মুস্তাফিজুর রহমান, এদেশের ক্রিকেটে তার আগমনটা হয়েছিলো ধুমকেতুর মতো করে। বিশ্ব ক্রিকেট তখন মুস্তাফিজের প্রতিটা স্টেপ, আঙুলের গ্রিপ, একেকটা কাটার দেখতো অবাক চোখে, বিস্ময়ের সাথে। ৯০ নং জার্সি পরে অল্প বয়সী এক টগবগে যুবকের দৌড়ে এসে ডান হাতটা সামনে প্রসস্ত করে বাঁহাত উপরে তুলে বল ছুঁড়াতেই মজে ছিলো তখন গোটা ক্রিকেট বিশ্ব। সে সময়ে তার তুলনা ছিলেন শুধু তিনি নিজেই।
২০১৫ সালে দেশের ইতিহাসে প্রথমবার বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে ঘুরে এসে বাংলাদেশ আতিথ্য দেয় পাকিস্তান, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকাকে। মুস্তাফিজের চমকের শুরু সেখান থেকেই। পঞ্চাশ ওভারের ক্রিকেটে বাংলাওয়াশ করার পর ২৪ এপ্রিল পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলা একমাত্র টি-টুয়েন্টি দিয়ে জাতীয় দলে অভিষেক হয় মুস্তাফিজের। ৪ ওভার বল করে ৫ ইকোনোমিতে তুলে নেন শহীদ আফ্রিদি আর মোহাম্মদ হাফিজের মূল্যবান দুটি উইকেট।
যেকোনো ভালো বোলারের জন্যই এটা ভালো একটা শুরু, আলাদা করে চোখে পড়ার মতো পারফরমেন্স হয়তো ছিলো না সেটা। তবে নিজেকে আলাদা প্রমাণ করেন পরের সিরিজেই; ভারতের বিপক্ষে ৩ ম্যাচ ওডিআই সিরিজের প্রথম ২ ম্যাচেই ১১ উইকেট শিকার করার মাধ্যমে। ৩ ম্যাচের ওডিআই সিরিজে মোট শিকার করেন ১৩ উইকেট; যা এখন আছে পর্যন্ত রেকর্ড তালিকার শীর্ষে। প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে টেস্ট আর ওডিআইতে অভিষেক ম্যাচে ম্যান অব দ্যা ম্যাচও নির্বাচিত হন মুস্তাফিজুর রহমান।
ধুমকেতুর মতো করেই হঠাৎ এসেছিলেন তিনি। এসেই যেন পসরা সাজিয়ে বসেছিলেন নতুন নতুন রেকর্ডের। তাবৎ তাবৎ ব্যাটসম্যানদের উইকেট পুরছিলেন নিজের পকেটে। তবে তার মূল অস্ত্র ছিলো কাটার, সাথে স্লোয়ারটাও। তাইতো পরিচিত হয়ে যান “কাটার মাস্টার” হিসেবে। তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে টিকে থাকতে চাইলে যে তা শুধু একই ধরনের ডেলিভারি দিয়ে সম্ভব না তা হয়তো তিনি বা তার কোচ বুঝতে একটু দেরি করে ফেলেছিলেন। তারপরও গত কয়েক বছরে আসা পেসারদের মধ্যে তিনিই ছিলেন পরিপূর্ণ, তার বলের ধাঁরই ছিলো সবথেকে বেশি। ভারতের বিপক্ষে খেলা সেই রেকর্ড গড়ার সিরিজেই ভিরাট কোহলি বলে দিয়েছিলেন, “পুরোনো হলে মুস্তাফিজকে খেলা কঠিন হবে না।“ মুস্তাফিজকে খেলা যখন সহজ হচ্ছিলো তখন মাশরাফিও এক সংবাদ সম্মেলনে এমনটাই বলেছিলেন। তাই মুস্তাফিজের সামনে অপশন ছিলো একটিই; আর সেটা ডেলিভারির তালিকায় নতুন কিছু একটা যুক্ত করা।
বাঁহাতি ফাস্ট বোলার হিসেবে ডানহাতি ব্যাটসম্যানের অফ স্ট্যাম্পে বল করার “এঙ্গুলার ডেলিভারি”-টা তার আয়ত্বে ছিলোই। তবে, অফ স্ট্যাম্প থেকে বলকে ভেতরে নিতে পারতেন না তখন তিনি। ব্যাটসম্যানরা তার কাটার যখন বুঝতে শুরু করলো তখন অনেকটা অনায়াসেই রুম তৈরি করে তার বল গুলো খেলতে পারতো। এর উপর ইনজুরি। ইনজুর পর কোর্টনি ওয়ালসের আমলে বদলালেন নিজের অ্যাকশন। ওটিস গিবসনের ক্লাশরুমে আরও একবার কাজ করলেন অ্যাকশন নিয়ে। এখন তিনি ওই ইনসুইংগারটা করতে পারেন ভালোই।
