৮ আগস্ট ২০১৯। ক্রিকেট পারায় হঠাৎ করেই শুরু হলো শোরগোল, আলোচনা। শোনা যাচ্ছিলো বিদায়ের সুর। সবকিছুই একটি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে। দক্ষিণ আফ্রিকার ইতিহাসের অন্যতম সেরা ক্রিকেটার, ক্রিকেট মাঠে নম্রতা-ভদ্রতার দিক থেকে আদর্শ একজন, তিন ফরমেটেই সমানভাবে কার্যকরী ব্যাটসম্যান হাশিম আমলা নাকি অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন। হাশিম আমলার করা ঘোষণা ততক্ষণে পৌঁছে গেছে ক্রিকেট বিশ্বের আঁনাচে কাঁনাচে। হার্শা ভোগলে, শন পোলক, হার্শেল গিবসের মতো সাবেক তারকা ক্রিকেটাররাও তাদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। ২২ গজে আর দেখা মিলবে না সদা হাসিমুখে থাকা দাড়িওয়ালা এই ক্রিকেটারের।
বিদায়ের ঘোষণাটা একেবারেই হঠাৎ করে দেয়া। তখনো দলের নিয়মিত সদস্যই ছিলেন আমলা। নিজের শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেন ২০১৯ বিশ্বকাপে শ্রীলংকার বিপক্ষে। ৮০ রানে অপরাজিত থেকে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছেড়েছিলেন সেদিন। যদিও অফ ফর্মে ছিলেন বা ঠিক আমলার মতো ফর্মে তিনি ছিলেন না অনেকদিন ধরেই। ২০১৮ থেকে অবসরের আগ পর্যন্ত একদিনের ক্রিকেটে শত রানের ইনিংস খেলেছিলেন মাত্র ১টি, যেখানে ওডিআইতে তার শতক সংখ্যা ক্রিকেট ইতিহাসের ৬ষ্ঠ সর্বোচ্চ ২৭ টি। সব ফরমেট মিলিয়ে সর্বোচ্চ শতকের তালিকাতেও আমলার অবস্থান ৬ষ্ঠ। এই সময়ে তার অর্ধশতক ছিলো ৫ টি।
শেষ সময়ের টেস্ট ক্রিকেটের পরিসংখ্যানটা আরও একটু ফ্যাকাসে। ২০১৮ এর শুরু থেকে অবসরের (২১শে ফেব্রুয়ারি ২০১৯ শেষ টেস্ট খেলেছেন) আগ পর্যন্ত তার ছিলো না কোনো শতক। শেষবার ১০০ পার করেছিলেন ২০১৭ সালের অক্টোবরে। যেখানে টেস্ট আর ওডিআই ক্রিকেটের দুই সংস্করনেই ২৫ টির উপরে শতক করা ৫ ব্যাটসম্যানের একজন তিনি। নিজের অবস্থান বুঝে নিয়ে তরুণদের সুযোগ দিতে নতুন দক্ষিণ আফ্রিকা দল গড়ার আশায় সরে দাঁড়ালেন ক্রিকেট থেকে।
আধুনিক যুগের ক্রিকেটের অন্যতম সেরা এই ব্যাটসম্যানের জন্ম দক্ষিণ আফ্রিকার ডারবানে, ১৯৮৩ সালের ৩১শে মার্চ। আমলার পূর্বপুরুষরা অবশ্য ভারতীয়। তার দাদা ছিলেন গুজরাটের সুরাট শহরের বাসিন্দা। আমলার দাদার তিন ছেলের তিন জনই থাকেন তিন দেশে। এদের মধ্যে হাশিম আমলার বাবা দক্ষিণ আফ্রিকায় আর বাকি দুই ভাইয়ের একজন আমেরিকা আর অন্যজন বাংলাদেশের ঢাকায়।
