২২শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপ-২১ প্রোফাইল : মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ

প্রতিবেদক
ডেস্ক নিউজ
রবিবার, ১৭ অক্টোবর , ২০২১ ২:২৮

বিশ্বকাপের মজনু মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ

লেখক: সাইদুর রহমান শান্ত

আজ একটা গল্প দিয়ে শুরু করি । গল্পটি ঠিক গল্প নয়, ক্রিকেটের নন্দিত ইতিকথার এক খন্ডিত অধ্যায়। স্নায়ু টেনে ধরা এক চোয়াল চাপা সংগ্রামের অমৃত বিবরণ।

১৬ ই মার্চ ২০১৮। সাপুড়ে ও নাগীন দ্বৈরথে মুখরিত কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়াম। রেকর্ড ২১৫ রান তাড়া করে জয়ের রেশ কাটতে না কাটতেই ফের আরও একটি উত্তেজনা পূর্ণ ম্যাচে লঙ্কানদের মুখোমুখি বাংলাদেশ। ১৫৯ রানে লক্ষ্যমাত্রা তাড়া করতে গিয়ে শেষ ওভারে বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিলো ১২ রান। ইসুরু উদানার পর পর দু’টি বাউন্সার’ই মিস করেন মুস্তাফিজুর রহমান। দ্বিতীয় বলে কিপারের গ্লাভসে বল রেখে রান নিতে গিয়ে রান আউটে কাঁটা পরেন ফিজ।
ইসুরু উদানার দ্বিতীয় বাউন্সারটি লেগ আম্পায়ার প্রথমে নো বল সংকেত দিলেও পরবর্তীতে লঙ্কান ক্রিকেটারদের আবেদনের প্রেক্ষিতে আম্পায়ার তার সিদ্ধান্ত তুলে নেন। তাতেই চটে যান মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। অন্যদিকে ড্রেসিংরুম থেকে বেরিয়ে আসেন কেপ্টেন সাকিব আল হাসান। সতীর্থ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও মুস্তাফিজকে মাঠ ছেড়ে উঠে আসার তাগিদ দেন সাকিব আল হাসান।

উত্তেজনায় টইটম্বুর ম্যাচে এ ঘটনা বাড়তি মাত্রা যোগ করে। সাকিবের আবেদন উপেক্ষা করে সংকল্পের দৃঢ় আবরণে নিজেকে সজ্জিত করে আরেকবার মধ্যমাঠের দিকে পা বাড়ান সাইল্যান্ট কিলার খ্যাত মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। চেহারায় আকুঞ্চিত দৃঢ়তার আভা। রিয়াদ প্রস্তুত হচ্ছেন ইসুরু উদানাকে মোকাবিলা করতে। পেরুতে হবে দুর্গম গিরি কান্তার মরু। তবেই পৌঁছানো যাবে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে। চার বলে প্রয়োজন বারোটি রান। সতীর্থদের জন্য অনুকরণীয় উদাহরণ স্থাপন করতে ত্রুটিহীনত পদচারণায় অতুলনীয় মনোসংযোগে ইসুরু উদানার পঞ্চম বলটিকে মিড উইকেটের উপর দিয়ে পাঠিয়ে দেন গ্যালারিতে। এক বল হাতে রেখে জয়ের বুনো উল্লাসে মাতেন রিয়াদ। নিদহাস ট্রফির ফাইনালে বাংলাদেশ। আমরা দর্শকরা তার দায়িত্ব সচেতনতার কাছে শ্রদ্ধায় অবনত।

৪ ই ফেব্রুয়ারি ১৯৮৬ সালে ময়মনসিংহে জন্ম নেওয়া মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পথচলা শুরু হয় ২০০৭ সালে। ২০০৭ সালের ২৫ জুলাই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওডিআই ক্রিকেটে অভিষেক হয় রিয়াদের। একই বছর ১লা সেপ্টেম্বর কেনিয়ার বিপক্ষে হয় টি টুয়েন্টি অভিষেক। সেই থেকে এখন পর্যন্ত লাল সবুজের জার্সি গায়ে খেলে যাচ্ছেন তিনি। এবছর টেষ্ট ক্রিকেটকে বিদায় বললেও ২০ ওভারের চটজলদি ক্রিকেটে দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি।

চটজলদি ক্রিকেটে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ১৪ বছরের ক্যারিয়ারে ম্যাচ খেলেছেন ১০২ টি। ২৪.২৬ গড়ে রান করেছেন ১৭৭১। দল জয় পেয়েছে এমন ৩৮ ম্যাচে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন রিয়াদ। যেখানে ৩৬.৬১ গড়ে রান করেছেন ৬৫৯। যা তার ওভারঅল ক্যারিয়ার পারফরম্যান্স থেকে কয়েক ধাপ এগিয়ে।