অভিষেক বছরের পারফরমেন্স:
অভিষেক বছরে মুস্তাফিজ একরকম ত্রাসের রাজত্ব চালিয়ে যান প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানদের উপর। সেবছর ৯ টি একদিনের ক্রিকেট ম্যাচ খেলে ঝুলিতে পুরেন ২৬ উইকেট। ৫ উইকেট শিকার করেন প্রথম বছরেই ৩ বার। মাত্র ১২.৩৪ গড়, ১৭.৩ স্ট্রাইক রেটের সাথে ইকোনোমিটাও ছিলো ৪.২৬। ২০ ওভারের ক্রিকেটে ৫ ম্যাচে ৫.৭৪ ইকোনোমিতে ৬ উইকেট। প্রথম বছরেই মুস্তাফিজ হয়ে গেলেন দেশ বিদেশের অসংখ্য উঠতি ফাস্ট বোলারের আইডল। তবে বিপত্তিটা বাঁধলো পরের বছর।
ইনজুরির সাথে যুদ্ধ:
ধুমকেতু মুস্তাফিজের ধ্রুবতারা হয়ে ওঠার পেছনে মূল বাঁধাটা তার একই ধরনের ডেলিভারিগুলো ছিলো না, স্লোয়ার-কাটারের সাথে নিজের বুদ্ধিমত্তা খাটিয়ে তখনও দেশসেরা পেসারদের একজনই ছিলো ফিজ। মূল বাঁধাটা ছিলো মূলত ইনজুরি। অভিষেকের ২য় বছরেই ইনজুরি তার সঙ্গী হয়। বছরের শুরুতে খুলনায় জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে খেলতে গিয়ে চোট পান কাঁধে। মার্চে এশিয়া কাপে আবারও; এবার ইনজুরি ডান পাঁজরে।
প্রথম বছরেই আইপিএল এ দল পান অল্পভাষী মুস্তাফিজ। শুরুটা যেরকম রূপকথার মতো করে করেছিলেন, সেখানে এটুকু স্বাভাবিকই। ১৬ ম্যাচে ১৭ উইকেট নিয়ে দলকে চ্যাম্পিয়ন করে দেশে ফেরেন জোড়া চোট নিয়ে। আইপিএল ইতিহাসের প্রথম ও এখন পর্যন্ত একমাত্র বিদেশি ক্রিকেটার হিসেবে জিতেন বেস্ট ইমার্জিং প্লেয়ার’স অ্যাওয়ার্ড। জুলাইতে সাসেক্সের হয়ে ন্যাটওয়েস্ট টি-টুয়েন্টি ব্লাস্ট খেলতে গিয়ে আবার সেই কাঁধের ইনজুরির। এবার ছুরি-কাচির নিচে যেতেই হলো মুস্তাফিজকে। প্রায় ৫ মাস পর ফিরলেন ক্রিকেটে, তবে আগের সেই মুস্তাফিজ কোথায় যেন হারিয়ে গেলেন! আক্ষেপ বাসা বাঁধতে লাগলো সমর্থকদের মনের ভেতর।
এই ইনজুরির পরও মুস্তাফিজ টি২০ বিশ্বকাপে মাত্র ৩ ম্যাচ খেলেই জায়গা পান আসরের সেরা দলে দ্বাদশ ক্রিকেটার হিসেবে। ২০১৬ সালেই তিনি আইসিসির সেরা উদীয়মান ক্রিকেটারও নির্বাচিত হন। ইএসপিএন তার ২২ রানে ৫ উইকেটের পারফরমেন্সকে নির্বাচিত করে বছরের সেরা পারফরমেন্স হিসেবে।
২০১৭ এর সেপ্টেম্বরে আরেক দফা ইনজুরিতে পরলেন। ডিসেম্বরে ফিরলেন আবার। অনেকেই ভেবে বসেছিলেন হয়তো মাশরাফির মতো ইনজুরির সাথে যুদ্ধ করেই খেলে যেতে হবে। তবে এরপর থেকে এখন অব্দি ভালোভেবেই খেলে যাচ্ছেন কাটার মাস্টার মুস্তাফিজ। যদিও ছন্দপতন হয়েছে বারবার, ঘুরেও দাঁড়িয়েছেন শক্তভাবে। সাথে ইনসুইং এর ভেলকি নিয়ে মুস্তাফিজ এখন অনেকটা পরিপূর্ণ এক প্যাকেজ। কেমন ছিলো এই মুস্তাফিজের এতোদিনের পথচলা? আপাতত সেখানেই আলোকপাত করা যাক। আলোচনাটা কেন্দ্রিভূত থাকবে শুধু সাদা বলেই।
একনজরে এতোদিনের গৎবাঁধা পরিসংখ্যান:
মুস্তাফিজুর রহমান এখন পর্যন্ত একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ খেলেছেন ৬১ টি। ১ ম্যাচে বৃষ্টির কারণে বল হাতে নামতে না পারায় ৬০ ইনিংসে তার মোট উইকেট সংখ্যা ১১৫। একেকটা উইকেটের জন্য তিনি খরচ করেছেন মাত্র ২২.৩২ রান আর ২৬.১ টি করে বল। ইকোনোমিটা ৫.১৩। গড় আর স্ট্রাইক রেট দুটোই এই সময়ের অন্য দুই সেরা পেসার কাসিগো রাবাদা এবং জাসপ্রিত বুমরাহর থেকে ভালো।