হাশিম আমলার ক্রিকেট ক্যারিয়ারের শুরু হয় ডারবান হাই স্কুলে অধ্যয়নরত সময়ে। স্কুল ক্রিকেটে সফল হাশিম আমলা ২০০০-০১ ক্রিকেটবর্ষে ডাক পান দক্ষিণ আফ্রিকার অনূর্ধ্ব ১৯ দলে। ২০০২ সালেই পেয়ে যান অধিনায়কত্বের দায়িত্ব। ২০০৪-০৫ ক্রিকেট বর্ষের প্রথম ৮ ম্যাচে ৪ সেঞ্চুরির দেখাও পান আমলা। ডাক পান ভারতের বিপক্ষে জাতীয় দলের সিরিজে।
ক্রিকেটের তিন সংস্করণেই সমানভাবে কার্যকরী হাশিম আমলা
২০০৪ সালের ২৮শে নভেম্বর জাতীয় দলের জার্সি গায়ে মাঠে নামেন হাশিম আমলা। প্রথম ইনিংসে ২৪ আর দ্বিতীয় ইনিংসে করেন ২ রান। পরের ২ টেস্ট খেলেন ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। ব্যার্থ ছিলেন সেখানেও, সর্বোচ্চ ইনিংসটি ছিলো মাত্র ২৫ রানের।
পরের সুযোগটা পান প্রায় দেড় বছর পর। ২৭ এপ্রিল ২০০৬, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে আবার মাঠে নামেন আমলা, ৬ ঘন্টা ৪৮ মিনিট মাঠে থেকে ৩১৭ বল খেলে রান করেন ১৪৯। সেখান থেকে শুরু, আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি দক্ষিণ আফ্রিকার এই তারকা ব্যাটসম্যানকে। ক্যারিয়ার শেষে ১২৪ টেস্ট খেলে ৯,২৮২ রান করে আছেন দক্ষিণ আফ্রিকার ২য় সর্বোচ্চ টেস্ট রান সংগ্রাহক হিসেবে। তার উপরে আছে শুধু জ্যাক ক্যালিস।
একমাত্র দক্ষিণ আফ্রিকান হিসেবে টেস্ট ক্রিকেটে ত্রিপল হান্ড্রেড আছে আমলার। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২২ জুলাই ২০১২ তারিখে সিরিজের প্রথম টেস্টের ৪র্থ দিনে এই মাইলফলকে পৌঁছান আমলা। অপরাজিত ৩১১ রানের ইনিংসে আমলা বল মোকাবেলা করেছেন ৫২৯ টি আর ব্যাটিং করেছেন প্রায় ১৩ ঘন্টা ১০ মিনিট ব্যাপী।
হাশিম আমলার টেস্ট ক্যারিয়ারের সেরা সময় ছিলো ২০১০ থেকে ২০১৪। এই সময়ে আমলা মোট ৪২ টেস্ট ম্যাচ খেলেছেন ৬৫.৬২ গড়ে। শতক সংখ্যা ১৬, মোট রান ৪,০৬৯। জানুয়ারি ২০১০ থেকে ডিসেম্বর ২০১৪ পর্যন্ত টেস্ট ক্রিকেটে অন্তত ২,০০০ রান করা ব্যাটসম্যানদের মধ্যে আমলার গড় ছিলো ২য় সর্বোচ্চ। ৬৭.৭১ গড় নিয়ে চন্দরপাল ছিলো তার উপরে আর ৬৪.৪৩ গড় নিয়ে ৩ নম্বরে কুমার সাঙ্গাকারা।
হাশিম আমলা ক্রিকেটের ৩ সংস্করণেই সমানভাবে কার্যকরী ছিলেন। যদিও শুরুতে তাকে টেস্ট স্পেশালিষ্টই ভাবা হতো। তাই তো প্রথম টেস্ট খেলার ৩৮ মাস পর ডাক পান ওডিআই দলে। ততদিনে হাশিম আমলা টেস্ট খেলে ফেলেছেন ২২ টি। ৩৩.৯২ গড়ে ৩ শতক আর ৬ অর্ধশতকে মোট রান করেছিলেন ততদিনে ২,৭৯১।
