২০০৩ সাল, সদ্য ইতি ঘটা নেটওয়েস্ট সিরিজের ফাইনালে হারের ফলাফলে দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে বাড়ি ফিরলেন। নারীর টানে বাড়ি ফেরা যে বিষাধতার বিষে এতোটা নীল হতে পারে; হতে পারে জীবনের গল্পে এক করুণ তেতো অধ্যায় তা আর ক’জনেই বা নিজ চোখে দর্শন করতে পারে?
ঘরের ছেলের আগমনে যেথায় বাড়ির প্রতিটা কোণ থেকে কোণে সজ্জিত হওয়ার কথা, অভিবাদনের সুরে উৎফুল্ল হওয়ার কথা পরিবারের সকলের হৃদয়ের অন্তস্থল। কিন্তু সেদিন ছেলে বাড়ি ফেরা মাত্রই আপন ঘরটি যেনো ছিলো ঘোর আন্ধকারে অন্ধকারাচ্ছন্ন এক বর্ণহীন, রসকষ বিহীন ফ্যাকাশে এক আবছা আলোয় জরাজীর্ণতায় পরিপূর্ণ!
বাড়িতে আসতে না আসতেই নিজ নয়নে জোড়াই দেখলেন বাবা হারানোর এক ট্রাজিক মুহূর্ত৷ মরণব্যাধি ক্যান্সারে বাবার মৃত্যু! বাবার মৃত্যুর শোকে শোকাক্রান্ত এবং দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে মিস করলেন দলের ইংল্যান্ডে সফরের একাংশ।
সেদিন শুধু তিনি নিজের বাবাকেই হারাননি, হারিয়েছিলেন নিজের ক্রিকেট দীক্ষাগুরু কেও৷ কিন্তু বাবার মৃত্যুর শোক আর পারিবারিক অজুহাত তাকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। দলে ফিরেছিলেন ঠিক ২ ম্যাচ বাদেই! আর নিজের ফেরাটা রাঙিয়ে ছিলেন বাবার স্মৃতি কে গায়ে চাপিয়েই৷
সেদিন ৩ নাম্বার জার্সি রূপান্তরিত হয়েছিলো ৬৫ নাম্বারে। উদ্দেশ্যে ছিলো দূর আকাশে মিটিমিটি তারার ন্যায় ভেসে ভেড়ানো বাবা নামক তারাটির প্রয়াণকালে বয়সে সংখ্যা ‘৬৫’ এর স্মরণ গায়ে চাপিয়ে ব্যাটে বলে রাজ্য শাসন।
সেই থেকেই শুরু ৬৫ নাম্বার জার্সির আর পিছনে ‘জ্যাক ক্যালিস’ লেখাধারী ছেলেটির ব্যাটে বলের নিশ্চুপ যুদ্ধে তরবারী আর চর্মগোলক হাতে শাসনের ইতিকথা। যার ইতি কিংবা শেষ পুরোটা জুড়েই তিনি রাঙিয়েছেন নিজের রঙে, নিজের গড়া রেকর্ড, পরিপূর্ণতায় তৃপ্তি আর টুকরো আক্ষেপের মিশেলে গড়া এক বর্ণীল ক্যারিয়ারে।
১৬ অক্টোবর ১৯৭৫, আফ্রিকান শহর কেপটাউনে বাবা হেনরি ক্যালিস এবং মা মার্সিয়া ক্যালিসের ঘর আলো করে আসা জ্যাক ক্যালিসের জন্ম হয়তোবা সেদিন কোন এক অতিশয় সাধারণ ঘটনা ছিলোই বটে! অতি সাধারণ কিংবা সাদামাটা জন্মের আগেই আফ্রিকান ক্রিকেট যেনো নিমিত্ত ঘোর অন্ধকারে। এ যেনো দিক হারিয়ে বিদাশা, সাদা কালোর বৈষম্যে আফ্রিকান ক্রিকেট যেনো নিজেকে হারিয়ে খুঁজছে।
