২৪শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপ-২১ প্রোফাইল: সৌম্য সরকার

প্রতিবেদক
ডেস্ক নিউজ
রবিবার, ১৭ অক্টোবর , ২০২১ ৩:০৬

সৌম্য সরকার! বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের একজন নিয়মিত পারফর্মার না হলেও নিয়মিত ক্রিকেটার বটে। আছেন টি২০ বিশ্বকাপের বাংলাদেশ স্কোয়াডেও। তাই আজ হালকা নেড়েচেড়ে দেখব সৌম্য সরকারের টি২০ ক্যারিয়ারের আগা-গোড়া, সাথে কেমন করতে পারেন বিশ্বকাপে সে নিয়ে থাকছে কিছুটা অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা। তো শুরু করা যাক।

প্রথমেই তার বিশ্বকাপ দলে জায়গা পাওয়া নিয়ে আলোচনা করা যাক। বিশ্বকাপে সুযোগ পেয়েছেন, তারমানে অবশ্যই ফর্মে আছেন সৌম্য, শেষ ম্যাচ গুলোতেও খেলেছেন অসাধারণ সব ইনিংস! না, একেবারেই না। মিনজাহুল আবেদিন নান্নু, হাবিবুল বাশার সুমনদের কাছে এসব বিবেচনার সময় কই? নামটাই তো যথেষ্ট, আর কী প্রয়োজন?

বিশ্বকাপের আগে অস্ট্রেলিয়া আর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ঘরের মাঠে বাংলাদেশ যে ১০টি টি২০ ম্যাচ খেলেছে, সৌম্য সেখানে থেকে খেলেছেন ৬টি। অস্ট্রেলিয়া সিরিজের পুরো ৫টি আর টানা ব্যর্থতা আর লিটনের ফেরার কারণে নিউজিল্যান্ড সিরিজে খেলতে পেরেছেন একটি। এই ৬ ম্যাচের প্রথম ৪ ম্যাচে সৌম্য খেলেছেন ওপেনিং-এ। অন্যপ্রান্তে তামিম ইকবাল স্লো খেলায় স্বাভাবিকভাবেই চাপে পরে গিয়ে আগে আগে আউট হয়ে গিয়েছেন ৪ ম্যাচেই।

  • ওহ তামিম ছিলো না? যাই হোক, নাঈম ছিলো- একই তো।
    এই চার ম্যাচে সৌম্যর রান ২, ০, ২, ৮; চাপে পড়ার জন্য যেটুকু সময় দরকার সেটুকু সময়ও থাকতে পারেননি ক্রিজে। বাকি ২ ম্যাচে খেলেছেন ৪ আর ৩ নাম্বার পজিশনে। পজিশন বদলালেও বদলায়নি পারফরমেন্স- ১৬ আর ৪ রান সংগ্রহ এই দুই ম্যাচে।

তবে এখানে দোষ সৌম্যর না। সৌম্যরা স্পোর্টিং উইকেটের প্লেয়ার। এমন স্লো পিচে খেললে এমন করাটা স্বাভাবিকই বটে। স্পোর্টিং উইকেটে সৌম্য অনন্য। এই দুই সিরিজের আগে জিম্বাবুয়ে সিরিজেই খেলেছেন ৫০, ৮ আর ৬৮ রানের ইনিংস; স্ট্রাইক রেট ১১১.১১, ১১৪.২৮ এবং ১৩৮.৭৭। তবে প্রশ্ন অন্যখানে, সৌম্য কী দেশের বাইরের উইকেটে বেশি সফল না কি শুধু জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই? এই উত্তর খুঁজতে খুঁজতেই মূল লেখায় ঢুকা যাক।