আইপিএল, বিপিএল, পিএসএল আর ন্যাটওয়েস্ট টি২০ ব্লাস্টসহ সবধরনের টি২০ তে মুস্তাফিজুর রহমান মোট ম্যাচ খেলেছেন ১২১ টি। এই ১২১ ম্যাচে তিনি উইকেট নিয়েছেন মোট ১৬২ টি। ৪ এর অধিক উইকেট আছে ৪ বার, ৫ উইকেট আছে ১ বার; সেটাও বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মাত্র ২২ রান খরচায়। আন্তর্জাতিক টি২০ তে আসলে ম্যাচ সংখ্যা হবে ৪১ আর উইকেট সংখ্যাটা ৫৮। এক্ষেত্রে তার ইকোনোমিটা ৭.৯৩; আর সবধরনের টি২০ ক্রিকেটে ইকোনোমি ৭.২৩।
আলাদা করে আইপিএলে মুস্তাফিজ ম্যাচ খেলেছেন ২৪ টি, উইকেটও নিয়েছেন সমান ২৪ টি। ইকোনোমিটা ৭.৫১।
গৎবাঁধা পরিসংখ্যানের বাইরে এসে পরিসংখ্যানের ভেতরে ডুব দেয়া যাক।
একদিনের ক্রিকেটে এই ৬০ টি ইনিংসের মধ্যে মুস্তাফিজের সবথেকে ভালো ইকোনোমিটা আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে, ২.৫৫। বল করেছিলেন ৯ ওভার। ৩.৭৫, ৪.২৩, ৪.৪৭ ইকোনোমি রেট আছে যথাক্রমে জিম্বাবুয়ে, দক্ষিণ আফ্রিকা আর আফগানিস্তানের বিপক্ষে। ওয়েস্ট-ইন্ডিজ, নিউজিল্যান্ড, ভারত, শ্রীলংকা আর পাকিস্তানের বিপক্ষেও ইকোনোমিটা ৬ এর নিচে। ৬ এর উপরে ইকোনোমি কেবল ইংল্যান্ড আর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। সেটাও তাদের বিপক্ষে সবশেষ বিশ্বকাপের ম্যাচে দলগতভাবে খারাপ করার কারণেই। ইংল্যান্ড আর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মুস্তাফিজ ম্যাচ খেলেছেনই ২ করে মোট ৪ টি।
২০ এর নিচে মুস্তাফিজের বোলিং গড় আছে ৬ টি দলের বিপক্ষে:
প্রতিপক্ষ | গড় |
আয়ারল্যান্ড | ৫.৭৫ |
পাকিস্তান | ১৩.১১ |
জিম্বাবুয়ে | ১৬.০৬ |
ভারত | ১৭.০০ |
দক্ষিণ আফ্রিকা | ১৮.০০ |
আফগানিস্তান | ১৯.০০ |
সবথেকে বেশি সংখ্যক ম্যাচ খেলা উইন্ডিজদের বিপক্ষে মুস্তাফিজের গড় ২২.৭২। আর সবথেকে বাজে অবস্থা ওই অস্ট্রেলিয়া আর ইংল্যান্ডের বিপক্ষেই যাদের বিপক্ষে ফিজ ম্যাচই খেলেছেন মাত্র দুটি করে। মানে মুস্তাফিজ গড়, ইকোনোমি, স্ট্রাইক রেটের দিক থেকে এখনো সেরাদের একজনই।
টি২০ তে আসলে ২০১৫ থেকে ২০১৭, এই ৩ বছরে মুস্তাফিজের টি২০ ইকোনোমি ছিলো ৫.৭৪, ৬.১২ আর ৬.৮৫। ২০১৮ তে তা ৯.৮৫ আর ২০১৯-২০ এ ৮ এর উপরেই। তার খারাপ সময় হিসেবে বিবেচিত এই সময়টুকু নিয়ে পরে আলাদাভাবে কথা বলবো। একদিনের ক্রিকেটে তার সবথেকে সেরা ইকোনোমিটা এবছরেই (২০২১) । উইন্ডিজের বিপক্ষে খেলা ৩ ম্যাচ সিরিজে তার ইকোনোমি ২.৯৫।
২০১৫ এর পর ২০১৮ তেও তার বোলিং যথেষ্ট ইকোনোমিক্যাল ছিলো ওডিআইতে। ২০১৯ এর ইকোনোমিটা ফিজের ক্যারিয়ারের সবথেকে বাজে। ৬.৭৭ ইকোনোমি রেটের পেছনে দায়ী মূলত নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষের ১ ম্যাচ আর ওয়েস্ট-ইন্ডিজের বিপক্ষে খেলা দুটি ম্যাচ। মুস্তাফিজের ইনজুরির বছর ২০১৬ সালে খেলা এশিয়া কাপ আর বিশ্বকাপ মিলিয়ে তার ইকোনোমিটা ৬.৫৮, গড় ১৩.১৬। দ্বিপাক্ষিক সিরিজে ইকোনোমি আর গড় বেড়ে ৮.০১ আর ১০.৮৮। সবথেকে নাজুক অবস্থা ত্রিদেশীয় সিরিজে।
হোম-অ্যাওয়ে পারফরমেন্স:
