১৩ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপ-২১ প্রোফাইল : শেখ মেহেদী হাসান

প্রতিবেদক
ডেস্ক নিউজ
রবিবার, ১৭ অক্টোবর , ২০২১ ৩:৪৮

বর্তমান টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের স্কোয়াডে যে কয়েকজন নতুন মুখ রয়েছে তাদের মধ্যে অন্যতম একজন স্পিন বোলিং অলরাউন্ডার শেখ মেহেদি হাসান। আজকের পর্বে থাকছে ক্রিকেট ক্যারিয়ারের আন্তপ্রান্ত।

১.ক্রিকেটার হয়ে ওঠার গল্প

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাংলাদেশ দলের নিয়মিত মুখ শেখ মেহেদী হাসানের বাড়ির পাশেই ছিল শেখ আবু নাসের স্টেডিয়াম, যেখানে প্রতিনিয়ত ব্যাট-বলের লড়াই চলে হাজারো তরুণের। ব্যাট-বলের সেই শব্দের মোহে পড়ে চলে আসেন স্টেডিয়ামে। টেনিস বলে অলিগলিতে টুকটাক খেলার অভ্যাস থাকলেও ক্রিকেট বলে খেলা তো দূরে থাক- প্র্যাকটিসও করা হয়নি। তাতে কী! এই তরুণের একটি সময়ে নেটে বল করার সুযোগ হয়। এরপর খুলনার আবু নাসের স্টেডিয়ামকে নিজেদের বাড়ির উঠোন বানিয়ে ফেলেন এই তরুণ।

২০০৫ সালে আবু নাসের স্টেডিয়ামে খুলনা বিভাগীয় অনূর্ধ্ব-১৫ দলের একটা ক্যাম্প হচ্ছিলো। সেখানে নেটে বল করার সুযোগ হয় মেহেদীর। পরের বছর খুলনায় আরব আমিরাত এবং বাংলাদেশ ‘এ’ দলের একটা সিরিজে নেটে বোলিং করার সময় তখনকার আরব আমিরাত দলের কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে তার বোলিংয়ে মুগ্ধ হয়। বাংলাদেশ দলের সাবেক কোচ তাকে একটি ব্যাট ও একটি বলও উপহার দেয়। এরপর কোচ শেখ সালাহউদ্দিনের হাত ধরে অনূর্ধ্ব-১৪, ১৫ ও ১৭ ন্যাশনাল স্কোয়াডে নিয়মিত সুযোগ পান। ২০১০ সালে অনূর্ধ্ব-১৭ খেলার পর ২০১১ সালে যুবদলে ডাক পেয়েছিলেন। তখন প্রাথমিক দলে তাকে নেয়া হলেও পরে সেখান থেকে বাদ পড়ে যান এই অলরাউন্ডার।

এরপর ২০১২ সালের কোচের ইচ্ছাই ব্যাটিং নিয়ে কাজ করা শুরু করেন। যার ফলস্বরূপ ২০১৪ সালে প্রথম বিভাগে গাজী ট্যাংকের হয়ে আমি ৮৫০ রান করে সবার নজর কাড়েন মেহেদী। ২০১৬ সালে প্রিমিয়ার লিগে নিজের অভিষেক ম্যাচে সেঞ্চুরি করেছিলেন মেহেদী। মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে প্রাইম ব্যাংকের বিপক্ষে তিন নম্বরে ব্যাট করতে নেমে ১০৩ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলেছিলেন। এর পরেই নির্বাচকদের নজরে আসেন খুলনার ছেলে মেহেদী।

এরপর বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগ ও বিপিএল টুর্নামেন্টে ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন ওপেনিং ব্যাটসম্যান হিসেবে, সাথে ডানহাতি অফ-স্পিনটা ছিলো বোনাস। কালের পরিক্রমায় ব্যাটিং অর্ডারের নিচে নামতে নামতে ব্যাটসম্যান পরিচয়টাই হারিয়ে মেহেদী, অফ স্পিন বোলিং-এর পাশাপাশি লোয়ার অর্ডারে মাঝেমাঝে টুকটাক চার-ছক্কা মেরে এখন ব্যাটিং-টাই হয়ে গেলো বোনাস।

২. বাংলাদেশের হয়ে অভিষেক

বাংলাদেশের জার্সিতে ২০১৮ সালে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অভিষেক হয় মেহেদীর। অভিষেক ম্যাচ মেহেদী পারফরম্যান্স ছিল খুবই মলিন। ২ ওভার বল করে উইকেট শূন্য থেকে দিয়েছিলেন ২৫ রান। ব্যাট হাতেও ১১ বলে ১১ ছিল না বলার মতই। তারপর শ্রীলঙ্কা সিরিজ থেকে বাদ পড়ে লম্বা সময় পর দলে আবার সুযোগ হয় মেহেদীর। ২য় বার সুযোগে এবার মেহেদী টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাংলাদেশ দলের এখন নিয়মিত মুখ।

