ক্যারিবিয় দীপপুঞ্জে সেইবার হাবিবুল- আশরাফুলরা প্রথম পা রেখেছিল। বলছি ২০০৪সালের কথা, এতোবছর কেটে গেলো তবে এদিনের সে রশকস কি পুরাতন হলো না? না, মোঠেও না! আজো সেই “
ব্লাক ডাইমন্ড” এর কথা মনে হলে -লুসিয়া টেষ্টের কথা মনে পড়ে, মনে পড়ে সেদিনকার সব আলো কেড়ে নেওয়া বাংলাদেশ এর প্রথম সুপারস্টার(ধোঁয়াশা ও আছে) এর কথা!
বাংলার ক্রিকেট তখনো কচি শিশু! ঐতিহাসিক বিশেষ ক’টা ম্যাচ জেতা হলো তখনো, বলার মত গল্প তখনো অহরহ না বললেই চলে। আর ক্রিকেট নিয়ে যেহেতু কথা হবে, তখন কোন এক সুপারস্টার এর কথা হবে না তা ও কেমনে হয়? তবে, তখনকার বাংলার ক্রিকেটে আজকের মত বিশেষ স্টার ও ছিল না! যে নামে বাংলার ক্রিকেট ও চেনা যায় বহিবিশ্বে।
একটা সময় ছিল যখন পেসাররা রাজত্ব করেছে ২২গজে। বাউন্স, স্পিড, সুইং, ইয়রর্কার এসবের জন্য হলেও খেলা দেখত তখন। ছিল না আজকের মত ব্যাটসম্যানদের এতো সুবিধে, পিছগুলো হতো উভয়দিকে বিবেচিত! বিশ্বে যখন এই পেসাররা অগ্নিগোলার দাপড়ে বেড়াচ্ছে তখনো সবে স্ট্যাটাস পাওয়া বাংলাদেশে এমন স্পেশাল কেউ আসেনি।
সময়ের বিবর্তনে এসেছিল, পেয়েছিল তবে কেউ সে ওর কথা থাক বলবনা! কারণ আজ গল্পটা মেইড ইন জিঞ্জিরার!
হ্যা বলছি, বাংলার ক্রিকেটে স্পেশাল ” ফ্লাইট টার্নার” মোহাম্মদ রফিকের কথা! রফিক এর কথা শুনলেই মনে পড়ে ঘূর্নির কথা! এই প্রথম বাংলাদেশী স্পিনার যে ক্রিকেট বিশ্ব বাংলাদেশ স্পিনকে চিনিয়েছে! যেখানে অন্যান্য দেশের মত ফাস্ট, সুইং বোলার নেই যেখানে উল্টোপথে এসেছিল এই রফিক!
ফ্লাইট টার্ন ছিল তার বিশেষ গুন! ছয় আউন্সের চর্মগোলকটা তখনও তার চেয়ে ভালো পারত কি? উহু, মনে পড়ে না, পারত না। বাঘাবাঘা ব্যাটসম্যানদের বাম হাতের ভেল্কিতে কাবু করেছে শতবার! শুধুই কি বোলিং জানত, ব্যাটিং টা?