দেশের মাটিতে মুস্তাফিজ বেশি সফল নাকি প্রতিপক্ষের মাটিতে? নিরপেক্ষ ভেন্যুতেই বা মুস্তাফিজ আসলে কেমন? এ বিষয়গুলোতে দৃষ্টি আরোপ করলে এটাই স্পষ্ট হবে যে, একদিনের ক্রিকেটে দেশের মাটি আর নিরপেক্ষ ভেন্যু উভয় স্থানেই প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানের গায়ে কাঁপন ধরিয়ে দিতে সক্ষম মুস্তাফিজ। তবে প্রতিপক্ষের মাটিতে প্রতিপক্ষের বিপক্ষে পারফরমেন্সটা কিছুটা খারাপ। তিন জায়গার ওডিআই পারফরমেন্সকে একসাথে দেখে নেয়া যাক।
ফ্যাক্ট | হোম | নিউট্রাল | অ্যাওয়ে |
ইনিংস | ২৪ | ২০ | ১৬ |
উইকেট | ৪৮ | ৩৯ | ২৮ |
ইকোনোমি | ৩.৯০ | ৫.৮৩ | ৫.৯১ |
গড় | ১৫.৩৫ | ২৫.১৭ | ৩০.৪২ |
স্ট্রাইক রেট | ২৩.৫ | ২৫.৮ | ৩০.৮ |
৫ উইকেট | ৩ বার | ২ বার | নেই |
অর্থাৎ দেশের মাটিতে আর নিরপেক্ষ ভেন্যুতে মুস্তাফিজ যতটা ভয়ংকর, প্রতিপক্ষের মাটিতে ততটা না হলেও পারফরমেন্স কিন্তু কোনোভাবেই খারাপ না। আবার এই হোম-অ্যাওয়ে-নিউট্রাল থেকে এশিয়াকে আলাদা করে নিলে মুস্তাফিজ সেখানেও সেরা। এশিয়ার মাটিতে খেলা মোট ৩৪ ইনিংসে মুস্তাফিজের উইকেট সংখ্যা ৬৮। ইকোনোমিটা দেখলে অন্য বোলাররা হিংসা করতেই পারে, ৪.৪৩। গড়টাও ১৮ এর নিচে। দেশের মাটির পর ২য় সর্বোচ্চ ১২ ম্যাচ খেলেছেন ইংল্যান্ডে; মূলত আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি আর বিশ্বকাপ। ২০১৭ এর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে মুস্তাফিজের ৪ ম্যাচে উইকেট সংখ্যা মাত্র ১। আর বিশ্বকাপে ৮ ম্যাচে সংখ্যাটা ২০। দুইয়ে মিলে ইকোনোমিটা ৬.৫৯। এশিয়া কাপের ৫ ম্যাচে ১০ উইকেট ৪.৪০ ইকোনোমিতে।
টি২০ এর দিকে নজর দেয়া যাক। ওডিআই এর মতো টি২০ তেও স্বাভাবিকভাবেই হোম আর নিউট্রাল ভেন্যুর তুলনায় খানিকটা মলিন পারফরমেন্স অ্যাওয়ে ম্যাচে। টি২০ তে অবশ্য দেশের মাটির থেকে নিউট্রাল ভেন্যুতে বেশি উজ্জ্বল মুস্তাফিজুর রহমান। আবারও একটু নজর দেয়া যাক পরিসংখ্যানে:
ফ্যাক্ট | হোম | নিউট্রাল | অ্যাওয়ে |
ইনিংস | ২১ | ৭ | ১৩ |
উইকেট | ২৮ | ১৫ | ১৫ |
ইকোনোমি | ৭.৩ | ৮.২ | ৮.৮৬ |
গড় | ২০.৪২ | ১৪.৮৬ | ২৬.৪ |
স্ট্রাইক রেট | ১৬.৭ | ১০.৮ | ১৭.৮ |
সতেরো থেকে উনিশ:
২০১৭ থেকে ২০১৯, এই সময়টাকে বলা হয় মুস্তাফিজের খারাপ সময়। এই সময়কালে তার পারফরমেন্স কেমন ছিলো সেটাও দেখে নেয়া যাক।
২০১৭ থেকে ’১৯ এর মধ্যে মুস্তাফিজুর রহমান পঞ্চাশ ওভারের ক্রিকেটে ৪৪ ইনিংস খেলে উইকেট শিকার করেছেন ৭৭ টি। পুরো ক্যারিয়ারের থেকে এই সময়ে তার ইকোনোমি, গড়, স্ট্রাইক রেট খানিকটা বেশি একথা সত্য। তবে পারফরমেন্স কিন্তু একেবারেই খারাপ না। পুরো ক্যারিয়ারে যেখানে ৫ উইকেট নিয়েছেন ৫ বার, সেখানে ইনজুরির পরের এই ৩ বছরেই ২ বার। ৩ বার ৪ উইকেটও নিয়েছেন এই সময়েই।
এই সময়ে টি২০ তেও পুরো ক্যারিয়ারের তুলনায় কিছুটা মলিন ছিলো মুস্তাফিজ। ২৪ ম্যাচে ২৫.২৬ গড়ে ৩০ উইকেট। পুরো ক্যারিয়ারে গড় ২০.৫৩। আন্তর্জাতিক টি২০ ক্যারিয়ারে ইকোনোমিটা ৭.৯৩ হলেও এই সময়কালে তিনি ওভার প্রতি খরচ করেছেন ৯ রানেরও খানিকটা বেশি।
