২ নাম্বারে।

১২. টেস্টে ভিন্ন ভিন্ন তিনটি মাঠে ১০০০+ রান করেছেন বর্ডার।

১৩. টেস্টে অধিনায়ক হিসেবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৯৩ টি ম্যাচে অংশগ্রহণ করেছেন বর্ডার।

১৪. একটানা বেশী টেস্ট ম্যাচে অংশগ্রহণ করা ক্রিকেটারের তালিকায় বর্ডার আছেন দ্বিতীয় স্থানে।

১৫. একটানা সবচেয়ে বেশী টেস্ট ম্যাচে (৯৩ টি) অধিনায়কত্ব করা ক্রিকেটারের নাম বর্ডার।

এমন অনেক রেকর্ডের সাক্ষী হয়ে আছেন বর্ডার। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়াকে লড়াইয়ের জন্য তৈরি করা বর্ডার সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে এগিয়ে নিয়েছেন নিজেকে এগিয়ে নিয়েছেন দলকে। দিনশেষে হিসেবের খাতায় পাওয়া- না পাওয়ার অনেক গল্প রচিত হয়েছে।

একজন চ্যাম্পিয়ন বর্ডারকে নিয়ে বলতে গেলে বলতে হবে অনেক কিছুই। সামনে আসবে অস্ট্রেলিয়ার সেরা সেরা বোলারদের পিছনে ফেলে সর্ব্বোচ্চ কট এন্ড বোউলডের বিষয়টি। সামনে আসবে একমাত্র ব্যাটসম্যান হিসেবে ১ টেস্টের ২ ইনিংসে ১৫০+ রানের বিষয়টি, আবার সামনে আসবে টানা ১৫৩ টি ম্যাচ বা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অধিনায়কত্ব করার বিষয়টি কিংবা বেশী বয়সে ডাবল সেঞ্চুরির রেকর্ডটিও যে তার সেরা সাফল্যের একটি। আচ্ছা আসুন এবার এইসবের দুয়েকটা নিয়ে না হয় আলোচনা করা যাক:

▪অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে সর্বোচ্চ:
টেস্ট ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশী ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়েছেন গ্রায়েম স্মিথ। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে সাদা পোশাকে সর্বোচ্চ নেতৃত্ব দেওয়া ক্রিকেটারের নাম অ্যালান বর্ডার। আবার যদি আপনাকে প্রশ্ন করা হয়, অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে একটানা সবচেয়ে বেশী টেস্ট ম্যাচ খেলেছেন কে? তাহলে উত্তরে আসবে টানা ১৫৩ টি ম্যাচ খেলা বর্ডারের নাম। আবার যদি আপনাকে বলা হয় অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে কট কট এন্ড বোউলড করা বোলার কে? তাহলে আসবে এই বর্ডারের নাম। আবার অধিনায়ক হিসেবে অস্ট্রেলিয়া পক্ষে ম্যাচ সেরা বোলিং ফিগারটিও এই বর্ডারের দখলেই। তাই বলা যায়, পরিসংখ্যানের তালিকায় অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে সর্বোচ্চ স্থানে আছে বর্ডার।

▪বিরতিহীন অধিনায়কত্ব:
উপরেই বলেছি টেস্টে সবচেয়ে বেশী অধিনায়কত্ব করেছে স্মিথ। কিন্তু একটানা সবচেয়ে বেশী ম্যাচে অধিনায়কত্ব করা ক্রিকেটারের নাম কি? এবার আপনি যেই নামটি দেখতে পাবেন সেটি অ্যালান বর্ডার। যিনি অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে ৯৩ টি ম্যাচে অধিনায়কত্ব করেছেন। এখানে কাকতালীয় বিষয় হলো সেই ৯৩ টি ম্যাচে একটানা ক্যাপ্টেনন্সি করেছেন বর্ডার।

