৮ই মার্চ মহিলাদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ফাইনালের প্রায় সাত মাস পর করোনা পরবর্তী সময়ে অস্ট্রিয়া—জার্মানি টি-টোয়েন্টি সিরিজ দিয়েই মেয়েদের ক্রিকেট ফিরেছে বাইশ গজে।
জার্মানির অস্ট্রিয়াকে হোয়াইটওয়াশের মাধ্যমে সাত মাস পর নারী ক্রিকেট ফিরলো মাঠে।
লোয়ার অস্ট্রিয়ার সীবার্ন ক্রিকেট সেন্টারে হওয়া সবকটি ম্যাচেই বড় ব্যবধানে জয় পেয়েছে সফরকারী জার্মানির মেয়েরা।
পাঁচ ম্যাচ সিরিজ শেষে রেকর্ডের ছড়াছড়ি!
চলুন দেখে নেই সিরিজ রিপোর্টঃ
–
প্রথম ম্যাচঃ
ওপেনার ক্রিশ্চিনা গফের ৭২ রান, যা সে ম্যাচ পর্যন্ত টি-টোয়েন্টিতে জার্মানির উভয় দল মিলিয়ে কোনো ব্যাটসম্যানের সর্বোচ্চ ইনিংস। ম্যাচে সফরকারী জার্মানি মাত্র দুই উইকেট হারিয়ে ১৬৫ রানের বিশাল টার্গেট দাঁড় করায় অস্ট্রিয়ার সামনে। জবাবে এমা বার্গ্নার বোলিং তোপে মাত্র ৮৩ রানেই শেষ অস্ট্রিয়ার ইনিংস, তাদের অধিনায়ক এন্ড্রেয়া-মে যেপেদার সর্বোচ্চ ৩৫* রানের ইনিংস ম্যাচ জিতার জন্য যথেষ্ট ছিলো না। এমা বার্গ্না তার ক্যারিয়ারের প্রথম হ্যাটট্রিকের সাহায্যে থ্রি উইকেট মেডেন নিয়ে ম্যাচ অফ দ্যা ম্যাচ হয়েছিলেন, বোলিং ফিগার ৩-২-৫-৩!
–
দ্বিতীয় ম্যাচঃ
আগের ম্যাচে ৭২ করা পার্টনার গফকে ছাড়িয়ে গেলেন আরেক ওপেনার জ্যানেট রোনাল্ডস। গফকে সাথে নিয়ে হাঁকালেন নিজের এবং জার্মানির প্রথম টি-টোয়েন্টি সেঞ্চুরি! ধারাবাহিকতা ধরে রেখে গফ করেন ৬৬*, সেঞ্চুরিয়ান জ্যানেট করেন ১০৫*। দু’জনই অপরাজিত থেকে ১৯১ রানে শেষ করলেন দলীয় ইনিংস। যার মাধ্যমে তৈরী হলো আরো দুই বিশ্বরেকর্ড, সকল ধরনের টি-টোয়েন্টিতে কোনো উইকেট না হারিয়ে সর্বোচ্চ সংগ্রহ!
পাশাপাশি নারী টি-টোয়েন্টিতে চতুর্থ সর্বোচ্চ রানের পার্টনারশিপটিও নিজেদের দখলে নিয়ে নেন জ্যানেট-গফ জুটি।
বোলিংয়ে এসে আরেক চমক দেখালো জার্মানরা! আগের ম্যাচের হ্যাটট্রিক করা মাত্র ১৫ বছর বয়সী বার্গ্না এবার নিলেন ৯ রানে পাঁচ উইকেট, যা জার্মানির পক্ষে টি-টোয়েন্টিতে প্রথম পাঁচ উইকেট শিকার।
এবার মাত্র ৫৩তে শেষ অস্ট্রিয়ার ইনিংস।
–
তৃতীয় ম্যাচঃ
এবার জার্মানির লক্ষ স্বাগতিকদের আবারো হারিয়ে সিরিজ নিশ্চিত করা। প্রথমে বোলিংয়ে এসে ২৮ রানে অস্ট্রিয়ার প্রথম ব্যাটসম্যানকে রান আউট করে সাজঘরে ফেরায় জার্মানি। এরপর সুজানে ম্যাকএনানামা-ব্রেরেটন নিজের টানা তিন ওভারে তিন উইকেট নিয়ে নিজের বোলিং কৌটা শেষ করেন। এনা বিয়েরউইসচ এসে প্রথম বল ডট দিয়ে পরের তিন বলে তুলে নেন নিজের প্রথম ও ১৮তম নারী টি-টোয়েন্টি হ্যাটট্রিক। অস্ট্রিয়া অল আউট ৫৪ রানে, জবাবে বিনা উইকেটেই জয়ের বন্দরে পৌছে সিরিজ নিশ্চিত করে জার্মানি।
–
চতুর্থ ম্যাচঃ
আবারো প্রথমে ব্যাটিংয়ে জার্মানি। এবার দুই ওপেনার গফ ও জ্যানেট মিলে দ্বিতীয় ম্যাচে নিজেদের গড়া রেকর্ড ভেঙে দিলেন। তাদের ব্যাটে চড়ে এবার জার্মানির সংগ্রহ বিনা উইকেটে ১৯৮। আগের রেকর্ড ভেঙে যেটি এখন সকল ধরনের টি-টোয়েন্টিতে কোনো উইকেট না হারিয়ে সর্বোচ্চ সংগ্রহের রেকর্ড, অর্থাৎ টি-টোয়েন্টিতে কোনো উইকেট না হারিয়ে সবচেয়ে বেশী রান সংগ্রহের প্রথম দুটি রেকর্ডই তাদের!
