১৮ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপ-২১ প্রোফাইল: আফিফ হোসেন ধ্রুব

প্রতিবেদক
ডেস্ক নিউজ
রবিবার, ১৭ অক্টোবর , ২০২১ ৩:২৪

                ❝তারুণ্য যার কাছে বাঁধা নয়!❞

অসাধারণ প্লেসমেন্ট; পিওর টাইমিংয়ে কখনো পুল আবার কখনো বা স্লগ হিটিং! দ্রুতগতিতে ধেয়ে আসা বলটিও অবলীলায় সীমানা ছাড়া কিংবা মনোমুগ্ধকর কাভার ড্রাইভ। পরিস্থিতি যেমনই হোক, নিজের সহজাত খেলা খেলে যাওয়া, ভয়ডরহীন ব্যাটিং আবার কখনো বা বল হাতে রাখেন ভূমিকা। সার্কেল কিংবা বাউন্ডারি লাইন; ফিল্ডিংয়েও বেশ তুখোড় ছেলেটিই হতে পারে শর্টার ফরম্যাটের ফুল প্যাকেজ৷ বলছি তরুণ ক্রিকেটার আফিফ হোসেন ধ্রুবর কথা।

চলতি বছরে দুরন্ত আফিফ; ধারাবাহিকতাতেও বড্ড এগিয়ে, খেলতে পারেন পরিস্থিতি বুঝে। ঘরে কিংবা ঘরের বাহিরে, সবখানেই দেখিয়েছেন সাহসীকতা। আশা দেখাচ্ছেন ফিনিশিংয়ের অভাব পূরণের। কঠিন চ্যালেঞ্জকে সামনে নিয়ে প্রথমবারের মতো খেলতে যাচ্ছেন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। সেটিও ওমান ও মরুর দেশ আরব আমিরাতে। বয়সে কাঁচা হলেও মানসিকতা কিংবা টেকনিকে বেশ এগিয়ে থাকা আফিফ নিজেকে কিভাবে মেলে ধরতে পারে সেটিই দেখার অপেক্ষায়।

১৩-ই সেপ্টেম্বর ২০১৯; বাংলাদেশ ৬০/৬ থেকে ১৪২/৭!

ঘরের মাঠে জিম্বাবুয়ের আগমন, বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে প্রথমে ব্যাটিং করা জিম্বাবুয়ে বার্লের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে ১৮ ওভারে সংগ্রহ করে ১৪৪ রান! ১৪৫ রানের জয়ের লক্ষ্যে খেলতে নামা সাকিব বাহিনী ৬০ রানে হারিয়ে বসে ৬ উইকেট; নিশ্চিত পরাজয় সামনে রেখে ব্যাটিংয়ে আসেন ধ্রুব! কে জানতো সেদিন ধ্রুবতারা হয়ে বাইশ গজে পা রেখেছিলেন ধ্রুব! প্রথম বলে বাউন্ডারি হাঁকানো ধ্রুব যেনো বলতে চেয়েছিলেন হারার আগে হার মানতে নেই, হয়েছেও তাই। জিম্বাবুয়ের বোলারদের তুলোধুনো করে মাত্র ২৬ বলে ৮ চার ও এক ছক্কায় টি-২০ ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটির দেখা পাওয়া আফিফ বাংলাদেশকে জিতিয়েছিলেন প্রায় হেরে যাওয়া ম্যাচ, হয়েছিলেন ম্যাচ সেরা। সেদিন ব্যাট হাতে অসামান্য সাহসীকতা দেখানো আফিফ যেনো মন জয় করে নিয়েছিলেন হাজারো ক্রিকেটপ্রেমীর।

আফিফ যে নিজের লক্ষ্যে অবিচল; আফিফের কাছে চাপ বলে যেনো কিছুই নেই। পরিস্থিতি কিংবা কন্ডিশন যেমনই হোক, নিজের সহজাত ক্রিকেট খেলে যান স্বমহিমায়। একুশে কিউইদেশে সাউদি-ফার্গুসনদের বিপক্ষে ৪৫ রানের ইনিংসটি যেনো সেটিরই প্রমাণ রাখে। আপনি তারুণ্যে ভরপুর আফিফে মুগ্ধ হতে পারেন, মুগ্ধ হতে পারেন তার ব্যাটিংয়েও। ফিল্ডার আফিফও নেই পিছিয়ে। আর বর্তমান সময়ে আফিফ যেনো বাংলাদেশ ক্রিকেটের ধারাবাহিক ব্যাটারদের এক সেরা উদাহরণ।

আচ্ছা যাকে নিয়ে এতো কথা। সেই আফিফ টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে ব্যাট হাতে কতোটা কথা ফুটিয়ে তুলতে পেরেছেন?