২০০৮ সালের ৯ই মার্চ চট্টগ্রামে বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে শুরু করেন পঞ্চাশ ওভারের ক্রিকেট যাত্রা। শুরুর সিরিজের ৩ ম্যাচের মধ্যে ব্যাট করেছেন ২ ম্যাচে; রান ছিলো ৯* আর ১৬। এই ফরমেটে প্রথম শতকের দেখা পান বাংলাদেশের বিপক্ষেই, একই বছরের ৯ নভেম্বর খেলেন সেই ১৪০ রানের ইনিংস। একদিনের ক্রিকেটে তিনি ম্যাচ খেলেছেন ১৮১ টি। এর মধ্যে প্রথম ১০০ ম্যাচে তার গড় ছিলো প্রায় ৬০। আর ক্যারিয়ারের শেষ ২৩ ম্যাচের গড়টা ৩৬.৬০ মাত্র।
ওডিআই ক্রিকেটে হাশিম আমলা ২০১৮ এর আগ পর্যন্ত ছিলেন ধরা ছোঁয়ার বাইরে। ওডিআই ক্রিকেটে দ্রুততম ২০০০, ৩০০০, ৪০০০, ৫০০০, ৬০০০ আর ৭০০০ রানের মাইলফলক ছুঁয়েছেন তিনিই। ২০১০ এর জানুয়ারি থেকে ২০১৭ এর ডিসেম্বর পর্যন্ত এই ফরমেটে সর্বাধিক রান সংগ্রাহকের তালিকায় আমলার অবস্থান দুইয়ে। তার উপরে আছে শুধু ভিরাট কোহলি। তবে কোহলি আমলার থেকে ৪৭ টি ইনিংস বেশি খেলেছিলেন।
হাশিম আমলা মোট ১৮১ ওডিআই খেলে ৪৯.৪৬ গড়ে রান করেছেন ৮,১১৩ এবং ১২৪ টেস্ট খেলে রান করেছেন ৯,২৮২, গড় ৪৬.৬৪। এই দুই ফরমেটে একই সাথে ৮০০০ এর উপরে রান আর ৪৫ এর বেশি গড় আছে শুধু দুইজনের। প্রথমজন তারই স্বদেশী এবিডি ভিলিয়ার্স আর পরের জন আমলা নিজেই।
হাশিম আমলা শুধু টেস্ট আর ওডিআই না, টি২০ তেও সমানভাবে সফল ছিলেন, ছিলেন কার্যকরীও। ১৩০ এর উপরে স্ট্রাইক রেটে টি২০ ফরমেটে ১০০০ রান আছে মাত্র ৪ জন দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটসম্যানের। হাশিম আমলা তাদের মধ্যে একজন। ৪৪ ম্যাচে ৮ অর্ধশতক, ১৩২.০৫ স্ট্রাইক রেট আর ৩৩.৬০ গড়ে মোট রান করেছেন ১,২৭৭। সর্বোচ্চ ইনিংসটি অপরাজিত ৯৭ রানের।
শুধু তিন ফরমেটেই সমান কার্যকরী ছিলেন না আমলা, সমানভাবে কার্যকরী ছিলেন যেকোনো কন্ডিশনে, যেকোনো প্রতিপক্ষের বিপক্ষেও।
টেস্ট ক্রিকেটে তার ৪০ এর নিচে গড় আছে শুধু শ্রীলংকা আর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ইনিংসই খেলেছিলেন মাত্র ২ টি। প্রতিপক্ষের বিচারে তার গড় তুলে ধরা হলো নিচের সারণীতে।
প্রতিপক্ষ | গড় | রান | ৫০/১০০ |
বাংলাদেশ | ৬৬.৮৮ | ৬০২ | ১/৩ |
নিউজিল্যান্ড | ৬০.৭৩ | ১১৫৪ | ৭/৪ |
ইংল্যান্ড | ৫২.৮৬ | ১৯০৩ | ৭/৬ |
পাকিস্তান | ৫২.০৯ | ১১৪৬ | ১০/২ |
একদিনের ক্রিকেটেও তার গড় ৩৭ এর নিচে আছে শুধু অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে, ৩৭-৪০ এর মধ্যে গড় ভারত আর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। বাকিদের বিপক্ষে গড়টা অন্তত ৪২ এর উপরে। সর্বোচ্চ গড় আয়ারল্যান্ডের সাথে, ৮৮.৫০।
