২২শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ- ২১ প্রোফাইল : লিটন দাস

প্রতিবেদক
ডেস্ক নিউজ
রবিবার, ১৭ অক্টোবর , ২০২১ ৩:১৯

লিটন কুমার দাস, বাংলাদেশ ক্রিকেট ইতিহাসে এ পর্যন্ত আসা ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সবচেয়ে ক্লাসিকাল ও টেকনিকালি সলিড ব্যাটসম্যান ধরা হয় তাকে। আমাদের আজকের “টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ – ২১ প্রোফাইল” আলোচনায় থাকছে তার নাম। যেহেতু টি-টোয়েন্টি ফরমেটে খেলা সেহেতু শুধুমাত্র টি-টোয়েন্টির লিটন দাসকে নিয়ে আলোচনা করা যাক।

২০১৫ সালের ১০ই জুন ফতুল্লায় টেস্ট আর ১৮ই জুন একই প্রতিপক্ষ ভারতের বিপক্ষে অভিষেক হলেও টি-টোয়েন্টিতে অভিষেক ঘটে ঠিক তার পরের সিরিজে ৫ই জুলাই দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। অভিষিক্ত ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার দেয়া ১৪৯ রানের তাড়া করতে নেমে লিটন দাস নামেন ৭ নাম্বার ব্যাটিং অর্ডার পজিশনে, দক্ষিণ আফ্রিকান বোলার ডুমিনি বা রাবাদাদেরকে তেমন সুবিধা করতে না পেরে বাংলাদেশের ইনিংস গুটিয়ে যায় মাত্র ৯৬ রানেই, আর এই ৯৬ রানের ২২ রান করে ব্যবধান কমানো ইনিংস খেলেন লিটন দাস।

লিটন দাসের পুরো টি-টোয়েন্টি ইন্টারন্যাশনাল ক্যারিয়ারে চোখ ফেরালে দেখা যায় তিনি তার অভিষেকের পর থেকে এখন পর্যন্ত অর্থাৎ ২০১৫ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত মোট ৩৮টি ম্যাচ খেলে ১৯.৭৫ গড়ে ১২৯.৭৪ স্ট্রাইক রেটে রান করেছেন ৭১১, ঝুলিতে আছে ৪টি অর্ধশতক। ২০১৫তে অভিষেকের পর থেকে ২০১৭ এ বছরগুলোতে খেলেছেন মাত্র চারটি ম্যাচ, যেখানে বাংলাদেশই খেলেছে ২৭টি ম্যাচ, চারটি ম্যাচ খেলা ইনিংসগুলোতে তার রান সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ২২, ১০, ১৭ ও ৯ রান। এতদ্বারা বুঝা যায় যে অভিষেকের পর তিনি পারফর্ম করতে পারেননি বলেই নিয়মিত হতে পারেননি বাংলাদেশ দলে। ঘরোয়া লীগে নজরকাড়া পারফর্মের পরেও মন ভরাতে পারেননা দর্শকদের। ইতিমধ্যেই নিজের নামের পাশে ক্লাসিকাল লিটন ট্যাগ পেয়ে যান এই ব্যাটসম্যান। ক্লাসিক লিটনের থেকে ক্লাসিকাল ইনিংস হবে এটাইতো প্রত্যাশা সবার।

ক্যারিয়ারে উত্থান পতন থাকেই, তার জ্বলন্ত উদাহরণ হয়তো লিটন দাস হয়েই থাকবে সবসময়। ২০১৭ এর পরের লিটন দাস অবশ্য ভিন্ন, শুরু হয় নতুন পথ চলার। ২০১৮ সালের নিদাহাস ট্রফিতে সুযোগ পান লিটন, সেবার ইন্ডিয়া ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৩৪ ও ৪৩ রানের দুটো ইনিংসে উড়ন্ত সূচনা এনে দেয়ায় লিটন সম্পর্কে ভুল ভেঙ্গে যায় সবার। সবার মুখে মুখে এ যেন ক্লাসিকাল লিটনকে ফিরে পাওয়ার তৃষ্ণার্থ চেহারার গল্প, সোস্যাইল মিডিইয়ায় সে কি প্রশংসা। নিদাহাস ট্রফির মত একটি আন্তর্জাতিক ট্রফিতে পরপর দু’টি ৩০+ ইনিংস খেলার পর দর্শকদের প্রত্যাশার পারদ অনেক উচুতে উঠবে এটাই স্বাভাবিক। দর্শকদের প্রত্যাশা অনুযায়ী তেমন কিছুই করতে পারেননি আর। গ্রুপ পর্বের বাকি ২ ম্যাচে ইন্ডিয়ার বিপক্ষে ৭ ও শ্রিলঙ্কার বিপক্ষে মাত্র ০ রানে সাজঘরে ফিরলেও ফাইনালে ভারতের বিপক্ষেও ১১ রানের বেশি আসেনি তার উইলো থেকে।

