২২শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

গ্যারেথ বেলের দেশে ক্রিকেট

প্রতিবেদক
Marajul Islam
বৃহস্পতিবার, ১০ সেপ্টেম্বর , ২০২০ ১২:৩৫

ইংল্যান্ড এবং ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড নাম হলেও ইংল্যান্ড নামেই ২০১৯ বিশ্বকাপ জয়ীদের খেলতে দেখা যায়। এর পিছনে অনেক কারণ আছে। সেটা বেশীরভাগ সময়ই রাজনৈতিক। ইংল্যান্ড, ওয়েলস,স্কটল্যান্ড এবং নর্দান আয়ারল্যান্ড এই চার দেশ মিলে ইউকে বা ইউনাইটেড কিংডম। এর মধ্যে আয়ারল্যান্ডকে বাদ দিলে তিন দেশ মিলে গ্রেট ব্রিটেন। স্কটল্যান্ড ইউকেতে থাকতে না চাইলে তারা বেরিয়ে সার্বভৌম রাষ্ট্র হতে পারে। কিন্তু,ওয়েলসের ক্ষেত্রে তেমনটি হবে না। তারা সবসময়ই ইংল্যান্ডের সাথে থাকবে। তাই হয়ত তাদের দেশে কম জনপ্রিয় খেলাটার পিছনে তারা তেমন বিনিয়োগ করতে চায় না। যদিও তারা ফুটবল বা অন্যান্য দলগত খেলায় ওয়েলস নামেই খেলে থাকে। আবার অলিম্পিকে গ্রেট ব্রিটেন নামে ইউনিয়ন জ্যাকের নিচে পুরো ইউকে খেলে। এটা ঐতিহাসিক ভাবেই হয়ে আসছে।

ওয়েলসের একমাত্র ক্লাব হল গ্লামারগন কাউন্টি ক্রিকেট ক্লাব। তারা ইংলিশ কাউন্টি ক্রিকেট খেলে থাকেন। তারা কার্ডিফের সোফিয়া গার্ডেন কে হোম ভেন্যু হিসেবে ব্যবহার করে। কিন্তু ওয়েলসেরও নিজস্ব ক্রিকেট দল ছিলো। সেই দল সম্পর্কে জানার চেষ্টা করব। যদিও তারা আইসিসির সদস্য কোন কালেই ছিল না। তারা শুধু প্রীতি ম্যাচই খেলত।

১৯২৩ সালের ২১ জুলাই স্কটল্যান্ডের পার্থে তাদের ১ম ম্যাচ খেলেন স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে।১৯২৩ থেকে ১৯৩০ সালের মধ্যে ওয়েলস ১৬টি ফার্স্ট ক্লাস ম্যাচে অংশগ্রহণ করে। মূলত যেসব দল ইংল্যান্ডে সফর করত তাদের বিরুদ্ধেই তারা খেলত। ১৯২৭ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ড্র করে ওয়েলস। তার পরের বছর ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারায় তারা। ১৯২৯ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে মাত্র দশ রানের জন্য হেরে যায় তারা। খেলাগুলোতে সেই সময় ৫০ বছরের সিডনি বার্নস ওয়েলসের পক্ষে ৪৯ উইকেট পান। তারমধ্যে ১৯২৮ সালে সফর করা ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে ৫১ রানে ৭ উইকেট তার সেরা বোলিং।

অন্যান্য দেশ খেলতে রাজি না থাকায় ১৯৭৯ সালের আইসিসি ট্রফিতে ওয়েলস অংশগ্রহণ করে। যদিও এর জন্য তাদের কোন কোয়ালিফাইং রাউন্ড খেলতে হয় নি। প্রথম দুই ম্যাচ নেদারল্যান্ডস এবং ফিলিস্তিনের একটি অংশের সাথে জিতলেও পরের ম্যাচে তারা যুক্তরাষ্ট্রের কাছে হেরে যায়। আর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে শেষ ম্যাচ বৃষ্টির কারণে পরিত্যক্ত হয়। গ্রুপ ‘সি’ তে তারা শ্রীলঙ্কার সমান ১০ পয়েন্ট নিলেও বৃষ্টির কারণে আর সেমিফাইনালে উঠতে পারেনি।

১৯৮৮ সালে ওয়েলস মাইনর কাউন্টি ক্রিকেট ক্লাব হোল্ট কাপ নামে ৫০ ওভারের টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করেন। এ দলটি পরিচালনা করত তখনকার ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড। ১৯৯৭ সালে ওয়েলস, ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড এর সাথে মিলে যায় ফলে ইসিবির নতুন নাম হয় ইংল্যান্ড এবং ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড।