জিম্বাবুয়ে সিরিজের আগে নিউজিল্যান্ডে বাংলাদেশ খেলেছে ৩টি টি২০ ম্যাচ। হ্যামিল্টন আর অকল্যান্ডের ২ ম্যাচে সৌম্য মোট ১৫ রান করলেও নেপিয়ারে খেলেছেন ২৭ বলে ৫১ রানের ইনিংস, স্ট্রাইক রেট ১৮৮.৮৮। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে তাদের বিপক্ষে খেলা এই একটি ৫১ রানের ইনিংস বাদ দিলে খেলেছেন আরও ৬ ম্যাচ, রান করেছেন ৯৬, গড় ১৬। অন্যদিকে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে জিম্বাবুয়ের মাটিতে খেলেছেন ওই এক সিরিজই, গড় ৪২.০০। দেশের স্লো পিচে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১ ম্যাচ খেলে ৯ বলে ৪ রান করলেও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করেছেন ৭ ম্যাচে ১৭২ রান, গড় ৩৪.৪। এইটুকু আলোচনার পর ব্যক্তিগতভাবে আমি যে সিদ্ধান্তে আসব সেখানে আপনাদের না আসলেও চলবে, তবে আমার সিদ্ধান্তটা উল্লেখ না করেই এগোনো যাক। দেখা যাক হোম-অ্যাওয়ে-নিউট্রাল ম্যাচগুলোতে সৌম্য কেমন করেছে?

হোম-অ্যাওয়ের হিসাব করলে সৌম্য অ্যাওয়ে ম্যাচে, আসলেই ভালো করেছে। অ্যাওয়ে ম্যাচগুলো সৌম্য খেলেছেন ভারত, নিউজিল্যান্ড, শ্রীলংকা, দক্ষিণ আফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, পাকিস্তান এবং জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। আসলেই ভালো বলতে বুঝানো হয়েছে হোম ম্যাচ আর নিউট্রাল ভেন্যুর ম্যাচের তুলনায় ভালো করেছেন। গড়পড়তায়ও ভালোই বলা যায়।

ভেন্যু – ম্যাচ – রান – গড় – স্ট্রাইক রেট – ০/৫০
হোম – ২৭ – ৪৩৯ – ১৭.৫৬ – ১১৮.৯৭ – ৫/২
অ্যাওয়ে – ২২ – ৫৬৩ – ২৬.৮৬ – ১৩৭.৬৫ – ৩/৩

অ্যাওয়ে ম্যাচে সৌম্যর পারফরমেন্স আসলেই ভালো বলতে হয়। তবে বিশ্বকাপ তো অ্যাওয়ে ভেন্যুতে হবে না, তবে নিউট্রালে। নিউট্রাল ভেন্যুতে সৌম্যর পারফরমেন্স একেবারে যাচ্ছে-তাই। ১৩ ম্যাচ খেলে ৮.২৩ গড়ে রান করেছেন ১০৭; স্ট্রাইক রেটও অনেক কম, মাত্র ৮৫.৬০। এই ১৩ ম্যাচের মধ্যে টুর্নামেন্ট আছে ২টি আর দ্বিপাক্ষিয় সিরিজ ২টি। টুর্নামেন্ট দুটিতে নজর দেয়া যাক। প্রথমটি ২০১৬ টি২০ বিশ্বকাপ আর ২য়টি ২০১৮ এর নিদাহাস ট্রফি।

বিদেশের মাটিতে সৌম্য টি২০ বিশ্বকাপ খেলেছেন সেই ২০১৬ সালেই, সৌম্য নামের হাইপ যখন বাংলার আকাশে বাতাসে। শুরুর দিকের অসাধারণ সব ইনিংস তখনো চোখে লেগে আছে বাঙালির, যদিও টি২০ তে তখনো তেমন কিছু করে দেখাতে পারেননি সৌম্য। সেই সময়কার সৌম্যই ভারতে গিয়ে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ৭ ম্যাচের সবকটিতেই মাঠে নেমে রান করেছিলেন ১০.৭১ গড়ে মাত্র ৭৫। সর্বোচ্চ ২১, স্ট্রাইক রেট ৮৮.২৩। এর মধ্যে ৫০% রানই আবার করেছেন চার-ছক্কায়, মানে ডট দিয়েছেন ভালোই। বিদেশের মাটির বাকি টুর্নামেন্ট নিদাহাস ট্রফিতে খেলেছেন ৫ ম্যাচ, রান করেছেন ৫০, গড় ১০, স্ট্রাইক রেট ঠিক ১০০।