▪অধিনায়ক বর্ডার:
একজন ব্যাটসম্যান বর্ডারকে আমরা অনেকেই চিনি। কিন্তু অধিনায়ক বর্ডারকে ক’জনই বা চিনি! পরিসংখ্যান বলে অধিনায়ক বর্ডার ছিলেন দারুণ একজন পারফর্মার। যিনি অধিনায়ক হিসেবে অস্ট্রেলিয়াকে বেশীবার নেতৃত্ব দিয়েছেন। একটানা সবেচেয়ে বেশী ম্যাচে অধিনায়কত্ব করেছেন। অধিনায়ক হিসেবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানের মালিক বর্ডার। আবার অধিনায়ক হিসেবে অজিদের ম্যাচ সেরা বোলিং ফিগারও বর্ডারের নামের পাশে যুক্ত। শুধু তাই নয়, অধিনায়ক হিসেবে টেস্টে ১৫ টি সেঞ্চুরি রয়েছে বর্ডারের। সেই সাথে করেছেন ৫০.৯৫ গড়ে রান! এতোকিছুর পরে একজন অধিনায়ক বর্ডারকে সেরা বলায় যায়।

▪বর্ডারে যেখানে একাই একশো:
টেস্ট ক্রিকেটের শুরুটা আজকের নয়। সেই অনেক আগে টেস্ট ক্রিকেটের পথচলার অনেক গ্রেট ব্যাটসম্যান রাজত্ব চালিয়েছেন ২২ গজে। লারা যেমন এক ইনিংসে ৪০০* রান করে নিজের নামটি রেখেছেন সবার উপরে ঠিক তেমনি বর্ডার একমাত্র ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্টের দুই ইনিংসে ১৫০+ রান করে এই তালিকায় নিজের নামটি লিখেছেন স্বর্ণালি অক্ষরে। অবশ্য এই ইতিহাস আজকের নয়, সেই ১৯৮০ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এই রেকর্ডটি নিজের করে নিয়েছিলেন বর্ডার। এরপর অনেক রেকর্ড ভেঙ্গে গেলেও এই রেকর্ডটি এখন পর্যন্ত ভাঙ্গতে পারেনি কেউ।

Australian cricketer Allan Border batting against South Africa in a one day international at Melbourne, Australia, 9th December 1993. (Photo by Ben Radford/Getty Images)

▪অধিনায়ক হিসেবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান:
টেস্টে ক্রিকেটে অধিনায়কত্ব করেছেন অনেক ক্রিকেটার। কিন্তু রানের দিক দিয়ে কে আছেন সবার উপরে? সেই উত্তরে যেই নামটি সবার প্রথমে আসবে সেটি স্টিভেন স্মিথ। এরপর দ্বিতীয় স্থানে আসবে বর্ডারের নাম। যদিও বর্ডার যখন ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছিলো তখন তিনিই ৬৬২৩ রান নিয়ে ছিলেন সবার উপরে। পরবর্তী সময়ে স্মিথ সেই রেকর্ডটি নিজের করে নেন।

এইসবের বাইরে যদি আলোচনা করতে যাই তাহলে তার সেরা কিছু ইনিংসের গল্প বলতে হবে। আর সেই গল্পের তালিকায় আসবে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অ্যাডিলেডে দুর্দান্ত ইনিংসের গল্প বা লর্ডসে ৪ রানের আক্ষেপ নিয়ে মাঠ ছাড়ার গল্পটি! কিংবা ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে মাত্র ৪৬ রানে ৭ উইকেট অথবা ওয়ানডে ক্রিকেটের সেরা সাফল্যগুলো। এইসব নিয়ে আলোচনা করতে গেলে ক্রিকেট মাঠে বর্ডারের পারফরম্যান্স গুলোতে নজর দেওয়া প্রয়োজন। এবার আমরা একজন বর্ডারের ব্যাট-বলের পারফরম্যান্স গুলোতে চোখ বুলিয়ে নিই।

১৯৭৮-১৯৯৪ সাল; এই সময়টাতে সাদা পোশাকে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ২২ গজে রাজত্ব চালিয়েছেন বর্ডার। মোট ১৫৬ ম্যাচে অংশগ্রহণ করে ২৭ শতকের সাথে ৬৩ টি অর্ধশতকে সর্বোচ্চ ২০৫ রানে ৫০.৫৬ গড়ে নামের পাশে যুক্ত করেছেন ১১১৭৪ রান। যা তৎকালীন সময়ে অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে টেস্টে যেকোনো ব্যাটসম্যানের সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড। ক্রিকেটের রাজকীয় এই ফরম্যাটে ৪৬ রানে ৭ উইকেটে মোট ৩৯ উইকেট শিকার করেন।