১৯৭০ সালে বর্ণবাদ বৈষম্যে আফ্রিকান ক্রিকেট যখন ঘোর অন্ধকারের পথযাত্রা শেষ করে আলো দিশারির পথে তখন বয়সের হিসেবে জ্যাক ক্যালিস গোঁফ, দাড়িঁবিহীন এক জোয়ান বালক। ১৯৯৫ এ যখন অভিষেক তখন বয়সের কোটা গিয়ে দাঁড়িয়েছে ২০ এর ঘরে৷
ক্রিকেট মহড়ার স্বর্গীয় এই যুগে কেপটাউন শহরটার বেশ সুখ্যাতি বলাই চলে৷ এই শহর আফ্রিকান ক্রিকেট কে উপহার হিসেবে দিয়েছে গ্যারি কারস্টেন, হার্শেল গিবস এবং জ্যাক ক্যালিসের মতো কিছু প্রতিভাবান খেলোয়াড়! কিন্তু ক্রিকেটের সেকালে দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেট দলে কেপটাউন প্রদেশের বালাই মাত্র নেই। যেনো অজানা একটা শহর!
১৯৯৫ এ যখন জ্যাক ক্যালিস কেপটাউনের প্রতিনিধি হিসেবে জাতীয় দলের চৌকাঠে পা মারালেন তখন কোন কেপটাউনবাসী হয়তোবা ধারণা করেনি ২০ বছর বয়সী এই তরুণ হয়তোবা আসতে যাচ্ছে কেপ টাউনের মুখ আলো করতেই। আসতে যাচ্ছিলেন নগরীর প্রতিটা মানুষের মনে ক্রিকেটীয় শিহরণ জাগাতে, প্রতিটা শিশুর ভবিষ্যত আইডল হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতেই।
২০১৪ সালে যখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কে বিদায় বলেন তখন নামের পাশে ২৫ হাজার রান, ৫০০ এর বেশি উইকেট। না এগুলো শুধু স্ট্যাট নয়, এগুলো অনুভূতিতে শিহরণ জাগানিয়া সর্বকালের অন্যতম এক অল-রাউন্ডার হিসেবে তকমা দেওয়ার অন্যতম কারণ ও বটে! কেপটাউনবাসীর মন মন্দিরের ঠাঁই দেওয়ার অন্যতম নিমিত্ত৷
চলুন ফিরে যাওয়া যাক সেই ছোট্ট জুনিয়র ক্যালিসে। ক্যালিসের বেড়ে উঠা এবং শৈশব কৈশোর পুরোটাই কেপটাউনের পাইনল্যান্ডে। ক্রিকেটের হাতেখড়ি শুরু সেখানকার স্থানীয় স্কুল উইনবার্গ বয়েজস হাই স্কুলে। বাবার হাত ধরে ক্রিকেট ব্যাট বল ধরতে শেখা ক্যালিসের ক্রিকেটীয় জীবনের শুরুটা হয়েছিলো ঐ স্কুল ক্রিকেট দিয়েই।