তবে প্রতিপক্ষের উইকেট কিন্তু ঠিকঠাক ভাবেই নিচ্ছিলেন ফিজ। সেখানেও এগিয়ে টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানরাই। একদিনের ক্রিকেটে তিনি ওপেনার থেকে ৫ম ব্যাটসম্যানকে প্যাভিলিয়নে ফিরিয়েছেন ৫৫ বার। যার মধ্যে ২০১৭-’১৯ পর্যন্ত এই একই কাজ করেছেন ৩২ বার। ৬ থেকে ৮ আর ৯ থেকে ১১ নম্বর ব্যাটসম্যানকে মুস্তাফিজ আউট করেছেন পুরো ক্যারিয়ারে ৪১ আর ১৯ বার; যেখানে এই সময়কালে সংখ্যা দুটো ২৮ আর ১৪। ব্যক্তিগত ০ রান থেকে ৯ রান করা ব্যাটসম্যানকে যেখানে পুরো ক্যারিয়ারে ফিরিয়েছেন ৫০ বার সেখানে ওই ৩ বছরেই ৩২ বার।
প্রায় একই চিত্র টি২০ তেও। ১ থেকে ৫ নম্বর ব্যাটসম্যানকে প্যাভিলিয়নের রাস্তা দেখিয়েছেন মোট ৩৩ বার, যেখনে এই সময়টুকুতেই ২০ বার। ০ থেকে ৯ রান করা ১৩ ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়েছেন তিনি। অর্থাৎ ফর্ম যেমনই থাকুক, মাঠে থাকলে মুস্তাফিজই বাংলাদেশের এখন পর্যন্ত সেরাই। হয়তো নিজের সেরাটা দিতে পারেননি সে সময়, তবে দলের সেরা তখনো ছিলেন বললে খুব একটা দোষ হবে না। বিশ্বাস হচ্ছে না? প্রমাণ দিচ্ছি।
১লা জানুয়ারি ২০১৭ থেকে ৩১ ডিসেম্বর ২০১৯ পর্যন্ত মুস্তাফিজ ওডিআই খেলেছেন ৪৫ টি। বল হাতে নেমেছিলেন মোট ৪৪ ইনিংসে। এর মধ্যে বাংলাদেশ জিতেছিলো ২২ ম্যাচ আর হার ২০ টিতে। বাংলাদেশের জেতা-হারা ম্যাচগুলোর দিকে ভালোভাবে তাকালেই দেখা যায় মুস্তাফিজ একজন ম্যাচ উইনারই বটে। তার খারাপ সময় হিসেবে বিবেচিত এই অধ্যায়েও তার ইকোনোমি ৪.৮১, গড় ২০.৭৭ আর স্ট্রাইক রেট ২৫.৮ ছিলো জেতা ২২ ম্যাচে। বা ঘুড়িয়ে বলা যায় তার ইকোনোমি, গড় আর স্ট্রাইক রেট এমন ছিলো বলেই বাংলাদেশ হয়তো জিতেছে। মাশরাফি, রুবেল, তাসকিন, সাকিবদের অবদানকে কোনোভাবেই ছোট করছি না, তবে পরিসংখ্যান যা বলে তাই বললাম। জেতা ২২ ম্যাচে তার সংগ্রহ ৪৪ উইকেট আর হারা ২০ টিতে উইকেট সংখ্যা ১২ টি কমে ৩২।
মুস্তাফিজের গড় ২০.৭৭ থেকে বেড়ে একেবারে ৩২.৫৬, স্ট্রাইক রেট ৩২.১ দলের হারা ম্যাচগুলোতে। ইকোনোমিটা ৬ এর উপরে। এক্ষেত্রে অবশ্য মুস্তাফিজ সব ম্যাচেই খারাপ করেছেন, তেমনটা না। তবে বেশ কয়েকটি ম্যাচেই মুস্তাফিজের খারাপ পারফরমেন্সের কারণে ওভারাল পরিসংখ্যানটা এমন দাঁড়িয়েছে।
যেকোনো জয়ী ম্যাচে মুস্তাফিজ:
২০১৭ থেকে ’১৯ পর্যন্ত যেমন জয়ী ম্যাচে মুস্তাফিজের পারফরমেন্স উজ্জ্বল, তেমনি এর আগে পরেও। তার খেলা একদিনের ম্যাচ গুলোর মোট ৩৪ টিতে জিতেছে বাংলাদেশ, হার আছে ২৪ টিতে। জেতা-হারা ম্যাচ গুলোতে তার পারফরমেন্স কেমন ছিলো দেখে নেয়া যাক।
ওডিআই:
ফ্যাক্ট | জয়ী ম্যাচ | পরাজিত ম্যাচ |
ইনিংস | ৩৪ | ২৪ |
উইকেট | ৭৬ | ৩৮ |
ইকোনোমি | ৪.৫৪ | ৫.৮৪ |
গড় | ১৬.৭৮ | ৩১.৭৮ |
টি-টুয়েন্টি:
ফ্যাক্ট | জয়ী ম্যাচ | পরাজিত ম্যাচ |
ইনিংস | ১৮ | ২৩ |
উইকেট | ৩৭ | ২১ |
ইকোনোমি | ৭.৭৫ | ৮.০৬ |
গড় | ১৩.৯৪ | ৩২.১৪ |
স্ট্রাইক রেট | ১০.৭ | ২৩.৯ |
তারমানে, ম্যাচ জেতার জন্য মুস্তাফিজের জ্বলে উঠার কোনো বিকল্প ব্যবস্থা নেই। হেরে যাওয়া ম্যাচগুলোতে মুস্তাফিজের মলিন পারফরমেন্স তারই ইঙ্গিত দেয়। সাথে জানান দেয়, মুস্তাফিজ জ্বলে উঠলে ম্যাচটা বাংলাদেশের দিকে ঝুঁকে পরে অনেকটাই।
দিন নাকি রাত: কখন বেশি সফল মুস্তাফিজুর রহমান?