পাশাপাশি সর্বোচ্চ পার্টনারশিপের রেকর্ডবুকে আগের রেকর্ডকে পঞ্চমে নামিয়ে নারী টি-টোয়েন্টিতে চতুর্থ সর্বোচ্চ রানের পার্টনারশিপটি নিজেদের দখলে নিয়ে নেন এই জুটি, চতুর্থ – পঞ্চম দুটি রেকর্ডই এখন তাদের!
সিরিজের শুরু থেকে ধারাবাহিক গফ এ ম্যাচে পান নিজের প্রথম সেঞ্চুরি, জার্মানির দ্বিতীয় সেঞ্চুরির ইনিংসটি ১০১* এ থামে।
বোলিংয়ে অধিনায়ক ভারতীয় বংশদ্ভূত আনুরাধা দোব্বালাপুর সকল আলো কেড়ে নেন। চার উইকেট মেইডেন নিয়ে স্পেল শুরু করা এই বোলার নারী টি-টোয়েন্টিতে প্রথম ও আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে মালিঙ্গার পর দ্বিতীয় খেলোয়াড় হিসেবে চার বলে চার উইকেট নেয়ার কীর্তি গড়েন দোব্বালাপুর। শেষে আরেক উইকেট নিয়ে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মালিঙ্গার ৬ রানে ৫ উইকেটের ফিগারকে পেছনে ফেলে টি-টোয়েন্টিতে অধিনায়কের সেরা বোলিং ফিগার নিজের করে নেন আনুরাধা, বোলিং ফিগারঃ ৩-২-১-৫!!
এই ম্যাচ ১৩৭ রানের বিশাল ব্যবধানে জয়লাভ করে জার্মানি!
–
পঞ্চম ম্যাচঃ
স্বাগতিকদের হোয়াইটওয়াশের লক্ষে ব্যাটিং অর্ডারে বড়সড় পরিবর্তন নিয়ে নামে জার্মানি। অস্টিয়া এবার কিছুটা সফলতার মুখ দেখে, চামুন্ডাইয়াহ’র ২-১৫ ফিগারে ১২৯ রানে জার্মানিকে আটকে রাখতে সমর্থ হয় তারা। কিন্তু জার্মান বোলারদের সামনে এবারও অসহায় অস্ট্রিয়ার ব্যাটসম্যানরা, বিয়েরউইসচ এর ৪-৭ ফিগারে ৭৯ রানের জয় পায় জার্মানি।
—
সিরিজের পরিসংখ্যানঃ-
সবচেয়ে বেশী রান সংগ্রহঃ
ক্রিশ্চিনা গফ- ২৩৯ রান (জার্মানি)
যেপেদা- ৩৫ রান (অস্ট্রিয়া)
সবচেয়ে বেশী উইকেট সংগ্রহঃ
বার্গ্না- ১০ উইকেট (জার্মানি)
চামুন্ডাইয়াহ- ২ উইকেট (অস্ট্রিয়া)
ম্যান অফ দ্যা ম্যাচঃ
গফ (২)
জ্যানেট(১)
বিয়েরউইসচ(২)
—
সিরিজ শুরু আগে র্যাঙ্কিংয়ে ২৭তম অবস্থানে ছিলো জার্মানি ও ৫০ নাম্বারে ছিলো অস্ট্রিয়া। একপেশে সিরিজের পর এক ধাপ এগিয়ে জার্মানি উঠে এসেছে ২৬ নাম্বারে ও পুরো সিরিজের আন্ডারডগ অস্ট্রিয়া তিন ধাপ পিছিয়ে এখন ৫৩ নাম্বারে।
গত বছরই পরিপূর্ণভাবে নারী ক্রিকেট শুরু করা জার্মানি এই সিরিজের মাধ্যমে নিজেদেরকে আরো একবার ইউরোপীয় ক্রিকেটের অন্যতম সেরা প্রমিলা দল হিসেবে প্রমাণ করলো। এভাবে খেললে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড এর মতো দলকে হারিয়ে একদিন প্রমিলা বিশ্বকাপ জিতবে বলে আশাবাদী জার্মানি অধিনায়ক। অন্যদিকে আরো শক্তিশালীভাবে কামব্যাক করার আশা ব্যক্ত করেছেন অস্ট্রিয়ার অধিনায়ক।
শুভ কামনা রইলো উভয় দলের জন্য, এভাবেই ক্রিকেট ছড়িয়ে পড়ুক দেশ-দেশান্তরে!