৩. বোলিং বিশ্লেষণ

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাংলাদেশের হয়ে এখন পর্যন্ত টি-টোয়েন্টিতে ১৮ ম্যাচের মধ্যে ১৮ ইনিংসেই বল করেছেন তিনি। ১৮ ইনিংসে দখলে নিয়েছেন ১৫ উইকেট। ২৭.৭৩ গড়ে বল করা মেহেদির ইকোনোমিটা ৭.১৭। সেরা বোলিং ফিগার ১২ রানে ২ উইকেট। ডানহাতি এই অফ স্পিনারের বোলিংয়ের ভেরিয়েশন চোখে পড়ার মতই। শেখ মেহেদির বোলিংয়ের ভেরিয়েশনের অন্যতম আরেকটি পন্থা হল হ্যান্ড ডাউন স্পিন। যে ধরনের বোলিং দেখা যায় ভারতের রবীচন্দ্রন অশ্বিন কিংবা কেদার যাদবের কাছ থেকে। ব্যাটসম্যানকে বিভ্রান্ত করার সাথে উইকেট তুলে নিতেও সহযোগিতা করে এই বোলিং অ্যাকশনটি।

বাংলাদেশ দলে এখন পর্যন্ত আসা অন্যান্য স্পিনার থেকে তিনি আলাদা গতির কারনে। স্পিন বোলিংয়ে সাধারণত গড়পড়তা যে গতি দেখা যায় এরচেয়ে কিছুটা বেশি গতি দিয়ে থাকেন এই স্পিনার। ফলে স্লো উইকেট কিংবা স্পোর্টিং উইকেট দুই জায়গাতেই সফলতা বয়ে এনেছেন তিনি। তবে সফলতা উল্টো চিত্রেও আছে আর সেটা হলো তার বোলিং ইকোনমি। দেশে স্পিনসহায়ক, স্লো-লো বাউন্সের উইকেটে ৮ ম্যাচে ওভার প্রতি ৬.৪৬ রান দিয়েছেন, বিদেশে ৬ ম্যাচে ওভারপ্রতি ১০.৮১ রান গুনেছেন। অর্থাৎ একটু ভালো উইকেট হলেই মেহেদীর বোলিংয়ে ইকোনমিক রেট বাড়ছে। আর এটা জায়গাটায় ভাল করতে পারলেই বোলিং আরো সফল হবেন এই ডানহাতি অফস্পিনার।

৪. ব্যাটিং বিশ্লেষণ

বোলিংয়ে সাথে বোনাস হিসাবে কাজে লাগতে পারে তার ব্যাটিংও। ব্যাটিং বিভাগে মেহেদি হাসানের শক্তির জায়গা কব্জির মোচড়ে বলকে দ্রুত গতিতে সীমানা ছাড়া করা। জায়গায় দাঁড়িয়েই ব্যাট চালানোতে বিশেষ পারদর্শী এই ক্রিকেটার সফলও হয়েছেন বেশ। ম্যাচে শেষের দিকে দ্রুত গতিতে রান তোলার জন্য হয়তো কিছুটা কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে পারেন এই অলরাউন্ডার। যদিও ব্যাট হাতে ১৮ ম্যাচে ১২ ইনিংসে ১২০ রান তার নামের পাশে বেমানান। স্টাইকরেটও ১০০ এর নিচে। ঘরোয়া লিগে টপ অর্ডারে ব্যাটিং করলেও জাতীয় দলে তাকে দেখা যায় লোয়ারঅর্ডারে। তবে মাঝেমধ্যেই টপ অর্ডারে তাকে নিয়ে পরীক্ষা চালায় টিম ম্যানেজমেন্ট। গত জিম্বাবুয়ে সিরিজে কিংবা নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে তাকে টপ অর্ডারে খেলানো হলেও সেখানে খুব বেশি সুবিধা করতে পারেনি। ব্যাট হাতে শতভাগ পরিপক্ক না হওয়া শেখ মেহেদির দুর্বলতা রয়েছে শট সিলেকশনে। তবুও ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে তার ব্যাটিং অভিজ্ঞতা কাজ লাগবে এবারের বিশ্বকাপেও।

আর ব্যাটে-বলে সমানতালে পারফরম্যান্স করতে পারলেই মেহেদী হতে পারে এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ট্রাম কার্ড । তাই ১৭ কোটি মানুষের এই প্রত্যাশা, শেখ মেহেদী হাসান পারফর্ম করুক। হাসুন বাংলাদেশ জিতুক বাংলাদেশ।

অনেক অনেক শুভেচ্ছা ও শুভকামনা রইলো শেখ মেহেদী হাসানের জন্য।

মতামত জানান :