‘বিশ্বকাপে ছোট শামীম হবেন ফিনিশিংয়ের বড় অস্ত্র?’
শামীম হোসাইন পাটোয়ারী; বাংলাদেশ ক্রিকেটের নব্য এই সেনসেশনাল ইয়াংস্টারকে এখন সবারই জানা। বিশ্বজয়ী অনুর্ধ্ব-১৯ ব্যাচের এই অলরাউন্ডার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেকেই নিজের জাত চিনিয়েছেন। ইলিশের শহর চাঁদপুর থেকে জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়া প্রথম ক্রিকেটার শামীম দেশের অন্যতম সেরা ফিল্ডারও বটে। সহজাত পাওয়ার হিটার, কব্জিতে প্রচন্ড শক্তি, দুর্দান্ত রকমের ব্যাট সুইং, তর্কসাপেক্ষে বর্তমানে দেশসেরা ফিল্ডার/থ্রোয়ার, মাঠে শান্ত-নিশ্চিন্ত মনোভাব সাথে কার্যকরী অফস্পিন; সবমিলিয়ে এক কমপ্লিট প্যাকেজ বলিষ্ঠ দেহের অধিকারী শামীম পাটোয়ারী।
ফরিদগঞ্জ উপজেলার ধনুয়া গ্রামের আব্দুল হামিদ পাটোয়ারির ঘরে ২০০০ সালের সেপ্টেম্বরের ২ তারিখে জন্ম নেয় এক ফুটফুটে শিশু। হয়তো কেউই সেদিন ধারণা করতে পারেনি চাঁদপুরে নতুন আগমন ঘটা এই চাঁদ একদিন হবেন বিশ্বজয়ী! ছেলেবেলা কাটিয়েছেন নিজ গ্রামেই৷ চাচাতো ভাইদের সঙ্গে খেলতেন ক্রিকেট। টেপ টেনিস ক্রিকেটে এলাকা দাপিয়ে বেড়ানো শামীম নজরে আসেন তার চাচার। পরিবারের সাথে পরামর্শ করে তিনিই শামীমকে ক্রিকেটে নিয়ে আসার লক্ষ্যে ভর্তি করান চাঁদপুরের সেরা কোচ শামীম ফারুকীর একাডেমিতে। সেখান থেকেই পালাক্রমে জেলা দল, অনুর্ধ্ব-১৭, অনুর্ধ্ব-১৮ দল হয়ে অনুর্ধ্ব-১৯ পর্যায়ে শিরোপা জিতে শামীম আজ জাতীয় দলে।
এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে লেট অর্ডার ব্যাটসম্যান হিসেবে ১৫ সদস্যের দলে জায়গা করে নিয়েছেন ছোটোখাটো গড়নের এই অলরাউন্ডার।
বিশ্বকাপে রোল ও চাওয়াঃ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের লেট অর্ডারে ব্যাটিংয়ে দায়িত্ব থাকবে তার কাঁধে। এখন পর্যন্ত ৭ আন্তর্জাতিক ম্যাচে ৩টি পজিশনে ব্যাট করা শামীম সবচেয়ে সফল ৮ নাম্বারে। ম্যানেজমেন্ট নিশ্চয়ই সেখানে তাকে খেলিয়ে সেরাটা আদায় করে নেয়ার চেষ্টায় থাকবে। প্রয়োজনে বোলিংয়ে ২-১ ওভার ব্যবহার করা যাবে তাকে।
ক্যারিয়ারের প্রথম দুই ম্যাচে দারুণ করা শামীম পরের ৫ ম্যাচে ছিলেন নির্লিপ্ত। তবে বিশ্বকাপের ঠিক আগে আনফিসিয়াল প্রস্তুতি ম্যাচে ১৯০ স্ট্রাইকরেটে ১৯* রানের ইনিংস দিয়ে যেনো রানে ফেরার ইংগিত দিয়ে রাখলেন তিনি।
দিনশেষে আসল ব্যাপার হচ্ছে দলে জায়গা পাওয়া। তবে নিয়মিত দলে জায়গা হোক আর না হোক, শামীম নিশ্চয় প্রস্তুত থাকবেন পুরো টুর্নামেন্টেই।
ক্যারিয়ার পরিসংখ্যানঃ