এদিক থেকে হিসাব কষলে দেখা যাবে দিনের আলোতে মুস্তাফিজের পেস বেশ মলিন। দিনের আলোতে তার খেলা ৮ টি২০ তে উইকেট সংগ্রহ করেছেন মাত্র ৬ টি। গড় ৩৫.৮৩, স্ট্রাইক রেট ২৭.৮ যার উভয়ই ডে-নাইট আর শুধু রাতের ম্যাচের তুলনায় অনেক বেশি। তবে ইকোনোমিটা নাইট ম্যাচের তুলনায় কম। এই ৮ ম্যাচে ইকোনোমি যেখানে ৭.৭২ সেখানে রাতে খেলা ২৬ ম্যাচে তা ৮.২৮। এক্ষেত্রে অবশ্য উইকেট সংখ্যা ৩৪ টি। গড় আর স্ট্রাইক রেট ২৩.১১ আর ১৬.৭।
বল হাতে সবথেকে সফল মুস্তাফিজ ডে-নাইট ম্যাচে। এমন ৭ ম্যাচে তার উইকেট সংখ্যা একেবারে ১৮ টি। ইকোনোমি রেট, গড়, স্ট্রাইক রেট সবই বেজায় ভালো। সেগুলো যথাক্রমে ৬.৯০, ১০.৫৫ আর ৯.১।
লিমিটেড ওভারের আরেক সংস্করণ ওডিআইতেও তিনি দিনের ম্যাচের থেকে ডে-নাইট ম্যাচে কিছুটা বেশি উজ্জ্বল। ছক আকারেই দেখে নেয়া যাক:
ফ্যাক্ট | ডে | ডে-নাইট |
ইনিংস | ৩১ | ২৯ |
উইকেট | ৬৩ | ৫২ |
ইকোনোমি | ৫.৫৫ | ৪.৬৩ |
গড় | ২৩.৭৬ | ২০.৬৫ |
স্ট্রাইক রেট | ২৫.৬ | ২৬.৭ |
প্রথম নাকি দ্বিতীয়: ম্যাচের কোন ইনিংসে বল করলে মুস্তাফিজ বেশি সফলতা পান?
দল পরে ব্যাট করলে অর্থাৎ শুরুতে বাংলাদেশ বল করলে চাপমুক্ত মুস্তাফিজ ভালো বল করে থাকে। প্রথমে বল করা ২৮ ম্যাচে ৫.৩৬ ইকোনোমি রেট আর ২১.৯৩ গড়ে যেখানে ফিজের সংগ্রহ ৬৩ উইকেট, সেখানে পরে বল করে ৩২ ইনিংসে ২২.৮৬ গড়ে উইকেট নিয়েছেন ৫২ টি। উইকেট নেয়ায় পিছিয়ে থাকলেও রান চেক দেয়ায় মুস্তাফিজ যথেষ্ট সফল। এক্ষেত্রে মুস্তাফিজের ইকোনোমি রেটটা মাত্র ৪.৮৮। এই পরিসংখ্যান ছিলো একদিনের ক্রিকেটের ক্ষেত্রে। টি২০ তে দুই ক্ষেত্রেই মোটামুটি সমান মুস্তাফিজের পারফরমেন্স।
চাপমুক্তভাবে বল করলে উইকেট বেশি নেন; তাই বলে চাপে কিন্তু দমে যান না। রান চেক সেখানে ঠিকই দেন। আলাদা করে দেখে নেয়া যাক তাহলে টুর্নামেন্ট ফাইনালের চাপটা কি রকম সামলাতে পারেন মুস্তাফিজুর রহমান।
চাপের মুখে মুস্তাফিজ:
চাপটাও ভালোই সামলানে পারেন মুস্তাফিজ। তার প্রমাণ ওডিআই ফরমেটে তার খেলা ৩ টি টুর্নামেন্ট ফাইনাল। শ্রীলংকা আর ভারতের বিপক্ষে ২ টি ফাইনালে নিজের ১০ ওভারের কোটা সম্পূর্ণ করেও ফিজের ইকোনোমি রেটটা ছিলো মাত্র ২.৯০ আর ৩.৮০। বাকি একটিতে ৫ ওভার বল করে রান দিয়েছিলেন ৫০; তাও উইন্ডিজদের বিপক্ষে। খারাপ দিন মাঝে মধ্যে আসতেই পারে।
টি-টুয়েন্টি ফরমেটে তার খেলা টুর্নামেন্ট ফাইনাল একটি; নিদাহাস ট্রফির ফাইনাল। সেই ম্যাচে মুস্তাফিজের ইকোনোমি ছিল দলের অন্য সব বোলারের থেকে কম। ৫.২৫ ইকোনোমিতে সেদিন ৪ ওভার বল করে উইকেট নেন একটি, ২৮ রান করা মনিশ পান্ডের।
টুর্নামেন্টে তবে কেমন তিনি?