টি-টুয়েন্টি মানেই যেন চার ছক্কার ফুলঝুরি। রানের গতি বাড়িয়ে প্রতিপক্ষকে চাপে ফেলার ক্ষেত্রে অন্যতম কার্যকর ভূমিকা পালন করে বাউন্ডারি ওভারবাউন্ডারি ।
বাংলাদেশের হয়ে টি২০ তে সর্বোচ্চ ছয় হাঁকানো ব্যাটসম্যান সাইল্যান্ট কিলার খ্যাত মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। তিনি লাল সবুজের জার্সিতে এখনও পর্যন্ত ১০২ টি টি২০ ম্যাচে ৯৪ বার ব্যাট করার সুযোগ পেয়ছেন, দেশের হয়ে সর্বোচ্চ ৫৪ টি ওভার বাউন্ডারির বিপরীতে, বাউন্ডারি হাঁকিয়েছেন ১৩৮ টি।

উইলো হাতে রম্য রচনার পাশাপাশি দলের প্রয়োজনে মাঝে সাঝে বলও করেন রিয়াদ। বল হাতে ৭.১৮ ইকোনমিতে উইকেট নিয়েছেন ৩৩ টি। বোলিং গড় ২৮.৬। সবুজ গালিচায় অর্জুন জন্টি রোডস ফিল্ডিংয়ের গুরুত্ব নিয়ে ক্রিকেট প্রেমীদের একটা স্বচ্ছ ধারণা দিতে পেরেছিলেন। তাই এখন আর ফিল্ডিং বিষয়টা তাচ্ছিল্যের নয়। এখন ব্যাটিং-বোলিং এর ন্যায় ফিল্ডিংও সমান গুরুত্ব পায়। রিয়াদ অবশ্য এখানেও চার রান আউটের বিপরীতে ৩৯ টি ক্যাচ লুফে নিয়ে পাশ মার্ক পাবেন।

ব্যাটিং, বোলিং কিংবা ফিল্ডিং সবকিছু ছাপিয়ে অধিনায়ক রিয়াদ। ২০১৯ সাল থেকে এই পর্যন্ত ২০ টি টুয়েন্টিতে নেতৃত্ব দিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে জিতিয়েছেন ১২ টি ম্যাচে। দুই বছরের অধিনায়কত্বের অধ্যায়ে টি টুয়েন্টি ফরম্যাটে বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। আসন্ন বিশ্বকাপে তার নেতৃত্বে ভয়ডরহীন বাংলাদেশ দলকে দেখার অপেক্ষায় গোটা দেশ।

দলের প্রয়োজনে ব্যাট কিংবা বল হাতে রিয়াদের অবদান অনস্বীকার্য। তবে ক্যারিয়ারের বেশিরভাগ সময়টাই কাটিয়েছেন পার্শ্ব চরিত্রে। অন্যকারও এভারেস্ট ছুঁয়া পারফরম্যান্সে ঢাকা পড়েছে তাঁর অণুগল্পগুলো। তাই অনেকটা আক্ষেপ নিয়েই সাবেক টি টুয়েন্টি ক্যাপ্টেন মাশরাফি বিন মুর্তজা বলেন , ‘রিয়াদ অনেকটা ভিভিএস লক্ষ্মণের মতো, প্রয়োজন হচ্ছে না তো রান করছে না। কিন্তু যখন দলের প্রয়োজন, রিয়াদই সেই ব্যক্তি যে সবসময় এগিয়ে আসে।’ মাশরাফি আরও যোগ করেন, “তাকে ২০ বলে ৩৫ রান বা ২৫ বলে ৪০ রানের ইনিংস খেলতে হয়। এমন ইনিংস একজন মানুষ প্রতিদিন পারে না। কিন্তু ও যখনই একদিন না পারে তখন ওকে ওর মতো করেই সমালোচনা শুনতে হয়। কোচ, দর্শক বা গণমাধ্যম থেকে সমালোচনা শুনে ও বলতে পারত আমিও তো ওপরে খেলতে পারি একজন সিনিয়র ক্রিকেটার হিসাবে। কিন্তু রিয়াদ কখনোই সেটা বলেনি। আমি মনে করি, বাংলাদেশ দলের জন্য ওর ত্যাগ স্বীকার অনেক

বহুমাত্রিক ময়না তদন্তের রিপোর্ট। বোতাম টিপে কম্পিউটারে রান উইকেটের পরিসংখ্যান কিংবা ইতিহাসের পুরানো পাতা একপাশে রেখে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে মূল্যায়ন করতে গেলে তাঁর কীর্তি এভারেস্টের উচ্চতা ছাড়ানো। রিয়াদ শান্ত অথচ তার দৃঢ়চিত্ত মনোভাবে আমাদের অগাধ বিশ্বাস। তাঁর কাঁধে দায়িত্ব অনেক। আমরা জানি দলের ভাবমূর্তি গড়ে তুলতে তার ভূমিকা কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ। আমরা আশাবাদী তিনি নিশ্চয়ই আমাদের হাসির উপলক্ষ এনে দিবেন।

মতামত জানান :