জিততে হলে ভাঙ্গতে হবে রেকর্ড; গড়তে হবে ইতিহাস। ঘরের মাঠে কঠিন পরীক্ষার সামনে পরা কোহলি বাহিনীর জন্য সকালটি ছিলো হতাশার। এন্ডারসনের জোড়া আঘাতে ততক্ষণে হারের পাল্লা ভারতের দিকে হেলে পড়েছিলো। অবশেষে পঞ্চম দিনের দ্বিতীয় সেশনে ঘূর্ণিতে ১৯২ রানে অলআউট হয় টিম ভারত। এরই সাথে দীর্ঘ ৩৬ বছর পর চেন্নাইয়ে ইংল্যান্ড হাসে জয়ের হাসি।
এর আগে এম. চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া ইংল্যান্ড শুরু থেকেই চেপে ধরে ভারতীয় বোলারদের। অধিনায়ক রুটের ডাবল সেঞ্চুরি এবং সিবলি-স্টোকসের ফিফটির উপর ভর করে প্রথম ইনিংসে ৫৭৮ রানের পাহাড় দ্বার করায় সফরকারীরা।
ইংল্যান্ডের করা ৫৭৮ রানের জবাবে খেলতে নেমে পূজারার ফিফটি এবং পান্তের ৯১ রানের উপর ভর করে অলআউট হআার আগে ভারতের সংগ্রহ দাঁড়িয়েছিলো ৩৩৭ রানে। দীর্ঘদিন পর ঘরের মাঠে ফলোঅনে পড়েছিলো কোহলির দল। টানা বোলিংয়ের বিষয় এবং পঞ্চম দিনের উইকেটের বিষয়টি মাথায় রেখে ভারতকে ব্যাটিংয়ে না পাঠিয়ে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো রুট বাহিনী।
প্রথম ইনিংসে ২৪১ রানে এগিয়ে থেকে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নামা ইংল্যান্ড দিশেহারা হয় স্পিনার অশ্বিনের স্পিন ঘূর্ণিতে। অধিনায়ক রুটের সাথে পোপ, বাটলারের কামিও ইনিংসে দ্বিতীয় ইনিংসে অলআউট হবার আগে ইংল্যান্ডের সংগ্রহ দাঁড়ায় ১৭৮ রান। ভারতের পক্ষে স্পিনার অশ্বিন শিকার করেন ৬ উইকেট। একই সাথে এই ম্যাচে ভারতের পক্ষে তৃতীয় পেসার হিসেবে টেস্ট ক্রিকেট ৩০০ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করেন ইশান্ত শর্মা। প্রথম ইনিংসে ২৪১ রানে এগিয়ে থাকায় ভারতের সামনে জয়ের লক্ষ্যমাত্রা দাঁড়ায় ৪২০ রানের।
এশিয়ার মাঠে চতুর্থ ইনিংসে এতো রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড নেই। ইতিহাসে নতুন পাতা যুক্ত করাী লক্ষ্যে ঘরের মাঠে ব্যাটিংয়ে নামেন ভারত বাহিনী। অভিজ্ঞ রোহিতের সাথে ওপেনিংয়ে নামেন তরুণ সুবমান গিল! ওপেনিং জুটিতে ২৫ রান যুক্ত হতেই সাজঘরে ফেরেন রোহিত। দলের বিপদে আরো একবার দায়িত্ব ওঠে পূজারার কাঁধে। কিন্তু এবার পূজারা পারেননি দলকে রক্ষা করতে; জ্যাক লিচের স্পিন ঘূর্ণিতে স্টোকসের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরার আগে সংগ্রহ করেন মাত্র ১৫ রান!
পূজারা ফিরলেও তরুণ গিলকে নিয়ে তৃতীয় উইকেট জুটিতে দলকে মেরামতের কাজ শুরু করেন অধিনায়ক কোহলি। ইংরেজ বোলারদের বিপক্ষে দারুণ ব্যাটিংয়ে ফিফটি তুলে নেওয়া গিল বড় রানের আভাস দিলেও দলীয় ৯২ রানের মাথায় ব্যক্তিগত ৫০ রানে এন্ডারসনের পেসে পরাজিত হয়ে ফিরেন সাজঘরে। এরপর রাহানে ক্রিজে এলেও কোনো রান যুক্ত করার পূর্বেই ফিরে যান সাজঘরে। এরপর রিশাভ পান্ত ১১ এবং প্রথম ইনিংসে সর্বোচ্চ রান করা সুন্দর শূন্য রানে আউট হলে ভারতের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৬ উইকেটে ১১৭ রান।
৭ম উইকেটে অশ্বিনকে নিয়ে দলকে বাঁচানোর লড়াই চালিয়ে চাওয়া কোহলির ব্যাটে বড় রানের আভাস এলেও লাঞ্চ ব্রেকে যায় দুইদল। তখনও ভারতের জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিলো ২৭৬ রান; অপরদিকে ইংল্যান্ডের প্রয়োজন ছিলো ৪ উইকেট।
লাঞ্চ বিরতির পর অধিনায়ক কোহলির হাফ সেঞ্চুরিতে কিছুটা আশা দেখলেও স্টোকসের বলে সাজঘরে ফিরলে জয়ের স্বপ্ন ভঙ্গ হয় ভারতীয়দের। অধিনায়ক কোহলির ৭২ রান হারের ব্যবধান কমায় মাত্র। দিনশেষে জ্যাক লিচের স্পিন ঘূর্ণি এবং এন্ডারসনের বোলিংয়ে ভারত অলআউট হয় ১৯২ রানে। ইংল্যান্ড জয় পায় ২২৭ রানের। সেই সাথে চার ম্যাচের টেস্ট সিরিজে ১-০ তে এগিয়ে গেলো সফরকারীরা।
সংক্ষিপ্ত স্কোরকার্ড:
ইংল্যান্ড প্রথম ইনিংস – ৫৭৮/১০
জো রুট ২১৮ ; বুমরাহ ৮৪/৩
ভারত প্রথম ইনিংস – ৩৩৭/১০
রিশাভ পান্ত ৯১ ; বেস ৭৬/৪
ইংল্যান্ড দ্বিতীয় ইনিংস – ১৭৮/১০
জো রুট ৪০ ; অশ্বিন ৬১/৬
ভারত দ্বিতীয় ইনিংস – ১৯২/১০
কোহলি ৭২ ; জ্যাক লিচ ৭৬/৪
ফলাফল: ইংল্যান্ড ২২৭ রানে জয়ী।
ম্যাচ সেরা: জো রুট।