২০১১ বিশ্বকাপে ১১ মার্চ চট্টগ্রামে বাংলাদেশ মুখোমুখি হয় ইংল্যান্ডের! পুরো সাগরিকা বুনোউল্লাসে মেতেছে,মাতবে নায়-বা-কেন ! চাটগাঁইয়ার মাঠে বাংলাদেশের এটাই যে প্রথম বিশ্বকাপ।
যথারীতিমত দুই দলের অধিনায়ক মাঠে নামেন টস করতে, টস জিতে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ দেন অতিতিদের! উইলোতে এসে কাপ্তান এন্ড্রো এবং উইকেট-কিপার মেট প্রিয়র খুব সুন্দর ব্যাট করছিলেন, দলীয় ৩১রানের মাথায় মুশফিক এর বুদ্ধিমতায় প্রথম উইকেট হারায় ইংলিশরা! এরপর যথাক্রমে ফিরে যান কাপ্তান এন্ড্রো ও ইয়ান বেল ড্রেসিংরুমে!
৫৩-৩ উউইকেট হারিয়ে ইংলিশরা তখন ভয়ংকর সংকটে! স্পিন ঘূর্নিতে কোনভাবেই দাঁড়াতে পারছিল না ইংলিশরা! ক্ষণিকের জন্য মনে হচ্ছিলো এই বুঝি ১৬০/৭০ এ আটকে রাখা যাবে!
এরপরে আলোটা জোনাথন ট্রট ও ইয়ন মরগান কেড়ে নেন!কিছুক্ষণ আগে যে ভাবনাটা ভেবেছিলো সাগরিকা সহ বাংলাদেশ সেটা এই দুই ইংলিশ আরো দীর্ঘায়ত করে। ক্রিজে কামড়ে ধরে রাখে দুজন, করেন অর্ধশত দুজনে! দলীয় স্কোর ও তখন ১৬০ রান প্লাস! দু’জনের পাটনারশীপ যখন বড়স্কোরের পথে তখন এই ১০৯রানের পাটনারশীপে ছক্কা নাঈমের স্পিনে স্কয়ার লেগে ইমরুল কায়েসের কাছে ধরা দেন মরগান! এরপর ট্রট ও বেশিক্ষণ তিতু হতে পারেননি! ব্যক্তিগত ৬৭ ও দলীয় ১৮২তে সাকিবকে লং অফে খেলতে গিয়ে সহজ ক্যাচ তুলে দে জুনায়েদ সিদ্দিককে! এরপর আর বলার মত কেউ স্কোর করতে পারেননি, আশা যাওয়া মিছিলে বদ্ধ পরিকর যেন।
নাঈম, রাজ্জাক, সাকিবদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে ৪৯.৪ ওভারেই ২২৫ রানে অলআউট হয়ে যায় ইংল্যান্ড। ৪র্থ উইকেটে জনাথন ট্রট ও এউইন মরগানের ১০৯ রানের জুটিতেই ২০০ পেরোয় ইংল্যান্ড। ট্রট ৯৯ বলে ৬৭ এবং মরগান ৭৩ বলে ৬৩ রান করেন। আবদুর রাজ্জাক ১০ ওভার বল করে ২ মেডেনসহ ৩২ রান দিয়ে ২ উইকেট নেন। এ ছাড়া নাঈম ইসলাম ৮ ওভারে ২৯ রানে ২ এবং সাকিব আল হাসান ১০ ওভারে ৪৯ রানের বিনিময়ে ২ উইকেট নেন।
২২৬ রানের টার্গেট! বিশ্বকাপের মতো মঞ্চে যথেষ্ট চ্যালেঞ্জিং। সেই লক্ষ্যেই ব্যাট করা শুরু করেন তামিম ইকবাল ও ইমরুল কায়েস। ইমরুলের দেখেশুনে ধীরগতির ব্যাটিং এবং তামিমের ঝোড়ো সূচনায় ৮ ওভারেই কোনো উইকেট না হারিয়ে ৫০ পেরোয় বাংলাদেশ। এরপর দলীয় ৫২ রানে তামিম বিদায় নেন ২৬ বলে ৫টি চারের সাহায্যে ৩৮ রান করে। জুনায়েদ সিদ্দিকী ও রাকিবুল হাসান দ্রুত ফিরে গেলে চাপে পড়ে বাংলাদেশ। এর পরই ব্যাটিংয়ে নামেন অধিনায়ক সাকিব। সাকিব