চিত্রা নদীতে ঝাঁপিয়ে বেড়ানো, দলবেঁধে নদীতে সাঁতার কাটা, আবার কখনোবা নদীর স্রোতধারার বিপরীতে দুরন্তবেগে এগিয়ে যাওয়া। নড়াইল থেকে যশোর, যশোর থেকে খুলনা, খুলনা থেকে ঢাকা, ঢাকা থেকে পাড়ি দিয়েছেন শত-শত মাইল! লাল-সবুজের জার্সিতে নিজেকে প্রমাণ করেছেন দেশ ও দেশের বাহিরে। একজন মাশরাফিকে জানার আগ্রহ সবারই থাকে, কিন্তু একজন অধিনায়ক মাশরাফিকে আমরা ক’জনই বা বিস্তারিত জানি? আজকের গল্পটা অধিনায়ক মাশরাফিকে নিয়ে।
অধিনায়ক হিসেবে মাশরাফির শুরু ৮-ই জুলাই ২০১০ সালে ট্রেন্ট ব্রিজে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। স্যার অ্যান্ড্রু স্ট্রসের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো রঙ্গিন পোশাকে টস করতে নামেন মাশরাফি। মজার বিষয় হলো অভিষিক্ত ম্যাচেই টস জিতেছিলেন ম্যাশ!
অধিনায়ক হিসেবে দ্বিতীয় ম্যাচেই প্রথম জয়ের দেখা পান মাশরাফি। শক্তিশালী ইংল্যান্ডকে হারিয়ে বাংলাদেশকে জিতিয়ে ম্যাচ সেরা হয়েছিলেন ম্যাশ।
অধিনায়ক হিসেবে প্রথম রান সংগ্রহ করেছেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। সবচেয়ে মজার বিষয় হলো অধিনায়ক হিসেবে প্রথম রান, প্রথম চার, প্রথম ছয়, প্রথম উইকেট এবং প্রথমবারের মতো ম্যাচসেরা হন একই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে! প্রতিপক্ষ ছিলো ইংল্যান্ড।
অধিনায়ক হিসেবে ৩০ টির বেশী মাঠে খেলার সুযোগ হয়েছে মাশরাফির। যার শুরু ট্রেন্ট ব্রিজে এবং শেষ সিলেটে। এরই মাঝে লর্ডস, মেলবোর্ন, কার্ডিফে খেলেছেন তিনি।
অধিনায়ক হিসেবে ৩১ জন অধিনায়কের বিপক্ষে টস করতে দেখা গিয়েছে মাশরাফিকে। যার শুরু অ্যান্ড্রু স্ট্রসেরর বিপক্ষে এবং শেষ শন উইলিয়ামসের বিপক্ষে। এই ৩১ জনের মধ্যে ২৬ জনের বিপক্ষে কমপক্ষে একটি করে হলেও ম্যাচ জিতেছেন। ১ জন অধিনায়কের বিপক্ষে ফলাফল আসেনি, বাকি ৪ জনের বিপক্ষে জয় পাননি ম্যাশ।
যাদের বিপক্ষে টস করেছেন মাশরাফি:
১. স্যার অ্যান্ড্রু স্ট্রস- ৩ ম্যাচ: ১ জয়, ২ হার।
২. পোর্টারফিল্ড- ৪ ম্যাচ: ৩ জয়, ১ হার।
৩. পিটার বোরেন- ১ ম্যাচ: ১ হার।
৪. ড্যানিয়েল ভেট্টোরি- ১ ম্যাচ: ১ জয়।
৫. এলটন চিগুম্বুরা- ৮ ম্যাচ: ৮ জয়।
৬. মোহাম্মদ নাবী- ১ ম্যাচ: ১ জয়।
৭. অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস- ৩ ম্যাচ: ১ জয়, ২ হার।
৮. প্রিস্টন মমসেন- ১ ম্যাচ: ১ জয়।
৯. মরগান- ৩ ম্যাচ: ১ জয়, ২ হার।
১০. ধোনি- ৪ ম্যাচ: ৩ জয়, ১ হার।
১১. আজাহার আলী- ২ ম্যাচ: ২ জয়।
১২. হাশিম আমলা- ৩ ম্যাচ: ২ জয়, ১ হার।
১৩. আসগর আফগান- ৪ ম্যাচ: ২ জয়, ২ হার।
১৪. জস বাটলার- ৩ ম্যাচ: ১ জয়, ২ হার।
১৫. কেন উইলিয়ামসন- ৮ ম্যাচ: ১ জয়, ৭ হার।
১৬. থারাঙ্গা- ৩ ম্যাচ: ১ জয়, ১ হার, ১ পরিত্যক্ত।
১৭. টম লাথাম- ২ ম্যাচ: ১ জয়, ১ হার।
১৮. স্মিথ- ১ ম্যাচ: ১ পরিত্যক্ত।
১৯. কোহলি- ২ ম্যাচ: ২ হার।
২০. ডু প্লেসিস- ৪ ম্যাচ: ১ জয়, ৩ হার।
২১. ক্রেমার- ২ ম্যাচ: ২ জয়।
২২. দিনেশ চান্দিমাল- ৩ ম্যাচ: ১ জয়, ২ হার।
২৩. জেসন হোল্ডার- ৭ ম্যাচ: ৬ জয়, ১ হার।
২৪. রোহিত শর্মা- ২ ম্যাচ: ২ হার।
২৫. সরফরাজ- ২ ম্যাচ: ১ জয়, ১ হার।
২৬. মাসাকাদজা- ৩ ম্যাচ: ৩ জয়।
২৭. রভম্যান পাওয়েল- ৩ ম্যাচ: ২ জয়, ১ হার।
২৮. অ্যারন ফিঞ্চ- ১ ম্যাচ: ১ হার।
২৯. গুলবাদিন নাবী- ১ ম্যাচ: ১ জয়।
৩০. চামু চিভাভা- ১ ম্যাচ: ১ জয়।
৩১. শন উইলিয়ামস- ২ ম্যাচ: ২ জয়।
অধিনায়ক মাশরাফির ক্রিকেট মাঠের পারফরম্যান্স:
অধিনায়ক হিসেবে ওয়ানডে ফরম্যাটে খেলেছেন ৮৮ টি ম্যাচ। যেখানে ৫০ টি জয়ের বিপরীতে হেরেছেন ৩৬ টি ম্যাচে, পরিত্যক্ত হয়েছে ২ টি।
এই ৮৮ ম্যাচে ব্যাট হাতে নামের পাশে যুক্ত করেছেন ৫৭৮ রান। সর্বোচ্চ ৪৪ রান। এবং বল হাতে ঝুলিতে পুড়েছেন ১০২ উইকেট। সেরা বোলিং ২৯ রানে ৪ উইকেট। এছাড়াও ফিল্ডিংয়ে নিয়েছেন ২৪ টি ক্যাচ।
একজন মাশরাফির থেকে অধিনায়ক মাশরাফি দেশকে দিয়েছেন অনেক কিছু্। ২০১৫ বিশ্বকাপে দেশকে প্রথমবারের মতো নিয়েছিলেন কোয়ার্টার ফাইনালে। ২০১৯ এ প্রথমবারের মতো ত্রিদেশীয় সিরিজে চ্যাম্পিয়ন করেছিলেন বাংলাদেশকে। এই মাশরাফি দেশকে এনে দিয়েছেন বেশকিছু স্মরণীয় জয়। সবকিছু বিবেচনায় ওয়ানডেতে দেশসেরা অধিনায়ক হিসেবে মাশরাফি থাকবে সবার উপরে।