এই দুই টুর্নামেন্টের বাইরে সৌম্য খেলেছেন দেশের মাটিতে অনুষ্ঠিত ২০১৬ সালের এশিয়া কাপ। ৫ ম্যাচে সেখানে রান ১৮.৮০ গড়ে ৪৮। বছর হিসেবে আলোচনা করতে গেলে সৌম্যর শুরুর বছর টি২০ খেলেছেন ৩টি, প্রথম ম্যাচে কোনো বল না খেলেই রান আউট আর পরের দুই ম্যাচে ৭ আর ৩৭। পরের বছরের গড় ১৫.৯৩। সৌম্যর টি২০ ক্যারিয়ারের সেরা বছর ছিলো ২০১৭। ৭ ম্যাচের সবগুলোই অ্যাওয়ে ম্যাচ, প্রথম ম্যাচে ডাক ছাড়া বাকি সব গুলো ম্যাচেই করেছিলেন ভালো। রানগুলো যথাক্রমে ৩৯, ৪২, ২৯, ৩৪, ৪৭ আর ৪৪। গড় ৩৩.৫৭ আর স্ট্রাইক রেটও ১৫৬.৬৬। এটা বাদ দিলে ২০১৮, ’১৯ আর ২০২১ এ সৌম্যর এখন পর্যন্ত গড় ১২.২৬, ১৪.৬০, ১৮.৬৬। মাঝে ২০২০ এ খেলা পাকিস্তান আর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে খেলা ৪ ম্যাচের ৩টিতেই নট আউট থাকতে পেরে আর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৬২ রানের এক ইনিংসে গড় দাঁড়িয়েছে ৯৪তে। সৌম্যর ভাগ্য কতটা খারাপ! এই ৪ ম্যাচের প্রথম ম্যাচটায় ১৮তম ওভারে খেলতে নেমেও নট আউট থাকতে পারলো না। পারলেই ওই এক বছর সৌম্যর গড় নিয়ে কথা বলার সাহস পেতো কেউ?

যাই হোক, বাংলাদেশ আগে ব্যাট করলো না কি পরে? দিনে ম্যাচ হলো না কি রাতে? – এসব নিয়ে আলোচনারও কিছুটা প্রয়োজন আছে। তবে লেখা বড় হয়ে যাওয়ায় তা করতে ইচ্ছুক না। তবুও উল্লেখ করতে হলে বলতে হয় আগে ব্যাট করা ম্যাচে সৌম্যর গড় ১৭.১৫ আর স্ট্রাইক রেট ১২২.১৯ আর পরে ব্যাট করা ম্যাচে ২০.০৯ আর ১২৩.২৩। ডে আর ডে নাইট ম্যাচে সৌম্যর গড় ২৬.৮৬ আর ২৪.৬৬ যেখানে রাতের খেলায় সৌম্যর গড় মাত্র ১৪.৬৮। স্ট্যাট নাড়াচাড়া এপর্যন্তই, আপাতত আর করতে চাচ্ছি না। স্ট্যাট দিয়ে তো আর সব প্লেয়ারের কলেবর বুঝানো যায় না। পরিসংখ্যান একটা আস্ত গাধা।

  • তো সৌম্য বিশ্বকাপে সুযোগ পেলে কেমন করতে পারে?

প্রথমত, খেলা যেসব ভেন্যুতে হবে সেসব ভেন্যুতে আজ পর্যন্ত সৌম্য কোনো টি২০ ম্যাচ খেলেনি। তবে ওডিআই খেলেছেন দুটি। আবুধাবিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৫ বলে শূন্য আর দুবাইতে ভারতের বিপক্ষে খেলেছেন ৪৫ বলে ৩৩ রানের ইনিংস ২০১৮ এর এশিয়া কাপে। মন্তব্য করার জন্য এটুকু যথেষ্ট না।

  • শুধু এইটুক কেনো? এতোক্ষণ যেগুলো নিয়ে কথা বললেন সেগুলোও মন্তব্য করতে যথেষ্ট না?
  • বাদ দেন ভাই, দ্বিতীয়ততে আসি।

সৌম্য ওমানের উদ্দেশ্যে উড়াল দেয়ার আগে বলে গেছেন স্পোর্টিং উইকেটের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করছেন। আমরাও জানি, সৌম্য না কি স্লো পিচে ভালো খেলেন না। তাহলে বিশ্বকাপে কেমন খেলবেন তার জন্য তো টুর্নামেন্টের ভেন্যুগুলোর পিচের দিকেও তাকাতে হয়। এখানে বলার মতো আমার কিছু নেই। আইপিএল হচ্ছে, আপনারা দেখছেন, আপনারাই বলতে পারবেন পিচ কেমন। আর টানা খেলার কারণে বিশ্বকাপের পিচও স্লো হবে কি না সেটাও আপনারাই ভালো বুঝেন। তবে যদি স্লো হয়ে যায়, তবে সৌম্যর সমস্যা। তিনি নিজেকে প্রস্তুত করেছেন স্পোর্টিং উইকেটের জন্য।

