দুই হাতেই সমান দক্ষতা প্রকাশকারী ব্যাক্তিদের সব্যসাচী নামে ডাকা হয়। কিন্তু যাদের হাত এবং পা দুটোতেই সমান দক্ষতা আছে তাদেরকে ঠিক কি নামে ডাকা যায়? বাংলাতে তেমন বিশেষণ খুঁজে পাওয়া না গেলেও ইংলিশে এদেরকে ‘জ্যাক অফ অল ট্রেড’ বলা হয়। স্পোর্টসের ইতিহাস খুঁজলে এই বিরল প্রজাতির কিছু ক্রীড়াবিদের নাম উঠে আসে। তাদের কয়েকজনকে নিয়েই আজ লিখবো।
#স্যার_ভিভিয়ান_রিচার্ডস নামটা দেখলেই এক আসুরিক ব্যাটসম্যানের ছবি চোখের সামনে ভেসে ওঠে। ‘বলটা পেটানোর জিনিস তাই পেটাই’ বোলারদের কলিজা ঠাণ্ডা করে দেয়া সেই কালজয়ী উক্তি মেনেই ব্যাট করে গেছেন জীবনের শেষ ইনিংস অবধি। অভিজাত মারকাটারি ব্যাটিং এর পসরা সাজিয়ে দুই দশক রাজত্ব করেছেন ক্রিকেট মাঠে। তবে চাইলেই কিন্তু রাজত্বের পরিধিটা ক্রিকেট মাঠ থেকে ছাড়িয়ে ফুটবল মাঠ অবধি নিয়ে যেতে পারতেন! কারণ তিনিই যে ইতিহাসের একমাত্র পুরুষ খেলোয়াড় যিনি বিশ্বকাপ ক্রিকেট এবং বিশ্বকাপ ফুটবল দুটোতেই নিজ দেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন!
#স্যার_ইয়ান_বোথাম ‘ইংল্যান্ড ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা খেলোয়াড়’, স্যার ইয়ান বোথামকে বোঝাতে এই লাইনটুকুই যথেষ্ট। ক্রিকেটার বোথামকে হয়তো প্রায় সবাই জানেন, কিন্তু ফুটবলার বোথামকে চেনেন কতজন! হ্যাঁ, বোথাম প্রফেশনাল ফুটবলও খেলেছেন আশির দশকে। তেমন নামকরা ক্লাবে খেলেননি কখনোই, কিন্তু অনেক ফুটবল বিশেষজ্ঞদের মতে, তিনি সর্বোচ্চ পর্যায়ে ফুটবল খেলার যোগ্যতা রাখতেন। কিন্তু, ক্রিকেটকেই বেছে নিয়েছিলেন এই কিংবদন্তী।
#সিবি_ফ্রাই চার্লস বার্গেস ফ্রাইকে যদি ইতিহাসের সেরা ক্রীড়াবিদ বলে ডাকি, তাহলে হয়তো অনেকেই আপত্তি করতে পারেন। কিন্তু আমার চোখে তিনিই সেরা। ছিলেন ক্রিকেটার, ইংল্যান্ডের হয়ে খেলেছেন ২৬টি টেস্ট! ছিলেন ফুটবলার, খেলেছেন ১টি আন্তর্জাতিক ম্যাচও। ১৯০২ সালের এফএ কাপে সাউদাম্পটনের হয়ে খেলেছেন প্রতিটি ম্যাচ, এমনকি ফাইনালেও তুলেছিলেন ক্লাবকে! এখানেই থেমে যাননি এই ক্রীড়াবিদ, রাগবি এবং অ্যাথলেটিক্সেও ছিলেন সমান দাপুটে। ওহো বলতে ভুলে গেছি, লং জাম্পের বিশ্ব রেকর্ডটা অনেকদিন এই ভদ্রলোকের নামের পাশেই জ্বলজ্বল করতো। তথ্য দিলাম, বিচারের ভার এবার আপনার 🙂।
#ডেনিস_কম্পটন ইংলিশ ক্রিকেটের অন্যতম নক্ষত্র ছিলেন কম্পটন। তিনি সেই বিরল প্রজাতির ইংলিশ ব্যাটসম্যানদের মধ্যে একজন যার টেস্ট গড় ৫০ এর উপরে! ১০০ টার উপরে ফার্স্ট ক্লাস সেঞ্চুরির মালিক ডেনিস আইসিসির ‘হল অফ ফেইম’ এর গর্বিত সদস্য। ক্রিকেটার কম্পটন কিন্তু প্রফেশনাল ফুটবলার হিসাবেও ছিলেন সমান জনপ্রিয়। স্বনামধন্য ইংলিশ ক্লাব আর্সেনালের হয়ে রীতিমতো মাঠ দাপিয়ে বেড়িয়েছেন এই সকল কাজের কাজী! ছিলেন উইঙ্গার, জিতেছেন লীগ শিরোপা, এফএ কাপ সহ অনেক ট্রফি। আফসোস একটাই, খেলতে পারেননি কোন আন্তর্জাতিক ফুটবল ম্যাচ। বিশ্বযুদ্ধের জের ধরে তখন যে কোন অফিশিয়াল আন্তর্জাতিক ম্যাচই হতো না। চাঁদের কলংকের মতো এই ছোট্ট দাগটা তাই বয়ে নিয়েই পরকালে পাড়ি দিয়েছিলেন এই লিজেন্ড। কম্পটনের ফুটবল স্কিলের একটি গল্প বলি, ১৯৪৬ সালে ভারত বনাম ইংল্যান্ডের মধ্যকার টেস্টে মিড অন থেকে ক্রিকেট বলকে লাথি মেরে ভিজয় মার্চেন্টকে রান আউট করেছিলেন ডেনিস! ভাবা যায় 😮
#এলিস_পেরি অস্ট্রেলিয়ান প্রমীলা ক্রিকেটার নামে যদি এই সুন্দরীকে ডাকা হয়, তাহলে কিন্তু অনেকটা অবিচারই করা হবে। কারণ অস্ট্রেলিয়ান জাতীয় মহিলা ফুটবল দলেও যে নিয়মিত মুখ পেরি! মাত্র ১৬ বছর বয়সেই ক্রিকেট এবং ফুটবল দুই খেলাতেই জাতীয় দলের হয়ে অভিষিক্ত হন। বয়স এখন ২৩, এবং কোনরকম অসুবিধা ছাড়াই জাতীয় দলের হয়ে খেলে যাচ্ছেন ফুটবল এবং ক্রিকেট। স্কিল লেভেল কোন পর্যায়ের হলে এটা সম্ভব সেটা গবেষণার দাবী রাখে। জিতেছেন ক্রিকেট বিশ্বকাপ , খেলেছেন মহিলা বিশ্বকাপেও। ২০১১ সালে খেলা সেই ফুটবল বিশ্বকাপে সুইডেনের বিপক্ষে করা তার একটি গোল বিশ্বকাপের সেরা গোলের মনোনয়ন পেয়েছিলো! কি বুঝলেন? যে রাঁধে, সে চুলও বাঁধে 😉