ম্যাচ       ইনিংস        রান         গড়         স্ট্রাইকরেট
 ২৮          ২৩           ৩৭৩      ১৮.৬৪        ১২৩.৫০      

এই ২৩ ইনিংসের মাঝে ৩ বার অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়া আফিফের রয়েছে সর্বোচ্চ ৫২ রানের ইনিংস! সেটিও ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ম্যাচেই। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ২৮ চারের বিপরীতে আফিফের ছক্কা ১৪ টি।

এছাড়াও সব ধরনের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে আফিফ…..

ম্যাচ ইনিংস রান গড় স্ট্রাইকরেট
৯৮ ৮৫ ১৬৬৫ ২৩.১২ ১২৭.২৯

এই ৮৫ ইনিংসে আফিফের ফিফটি সংখ্যা সাত টি! সর্বোচ্চ রান ৭৬। ৬৯ ছক্কার সাথে হাঁকিয়েছেন ১৪৮ চার।

     ❝চলতি বছরে আফিফ কতোটা ধারাবাহিক?❞

ম্যাচ ইনিংস রান গড় স্ট্রাইকরেট
১৬ ১৪ ২৬০ ২৩.৬৩ ১২৪.৪০

ধারাবাহিক না হলেও আফিফ যেনো মন্দের ভালো! ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে স্পিন সহায়ক উইকেটে যেখানে অন্য ব্যাটাররা ব্যর্থতার প্রমাণ রেখেছিলেন সেখানে যেনো আফিফ ছিলেন তাদের চেয়ে বেশ আলাদা। এমন উইকেটেও আফিফ খেলেছেন নিজের সহজাত ইনিংসই! অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৫ ইনিংসের ১২২.২৫! যা বেশ দুর্দান্তই বলতে হয়। কিউই সিরিজে কিছুটা হারিয়ে খুঁজতে থাকা আফিফ খুব যে খারাপ করেছেন এমনটাও না। সবমিলিয়ে আফিফ বাংলাদেশের ব্যাটারদের মাঝে বেশ এগিয়ে আছেন সেটি বলতে দ্বিধা থাকার কথা নয়।

চলতি বছরে ফিনিশিংয়ে বেশ নজর কেড়েছেন আফিফ! শুধু দেশের পক্ষে সেরাতে অবস্থান করেই থামেননি, বিশ্বের মধ্যে ৫-৬ নাম্বারে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক তিনি। যেখানে তার সামনে ডেভিড মিলার। এবং আফিফের পেছনে আছেন পোলার্ড – পুরানদের মতো ব্যাটাররা। এছাড়াও শুধুমাত্র ছয় নাম্বার পজিশনেও দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক তিনি!

৫ থেকে ৬ নাম্বার পজিশনে সেরা রানসংগ্রাহক (২০২১ সাল)

ডেভিড মিলার – ২৬২ রান।
আফিফ হোসেন – ২৫০ রান।
নিকোলাস পুরান – ১৯১ রান।

এখানে স্ট্রাইকরেট সবার নিচে আফিফের। এর পেছনে রয়েছে যথেষ্ট কারণ। আপনি চলতি বছরে বাংলাদেশের খেলা দেখে থাকলে আঁচ করতে পারবেন সহজেই!

চলতি বছরে ৫ নাম্বার পজিশনে আফিফ যেনো দুর্দান্ত! লাল – সবুজের জার্সিতে ৫ নাম্বার পজিশনে ৫ ইনিংসে ৯২ রান করা আফিফের স্ট্রাইকরেট ১৫০.৮১; বেশ দুর্দান্ত।

এবার চলতি বছরে ঘরোরা ক্রিকেটে আফিফের পারফরম্যান্সে নজর দেওয়া যাক….