অনেক আগেই আলোচনা করেছি তার হোম-অ্যাওয়ে আর নিউট্রাল ভেন্যুর পারফরমেন্স নিয়ে। সেখানে এটা অন্তত স্পষ্ট হয়েছে যে মুস্তাফিজ নিউট্রাল ভেন্যুতে যথেষ্ট সফল। আর নিউট্রাল ভেন্যুতে খেলা ম্যাচ গুলোই তো টুর্নামেন্টের ম্যাচ। সে হিসেবে টুর্নামেন্টেও তিনি বেশ সফল।
টুয়েন্টি-টুয়েন্টি এশিয়া কাপে মুস্তাফিজ ৩ ম্যাচে ৬.০০ ইকোনোমিতে উইকেট নেন ৩ টি। আর টি২০ বিশ্বকাপে ৩ ম্যাচে উইকেট সংখ্যা ৯। মাত্র ৩ ম্যাচ খেলেই মুস্তাফিজ সেবার সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহক তালিকার ৭ এ এসেছিলেন। ইনজুরির কারণে খেলতে পারেননি সব ম্যাচ। টপে থাকা মোহাম্মদ নবী ম্যাচ খেলেছিলেন ৭ টি।
পঞ্চাশ ওভারের ক্রিকেটে ত্রিদেশীয় সিরিজের বাইরে বৈশ্বিক টুর্নামেন্ট খেলেছেন ৩ টি। চ্যাম্পিয়নস ট্রফি ২০১৭, এশিয়া কাপ ২০১৮ আর বিশ্বকাপ ২০১৯। বিশ্বকাপের ৮ ম্যাচে উইকেট সংখ্যা ২০, এশিয়া কাপের ৫ ম্যাচে ১০ আর চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ৪ ম্যাচে ১ টি। এই ৩ টুর্নামেন্টে তিনি ওভার প্রতি খরচ করেছেন যথাক্রমে ৬.৭, ৪.৪ এবং ৬.৩১ রান করে।
কোন ধরনের ব্যাটসম্যানের বিপক্ষে বেশি সফল মুস্তাফিজুর রহমান?
এমন প্রশ্নের উত্তর যদি ডানহাতি-বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের ক্ষেত্রে চাওয়া হয় তবে উত্তরটা চোখ বন্ধ করে দিয়ে দেয়া যায়। মিচেল স্টার্ক, ট্রেন্ট বোল্টের মতো বাঁহাতি পেসারদের মতোই মুস্তাফিজেরও ডানহাতি ব্যাটসম্যানদের বিপক্ষে সফলতা বেশি। নতুন করে ইনসুইং শেখাতে এটা যে আরও বাড়বে ভবিষ্যতে সবকিছু ঠিক থাকলে সেটাও আশা করাই যায়।
মুস্তাফিজুর রহমান একদিনের ক্রিকেটে মোট ৭৩ ডানহাতি ব্যাটসম্যানকে আর ৪২ জন বামহাতি ব্যাটসম্যানকে ডিসমিস করেছেন। টি২০ তে সেটা ৪৪ আর ১৪। এদের মধ্যে পঞ্চাশ ওভারের ক্রিকেটে বোল্ড আউট করেছেন মোট ১৯ জনকে যাদের মধ্যে আবার ১২ জনই বাঁহাতি। টি২০ এর ক্ষেত্রে মোট বোল্ড আউট হয়েছেন ১৪ জন, ১০ জন ডানহাতি। সে যাই হোক, মুস্তাফিজের বলে বোল্ড আউটের কথা শুনলে আপনার চোখে প্রথমে কোন দৃশ্যটা ভেসে উঠে? আমার চোখে তো আইপিএলে আন্দ্রে রাসেলের সেই বোল্ডটাই ভেসে উঠে সবার আগে।
অডিআইতে ০ থেকে ৯ রান করা মোট ৫০ ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়েছেন মুস্তাফিজুর রহমান। ১০ থেকে ২৯ করা ৩৪ জনকে। ৪০ থেকে ১২০ পর্যন্ত রান করা ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়েছেন মোট ১৮ বার। টি২০ তে ০ থেকে ৯ করা ২৯ ব্যাটসম্যানকে আর ১০-২৯ করা ২১ জনকে ফিরিয়েছেন ফিজ দ্যা কাটার মাস্টার। টি২০ তে ওপেনারদের ফিরিয়েছেন ১৩ বার, ওডিআইতে ২৬ বার। ওয়ান ডাউন ব্যাটসম্যানকে ওডিআইতে ৫ বার আর টি-টুয়েন্টিতে আউট করেছেন ১০ বার। টি২০ তে তার লেগ বিফোরে উইকেট ৫ আর ওডিআইতে ১১ টি।
আইসিসি র্যাংকিং কি বলে?