১৯৯৩ সালে ঘরোয়া ওয়েস্টার্ন প্রভিন্স এর জার্সি গায়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক হয় ১৭ বছর বয়সী জ্যাক ক্যালিসের। ৩৫ ওভারের সেই ম্যাচে ব্যাট হাতে ইনিংস উদ্ভোধনে এসে ক্যালিস করেন মোটে ১২ রান। নাম এবং নামের পাশে রান দুটোই ছিলো বড্ড সাদামাটা৷
প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটের অভিষেকে ম্যাচের চিত্র ক্যালিস আবারো ফুটিয়ে তুলেন নিজের অভিষেক টেস্ট ম্যাচেও। ১৯৯৫ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে নিজের অভিষেক টেস্টের ১ম ইনিংসে ক্যালিস করেছিলেন মোটে ১ রান, ২য় ইনিংসে হয়নি সুযোগ ব্যাট করার। এমনকি ক্যারিয়ারের শুরুর ৫ টেস্ট ম্যাচে ক্যালিসের ব্যাটিং গড় ছিলো মাত্র ৮।
কিন্তু কথায় আছে ভোরের সূর্য কখনোই সঠিক দিনের পূর্বাভাস হতে পারে না। ক্যালিসের ক্যারিয়ারেই তারই জলজ্যান্ত বাস্তব উদাহরণ।
১৯৯৭ সালে প্রথম সেঞ্চুরি পাওয়া ক্যালিস টেস্ট ক্যারিয়ার শেষ করেছেন ৪৫ সেঞ্চুরির স্বপ্নের বীজ বুনে রেখেই। টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে সেঞ্চুরির দিকে উপরে আছেন কেবল একমাত্র শচীন টেন্ডুলকারই। এমনকি প্রথম ৫ টেস্টে ৮ গড়ে ব্যাট করা ক্যালিস ক্যারিয়ার শেষ করেছেন ৫৮ গড়ে রান করে। টেস্টে তার মোট রান ১৩২৮৯, যা টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে ৩য় সর্বোচ্চ। ক্যালিসের চেয়ে মাত্র ১০০ রান বেশি নিয়ে দুইয়ে আছেন অজি দলপতি রিকি পন্টিং।
ক্যারিয়ারের প্রথম ঘরোয়া ম্যাচে মাত্র ১২ রান করে আউট হওয়া জ্যাক ক্যালিস নিজের প্রথম শ্রেণীর ক্যারিয়ারে এরপর করেছেন ১৯৬৬৫ রান। ক্যারিয়ারের শুরুতে ব্যাটসম্যান হিসেবে শুরু করেও প্রথম শ্রেনীর ক্যারিয়ার শেষ করেছেন ৪২৭ টি উইকেট নিয়ে। প্রথম শ্রেনীর ক্রিকেটে ব্যাট হাতে প্রায় ২০ হাজার রান এবং বল হাতে ৪০০+ উইকেট নেওয়া একমাত্র খেলোয়াড় জ্যাক ক্যালিসই৷
বলের পরিবর্তনে কিংবা রঙ আর আকারের কার্যসিদ্ধিতে বৈচিত্রের ছোঁয়া পেলেও, ক্যালিসের ছোঁয়ায় ব্যাট কিংবা বল হেসে খেলেই কথা বলেছে অবলীলায়। সাদা বিবর্ণ বল আর রঙিন পোশাকেও জ্যাক ভক্তদের হাসিয়েছেন, আর ভালোবাসার এক বিন্দুতে গেঁথেছেন। ওয়ানডেতে ১১৫৭৯ রান নয়’কি তার প্রমাণ?