সাদা পোশাক বাদ দিলে আসবে রঙ্গিন পোশাকের গল্প। এই গল্পে বর্ডার একজন চ্যাম্পিয়ন ব্যাটসম্যান। কেন না, এই ফরম্যাটে তিনি চ্যাম্পিয়ন দলের সদস্য। ওয়ানডে ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে খেলেছেন ২৭৩ ম্যাচ। যেখানে সর্বোচ্চ ১২৭* রানে করেছেন ৬৫২৪ রান। এবং বল হাতে শিকার করেছেন ৭৩ উইকেট।

এই গেলো ক্রিকেট মাঠে বর্ডারের পারফরম্যান্স। এখন যদি বলা হয় একজন অধিনায়ক বর্ডারের পারফরম্যান্স কেমন ছিলো! তাহলে কি বলবেন? আপনি যেটাই বলেন না কেনো, আমি বলবো একজন অধিনায়ক বর্ডার সেরা ছিলো। পরিসংখ্যান অন্তত এটাই জানান দেয়। কেননা টেস্ট ক্রিকেটে বর্ডারের ব্যাটিং গড় যেখানে ৫০.৫৬, সেখানে অধিনায়ক হিসেবে হিসেবে তার ব্যাটিং গড় ৫০.৯৫। আবার রঙ্গিন পোশাকে বর্ডারের গড় যেখানে ৩০.৬৩ সেখানে অধিনায়ক হিসেবে তার ব্যাটিং গড় ৩২.১৭। অধিনায়ক হিসেবে জয়ের রেকর্ডও খারাপ না। সাদা পোশাকের ৯৩ ম্যাচের ৩২ ম্যাচে জয়ের বিপরীতে হেরেছে ২২ ম্যাচে। অবশ্য রঙ্গিন পোশাকে তিনি ছিলেন দারুণ একজন অধিনায়ক। কেননা, বর্ডারের নেতৃত্বে ১৭৮ ম্যাচের ১০৭ ম্যাচেই জয় পায় অস্ট্রেলিয়া। শুধু তাই নয়, অস্ট্রেলিয়াকে প্রথম শিরোপা এনে দেওয়া অধিনায়কের নামটিও অ্যালান বর্ডার। সবকিছু বিবেচনায় একজন অধিনায়ক বর্ডার ছিলেন দারুণ এক পারফর্মার।

অ্যালান বর্ডার টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ১৫০+ ম্যাচ খেলার রেকর্ড গড়েন। প্রথম অজি ক্রিকেটার হিসেবে টেস্টে ১১০০০+ রান করেন তিনি। তৎকালীন সময়ে টেস্টে সর্বোচ্চ ম্যাচ এবং সর্বোচ্চ রানের মালিক ছিলেন বর্ডার। শুধু তাই নয়, সেই সময় সবচেয়ে বেশি টেস্টে নেতৃত্ব দেওয়া অধিনায়কও বর্ডার। যদিও সময়ের সাথে সাথে সেইসব রেকর্ড অন্য কারো দখলে চলে গিয়েছে। কিন্তু তাতে কি? প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে সেইসব রেকর্ডে বর্ডারের নামটি সবার উপরেই থাকবে।

এইসব জানার পরেও একটি জিনিস এখনো অজানা। একজন বর্ডারকে নিয়ে যা কিছু বললাম তাতে বর্ডারকে নিয়ে অনেকটা ধারণা পাবার কথা। কিন্তু এই বর্ডারের শুরুটা কবে! সেটিই তো জানা হলোনা। তাইতো ফিরে গেলাম ১৯৫৫ সালের আজকের দিনে। যেদিন পৃথিবীর বুকে আলো হয়ে এসেছিলেন বর্ডার। অর্থাৎ আজ বর্ডারের জন্মদিন। আজকের এই শুভ দিনে বর্ডারকে জানাই জন্মদিনের শুভেচ্ছা। শুভ জন্মদিন চ্যাম্পিয়ন ক্রিকেটার।

মতামত জানান :