ম্যাচ ইনিংস রান গড় স্ট্রাইকরেট
১৬ ১৩ ২২৫ ২৫.০০ ১২১.৬২

এই ছিলো বঙ্গবন্ধু ঢাকা প্রিমিয়ার টি-টোয়েন্টি লীগে আফিফের পারফরম্যান্স। পরিসংখ্যানে পারফরম্যান্স দেখে প্লেয়ারকে জাজ করতে গেলে কিছুটা বোকামি হবে বটে। কেননা দলের প্রয়োজনে আফিফ খেলেছেন পরিস্থিতি বুঝে। দিনশেষে আফিফ যে নিজের লক্ষ্যে অবিচল সেটি বলতেই হয়।

এবার একটু পিছনে ফিরে ২০২০ সালের বঙ্গবন্ধু টি-২০ কাপে উঁকি দিতেই আফিফের পারফরম্যান্স নজরে আসে। সেখানে দেখা যায়….

ম্যাচ ইনিংস রান গড় স্ট্রাইকরেট
৯ ৯ ১৮৮ ৩১.৩৩ ১৪৬.৮৭

এখানে গড় কিংবা স্ট্রাইকরেট; সবখানেই আফিফ দুর্দান্ত। শুধু তাই নয়, লড়াকু আফিফ যেনো ছক্কা হাঁকাতেও বেশ পটু। এই আসরে ১১ চারের বিপরীতে ১১ ছক্কা অন্তত সেটিরই জানান দেয়।

❝চলতি বছরে লাল-সবুজের জার্সিতে আফিফ কতোটা দ্রুতি ছড়িয়েছে?

উত্তর খুঁজতে গেলে আপনি যেই আফিফকে খুঁজে পাবেন সেই আফিফ বদলিয়েছে নিজেকে। ভুলগুলো শুধরে নিয়ে কাজ করেছে ব্যাটিং টেকনিক নিয়ে। তাইতো জায়গায় দাঁড়িয়ে স্বমহিমায় স্টার্কদের করা দ্রুতগতির বলগুলোও করেছেন সীমানা ছাড়া। এখানে আপনাকে আফিফের ব্যাটিংয়ে মুগ্ধ হতেই হবে। মুগ্ধ হতেই হবে তার দৃষ্টিনন্দন ব্যাটিংয়ে। শুধু ব্যাটিংয়ে নয়, ফিল্ডিংয়েও বেশ দুর্দান্ত হয়ে ফিরেছেন তিনি। আচ্ছা এতো গুনগান করলাম, কিন্তু চলতি আসরে বাংলাদেশের ব্যাটারদের মাঝে আফিফ কোথায়? আসুন দেখে নেওয়া যাক।

ব্যাটার ম্যাচ ইনিংস রান গড় স্ট্রাইকরেট
নাঈম ১৬ ১৬ ৩৫১ ২৩.৪০ ৯৮.৮৭
রিয়াদ ১৫ ১৫ ২৯৬ ২৪.৬৬ ১০১.৭১
আফিফ ১৬ ১৪ ২৬০ ২৩.৬৩ ১২৪.৪০

এখানে সেরা তিনের মাঝে সেরা স্ট্রাইকরেটে রান করা আফিফ বাংলাদেশের পক্ষে সেরা ১০ রান সংগ্রাহকের মাঝে স্ট্রাইকরেটের দিক দিয়ে রয়েছেন দ্বিতীয় নাম্বারে। যেখানে আফিফের উপরে ১৪৪ স্ট্রাইকরেটে রান করে শামীম রয়েছে শীর্ষে। এখানে শীর্ষে না থাকলেও চলতি বছরে লাল-সবুজের জার্সিতে ১২ ছক্কা হাঁকিয়ে শীর্ষে ঠিকই আছেন আফিফ।

আফিফকে নিয়ে কম তো জানা হলোনা! এই ছোট্ট ক্যারিয়ারে আফিফ যেটুকু করে দেখিয়েছেন তাতে করে বড় স্বপ্ন দেখতেই পারেন তিনি। আফিফের মতো টগবগে রক্ত গরম ব্যাটারই তো দরকার টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে। যেখানে পরিস্থিতিকে উজাড় করে দেওয়ার মানসিকতা নিয়েই মাঠে নামেন আফিফ; মাঠে নামেন নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার মিশনে। আফিফ এই ছোট্ট ক্যারিয়ার একদিন অনেক বড় করবে, রাঙিয়ে দিয়ে সাফ্যলের গল্পে। বাইশ গজে ব্যাটের পরশে লিখবে একেকটা মহাকাব্য, সেই মহাকাব্যিক গল্পের শুরুটা না হয় বিশ্বমঞ্চে করুক। শুভ কামনা আফিফ; নিজের প্রথম বিশ্বকাপটা রাঙিয়ে দেও রাজকীয় রঙে।

মতামত জানান :