রঙ্গিন পোশাকে ক্যালিসের সেঞ্চুরি এবং হাফসেঞ্চুরির সংখ্যা যথাক্রমে ১৮ এবং ৮৬ টি। বল হাতেও সমান তালে চলেছে তার পারফরম্যান্স এর ধারবাহিক ছুটে চলার মহড়া। বল হাতে তার আমলনামায় জমা পড়েছে ২৭৩ টি উইকেটের হালখাতা।
ওয়ানডের পাশাপাশি হালের টি২০ ফরম্যাটেও ক্যালিসের খেলা হয়েছে ২৫ টি ম্যাচ। ২৫ ম্যাচে ক্যালিস নিজের ঝুলিতে পুড়েছেন ৬৬৬ রান আর বল হাতে ১২ খানা উইকেট।
ক্রিকেট ইতিহাসে জ্যাক ক্যালিস একমাত্র ক্রিকেটার যার টেস্ট এবং ওয়ানডে ক্রিকেট দুই ফরম্যাটেই রয়েছে ১০ হাজারের চেয়ে বেশি রান আর বল হাতে ২৫০ এর বেশি উইকেট। তিনি ক্রিকেট ইতিহাসের প্রথম ব্যাটসম্যান যার রয়েছে ১৫০তম টেস্ট ম্যাচে ১৫০ রান করার রেকর্ড৷
এতো অর্জন আর রেকর্ডের পরেও ক্যালিস ছিলেন বরাবরই অ্যান্ডাররেটেড একজন। তাকে নিয়ে মিডিয়া জগৎ কিংবা ক্রিকেটের বোদ্ধামহল কোথাও হয়না তেমন বিশধ আলোচনা কিংবা প্রসংশায় পঞ্চমুখর হৈ হৈ রৈ রৈ কাণ্ড। এতো কিছুর পরেও ক্যালিস নিজের কাজ করে গেছেন নিজেই, সকলের অবলোকনে, আড়ালে, আবডালে কিংবা ২২ গজের নিরব যুদ্ধে।
এব্যাপারে উইজডেন কে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে ক্যালিস বলেছিলেন,
“I think it was my personality.I never really enjoyed the limelight, I liked going about my business and just getting on with the job. I never played the game for accolades or anything like that. I just enjoyed doing what I did and I really didn’t go out of my way to worry about what people said or market myself”
হ্যাঁ তার ব্যক্তিত্ব আর চলার পথটা এমনি ছিলো। ছিলো অনাবেগী সব গল্পের সমাহারে পরিপূর্ণ অধ্যায়ের ঠাঁসা। এই ধরুন ২০০৯ সালের আইপিএলের কথাই যদি বলি তখন ক্যালিস কলকাতা রয়্যাল চ্যালেঞ্জারস বেঙ্গালুরুরের বহরের অন্যতম সদস্য। সেই আসরে ছোটবোন জেনিন ক্যালিস তখন চেন্নাইয়ের চিয়ারলিডার৷ কিন্তু তাই বলে চেন্নাইয়ের সাথে কলকাতার ম্যাচের দিন ভাই জ্যাক ক্যালিস উইকেটের পর সেলিব্রেশন করতে ভুলেননি ছোট বোল জেনিন ক্যালিস৷
এই ব্যাপারে ক্যালিসের মন্তব্য ছিলো এইটুকু-
“ছোটবেলা থেকেই জেনিনের নাচের প্রতি আগ্রহ ছিল। চেন্নাই সুপার কিংসে ও সুযোগ পেয়েছিল। ওর জন্য পরিবার গর্বিত। চেন্নাইয়ের বিরুদ্ধে সে দিন আমি আউট হওয়ার পরে জেনিন খুব ভালই নেচেছিল। চেন্নাইয়ের বিরুদ্ধে এর পরে যখনই খেলতে নামতাম, আরও সতর্ক হয়ে যেতাম।”
ক্রিকেট মাঠ কিংবা বাস্তবিক জীবনে আক্ষরিক অর্থে এমন পেশাদারিত্বের আর আত্ম নিবেদনের নিদর্শন কজনাই বা হতে পারে? যেমনটা হয়েছিলেন জ্যাক ক্যালিস?