তৃতীয়ত, ম্যাচগুলো দিনে হবে নাকি রাতে? বিশ্বকাপের ম্যাচগুলো মূলত হবে দুটি সময়ে। দুবাই, আবুধাবি আর ওমানের সময়ে তা দুপুর ২ টা আর সন্ধ্যা ৬টা। বাছাই পর্বের ২ ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ দিনে আর সব ঠিক থাকলে বাকি ২ ম্যাচ রাতে। সৌম্য সরকারের আবার দিন আর রাতের পারফর্মেন্সে আকাশ পাতাল পার্থক্য। তবে যেহেতু ম্যাচ দুই সময়েই হবে, তাই এখানেও সৌম্য সরকারের বিশ্বকাপ সম্ভাবনা নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে পারছিনা।

চতুর্থত ব্যাটিং পজিশন। সৌম্যর ব্যাটিং পজিশন নিয়ে খানিকটা কথা বলা যাক। দুই আর তিন নাম্বার পজিশনে গড় ১৯.৮২ আর ২৩.২৩। অন্যান্য জায়গায় চলে না। আর বিশ্বকাপে সৌম্য খেললে আশা করি ওপেনেই খেলবেন, সে হিসেবে তিনি যে অন্তত নিজের সেরাটা দিতে পারবেন এটুকু বলা যায়। (সেরা বলতে অন্যান্য পজিশনের তুলনায় সেরা বুঝিয়েছি, ক্যারিয়ারের সেরা না।)

শেষ দুটি ফ্যাক্টর নিয়ে বলে শেষ করা যাক। প্রথমটি আত্মবিশ্বাস। ব্যক্তিগতভাবে আমার মনে হয় না সৌম্য আসলেই আত্মবিশ্বাসী। আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি সৌম্যর মধ্যে অনেক বেশি এবং অনেক আগে থেকেই। কারণও আছে এখানে। ওডিআইয়ের ৭ নাম্বারের জন্যই প্রস্তুত হও বলে দিয়ে হঠাৎ করেই ডেকে নিয়ে টেস্টের টপ অর্ডারে নামানো, আজ ওপেন তো কাল ৭ নাম্বার।

সাদা বল নাকি লাল-সাদা দুই বলেই খেলবেন সৌম্য? ওপেন করবেন নাকি ফিনিশিং-এ নামবেন এসব সৌম্য নিজেই জানেনা, কারণ আগে তো টিম ম্যানেজমেন্টের জানতে হবে এসব। সেখান থেকে আত্মবিশ্বাসী হতে পারা মোটেও সহজ কথা না। তাই বিশ্বকাপে সুযোগ পেলে আর সবকিছু পক্ষে থাকলেও আত্মবিশ্বাসের অভাবে ভুগতে হবে সৌম্যকে হয়তো।

আর শেষ ফ্যাক্টরটি হচ্ছে, প্লেয়িং ইলেভেনে জায়গা পাওয়া – না পাওয়া। তামিম যেহেতু নেই, তাই জায়গা পাওয়ার সম্ভাবনা কিছুটাতো আছেই। ওপেন করবেন নাঈম-লিটন, সৌম্য খেলতে নামলে ৪ নাম্বারের আগে সম্ভব না। ৪ এ তার ব্যাটিং গড় ১০.৩৩। ফিনিশার হিসেবে সৌম্যকে খেলানো উচিত হবে না এটুকু বলতে পারি। প্লেয়িং ইলেভেনে তবে সৌম্য আসলেই সুযোগ পাবেন? যদি না পান, তবে সম্ভাবনার বুলি আওড়ে কী লাভ?!

বোলার সৌম্যকে তেমন কিছু বলার নেই। পার্টটাইম বোলার হিসেবে যথেষ্ট ভালোই করছেন সৌম্য এখানে। আর পুরো ক্যারিয়ারের স্ট্যাট? ওইটার জন্য ছবিতে তাকান, তবেই হবে।

মতামত জানান :