১৯শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

ক্রিকেট ইতিহাসের এক ট্র্যাজিক হিরো

প্রতিবেদক
Mugdha Saha
শনিবার, ৪ সেপ্টেম্বর , ২০২১ ১০:৩০

১৯৯৯ বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল। অস্ট্রেলিয়ার ২১৪ রানের টার্গেটে ব্যাটিং করছে দঃআফ্রিকা। জয়ের জন্য দরকার ৬ বলে ৯ রান। ডেমিয়েন ফ্লেমিংইয়ের প্রথম বল কভার ড্রাইভে ৪। দরকার ৫ বলে ৫ রান। সহজ সমীকরণ, ২য় বল ওয়াইড লং অফ দিয়ে দৃষ্টিনন্দন ৪। ম্যাচ টাই। ৪ বলে ১ রান দরকার জয়ের জন্য , আর প্রথমবারের মত স্বপ্নের ফাইনাল থেকে একটু খানি দূরে আফ্রিকা। এপর্যন্ত সবই ঠিক ছিল। ৩য় বলে মিড অনে ঠেলে দিলেন ক্লুজনার, তবে বল সরাসরি লেহম্যানের হাতে। ওইদিকে ডোনাল্ড করতে গেলেন পাগলামি রানের জন্য, তবে এই যাত্রায় নিশ্চিত রান আউট থেকে বেঁচে গেলেন।

৪র্থ ডেলিভারি ছিল ব্লক হোলের বল, মিড অনে ঠেলে দিয়ে দৌড় দিলেন ল্যান্স ক্লুজনার কিন্তু সরাসরি স্টিভ ওয়াহর হাতে বল গেল, তা খেয়াল করার বিন্দু মাত্র দরকার মনে করলেন না ক্লুজনার। একি হল!!!! খ্যাপাটে দৌড়ে ডোনাল্ডকে ডাকলেন ক্লুজনার মাঝ মাঠে এসে। দুই ব্যাটসম্যান আর বোলার একই প্রান্তে । এদিকে ডোনাল্ড এর ব্যাটও হাত থেকে পড়ে গেল কি করবেন ডোনাল্ড?

হতভম্ব শেষ ব্যাটসম্যান ডোনাল্ড কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলেন। যেহেতু দৌড়াতে হবে তাই দৌড় দিলেন কিন্তু না! সব শেষ। স্বপ্নের ফাইনাল এখানেই শেষ। সে বিশ্বকাপের নায়ক ক্লুজনারের ছোট্ট একটি ভুলে। স্টিভ ওয়াহ বল দিলেন ফ্লেমিং এর কাছে, ফ্লেমিং দিলেন গিলক্রিস্টের কাছে , বিদায় নিতে হল দঃ আফ্রিকাকে বিশ্বকাপ থেকে। সেদিন জন্ম হয়েছিল ক্রিকেট ইতিহাসের এক অন্যতম সেরা ট্র্যাজেডি ম্যাচের।

ল্যান্স ক্লুজনার হয়ে যায় এক ট্র্যাজিক হিরোতে! অস্ট্রেলিয়া পৌঁছে যায় ফাইনালে, কারন গ্রুপ পর্বে এগিয়ে থাকায়।

এরপর ক্লুজনার এক নিরাপত্তা-কর্মী নিয়ে মাঠ ত্যাগ করেন কারন মাঠে ঢুকে পড়া দর্শকদের কবল থেকে বাঁচতে।

১৯৯৯ বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ রান এসেছিল রাহুল দ্রাবিড়ের ব্যাট থেকে। ব্যাটিংএ বড় বড় মহারথীদের ছাপিয়ে ’৯৯-এর বিশ্বকাপে বোলারদের দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার এই ল্যান্স ক্লুজনার। কারন কি জানেন ? কোন ভাবে আউট করা যাচ্ছিল না এই অলরাউন্ডারকে। বিশ্বকাপের প্রথম ছয়টি ম্যাচের পাঁচটিতে ব্যাট হাতে ১৬৪ রান করেন। ক্লুজনার এই পাঁচটির কোন ম্যাচে আউট হননি।

ওই সময়ে ওয়ানডে ক্রিকেটে টানা আউট না হওয়ার এক অনন্য রেকর্ডই করে বসেছিলেন তিনি। বিশ্বকাপের ছয়টি ম্যাচসহ টানা ১১টি ম্যাচে অপরাজিত থেকে ৩৯৩ রান করেন। চরম নাটকীয় ও শ্বাসরুদ্ধকর সেমিফাইনালে ১৬ বলে ৩১ রান করে অপরাজিত থাকলেও মুহূর্তের ভুলে তিনিই ছিলেন সেই ম্যাচের ট্র্যাজেডির নায়ক। ৯৯ বিশ্বকাপে শুধু ব্যাট হাতেই নয়, বল হাতেও ১৭ উইকেট শিকার করেন বিশ্বের অন্যতম সেরা এই অলরাউন্ডার । তাই ৯৯ বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার তার হাতে উঠে অবধারিত ভাবে।

১৯৯৬ সালে অভিষেক হওয়া এই অলরাউন্ডার ২০০৪ সালে অবসর নেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে। ১৭১ ওয়ানডে ম্যাচে ১৩৭ ইনিংসে ৩৫৭৬ রান করেন সর্বোচ্চ ১০৩*। গড় ৪১। ২ টি সেঞ্চুরি ও ১৯টি অর্ধশত রান। বোলিংয়ে ১৭১ ম্যাচে ১৯২ উইকেট শিকার করেন গড় ২৯ । ইকোনমি ৪.৭০। ৬ বার ৫ উইকেট নেন।

টেস্টে ক্রিকেটে ৪৯ ম্যাচে ১৯০৬ রান করেন। সর্বোচ্চ ১৭৪ । গড় ৩২। সেঞ্চুরি ৪টি আর অর্ধশত ৮ টি। বোলিং এ ৪৯ ম্যাচে ৮৪ ইনিংসে ৮০ উইকেট নেন। সবোর্চ ৬৪/৮ , গড় ৩৭।

২০০০ সালে উইজডেন কর্তৃপক্ষ তাঁকে উইজডেন বর্ষসেরা ক্রিকেটার হিসেবে ঘোষণা করে।

আজকের এই দিনে ১৯৭১ সালের ৪ সেপ্টেম্বরে নাটাল প্রদেশের ডারবানে জন্মগ্রহণ করেন দক্ষিণ আফ্রিকার অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। জন্মদিনে ক্রিকেটখোরের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা । শুভ জন্মদিন লিজেন্ড।

Happy_birthday_Lance_Klusener

Stay_Cricketkhor

মতামত জানান :