ব্যাটিংয়ে তার একাগ্রতা, দৃঢ়তা, পারদর্শীতা আর মনোযোগ ছিলো বরাবরই দর্শনীয় নান্দনিক এক উপমা। তার প্রতিটা শটের মধ্যেই ছিলো ক্রিকেট ব্যাকরণের শুদ্ধতার এক উদাহরণ। নিজের ট্রেডমার্ক কাভার ড্রাইভে প্রকাশিত হতো এমনি সব সৌন্দর্যখচিত মুগ্ধতা৷
তার ক্রিকেটীয় শটে যেমনি ছড়াতো সুরভি তেমনি ক্রিকেট মাঠে ঠান্ডা মাথার মানুষে হিসেবে ছিলেন এক জলজ্যান্ত উদাহরণ। প্রতিপক্ষ স্লেজিং করে যাচ্ছেন নিয়মিত, কিন্তু সেগুলো বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে ক্যালিস ছুটেছেন নিজের গন্তব্যের পেছনে। গন্তব্যের অন্তিমে নিজের নামটি লিখিয়েছেন সেরাদের কাতারে৷
একবার অস্ট্রেলিয়ার সাথে এক টেস্ট ম্যাচে ক্যালিস ব্যাট হাতে উইকেটে অনেকটা সেট, তখন বোলিংয়ে ছিলেন অজি বোলার মাইকেল। তিনি করছিলেন কি, একের পর এক বাউন্সার এর সাথে স্লেজিং করে মনোযোগ নষ্ট করতে চাইছিলেন ক্যালিসের। কিন্তু জ্যাক ক্যালিস সেইসব স্লেজিংয়ের কোন প্রতিত্তোর না দিয়ে রান করে যাচ্ছিলেন অবাদে৷ এক পর্যায়ে মাইকেল বলছিলেন ‘ক্যালিস কি বধির?’
ব্যাটসম্যান হিসেবে ক্যালিসের হাতের উইলো কথা বলে বলেছে নিয়মিতই। সেটা হোক এশিয়ার মাটি কিংবা নিজেদের চেনা ডেরায়। ব্যাট হাতে এশিয়ার মাটিতে এশিয়ায় বাইরের কোন ব্যাটসম্যানের রানের তালিকায় ক্যালিসের নামটি রয়েছে বেশ শক্তপোক্ত স্থানেই। ক্যালিস এশিয়ার বাইরের ব্যাটসম্যান হওয়া স্বত্তেও এশিয়ার মাটিতে রয়েছে ২০৫৮ রান। এই কীর্তি সর্বপ্রথম করেন ক্যালিসই। এরপর ২০০০ রান করেছেন ইংলিশ ব্যাটসম্যান এলিস্টার কুক। বর্তমানে এই তালিকায় প্রথমে কুকের নাম থাকলেও তৎকালীন ছিলেন ঐ ক্যালিসই। আর তাই জ্যাক ক্যালিস কে বলা হয় ‘এশিয়ান গেইন্ট’
এতো কিছু অর্জনের পথটা সুগম ছিলো না বরং ছিলো দুর্গমই। অনূর্ধ্ব ১৫ দলের হয়ে যখন রাজ্য দল ওয়েস্টার্ন প্রভিন্সের খেলেন তখন নির্বাচকরা তাকে দল থেকে বাদ দিয়েছিলেন তার কম উচ্চতার কারণে। নির্বাচকদের বক্তব্য অনুসারে ক্যালিসের তখন যথেষ্ট উচ্চতা ছিলো না।
অনূর্ধ্ব-১৫ দল থেকে বাদ পড়া ক্যালিস সেদিন সেখানেই বলে বসেছিলেন ‘আমি তোমাদের দেখিয়ে দেব’। আর হ্যাঁ নির্বাচকদের ধারণা ভুল প্রমাণ করেই দলে ফিরছিলেন জ্যাক ক্যালিস। অথচ টেস্টে আফ্রিকান ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছক্কা হাঁকানোর কৃতিত্ব টা-ই এখন জ্যাক ক্যালিসের৷ টেস্টে ক্যালিসের হাঁকানো ৯৭ ছক্কা এখনো টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে ৪র্থ সর্বোচ্চ।
ক্রিকেট মাঠে বিচক্ষণ আর নিজে সিদ্ধান্তে অটল থাকা ক্যালিসের মাঠে দুর্বলতা ছিলো একটি জায়গাতেই। আর সেটা জাতীয় সঙ্গীতে। ম্যাচের পূর্বে অনুষ্টিত হওয়া জাতীয় সঙ্গীত কখনোই গাইতেন না ক্যালিস। এ ব্যাপারে ক্যালিসের মন্তব্য ছিলো জাতীয় সঙ্গীত গাইলে আমার বাবার কথা মনে পড়ে যায়।
