ক্রিকেটের সবচেয়ে দুর্লভ গুণের অধিকারী কে? উত্তরে ব্যাটার কিংবা বোলার আসতেই পারে। কিন্তু সবচেয়ে দুর্লভ গুণের অধিকারী বলা যায় অলরাউন্ডারদের। কেননা ব্যাটিং কিংবা বোলিং দুইদিকেই রয়েছে তাদের সমান পারদর্শীতা। কোনো এক বিভাগে খারাপ করলেও অলরাউন্ডারদের সামনে সুযোগ থাকে অন্য বিভাগে ভালো করে নজরে আসার। তেমনি সাকিবও এসেছেন নজরে, ঠিক সেরাদের কাতারে। তবুও কোথায় একটু আক্ষেপ; একটু শূন্যতা।
সাকিব আল হাসান; দেশসেরা অলরাউন্ডার। বিশ্বের অন্যতম সেরা একজন। বাংলাদেশের জার্সিতে সাদা পোশাকে সাকিব যেখানে পৌঁছেছেন সেখানে তাকে আলিঙ্গন করেছেন ইয়ান বোথাম, গ্যারি সোবার্স, কপিল দেব কিংবা জ্যাক ক্যালিসরা। কেননা টেস্টে চার হাজার রান ও দুইশো উইকেটের এলিট ক্লাবের নতুন সদস্য সাকিব, সেটিও দ্রুততম হিসেবে। এটি নিয়ে গর্ব করা যায়, লেখা যায় দুরন্ত সাকিবের রূপকথার গল্প।
একনজরে দেখে নেওয়া যাক টেস্ট ক্রিকেটে দ্রুততম ৪০০০ রান ও ২০০ উইকেট শিকারী অলরাউন্ডারদের:
- সাকিব আল হাসান – ৫৯ ম্যাচ।
- ইয়ান বোথাম – ৬৯ ম্যাচ।
- গ্যারি সোবার্স – ৬৯ ম্যাচ।
- কপিল দেব – ৬৯ ম্যাচ।
- ডেনিয়েল ভেট্টোরি – ৬৯ ম্যাচ।
- জ্যাক ক্যালিস – ৬৯ ম্যাচ।
এখানে সেরাদের সেরা সাকিব। তাহলে আক্ষেপ কোথায়? কোথায় গল্পটা ভিন্ন হতে পারতো? এবার একটু বাংলাদেশ ক্রিকেটে ফিরে আসি। ফিরে আসি সাদা পোশাকের ম্যাচে। যেখানে ৭৭ টি ম্যাচ খেলা মুশফিক রয়েছেন সর্বোচ্চ ম্যাচ খেলার তালিকায় শীর্ষে। সেখানে ৫৯ ম্যাচ খেলা সাকিবের অবস্থান চতুর্থ স্থানে। তবে আক্ষেপের গল্পের শুরুটা এই বিষয় নিয়ে নয়, গল্পটা শেষ ৫ বছরের!
পরিসংখ্যান বলে সর্বশেষ পাঁচ বছরে বাংলাদেশ টেস্ট খেলেছে ৩১ টি, যেখানে সাকিব টেস্ট খেলেছে মাত্র ১৫ টি! এখন অনেকের প্রশ্ন থাকতে পারে নিষেধাজ্ঞায় ছিলেন এক বছর। তাদের প্রশ্নের উত্তরে সেই এক বছরে মাত্র ৪ টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছিলো বাংলাদেশ। এখানে ৩১ থেকে ৪ টা ম্যাচ বাদ দিলেও বাকি ২৭ ম্যাচে সাকিবের উপস্হিতি ১৫ ম্যাচে। বাকি ম্যাচগুলোতে নানান কারণে দেখা মেলেনি সাকিবের।
এবার আরেকটা আফসোসের গল্পে ফিরতে চাই। যেখানে শেষ পাঁচ বছরে সাকিবের রান ঠিক ১১০০ ও উইকেট সংখ্যা ৫৬ টি। এখানে সাকিবের পারফরম্যান্সও ছিলো দারুণ। কিন্তু নানান কারণে ম্যাচগুলো মিস করায় সেরাদের কাতারে যাওয়া সাকিবের আরেকটু উপরে ওঠা সম্ভব হয়নি। দিনশেষে আক্ষেপ এটাই।
পরিসংখ্যান বলে সর্বশেষ ৫ বছরে ২৭ ম্যাচ খেলা মুশফিকের রান ২১০৬; ২৪ ম্যাচ খেলা তাইজুলের উইকেট ১০১ টি। এছাড়াও মিরাজের পারফরম্যান্সও নজরকাড়া। এখানে মাত্র ১৫ ম্যাচ খেলা সাকিবকে নিয়ে আফসোস করতেই হয়। এতগুলো টেস্ট মিসের ফলে এতগুলো উইকেট আর রানের যে রেকর্ড সুযোগ হাতছাড়া হয়েছে হচ্ছে আর সামনে হবে তার যন্ত্রণায় একজন সাকিব ভক্তের দিন রাত হারাম হওয়ার জন্য যথেষ্ট। অথচ ক্যারিয়ার শেষে সাকিবের নামের পাশে ৬০০০ টেস্ট রান ও ৩০০ টেস্ট উইকেটের দাবী ছিলো ক্রিকেটভক্তদের।
সবশেষে কিছু কথা…..
বাস্তবতা বড্ড কঠিন, যেখানে বাংলাদেশ টেস্ট খেলার সুযোগ করে নিতে পারে খুবই কম। সেখানে সাকিবের এতগুলো টেস্ট মিস! একজন সাকিবভক্ত সবসময় ক্যালকুলেটরে তার উইকেট ও রানসংখ্যা সমৃদ্ধির স্ট্যাট হিসেব করতে মুখিয়ে থাকে বাংলাদেশের প্রতিটি টেস্টে। এসব ভক্তকূল এখন মুখে না বললেও বেশ কষ্টে আছে কেননা পছন্দের কেউ সুযোগ পেয়েও তার ক্যারিয়ারটা আরো সমৃদ্ধির পথে হাঁটছেনা কেনোনা তারাও চায় তাদের নায়ককে গ্রেটদের পাশে ক্যারিয়ার শেষে দেখতে। তারাও জানে আইপিএলে সাকিবের বেঞ্চে বসে থাকা আর নামের সাথে অসামানজস্য পারফর্মেন্স গতবারের মত এবারও পিরা দিবে তাদের। দিনশেষে সাকিবকে সেরাদের কাতারে দেখতে চাওয়াটা আমাদের অন্যায় নয়, এটা আমাদের দাবী। সাকিবের কাছ এই দাবী করতেই পারি। কিন্তু নানান কারণে টেস্ট সিরিজগুলো মিস করছেন সাকিব। এতে করে আমাদের মতো সাধারণ ভক্তদের কাছে তাকে নিয়ে আক্ষেপ রয়েই যায়। ক্যারিয়ার শেষে সাকিব আরও উপরে উঠবে নিশ্চয়ই; তবে শেষের গল্পটা আরও রাজকীয় হতে পারতো! সেটি আর সম্ভব না কখনোই।