২৪শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

অপেক্ষা……

প্রতিবেদক
Niloy Chowdhury
শনিবার, ৩০ মে , ২০২০ ৬:১০

বাবা বিদেশ থেকে আসার আগের রাতটা আমি কখনোই ঘুমাতে পারতাম না। সারা-রাত ছটফট করে কাটতো কখন ভোরের আলো ফুটবে। এরপর ভোর হতেই পরিপাটি হয়ে মাইক্রোবাসে চেপে রওনা দিতাম এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে। ওহ হ্যাঁ ; মাইক্রোবাসের ড্রাইভারের পাশের সিট কিন্তু আমার জন্য বরাদ্দ থাকতো।

জীবনের ওই সময়টা মনে হতো মাইক্রোবাসের প্রথম সিটে বসতে না পারাটাই জীবনের অন্যতম ব্যর্থতা! এয়ারপোর্টে পৌঁছানোর পর শুরু হতো দীর্ঘ অপেক্ষা। সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়তো আমার ফাস্ট ফুড খাওয়ার বায়না। একটা সময় ইমিগ্রেশনের যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে বেরিয়ে আসতেন।

বাবা অনেক বছর হলো স্থায়ীভাবে দেশে চলে এসেছেন, আমারও এখন এয়ারপোর্টে গিয়ে কোন বিমানটাতে চড়ে বাবা আসবেন তা কল্পনা করা হয়না, তবে আমার জায়গায় সেই অপেক্ষাটুকু করে এটা নিশ্চিত। কোন সন্তান তার পিতার জন্য, কিংবা প্রিয় মানুষগুলোর তাঁদের আপনজনের জন্য। অপেক্ষার পালা কখনো শেষ হয়না।

……. ……..

হেডিংলিতে রূপকথা লেখা বেন স্টোকসরাও অপেক্ষা করে, আরেকটা নতুন রূপকথার গল্প লেখার জন্য সেটা হতে পারে লর্ডস কিংবা এমসিজিতে। কিশোর ছেলেটার ফেবারিট ব্যাটসম্যানটাও আর্ম গার্ড একটু ঠিক করে নিয়ে অপেক্ষা করে পরবর্তী বলে আরেকটু পারফেক্ট শট খেলার জন্য। টেস্ট ক্রিকেটে সারাদিন টানা বল করে যাওয়া বোলারটাও অপেক্ষা করে শেষ বিকালে ব্যাটসম্যানের ছোট্ট একটা ভুলের।

সারাজীবন শচীন-লারাদের খেলা দেখে বড় হওয়া মানুষগুলো অপেক্ষা করে কোহলি কিংবা স্মিথের ব্যাটিং দেখার। কখনো সংবাদপত্রে চোখ না বুলানো ও পাড়ার রকস্টার ছেলেটাও অপেক্ষা করে পরবর্তী দিন পত্রিকার প্রথম পাতায় নিজ দলের জয়ের ছবি দেখার। গম্ভীর-রাগী অংকের মাস্টারমশায়ও চুপিচুপি অপেক্ষা করেন প্রিয় খেলোয়াড়টি মাঠে নামার।

গ্রামের স্কুলপড়ুয়া ছেলেটা অপেক্ষা করে ঈদের আগের রাতে বাবার বাড়ি ফেরার। সেই রাত আসার বেশ কয়েক রাত আগে থেকেই মাঝ রাতে লঞ্চের ভটভট শব্দে তার ঘুম ভেঙ্গে যায়। সে বুঝতে পারেনা বা বুঝতে চায়না ছোট একটা হৃদয়ে তার কত অপেক্ষা করা বাকি? বাবা যে ক্রিকেট ব্যাটটা এইবার আনবে সেটাতে যত্ন করে প্রিয় ক্রিকেটারের স্টিকার লাগানো যে বাকি!

সেই ব্যাট নিয়ে সে যখন বড় ছয় মারবে দূর থেকে মনে হবে যেন তার সেই প্রিয় ক্রিকেটার খেলছেন সে নয়! সেই ব্যাট নিয়ে মোড়ের চায়ের দোকানে বসে অপেক্ষা করবে কখন প্রিয় ক্রিকেটার শতক হাঁকাবে, সে বুক ফুলিয়ে বলবে দেখ ওর মতো ব্যাট আমারো আছে! অবশ্য সেই চা দোকানী অপেক্ষা করে ম্যাচটা আরেকটু জমজমাট হয়ে ওঠার। ক’কাপ চা তাহলে আরো বেশি বিক্রি হবে!

………..

আমার মতো কিছু ক্রিকেটপাগল নবীন প্রবীন অপেক্ষা করে কখন আবার সবুজ ঘাসে ক্রিকেট ফিরবে আপন মহিমায়! ক্রিকেটখোররা অপেক্ষা করে সুস্থ শহরে সেরা লড়াইয়ে মাঠে নামবে, ম্যাচ শেষ হতেই কীবোর্ড দিয়ে তা তুলে আনবে পাঠকদের জন্য। অপেক্ষার পালা একদিন নিশ্চই ফুরোবে, প্রিয় মানুষগুলোকে সাথে নিয়ে সেদিনটা উদযাপন হবে, থাকবেনা কোন ভয় শংকা আর বিধিনিষেধ!

কত মানুষই তো সারাজীবন অন্যকে সুখী করে অপেক্ষা করে নিজে একটু সুখী হওয়ার, কত ক্রিকেটার-ই তো চান জীবনের সব সমস্যা ছয় মেরে গ্যালারীতে ফেলতে, সব সময় তা সম্ভব হয়ে ওঠেনা। তবুও সবাই অপেক্ষা করে। তাঁদের অপেক্ষা শেষ হলে নতুন কেউ এসে জায়গাটা দখল করে। এই অপেক্ষা কখনো কাঁদায়, কখনো হাঁসায় তবুও একজীবনে মানুষের অপেক্ষা আর শেষ হয়না।

“ঈদ মোবারক”

মতামত জানান :