অন্তত ৫ ম্যাচ খেলেছেন এমন কোনো প্রতিপক্ষের বিপক্ষে হাশিম আমলার টি২০ স্ট্রাইক রেট সর্বনিম্ন ১১৯.২০, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৬ ইনিংসে ৭২ গড় আর ১৫৬.৫২ স্ট্রাইক রেটে আমলার সংগ্রহ ২৮৮ রান।
অ্যাওয়ে ম্যাচেও হাশিম আমলার ব্যাট চলেছে দুরন্ত গতিতে।
প্রতিপক্ষের মাটিতে দারুনভাবে সফল দক্ষিণ আফ্রিকান এই ব্যাটসম্যান। আরব আমিরাতে পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলা ৩ ম্যাচে হাশিম আমলার গড় ৭৮.৪০। ৬২.৭৩ আর ৬০.৩৩ গড় আছে ভারত ও ইংল্যান্ডের মাটিতে। এশিয়ার বাইরের কোনো ব্যাটসম্যানের ভারতের মাটিতে টেস্ট গড় ৬০.৩৩ অবশ্যই তাক লাগাতে বাধ্য। আমলার নিজের দেশে টেস্ট গড়টা ৪৬.৬৮ আর অস্ট্রেলিয়াতে ৪৫.৮৭। ওভারালি হোম-অ্যাওয়ে দুই জায়গাতেই তার পারফরমেন্স অসাধারণ।
২০০৭ এর জানুয়ারি থেকে ২০১৪ এর ডিসেম্বর পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকা টানা ১৫ অ্যাওয়ে সিরিজে অপরাজিত ছিলো। সেই ১৫ সিরিজে মোট ম্যাচ ছিলো ৩৫ টি যার মধ্যে হাশিম আমলা খেলেছেন একটি বাদে বাকি সব। গ্রায়েম স্মিথ এই সময়ের মধ্যে খেলেছেন ৩২ ম্যাচ, ডি ভিলিয়ার্স ৩৫। এই সময়ের অ্যাওয়ে ম্যাচগুলোতে হাশিম আমলা এগিয়ে ছিলেন সবদিক থেকে।
ব্যাটসম্যান | ম্যাচ | রান | গড় | শতক |
আমলা | ৩৪ | ৩৩০১ | ৬২.২৮ | ১২ |
স্মিথ | ৩২ | ৩১২৬ | ৫৭.৮৮ | ১১ |
ভিলিয়ার্স | ৩৫ | ২৮৯০ | ৬০.২০ | ৭ |
ওডিআই ক্রিকেটে হোম-অ্যাওয়ে-নিরপেক্ষ ভেন্যুতে হাশিম আমলার গড় যথাক্রমে ৫৪.৬৫, ৪৬.৮৩ এবং ৪৪.৮২। টি২০ তেও এই ৩ জায়গাতে আমলার গড় ৩২ এর উপরে। স্ট্রাইক রেট হোম আর অ্যাওয়েতে যথাক্রমে ১৩৭.২৪ আর ১৩৪.৩১। নিরপেক্ষ ভেন্যুতে স্ট্রাইক রেট ১২৫.২৯।
নিজের পজিশনে সবসময়ই সেরা ছিলেন হাশিম আমলা।
একদিনের ক্রিকেটে অন্তত ১০০ ইনিংস ওপেন করেছে এমন ওপেনারদের মধ্যে হাশিম আমলার গড় ২য় সর্বোচ্চ। সবার উপরে আছে রোহিত শর্মা। ওপেনিং পজিশনে আমলার গড় ৪৯.৮৯, শচীনের ৪৮.২৯, দিলশানের ৪৬.০৪। ওপেনিংয়ে আমলার স্ট্রাইক রেট ৮৮ এর উপরে। মোট ১৭৫ ইনিংস ওপেন করে আমলার মোট সংগ্রহ ৮,০৮৩ রান।
টি২০ ক্রিকেটে সব ম্যাচই খেলেছেন ওপেনিং পজিশনে। টেস্ট ক্রিকেটে প্রিয় জায়গা ছিলো ওয়ান ডাউন। ওয়ান ডাউনে ১০৬ ম্যাচের পর সর্বোচ্চ ২৫ ম্যাচ খেলেছেন ৪ নম্বর পজিশনে। টেস্টে তিন নাম্বার ব্যাটসম্যান হিসেবে হাশিম আমলার সংগ্রহ করা ৭,৯৯৩ রান ৪র্থ সর্বোচ্চ। তার উপরে থাকা ৩ জন হচ্ছেন কুমার সাঙ্গাকারা, রাহুল দ্রাবিড় আর রিকি পন্টিং।