১৯৯৩ সাল থেকে ২০০০ পর্যন্ত তারা ইউকে অন্য দুই দেশ আয়ারল্যান্ড বা নদার্ন আয়ারল্যান্ড এবং স্কটল্যান্ডের সাথে ট্রিপল ক্রাউন কাপ নামে একটি টুর্নামেন্ট খেলত। যেখানে এই তিন দল ছাড়াও ইংল্যান্ডের বিভিন্ন দল খেলত। ১৯৯৬ এবং ২০০০ সালে তারা এই টুর্নামেন্টের হোস্ট হয়। কোনবারই তারা এই টুর্নামেন্ট জিততে পারেনি। ২০০০ এর পর অায়ারল্যান্ড এবং স্কটল্যান্ড আইসিসির সদস্য হলে এই টুর্নামেন্ট আর হয় নি।

২০০২ থেকে ২০০৪ পর্যন্ত তারা ইংল্যান্ডের সাথে প্রতি বছর জুনে ৫০ ওভারের ম্যাচ খেলত। যদিও সেখানে গ্লামারগন কাউন্টি ক্রিকেট ক্লাবের বিদেশী কোটার খেলোয়াড়ও ওয়েলসের হয়ে খেলত।

ওয়েলসের সবচেয়ে বিখ্যাত খেলোয়াড় ছিলেন জন ক্লে । অফস্পিন এবং লেগস্পিন দুইভাবেই বল করতেন। এমনকি মাঝে মধ্যে মিডিয়াম পেসও করতেন। এরপর আছে রবার্ট ক্রফ। তিনি ইংল্যান্ড ও ওয়েলসের হয়ে খেলেছেন। তিনি প্রথম ওয়েলস ক্রিকেটার যিনি প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে ১০ হাজার রান করেছেন পাশাপশি নিয়েছেন ১ হাজার উইকেট । ডানহাতি এ স্পিনার ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত ২১টি টেস্ট ও ৫০টি ওয়ানডে খেলেছেন। আর আরেকজন ছিলেন সিডনি বার্নস। এই মিডিয়াম পেসার ৫৭ বছর বয়সে অবসর নেন। এই বিখ্যাত ক্রিকেটারের পর ১৫ টেস্টে ৪৪ উইকেট নেয়া সাইমন জন্স। ২০০৫ সালে অ্যাশেজ জয়ী দলের সদস্য সাইমন জন্স। এক টেস্ট খেলা অস্টিন ম্যাথুজ, হুগ মরিস। সাত টেস্ট খেলা গিলবার্ট পার্কহাউস। ২০ টেস্ট ও একটি ওয়ানডে খেলা পেট পোকক। পাঁচ টেস্ট ও তিন ওয়ানডে খেলা গ্রেগ থমাস। নয় টেস্ট খেলা মওরিচ টার্নবুল। তিন টেস্ট ও চার ওয়ানডে খেলা স্টিভ ওটকিন। ১৫ টেস্ট খেলা এ্যালান ওটকিংস, চার টেস্ট ও ১৪ ওয়ানডে খেলা ম্যাথুউ মেইনার্ড ইংল্যান্ড জাতীয় দলে খেলেছেন। ২০০৫ সালে সাইমন জন্স সর্বশেষ ইংল্যান্ড জাতীয় দলে খেলেছেন। এরপর আর কোন ওয়েলসে জন্মগ্রহনকারী ক্রিকেটারকে ইংল্যান্ড জাতীয় দলে খেলতে পারেনি।

গ্লামারগন কাউন্টি ক্লাব বা ওয়েলস বোর্ড কোন পক্ষই ওয়েলস ক্রিকেটকে ইংল্যান্ড বোর্ড থেকে আলাদা করতে চান না। এর পিছনে স্পন্সর জনিত কারণ রয়েছে। এছাড়া, তারা বলে যে তারা ইংল্যান্ড এর প্রতি দায়বদ্ধ। আর স্কটল্যান্ড বা নর্দান আয়ারল্যান্ড ইউকে থেকে আলাদা হলেও ওয়েলস রাজনৈতিক ভাবে ইংল্যান্ডের সাথেই থাকবে। তাই হয়ত তারা আলাদা হতে চায় না। আরেকটি কারণ হল তাদের দেশে ক্রিকেট ততটা জনপ্রিয় নয়। যদিও ইংল্যান্ড এর কাছ থেকে প্রাপ্য সম্মান না পাওয়ায় তাদের দেশের বড় অংশ ইংল্যান্ড দলকে প্রত্যাখ্যান করে। তারা ইংল্যান্ডের জয়কে কোনভাবেই নিজেদের মনে করেনা। আর এই দলের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

হয়তোবা তারা ইংল্যান্ড থেকে আলাদা হবে না। কিন্তু, ওয়েলস ইংল্যান্ড বোর্ডের থেকে তাদের অংশ হিসেবে আলাদা সম্মান প্রাপ্য।

, ,

মতামত জানান :