ক্যারিয়ারের শুরুতে গড়পড়তায় করে শুরু করা জ্যাক ক্যালিস সময়ের ব্যবধানে নিজের ক্যারিয়ার কে পরিপাটি করে সাজিয়েছেন বৈচিত্র্য বর্ণালী সব অর্জনের গর্জনে, আর রান, উইকেট জাদুকরী ফিল্ডিংয়ের সৌন্দর্য্যে।
নিজের অর্জনে আলোচনা না আসলেও ক্যালিস নিজ ক্যারিয়ারের পেয়ে অনেক সম্মান সূচক পদবী। জ্যাক ক্যালিস ২০০৫ সালে আইসিসির বর্ষসেরা টেস্ট ক্রিকেটার, ২০০৮ সালে উইজডেন বর্ষসেরা ক্রিকেটার, ২০১১ সালে আফ্রিকা বর্ষসেরা ক্রিকেটার, ২০১৩ সালে জনপ্রিয় তারকা ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব, ২০১৩ সালে উইজডেন সেরা ৫ বর্ষসেরা ক্রিকেটার এবং সদ্য ২০২০ এ নির্বচিত হলেন আইসিসি হল অফ ফ্রেমে।
ক্রিকেটের সেকাল একাল মিলিয়ে শতো থেকে হাজার চরিত্র এসেছে, আবার বেলা ফুরিয়ে গেলে সূর্যাস্তের ন্যায় বিদায় ও নিয়েছে। ঠিক তেমনি ১৯৯৫ সালে শুরু করা ক্যালিসের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে শেষদিন ছিলো ২০১৪ সালের ১২ জুলাই। কিন্তু নিজের বিদায়ের আগে নিজেকে সেরাদের কাতারে নিতে পারে ক’জনে?
ক্যালিস করে দেখিয়েছেন, সব বাধাঁ বিপত্তি ভেঙ্গে তিনি অর্জন করে করে নিয়েছেন সেরার তকমাটি। একি আমার কথা? না আমার নয়।
ক্যালিস সম্পর্কে কেভিন পিটারসেন বলেছিলেন-
“I truly believe Kallis is the greatest cricketer ever,”
ক্যালি সম্পর্কে শেন ওয়ার্নের মন্তব্য ছিলো-
“the game’s greatest ever all-rounder”.
ভারতীয় রাহুল দ্রাবিড়ের ভাষায়-
“The Garry Sobers of our generation”
ক্যারিয়ারের শেষ মুহুর্তে হাসিম আমলা বলেছিলেন-
“You appreciate the magnitude of the cricketer not only when you look at his record but also when you play alongside him.”
শেষ করবো তারই কিছু অভিজ্ঞতা দিয়ে। জীবনের প্রতিটা মুহূর্ত, ক্ষণে ক্ষণে রঙ পাল্টানো জীবনে খুব কাছে থেকে উপলব্ধি করেছেন জ্যাক ক্যালিস। কখনো লক্ষ্যে সফল হয়েছেন আর কখনো হতে পারেনি৷ কিন্তু ভেঙ্গে পড়েননি জ্যাক ক্যালিস। ক্রিকেটীয় ক্যারিয়ারের শুরুতেই বিচিত্র সব অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হওয়া ক্যালিস হয়তোবা বুঝে গিয়েছিলেন কে কি বলছে তাতে কান দিলে চলবে না। আর তাইতো তিনি বলেছিলেন-
“I learnt very early on in my career that if you worry about what people are saying around you, you’re not going to achieve anything. I worried about what my close friends, teammates and coaches had to say, but the rest… it never bothered me at all. Honestly, the only recognition I looked for was that we won games of cricket”.
জীবনের সাথে ক্রিকেটের মিলটাই মনে হয় এখানে! শত কিছু পেরিয়ে আজ ক্যালিস ক্রিকেটের জ্বলজ্বলে তারা!