৭ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

প্রতিভাবান লিটন ও ‘প্রাথমিক গণিত’-এর সরল অংক

প্রতিবেদক
Rabiul Islam Shakib
শুক্রবার, ২৬ মার্চ , ২০২১ ১২:১১

সরল কর:

ক) ৮+ ০+ [৫+০+ {৭x ৬(০x ৬+ ৭)- ৬+৪} x ০] +৮ + {(১+১+১)/৯} +০ -০

খ) {৩৬x ১৭(৩৪ x ১৭+ ২১)- ১৪+৪১} x ৪১ +২৩ – ২০+ {১৬ + (২২/৩২) + ১৪- ২২}/১৯ + ২১

গ) [১২১ + {(৮৩+৭৬+৯৪)/১২৬}] +১৭৬

কি ব্যাপার? ডিজিটগুলোর দিকে ভালোভাবে দৃষ্টিপাত না করেই চলে এসেছেন কেন? ডিজিটগুলোর তথ্যসূত্রের দিকে নজর দিয়ে আবার না হয় একটু অংকগুলোর দিকে ফিরে যান। প্রথম অংক সাজানো হয়েছে জাতীয় দলের নিয়মিত ওপেনার লিটন কুমার দাসের ০ থেকে ১০ রান করা ইনিংসগুলোকে নিয়ে। ‘খ’ নং প্রশ্নটি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়েছে তারই ১১ থেকে ৪৯ রানের ইনিংসগুলো আর ‘গ’ নং প্রশ্নের তথ্যসূত্র লিটন কুমার দাসের খেলা পঞ্চাশোর্ধ্ব রানের ইনিংসগুলো। ব্যাস, ২০১৫ থেকে এ পর্যন্ত লিটনের খেলা ৪২টি একদিনের ক্রিকেট ম্যাচের ৪২ ইনিংসের স্কোর এপর্যন্তই।

দেশের একজন প্রতিভাবান ক্রিকেটার দলে আছে ৬ বছর যাবত। ৬ বছরে পঞ্চাশোর্ধ্ব ইনিংসও ৬ টি। বাহ, কি মিল! সংখ্যার কাকতালীয়তা শুধু শচীনের ক্ষেত্রেই হয় না, লিটনের ক্ষেত্রেও হয়েছে স্বমহীমায়।

লিটন জাতীয় দলে আসার আগে থেকেই তিনি যে প্রতিভাবান ক্রিকেটার সেটা সমর্থকেরা জানতো, জানে এখনো; তবে অভাব শুধু প্রমাণের। কোনো একদিন সাক্ষী-প্রমাণ হাজির হবে, এই আশাতে আজও বিচারকগণ নিয়মিতই পিছিয়ে যান শুনানীর তারিখ। সেই আশায় ধৈর্য্য ধরে সমর্থকেরাও আছেন, থাকবেন যুগ যুগ ধরে, চাতক পাখির মতোই অপেক্ষা করতে প্রস্তুত বাঙালি ক্রিকেট সমর্থকেরা।

তার পঞ্চাশোর্ধ্ব রানের সেই ৬টি ইনিংসে চোখ বুলানো যাক। প্রথমটিই এশিয়া কাপের ফাইনালের মতো মঞ্চে ভারতের বিপক্ষে ভয়ডরহীন ১১৭ বলে ১২১ রানের ইনিংস। নিজের ১৮ তম ম্যাচে এসে প্রথম শতক/অর্ধশতক পাওয়ায় তীর্থের কাকের মতো আশায় বুক বাঁধা সমর্থকেরা সেদিন বুক উঁচু করে বলেছিলো লিটন এসেছে, এবার আর কেউ ওকে থামাতে পারবে না। ঐ দেখো, আমাদের ক্যাপ্টেন মাশরাফিও উচ্ছ্বাসিত, বুক উঁচু রাখতে বলছেন লিটনকে, আমরাও না হয় রাখলাম সে যাত্রায়। লিটন আউট হলো, থার্ড আম্পায়ার রড টাকারের ফেসবুক একাউন্টের উপর হামলা হলো, বাংলাদেশ দারুন একটা শুরু পেলো।

এশিয়া কাপের ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে শতক হাঁকান লিটন। ছবি: AP

মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানদের হযবরল পারফরমেন্সে ম্যাচটি জেতা হয়নি, হলে অবশ্যই তা হতো টুর্নামেন্ট সেরা ইনিংস, ইতিহাসে স্বর্নাক্ষরে লেখা থাকতো লিটনের নাম। সবই সত্যি, সবই সম্ভব। লিটন কুমার দাস যে সত্যিই ট্র্যাকে এসেছেন তার প্রমাণ দিলেন পরের জিম্বাবুয়ে সিরিজেই। ৩ ম্যাচ সিরিজের ২ ম্যাচে ৪ আর ০ রানের ইনিংস খেললেও মাঝে খেলেন ৮৩ রানের এক ঝলমলে ইনিংস। বুকের ছাতি বড় করে আশা নিয়ে এগুতে থাকলো সমর্থকেরা। পরের উইন্ডিজ সিরিজে একটি ৪১ রানের ইনিংস একেবারে হতাশ করলো না সবাইকে।

