২৪শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

From Birmingham Boys to Slip Cordon.

প্রতিবেদক
Mahbub Elahi
শনিবার, ৩০ মে , ২০২০ ৫:৫৬

দৃশ্য ০১-

“Can you believe it, its an absolute blinder. Martin Guptil took a blinder and new zealand remove steven smith” – Ian Smith. (Australia vs New Zealand, WC 2019)

দৃশ্য ০২-

“This place is under new Management, by order of PEAKY BLINDERS” – Arthur Shelby (Netflix TV show, Peaky blinders)
—–

উনিশ শতকের শুরুতে ইংল্যান্ডে রোমানী বা জিপসীদের আগমন ঘটে, জিপসীরা মূলত ভাসমান সম্প্রদায়, একেক জায়গা থেকে একেক জায়গায় ঘুরে বেড়ায়৷ তবে ১৯০০ সালের দিকে জিপসীরা আস্তে আস্তে ন্যাটিভ ইংরেজদের সাথে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে ইংল্যান্ডে থিতু হবার চেষ্টা করে। ইংল্যান্ডের বার্মিংহাম ছিলো তখনকার দিনে অনেকটা বন্দরনগরী টাইপ, বিভিন্ন জায়গা থেকে জাহাজ আসতো বাণিজ্যের জন্য। সেই বার্মিংহামে উত্থান হয় এক গ্যাংস্টার দলের, যাদেরকে বার্মিংহাম বয়েজ বলা হতো। পরবর্তীতে তাদের নাম হয় ‘পিকী ব্লাইন্ডার্স’ যার প্রধান ছিলো টমাস শেলবি, যার মা ছিলো জিপসী কিন্তু বাবা ছিলো খাঁটি ইংরেজ! সেই গ্যাংস্টাররা গ্যাম্বলিং করতো, স্মাগলিং এর সাথেও জড়িত ছিলো, হর্স রেইসে বাজিকরী করতো – পুরো বার্মিংহামই ছিলো পিকী ব্লাইন্ডার্সদের অধীনস্ত।

They Were considered one of the scariest Gang Squad in europe with a magnificent brain of ‘Tommas Shelby’ on their Top – who knows the business, who knows his enemy well, who has a voice that convince everybody.

সো, এবার আসি সেই বার্মিংহাম বয়েজকে কেন “পিকী ব্লাইন্ডার্স” বলা হতো- যারা এই টিভি সিরিজটা দেখেছেন তারা চাক্ষুস দেখে থাকবেন, না দেখলে গুগল করলেই হবে, ওই সময়ের বার্মিংহাম বয়েজের সবাই এক ধরণের ক্যাপ পড়তো মাথায়, যেটা অনেকটাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের টেস্ট ক্যাপগুলোর মত, উদাহরণ হিসেবে দেয়া যায় অস্ট্রেলিয়ার ব্যাগি গ্রীণ ক্যাপ আর ওইসময়ের বার্মিংহাম বয়েজের মাথার ক্যাপ একই ডিজাইনের৷ ওই ক্যাপকে অরিজিনালি বলা হয় পিক(Peak), সেই ক্যাপের মাথায় এক ধরণের ধারালো ব্লেডের মত জিনিস লুকিয়ে রাখতো শেলবি’রা, যাতে ইমার্জেন্সি সময়ে প্রতিপক্ষকে সেই ব্লেড দিয়ে অন্ধ বা ব্লাইন্ড করে দেয়া যায়৷ এইনিয়ে বিখ্যাত জিলেট কোম্পানীর একটা বিজ্ঞাপনও আছে ১ম বিশ্বযুদ্ধের আগে কিংবা পরের সময়টায়! নরমালি ‘ব্লাইন্ডার’ শব্দের আরেকটা অর্থ হলো অবিশ্বাস্য ভাবে দারুণ কোনো একটা কাজ করা, বা একটা কাজ অলমোস্ট পারফেকশনের কাছাকাছি পর্যায়ে করা। সো ওই ব্লেড দিয়ে খুব ভালোভাবে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার কাজটা করতে পারতেন বিধায় সেই বার্মিংহাম বয়েজ এর নাম পরবর্তীতে ট্যাগড হয়ে গিয়েছিলো ‘পিকী ব্লাইন্ডার্স’ হিসেবে যেটার উপর বেজ করে নেটফ্লিক্স একটা গোটা টিভি সিরিজ বানিয়ে ফেলে ২০১৩ সালে। যেটারই একটা ডায়লগ শুরুতে দৃশ্য ০২ এ লেখা হয়েছে।

ওকে পাঠকরা, বিরক্ত হচ্ছেন? কেন ক্রিকেটের গ্রুপে এরকম একটা বহিরাগত টপিক নিয়ে লেখা হচ্ছে। অনেকটা সরকারী কলেজে বাইরের ছাত্ররা এসে বক্তব্য দেয়ার মত অবস্থা। ওকে পরের প্যারায় যাই-

উপরের বর্ণনা অনুযায়ী একজন পিকী ব্লাইন্ডার্স হলো মাথায় পিক বা ক্যাপ পরে নিজের ওপর দেয়া কোনো একটা কাজ অসাধারণ ভাবে করে দেখানো। তাহলে ভেবে দেখুন, এরকম কোনো কিছু মাথায় আসছে কিনা?