অধিনায়ক হিসেবে খুব বেশিদিন খেলেননি আমলা।
অনূর্ধ্ব ১৯ দলের অধিনায়কত্ব তো পেয়েছিলেন একেবারে শুরু দিকেই, ২০০২ সালে। ২০১১ এর জুনে দক্ষিণ আফ্রিকা ওডিআই এবং টি-টোয়েন্টি দলের সহ-অধিনায়কত্বের দায়িত্ব পান। সেখানে থেকেই ২ টি টি২০ এবং ৯ টি ওডিআই ম্যাচে অধিনায়কত্ব করেন আমলা। এরপর স্বেচ্ছায় সহ-অধিনায়কের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ান।
২০১৪ সালে পান টেস্ট দলের দায়িত্ব। তার অধিনায়কত্বে দক্ষিণ আফ্রিকা খেলে মোট ১৪টি টেস্ট। এই ১৪ টেস্টে ৪ জয় আর ৬ ড্র এর বিপরীতে দল হারে ৪ ম্যাচ। অধিনায়ক হিসেবে হাশিম আমলার ব্যাক্তিগত পরিসংখ্যানও ছিলো ভালো। ৪৯.৬৬ গড়ে এই ১৪ ম্যাচে আমলা রান করেন ৮৯৪।
হাশিম আমলা মোট ১২৪ টেস্টে তিন অংকের ম্যাজিক ফিগার ছুঁয়েছেন ২৮ বার, ওডিআই এর ১৮১ ম্যাচে ছুঁয়েছেন ২৭ বার। আন্তর্জাতিক টি২০ তে না থাকলেও টি২০ ক্রিকেটে আমলার আছে ২ টি শত রানের ইনিংস। দুটিই আবার ২০১৭ আইপিএলে কিংস ইলেভেনের পক্ষে।
২৩৮টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচে আমলার সংগ্রহ ৪৮.৫২ গড়ে ১৭ হাজার ৮০৯ রান, শতক ৫২ টি আর অর্ধশতকের সংখ্যা ৮৮। ২৪৩টি লিস্ট-এ ম্যাচে ৩০ শতক, ৫২ অর্ধশতক আর ৪৫.১২ গড়ে মোট সংগ্রহ ৯,৯৭৩ রান। লিস্ট-এ তে আর ২৭ রান করলেই ছুঁয়ে ফেলতেন ১০ হাজারের মাইলফলক।
ক্রিকেট মাঠে শান্ত শিষ্ট, নম্রতা-ভদ্রতার দিক দিয়ে হাশিম আমলার থেকে এগিয়ে থাকবে না কেউই। হাশিম আমলাকে মাঠে দেখলেই মনে হতো ক্রিকেটটা আসলেই “জেন্টলম্যান’স গেম”। ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে সাঙ্গাকারার ক্যাচ নিয়ে ধারাভাষ্যকার ডিন জোনসের মুখ থেকে শুনতে হয়েছিলো “টেরোরিস্ট” শব্দটি। “…The terrorist has got another wicket“- এমন ভাষ্যের পরও আমলা ছিলেন আমলার মতোই। সব প্রশ্নের জবাব দিয়ে গেছেন ব্যাট হাতে। আদর্শ একজন ক্রিকেটারের পাশাপাশি হাশিম আমলা ছিলেন একজন আদর্শ ভদ্রলোক আর আদর্শ ধার্মিক ব্যাক্তিও। ভিরাট কোহলি, স্টিভ স্মিথ, এবিডি ভিলিয়ার্সদের মতো তারকা খ্যাতি হয়তো তার নেই, তবে সত্যিকারের ক্রিকেট প্রেমীদের কাছে তিনি যুগ যুগ বেঁচে থাকবেন ক্রিকেট মাঠের ‘লিওনার্দো দ্যা ভিঞ্চি’ হয়েই।
Feature Image: miketurner.co.za