আইসিসি টেস্ট বোলার র্যাংকিং এ মুস্তাফিজের সেরা অবস্থান ছিলো ৩৯৬ রেটিং নিয়ে ৪৩ তম স্থান। একদিনের ক্রিকেটে এই মুহূর্তে ফিজের অবস্থান ৬৫৮ রেটিং নিয়ে ৮ম। সবথেকে ভালো অবস্থান ছিলো ২০১৮ সালে ৬৯৫ রেটিং নিয়ে ৫ম অবস্থান। টি২০ বোলিং র্যাংকিং এ মুস্তাফিজের সবথেকে ভালো অবস্থান ছিলো ৬ষ্ঠ। যদিও এখন আছেন ৩১ তম স্থানে; শেষবার টি২০ টা খেলেছিলেনও গতবছর মার্চে। ওডিআই অলরাউন্ডার র্যাংকিং এ মুস্তাফিজ তার ক্যারিয়ারের সেরা ২৬ তম অবস্থানেও আছেন। যদিও এদিকে তার নজর দেয়ার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না।
বোলিং অ্যাকশনে আনা পরিবর্তন:
মুস্তাফিজ শুরুতে এসেছিলেন এক প্রকার গড গিফটেড ট্যালেন্ট হিসেবেই। সেখান থেকে ইনজুরির পর নিজের অ্যাকশন বদলাতে হয়েছিলো মুস্তাফিজকে। ওটিস গিবসনের সময়ে বদলেছেন আরও একবার। শুরুর মুস্তাফিজের অ্যাকশনের সাথে বর্তমান মুস্তাফিজের অ্যাকশনের তুলনা করা যাক কিছুটা।
২০১৫ তে মুস্তাফিজ বল করার আগে একটা মোটামুটি বড় রকমেরই লাফ দিতেন। ফলে গতি কিছুটা বাড়লেও কন্ট্রোল কমে যেত বলের উপর। এখন মুস্তাফিজ সেই লাফটা প্রায় দিচ্ছেনই না। বলের উপর নিয়ন্ত্রণ বাড়াতে এটা কার্যকরী। পাশাপাশি শুরুর মুস্তাফিজ বল করার সময় তার ডানহাতটা সামনের দিকে প্রসস্ত রাখতেন, যেটা এখন ভেতরের দিকে থাকে। আগের তুলনায় তাই বলও ছাড়তে পারেন দ্রুত। দ্রুত বল ছুঁড়তে পারাটাও তার ভবিষ্যৎ সাফল্যের জন্য ভালোই হবে আশা করা যায়। কিন্তু বিপত্তিটা বাঁধে ফলো থ্রুতে মুস্তাফিজের পা ডেনজার জোনে চলে যাওয়াতে। এ কারণে তার কি কি সমস্যা হচ্ছে তা নাজমুল আবেদীন ফাহিম স্যার কিছুদিন আগেই তুলে ধরেন, পাশাপাশি তিনি আশাবাদী ওটিস গিবসন এটা নিয়ে কাজ করবেন।
সমাপ্তি টানার আগে আর দুটো কথা। পরিসংখ্যান থেকে এটুকু স্পষ্ট যে, মুস্তাফিজই আমাদের সেরা পেস বোলার। স্পিনারদের সাথে তুলনা করলেও প্রতিযোগিতাটা হবে শুধু ওই সাকিবের সাথেই। পাশাপাশি মুস্তাফিজ এখন শিখছে নতুন কিছু, শেখার আগ্রহও আছে। মুস্তাফিজের ইচ্ছা তিন ফরমেটেই খেলার, তিন ফরমেটেই ব্যাটসম্যানদের শাসন করে বেড়ানোর। মুস্তাফিজের প্রতি বিশ্বাসও আছে, রাখাও যায় যে তিনি পারবেন। ইনজুরিমুক্ত থাকা গেলে মুস্তাফিজ যে ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের শুধু এই বাংলাদেশের না, পুরো ক্রিকেট বিশ্বের আকাশেই ধ্রুবতারা হয়ে থাকার যোগ্যতা রাখে তার প্রমাণ তিনি দিয়েছেন। তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি ক্রিকেট আকাশের কোনো ধুমকেতু হয়ে নন; ধ্রুবতারার মতোই টিকে থাকতে এসেছেন, টিকে থাকতে চান।
শুভ কামনা মুস্তাফিজ দ্যা কাটার মাস্টার!