চলেন ফিরে যাই ২০১৯ বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়া বনাম নিউজিল্যান্ডের ম্যাচে, দৃশ্য ০১ এর কমেন্ট্রির সেই মুহুর্তে – স্টিভেন স্মিথ ব্যাটিং করার সময় কিউই ক্যাপ্টেন উইলিয়ামসন লেগ সাইডে মার্টিন গাপটিল কে দাড় করিয়েছিলেন, অনেকটা স্মিথের বগলের নিচে। যেই পজিশনটা না লেগ স্লীপ না লেগ গালী না শর্ট থার্ডম্যান৷ লকী ফার্গুসনের শর্ট বলটা তাও ওদিকেই খেললেন স্মিথ, আর ওয়ান অফ দ্যা বেস্ট ফিল্ডার ইন দ্যা ওয়ার্ল্ড, মার্টিন গাপটিল সেটা নিতে কোনোরকম ভুল করলেন না আর সাথে সাথেই ইয়ান স্মিথের সেই বিখ্যাত কমেন্ট্রি, “গাপটিল টেকস এন এবসলিউট ব্লাইন্ডার”

শব্দটা মনে পড়ছে? “ব্লাইন্ডার’ – চোখ বন্ধ করে দেখুন ক্যাচটা ওইরকম পারফেক্টলি নেবার সময় গাপটিলের মাথায় কি ছিলো, ক্যাপ! ক্রিকেটের বর্তমান ক্যাপই আগের যুগের ‘পিক’ এর আধুনিক ভার্শন যদিও টেস্ট ফরম্যাটে সেই বার্মিংহাম বয়েজ দের ডিজাইনের ক্যাপই পরা হয়।

পিকী সিচুয়েশনে একটা ব্লাইন্ডার নিলেন গাপটিল – কিছু একটা কানেকশন পাচ্ছেন এবার?

সো, সারমর্ম হলো এই, যে ক্রিকেটে দারুণ সব ক্যাচের ক্ষেত্রে আমরা প্রায়শই শুনে থাকি কমেন্টেটররা ব্লাইন্ডার শব্দটা ইউজ করে থাকেন, এই শব্দটা আসলে ওই সময়কার পিকী ব্লাইন্ডার্স দের থেকেই এসেছে! যেটা অনেক ক্রিকেট দর্শকেরই অজানা, এমনকী যারা এই সিরিজটি দেখেছে তাদেরও।

কথায় আছে,”If you want to be a criminal, You have to be organised first, You have to be perfect, need to outrage the enemy.” ক্রিকেটটাও তো তেমনি, ভালো ক্রিকেটার হতে হলে অর্গানাইজড প্র‍্যাকটিস, কনসেন্ট্রেশন, প্রতিপক্ষকে রীড করতে পারা এগুলোই জরুরী৷ একারণে যুগে যুগে টমাস শেলবিরা গ্যাং খুলে রাজত্ব করেছে, তাদের খারাপ ইন্টেনশন থেকে ভালো হ্যাবিট টা নিলে যেকোনো জায়গাতেই পজিটিভলি সফল হওয়া যায়। প্রতিটা কাজের প্রসেসই সবার কাছে উদাহরণ হওয়া উচিত, ফলাফলটা না। তাইতো একজন গ্যাংস্টারের কাছেও তার ভিশন, হার্ডওয়ার্ক, সেন্স এগুলো শিখতে পারা যায় র‍্যাদার দ্যান তার কাজের ফলাফল কারণ সেটা ভালো কিছু হয়না। একজন ক্রিকেটারকেও ভিশনারী হতে হয়, নিজের শক্তি-দুর্বলতা জানতে হয়, হার্ডওয়ার্কের তো বিকল্প নেইই, সাথে ক্রিকেটিং সেন্সটাও জরুরী।

——

নিরস এই লেখাটি শেষ করবো পিকী ব্লাইন্ডার্স দের বস টমাস শেলবি’র একটি উক্তি এবং ক্রিকেট নিয়ে একটি বিখ্যাত উক্তি দিয়েঃ

“I just put a bullet in his head…. He looked at me the wrong way.” Tommy Shelby
—-
“Cricket is the only sport in the world where you are absolutely horrible at something and you still need to go out and do it.”

শেষের ক্রিকেটিয় উক্তিটার মতই টম শেলবিও অনেকবার প্রতিপক্ষের হাতে মার খেয়ে আবার উঠে দাড়ায়, নিজের ব্যবসাকে উপরে তুলে নেয়, আর মার্টিন গাপটিলরাও মাঝে মাঝে ক্যাচ মিস করলেও আরেকটা ব্লাইন্ডার নিয়ে এগিয়ে যায়! জীবনটাও তো ক্রিকেটের মতই, মুহুর্তেই মোড় ঘুরে যায়, খাদের কিনারা থেকে ফিরে আসা, নিজের কাজটা সম্পূর্ণভাবে বুঝতে পারা, প্রতিভার সর্বোচ্চ ব্যবহার যেখানে পরিশ্রমের সান্নিধ্য চায়।

তথ্যসূত্রঃ পিকী ব্লাইন্ডার্স সিরিজ, উইকিপিডিয়া, বার্মিংহাম মেইল, জন ব্লেক পাবলিকেশন, আইসিসির ফেসবুক পেজ।
#স্টে_ক্রিকেটখোর

মতামত জানান :