১৩ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপ-২১ প্রোফাইল: সাকিব আল হাসান

প্রতিবেদক
ডেস্ক নিউজ
রবিবার, ১৭ অক্টোবর , ২০২১ ২:৩৫

সাকিব আল হাসান এবং বিশ্বকাপ!

রাউন্ড দ্য উইকেট থেকে ওভারের ৩য় বলটি নিয়ে বোলার যাচ্ছেন, আম্পায়ার কে অতিক্রম করলেন, বল করলেন এবং ব্যাটসম্যান পরাস্ত হলেন। এবং ক্লিন বোল্ড! বোলারের আর্মারে বিভ্রান্ত হয়ে উইকেট দিতে বাধ্য হলেন ব্যাটসম্যান। এক্ষেত্রে বোলারের নামটি মনে রাখবেন, রিমেম্বার দ্য নেইম……__??

আপাতত আপনি আপনার কল্পনায় ধরে নিন আপনি কোন পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হাতে নিতে পরীক্ষার হলে বসে আছেন। প্রশ্নপত্রে আপনাকে বলা হলো, আপনার মস্তিষ্কে উপরের এই ছোট্ট ক্রিকেটীয় কমেন্ট্রির পর কোন বাংলাদেশী বোলারের কথা সর্বপ্রথম মনে আসছে এবং কেনো মনে আসছে?

আপনি আপনার উত্তরপত্রে ছোট্ট করে উত্তর দিলেন, দ্য নেইম ইজ সাকিব আল হাসান, আবারো বলছি নামটা মনে রাখবেন, সাকিব আল হাসান। কারণটা, নিজের দিনে অগ্নি ফুলকি কিংবা অন্যের দিনকে নিজের দিনে পরিণত করতে চৌকস এই মাস্টার প্ল্যানার ঠিক এমন ভাবেই নিজ ক্যারিয়ারে ১২৪ বার মুহূর্তের সাক্ষী হয়েছেন, আরো নির্ধারিত করে বললে আন্তর্জাতিক টি২০ ক্রিকেটে ২৫ বার।

মাগুরার ফয়সাল নিজের দেড়যুগেরও বেশি যাপিত ক্রিকেটীয় জীবনে দুনিয়ার এপার থেকে ওপার ক্রিকেটের চর্মগোলক আর উইলো হাতে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন একটি দেশের একটি জাতির। যে জাতি কখনো তাকে জয়ের উল্লাসের নায়ক বানিয়ে, মিছিলে গলা ফাটিয়েছে। আবার কখনো দলের দুঃসময়ে কিছু করাতে না পারার দরুন নিজেদের আবেগের পুরোটা মিশিয়েই রাগ টা ঝেড়েছেন তার উপরই, তিনি কেনো পারলেন না এই নিয়ে?

তবে শত কথার পর কথা একটাই, যাকে ভালোবেসে হৃদয়ের মণিকোঠায় স্থান দেওয়া যায় তার সাথেই অভিমানের আর রাগটা করাই যায়। কারণ তিনি যে ভালোবেসে প্রতিদান দিবেন এটা তো জানাই। হ্যাঁ তিনি প্রতিদান দিয়ে চলেছেন, কখনো ৫ উইকেট কিংবা সেঞ্চুরি আবার কখনোবা দলের বিপদের মূহুর্তে বল হাতে প্রয়োজনীয় একটা বেকথ্রু এনে দিয়ে৷ আবার কখনোবা নিজের নামের সাথে লাল সবুজের এই দেশের পতাকা টা কে রেকর্ড বইয়ে তুলে প্রতিদানের সবটাই তিনি দিয়েছেন আমাদের মতো ক্রিকেট পাগল জতিকে। আর তাইতো তিনি ভালোবাসেন এবং সাথে ভালোবাসতে বাধ্য করান দেশের কোটি ক্রিকেট ভক্তকে।

মুটামুটি দুনিয়ার ক্রিকেট ফলা সব ভূমিতে খেলে ফেলা সাকিবের, আসন্ন এই বিশ্বকাপের ৪ ভেন্যুতে ফ্রেঞ্চেইজি ক্রিকেট লীগের সৌজন্যে খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে ১৫ ম্যাচের। এই ১৫ ম্যাচে সাকিব আহামরি কিছু করতে না পারলেও সাকিবের ১৫ ম্যাচের অভিজ্ঞতা হয়তোবা বাংলাদেশ দলকে এনে দিবে অন্যকিছুর বার্তা।