আর ইমরুল দেখেশুনে খেলে সেট হতে থাকেন এবং দলের রানের চাকাও সচল রাখেন। সাগরিকার উল্লাসে সেদিন আমিও সঙ্গী, ছন্নছাড়া উল্লাস বাঁধে নর্থ-ইস্টের গ্যালারি! সে উল্লাস বেশিক্ষণ রইল কই; ৩১তম ওভারে ইমরুল দুর্ভাগ্যজনক রানআউট হলে ৮২ রানের জুটি ভাঙে। এরপর টেল এন্ডাররা আসা-যাওয়ার মিছিলে যোগ দেয়। বাংলাদেশ ১৫৫/৩ থেকে ১৬৯/৮ হয়ে যায়। শেষ ১৪ রানেই ৫ উইকেট নেই। এই যে- চিরচেনা বাংলার ক্রিকেট! এই দৃশ্যটা আজও অহরহ দেখা যায়, এটা হতে আমরা কবে বের হয়ে আসব বলুন তো! আচ্ছা যাক মাঠের খেলায় আসি, আশা যাওয়ার মিছিলে কেবল এক প্রান্ত আগলে রাখেন মাহমুদউল্লাহ।
এত কাছের ম্যাচটাকে তখন অনেক দূরের মনে হতে থাকে। স্টেডিয়াম থেকে দর্শকেরা চলে যেতে শুরু করে। অনেকেই টেলিভিশনের সামনে থেকে উঠে যান। কিছু মানুষ তখনো বসে থাকেন। দলটা যে আমাদের বাংলাদেশ! জিতলেও বাংলাদেশ, হারলেও বাংলাদেশ।
জিততে তখনো দরকার ৬২ বলে ৫৭ রান। হাতে আছে মাত্র ২ উইকেট।
১০ নম্বরে ব্যাটিংয়ে নামলেন বোলার শফিউল ইসলাম। কেউ কি তখন আর জেতার আশায় ছিল? অনেকেই জেতার আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু তখনো যে দেখানোর অনেক কিছু বাকি ছিল রিয়াদ-শফিউলদের। ৪১ ওভারে দলের রান ১৭১/৮। জিততে আর ৫৪ বলে ৫৫ রান দরকার। ৪২তম ওভার করতে এসেছেন গ্রায়েম সোয়ান। ওভারের ২য় বলে মাহমুদউল্লাহর চার, ৪র্থ বলে শফিউলের চার এবং ওভারের শেষ বলে লং অনের ওপর দিয়ে শফিউলের ছয় এখনো ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে শিহরণ জাগায়। সেই ওভারেই আসে ১৬ রান।
৪৬তম ওভারে ২০০ পেরোয় বাংলাদেশ।
জয়টা তখন কাছ থেকে দেখা যাচ্ছে। রিয়াদ-শফিউল মাথা ঠান্ডা রেখে খেললেই সম্ভব।
শেষ ৪ ওভারে দরকার ২২ রান। ৪৭তম ওভার বল করতে আসেন টিম ব্রেসনান। সেই ওভারের ২য় ও ৫ম বলে বাউন্ডারি মারেন শফিউল। ৩ ওভারে তখন মাত্র ১২ রান প্রয়োজন। এরপর ২ ওভারে ৫ রান।উত্তেজনায় কাঁপছে পুরো বাংলাদেশ।
৪৯তম ওভারে বল করতে আসেন ব্রেসনান প্রথম ৫বলে নেন দু’রান! ওভারের শেষ বল, অফসাইডে ফিল্ডারদের সার্কেল বন্ধী করে লেগ সাইডে পাওয়ারপ্লের আইন পূর্ন করে! উনপঞ্চাশ তম ওভারের শেষ বল করতে আসেন ব্রেসনান,লো ফুলটসে মাহমুদউল্লাহর কাভার ড্রাইভ।
এরপর ইতিহাস! ড্রেসিংরুম থেকে বাংলাদেশের সব ক্রিকেটাররা দৌড়ে আসে। সাগর পাড়ের চট্টগ্রাম স্টেডিয়ামে বয়ে যায় দর্শকদের ‘বাংলাদেশ’ ‘বাংলাদেশ’ গর্জনের উত্তাল ঢেউ!
অথচ ক’জনে বা ভেবেছিল এই ম্যাচ বাংলাদেশ জিতবে!!