অনুর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে যেন এভারেজ ক্রিকেটার ছিলেন শামীম। ৬ ইনিংসে মাত্র ২০ রান ও ৫ উইকেট অন্তত তা-ই বলে।
তবে এরপর নিজেকে পরিবর্তন করতে সক্ষম শামীম করোনা পরবর্তী ঘরোয়া ২ টি-টোয়েন্টি আসরে ২৬ ইনিংসে ৩৬০ রান করেছেন। বোলিংয়ে এখনো বলার মতো তেমন পারফরম্যান্স দেখাতে না পারলে ফিল্ডিংয়ে চমক দেখিয়েছেন বেশ।
এখন পর্যন্ত জাতীয় দলের জার্সি গায়ে ৭ আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ১৪৪ স্ট্রাইক রেটে করেছেন ৭২ রান। সবধরনের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে শামীমের পারফরম্যান্স গ্রাফ বেশ ভালো। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সংক্ষিপ্ত ক্যারিয়ারের প্রথম দুই ম্যাচে করেছিলেন ২৮ বলে ৬০ রান, জিম্বাবুয়ের ফ্লাট পিচে শামীমের ব্যাটিং ছিলো দর্শনীয়। তবে এরপর অস্ট্রেলিয়া সিরিজে চার ম্যাচে সুযোগ পেয়ে ব্যাট হাতে ৩ ইনিংসে মাত্র ১০ রান করতে পারেছিলেন৷ ফলস্বরূপ নিউজিল্যান্ড সিরিজে মাত্র এক ম্যাচে সুযোগ দেয়া হয় তাকে।
প্রথম দুই ম্যাচের সাথে পরের পাঁচ ম্যাচ তুলনা করলে স্পষ্ট বোঝা যায় মিরপুরের মরা পিচের চেয়ে ফ্লাট পিচ বা যেসব পিচে সহজে বল ব্যাটে আসে সেসবে খেলতে স্বাচ্ছন্দবোধ করেন তিনি। বিশ্বকাপে প্রথম রাউন্ডে ওমানের পিচগুলো অনেকটা শামীমের পছন্দসই, সুযোগ পেলে যে ভালো কিছু হবে সেটা আশা করা যায়।
শক্তিমত্তা ও দুর্বলতাঃ
ছোটো-ছোটো গড়নের শামীমের সবচেয়ে শক্তির জায়গা পাওয়ার হিটিং। সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটে পাওয়ার হিটিংয়ের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ব্যাট সুইংয়ে শামীম বেশ গুণী। জায়গায় দাঁড়িয়ে বেশী নড়াচড়া না করে দারুণ সব শট খেলতে পারেন তিনি। বাউন্ডারি মারার ক্ষেত্রে তার প্রিয় জায়গা হচ্ছে স্কয়ার লেগ থেকে লং অন পর্যন্ত এরিয়া। এছাড়াও গালী এবং ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্ট পজিশনেও দুর্দান্ত সব শট খেলতে পারেন তিনি। সাথে রানিং বিটুইন দ্য উইকেটেও শামীম অনন্য। তাছাড়া ফিল্ডিং তো এককথায় অনবদ্য।
শামীমের দুর্বলতা হিসেব করলে সবার আসবে অফসাইডে বাউন্ডারি না মারতে পারা। পয়েন্ট এবং লং অফে শামীম শট খেলতে পারেন খুবই কম, ফিফথ স্ট্যাম্পে বল করলে তার বেশ ভোগান্তি পোহাতে হয়৷ এজন্য তার টেকনিকে আরো কাজ করা প্রয়োজন।
ব্যাটিংয়ে তামিম ইকবালের পাশাপাশি বিরাট কোহলিকে আদর্শ মানা শামীম ফিল্ডিংয়ে জন্টি রোডসের শিষ্য। মাঠে চাপমুক্ত মনোভাবে ফুরফুরে মেজাজে থাকা শামীম বড় মঞ্চে খেলার চাপকে জয় করে দেশের জন্য ভালো কিছু উপহার দিবেন সেই প্রত্যাশা সবার।