ধরা হতো তখন, আকরাম খানের পর মোহাম্মদ রফিককে হার্ডহিটার হিসেবে! খুব ভালো এবিলিটি ছিল তার – ব্যাটিং, ব্যাটিং নিয়ে ভাবলে সর্বপ্রথম এ ক্যারিবিয় দ্বীপে সেই প্রথম ওয়ানডেতে ৭৭রানের ইনিংসটা মারকুটে ব্যাটিং স্মরন হয়ে যায়, তবে তার ব্যাটিংকে মনে রাখার কারণ এটা নয়, এরপরের সেঞ্চুরীর জন্যই।
সেন্ট লুসিয়া টেষ্টে খেলতে নামে বাংলাদেশ স্বাগতিক উইন্ডিজের বিপক্ষে। উইন্ডিজ মানে এখনকার টুয়েন্টি স্পেশালিষ্ট বা দানবীর নয়! ছিল গ্যারি সোর্বাস, ভিভ রির্চাডস, গর্ডন গ্রিনিজ ও প্রমুখের ভয়ংকর স্মৃতি রেকর্ডের ফুলঝুরি! আর বিপরীতে বাংলাদেশ ছিল সম্মানের টেষ্টের ইজ্জত হারানো দল! যাই হোক পয়েন্টে আসা যাকঃ
২০০৪ সালে জিম্বাবুইয়ে সফর দিয়ে যেন নিজেদের টেস্ট খেলার যোগ্যতা কিছুটা প্রমাণ করতে সক্ষম হয় বাংলাদেশ দল। ফেব্রুয়ারিতে জিম্বাবুইয়ে সফরে গিয়ে হারারেতে হওয়া প্রথম টেস্ট লড়াই করে হারলেও বুলাওয়েতে দ্বিতীয় টেস্ট ড্র করে আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায় বাংলাদেশের। সেই আত্মবিশ্বাস নিয়েই প্রথমবার ২০০৪ সালের মে মাসে ক্যারিবীয় দ্বীপে হাবিবুলের নেতৃত্বে পা রাখে বাংলাদেশ।
সেন্ট লুসিয়ায় সিরিজের প্রথম টেস্ট মাঠে গড়ায় ২৮ মে। টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন হাবিবুল। কিন্তু ইনিংসের প্রথম বলেই হান্নান সরকার (০) সাজঘরে ফেরায় শুরুটা ছিল আশঙ্কাজনক। তবে দ্বিতীয় উইকেটে জাভেদ ওমর ও হাবিবুল ১২১ রানের বিশাল জুটি গড়ে সেই বিপদ সামাল দেন। জাভেদ ওমর ৩২ রানে সাজঘরে ফেরার পর তৃতীয় উইকেটে হাবিবুল-রাজিন সালেহ ৫০, চতুর্থ উইকেটে রাজিন-আশরাফুল ৫৬ রান করে ভালই এগিয়েছেন। কিন্তু হাবিবুল ১১৩ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলে ও রাজিন ২৬ রানে বিদায় নেয়ার পর ধস নামে। একাই আশরাফুল লড়াই চালিয়ে যান।
২৫০ রানে ৭ উইকেট পতনের পর আশরাফুলের সঙ্গে যোগ দেন মোহাম্মদ রফিক। বাঁহাতি এই স্পিনার ব্যাট হাতে কার্যকর ইনিংস খেলার অনেক উদাহরণ আগেই দিয়েছেন। বিশেষ করে বাংলাদেশ দলের প্রথম ওয়ানডে জয়ের নায়ক রফিক ওপেনার হিসেবে ৭৭ রাানের একটি দুর্দান্ত ইনিংস উপহার দিয়ে রীতিমতো আস্থাভাজন ব্যাটসম্যানও হয়ে উঠেছেন। সেই আস্থার প্রতিদান এদিন শেষ পর্যন্ত উইকেটে থেকে দিয়েছেন।
প্রথমদিনের বাকি ৮ ওভার ৪ বল নির্বিঘ্নে কাটিয়ে রফিক ১৭ রানে অপরাজিত থাকেন। আশরাফুল ৬৫ রানে ব্যাট করছিলেন, দলীয় রান ৭ উইকেটে ২৭৮।
তবে দ্বিতীয়দিন বৃষ্টির কারণে বেলা ২টা ৩০ মিনিটে খেলা শুরু হয়, দ্বিতীয়দিনের ২১তম ওভারেই সাজঘরে ফেরেন আশরাফুল ব্যক্তিগত ৮১ রানে। ভেঙ্গে যায় তাদের দশম উইকেটে ৮৭ রানের বিশাল জুটি। এর অনেক আগেই জিওফ লসনকে চার হাঁকিয়ে ফিফটি আদায় করেন রফিক মাত্র ৭১ বল থেকে।
আশরাফুলের বিদায়ে রফিক ব্যাট হাতে আরও দুরন্ত হয়ে ওঠেন। পরবর্তী আর ৬৭ বল খেলেই তিনি দ্বিতীয় পঞ্চাশ অর্থাৎ ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি আদায় করে নেন। বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস থেমে গেছে ৪১৬ রানে। তবে রফিকের সেই ঐতিহাসিক সেঞ্চুরিটিই অবিস্মরণীয় এক টেস্ট ড্রয়ের পথ তৈরি করে দেয়।
আজকের দিনেই রফিকের সেই লুসিয়া কাপানো সেঞ্চুরী আসে ।