দুবাই, শারজাহ, আল আমিরাত, শেখ জায়েদ ক্রিকেট গ্রাউন্ডে সাকিবের খেলা ১৫ টি ফ্রেঞ্চেইজি ম্যাচের ১৫ ইনিংসে ব্যাট করে ২০ গড়ে সাকিবের রান ২১০ যেখানে তার সর্বোচ্চ রান ৫১ রান এবং ব্যাট হাতে ডট বলের পরিমান ২৯℅। বল হাতে ইকনোমিক্যাল সাকিব, ৭ ইকোনমিতে উইকেট নিয়েছেন ১০ টি এবং ডট বল আদায় করে নিয়েছেন ৩৭ শতাংশ।

আন্তর্জাতিক টি২০ ক্রিকেটে সাকিব আল হাসানের ক্যারিয়ারে সমৃদ্ধই বলা চলে। ৮৮ ম্যাচে খেলে সাকিব এখনো পর্যন্ত ব্যাট হাতে অর্জন করেছেন ১৭৫০ (১৭৬৩) এরও উপরে রান আর বল হাতে নিয়েছেন একশো (১০৬) ছাড়ানো উইকেট। যেখানে সাকিবের অর্ধশত রয়েছে ৯ টি এবং ৫ উইকেট নিয়েছেন ১ বার।

তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে অন্য জায়গায়, টি২০ বিশ্বকাপ ইতিহাসে সাকিব ম্যাচ খেলেছেন ২৫ টি। যেখানে সাকিব ব্যাট হাতে করেছেম ৫৫০+ রান এবং বল হাতে নিয়েছেন ৩০ টি উইকেট। এইখানেই রয়েছে টুইস্ট। টি২০ বিশ্বকাপে ৫০০+ রান এবং ৩০ কিংবা ৩০+ উইকেট নেওয়ার কৃতিত্ব রয়েছে মাত্র দুজনের, একজন সাকিব আল হাসান এবং আরেকজন শহীদ আফ্রিদি। তবে বর্তমান ক্রিকেট খেলে যাচ্ছেন এমন কেও এই লিস্টের ধারে কাছেও নেই!

বাংলাদেশ ক্রিকেট ম্যানেজমেন্টের বিশ্বকাপ ভাবনায় সাকিব আল হাসান কে নিয়ে প্রত্যাশা কতোখানি? সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। টপ অর্ডার ব্যর্থতা কে আড়াল করতে কিংবা মিডিল অর্ডারে দলের প্রাণভোমরা সাকিব যেকোন পজিশনেই খেলুক না কেনো সাকিব মাঠে থাকা মানে বাংলাদেশের জয়ের ক্ষীণ আলো ততোক্ষণ দেখতে পাওয়া এটা এক কথাই যেকোন ক্রিকেট বোদ্ধাই স্বীকার করতে বাধ্য।

তবে ১ বছরের বিরতির পর সাকিবের খেলার ধরণ কিংবা মানসিকতায় পরিবর্তন এসেছে বেশ। উইকেটে গিয়ে রানের জন্যে ছটফট করতে থাকা সাকিব কে নিয়ে ক্রিকেট ভক্তদের হয়তো চিন্তার ভাঁজ কিছুটা কপালে পড়লেও আশা করা যায় সাকিব এই সমস্যা থেকে বেড়িয়ে এসে খেলবেন নিজের সহজাত ক্রিকেট টাই। নিজের অমায়িক সব পারফরম্যান্সে জয়ের উল্লাসে মাতাবেন পুরো দেশকেই। ১৯য়ের বিশ্বকাপের পর আবারো নিজেকে প্রমাণের জন্যে বেছে নিবেন বিশ্বকাপের মতো রণমঞ্চ কেই।

বিশ্বকাপের ভেন্যুর কন্ডিশনে সাকিবের খেলার অভিজ্ঞতা এবং সাকিবের দেড় যুগের ও বেশি সময় বিভিন্ন দেশের বোলারদের মোকাবিলা এবং ওয়ার্ল্ড ক্লাশ সব ব্যাটসম্যানদের বিপক্ষে খেলার অভিজ্ঞতা বাংলাদেশ দলকে দিবে অন্য পর্যায়ের এডভান্টেজ। হয়তো সাকিব এইজন্যেই বিশ্বকাপে স্কোয়াডে এক অবিচ্ছেদ্য অংশ।

সব ভালো মন্দের হিসাব বাদ দিয়ে একজন ক্রিকেট ভক্ত হিসেবে সাকিব এবং বাংলাদেশের দলের কাছে চেওয়া এইটুকুই থাকবে সাকিব তার অভিজ্ঞতা এবং পারফরম্যান্সের সর্বোচ্চ টাই দিবে এবং বাংলাদেশ খেলবে নিজেদের সর্বোচ্চ দলীয় খেলাটাই। সেটা মাঠ কিংবা প্রতিপক্ষা এসব বিবেচনায় না এনে জয়ের জন্যেই লড়বে, এমনটাই থাকবে প্রত্যাশা।

মতামত জানান :