টি-টোয়েন্টিতে অধারাবাহিক লিটনের প্রতিচ্ছবির শুরুটা দেখা যায় এখান থেকেই। যখনই কোন গুরুত্বপুর্ন সময় এসেছে ঠিক তখনই বিলিয়ে এসেছেন নিজের উইকেট, যখনই তিনার সাহায্যে দলের একটা উড়ন্ত সূচনা দরকার তখনই নিষ্প্রভ তার ব্যাট। কখনো হয়েছেন নিজের খামখেয়ালিপনা ব্যাটিংয়ের কারণে নয়তো বোলারের বিষ মাখানো বলের ফাদে পরে। নিজের প্রতিভার ঝলকানি মাঝেমধ্যে দেখিয়ে ফের হয়ে উঠেন অধারাবাহিক। পুরো ক্যারিয়ার দেখলে দেখা যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৬ ম্যাচ খেলে ৪২.০৫ গড়ে রান করেছেন ১৯৫, যার মধ্যে এক ইনিংসে করা ক্যারিয়ার বেস্ট ৬১ রানটাও অন্যতম। ওয়েস্ট ইন্ডিজের মত জিম্বাবুয়ের সাথেও সমান সংখ্যক ম্যাচ খেলে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান ১৯৩। ৬ বছরের ক্যারিয়ারে সবচেয়ে ভাল বছর কাটিয়েছেন ২০১৮ সালে, সেবার ১৪ ম্যাচ খেলে ২৩.৭৮ গড়ে করেছেন ৩৩৩ রান। যেখানে ২০১৮ সালের ১৪ ম্যাচের তুলনায় ২১শে এসে ৯ ম্যাচ খেলে আরও ভালো পারফর্ম করার কথা সেখানে তিনি ১ ম্যাচ জিম্বাবুয়ে বাদে বাকি ৮ম্যাচের সবটাই নিউজিল্যান্ডের সাথে খেলে ৯.৩৭ গড়ে করেছেন মাত্র ৭৫ রান।

খেলার ধরন ও প্লেয়িং রুল
খেলার ধরনের কথা বলতে গেলে আমাদেরকে দেখতে হবে উনি কোন ব্যাটিং অর্ডার পজিশনে খেলে থাকেন। লিটন দাস তার আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে ব্যাটিং অর্ডার পজিশন ভেদে ব্যাটিং করেছেন ১,২,৩,৪,৭ ও ৮ নং পজিশনে। এই পজিশনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সফল হয়েছেন ১ ও ২ নং পজিশনে খেলে, ক্যারিয়ার সেরা ২ ইনিংস ৬১ ও ৬০ রানও এসেছে এই দুই পজিশনে ব্যাট করেই। উক্ত দুই পজিশনের স্ট্রাইক রেট খেয়াল করলে দেখা যায় ব্যাটিং অর্ডার ১ এ ১২৮.৪৮ রানের তুলনায় ব্যাটিং অর্ডার ২ এ সেটা ১৪৩.৬২ রান ,যা একজন টি-টোয়েন্টি খেলা ব্যাটসম্যানের জন্য আদর্শ স্ট্রাইক রেট। তার যেই খেলার ধরন সে অনুযায়ি এই ২ নং পজিশনে নিজের সেরাটা দিয়ে উইকেটটাকে যেন বাচিয়ে রেখে জাস্ট নিজের খেলাটা খেলে যাওয়া

শক্তি ও দুর্বলতার জায়গা
লিটন দাসের কোন শক্তির জায়গা থাক বা না থাক একটা জিনিস অন্তত আছে, আর সেটা তার ফুটওয়ার্ক, দেশের অন্যান্য ব্যাটসম্যান বা ওপেনারদের থেকে ফুটওয়ার্কে সবসময় অনেক এগিয়ে থাকবে সে। অন্যদিকে তার দুর্বলতার অনেক জায়গা আছে তার,
মানসিকতার সমস্যা, সেট হয়েও ভুল শটে আউট হয়ে যাওয়া, সিন্ধান্তহীনতায় সবসময় ভোগা, স্পিন বলে বল না বুঝা সহ আরও অনেক দৃশ্যমান দুর্বলতা রয়েছে তার মধ্যে।

সাম্প্রতিক ফর্ম ও বিশ্বকাপে চাওয়া
আপনি যদি এ পর্যন্ত পড়ে এসে থাকনে তাহলে নিশ্চয়ই দেখেছেন প্রসাম্প্রতিক ফর্মের কথা উপরে আগেও বলেছিলাম, তারপরেও আবার বলি এ বছর ৯ ম্যাচে ৮ ইনিংস ব্যট করে ৯.৩৭ গড়ে করেছেন মাত্র ৭৫ রান, তাও এই রান করতে উনাকে ফেস করতে হয়েছে ৭৭টি বল, চূড়ান্ত রকমের অফ ফর্মে আছেন লিটন দাস, বিশ্বকাপের আগে এমন ফর্ম সত্যি খারাপ প্রভাব ফেলবে ম্যাচে তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা। আশা করব বিশ্বকাপের বাছাই পর্বে নিজেকে শেষবারের মত ঝালিয়ে নিয়ে, ম্যাচ শুরুর পর পাওয়ার প্লে র সঠিক ব্যবহারে দলকে কয়েকটি ইনিংসে ভালো রান করার ভীত গড়ে দিবেন এটাই প্রত্যাশা।

যদিও তিনি অধারাবাহিক, কিন্তু এতকিছুর পরে দিনশেষে ভরসা রাখতে হয় এই লিটোনের ব্যাটেই, যত যাই হোক বিশ্বকাপে বাঘা বাঘা বোলাররা ফেস করে নির্ভয়ে পিটিয়ে বলকে বাউন্ডারি ছাড়া করার জন্য হলেও একজন লিটন কুমার দাস লাগবে। শুভ কামনা লিটন দাস, শুভ কামনা বাংলাদেশ।

মতামত জানান :