“ধারাবাহিকতা নেই লিটনের”- এটা যখন সবথেকে বড় প্রশ্ন, ঠিক তখনই নিউজিল্যান্ড সিরিজে টানা তিন ম্যাচে ১ রান করে ধারাবাহিকতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করলেন লিটন কুমার দাস।

তবে অনেকেই এটাকে খারাপ দৃষ্টান্ত ভাবলেন। তাদের মুখে চুনকালি মেখে দিয়ে তার উপর ভরসা রাখা বিচারকদের উপহার দিলেন আরও ২ টি অসাধারন ইনিংস। প্রথমটি বিশ্বকাপের আগে ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্টে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে। ওই এক সিরিজ, এতো বছরের ক্রিকেট ইতিহাসে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের জেতা একমাত্র টুর্নামেন্ট। আমরা চ্যাম্পিয়ন, চ্যাম্পিয়ন হওয়াতে ভূমিকা আছে লিটনের। ৬৭ বলে ৭৬ রান করে হয়ে রইলেন ইতিহাসের অংশ।

শুরু হলো বিশ্বকাপ। শুরুর ৩ ম্যাচে ছিলেন না দলে, ৪র্থ ম্যাচ পরিত্যক্ত। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সুযোগ পেলেন, তাও নিজের জায়গা ছেড়ে দিয়ে খেলতে হলো ৫ নাম্বার পজিশনে। তবুও লিটন তো লিটনই, সব জায়গাতেই সমান। খেলে দিলেন একেবারে ৯৪ রানের অপরাজিত ইনিংস, তাও আবার মাত্র ৬৯ বলে। সেঞ্চুরি না পাওয়াটা আক্ষেপেরই বটে। লিটন ফিরে এসেছে, এসেই ভালো করেছে। বিশ্বকাপে এবার আমাদের থামায় কে? বিশ্বকাপের পরের ম্যাচ গুলোতে লিটনের রান ২০, ১৬, ২২ আর ৩২। বিচারকেরা অপেক্ষায় রইলেন নতুন প্রমাণের, সমর্থকেরা ততদিনে শিখে গেছে অপেক্ষা করতে। তাই তাদেরও কষ্ট হলো না মোটেও।

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হোম সিরিজে আবার দলে লিটন। এ যেন মহাকাব্যের মহানায়ক লিটন। শুরুর ম্যাচে ১২৬*, শেষের ম্যাচে ১৭৬। প্রতিপক্ষ হোক না জিম্বাবুয়ে, ১৭৬ রানের ইনিংসকে আপনি কোনো অ্যাঙ্গেল থেকেই এভারেজ ইনিংস বলতে পারবেন না, সেরা ইনিংস গুলোর একটা হিসেবে সেটাকে আপনি বিবেচনায় না আনতে পারলে আপনি আসলে ক্রিকেট সমর্থক না, আপনি পেশাগতভাবেই হয়তো লিটন হেটার।

২০২০ সালে ১৭৬ রানের অসাধারণ ইনিংস খেলেন লিটন। ছবি: রতন গোমেজ

ফর্মে থাকা লিটনের সাথে স্বার্থপরতা করলো ক্রিকেট বোর্ড গুলো। করোনাকে অজুহাত করে তাঁরা বাতিল করতে থাকলো একের পর এক সিরিজ, লম্বা বিরতিতে থাকলে চেঙ্গিস খানের তলোয়ারেও মরিচা ধরে যেতে বাধ্য, লিটনের ব্যাট তো চুনোপুটি। হলোও তাই, পরের ৬ ইনিংসের রান ১৪, ২২, ০, ১৯, ০, ২১।

২৯.৬১ গড়ে একদিনের ক্রিকেটে লিটনের ৪২ ইনিংসের মোট রান ১১৫৫। ৬ ইনিংস বাদ দিলে বাকি ৩৬ ইনিংসে লিটনের মোট সংগ্রহ মাত্র ৪৭৯ রান। প্রতিভার ১০ শতাংশ দেখিয়ে এই ৩৬ ম্যাচে গড়ে অন্তত ১৫ রান করলেও সংগ্রহটা দাঁড়াতো ৫৪০ রানের। ২৯টি টি২০ ইনিংসে লিটনের স্ট্রাইকরেট একেবারে ১৩৫.০৩। গড় ২২.৭১। অর্ধশতক আছে ৪ টি।

– এদিক দিয়ে হিসাব করলে টেস্ট ক্রিকেটের লিটন এখন অব্দি এগিয়ে থাকবে।

– ওহ, আসলেই?

– না মানে, ৭ টা ফিফটি আছে। ৬৯, ৭০, ৭১, ৯৪ রানের ইনিংসও আছে।

– আর গড়টা?

– সেটা হোক না ২৮.৬২। প্রতিভা তো আছে। অন্য একজন ব্যাটসম্যান দেখান তো লিটনের মতো ক্লাসিক।

– আ আ আ আ…ম!

মতামত জানান :