অ্যাশেজ মানেই যেখানে উত্তেজনা চরমে সেখানে ইংরেজরা যেনো বিপাকে। কেন কোনো প্রতিযোগীতা, ঠিক যেনো অসহায় আত্মসমর্পণ। কিন্তু এভাবে যে চলেনা। তাইতো তাদের পরিকল্পনাতেও এলো পরিবর্তন, যেখানে বার্নস ওপেনিং বল মোকাবিলা করবেন সেখানে তাকে পাঠানো হয় নন স্ট্রাইক প্রান্তে। পরিবর্তনেও যেনো বার্নস নিষ্ফল; ফিরেছেন মাত্র ১০ রানেই। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে হামীদকে সাথে নিয়ে লড়াইয়ের চেষ্টা চালিয়েছিলেন মালান, কিন্তু হামীদ দিতে পারেনি যোগ্য সঙ্গীর প্রতিদান; ফিরেছেন ২৭ রানে।
২৭৮ রানে পিছিয়ে থেকে ব্যাটিংয়ে নামা ইংল্যান্ড তখন ইনিংস হারের লজ্জায় পড়ার উপক্রম! কিন্তু ২১ এ ব্যাট হাতে দুর্দান্ত রুট কি এতো সহজেই হাল ছেড়ে দিতে পারে? উত্তরটা ব্যাটের পরশেই দিয়েছেন রুট। মালানকে সাথে নিয়ে শুরু করেছেন দলকে বাঁচানোর চেষ্টা। মালানও এবার রুটকে হতাশ করেনি, দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে রুটকে দিয়েছেন যোগ্য সঙ্গী, নিজের রান সংখ্যাও নিয়েছেন বাড়িয়ে।
মারকাটারি ফর্মেটে যিনি র্যাংকিংয়ে দুই নাম্বার ব্যাটার সেই তিনিই যেনো টেস্টে বদলে ফেলেছেন নিজেকে। স্টার্ক, হ্যাজেলউড কিংবা কাপ্তান ক্যামিন্সের সাথে লায়নরা তো রয়েছেই। পেছন থেকে স্লেজিং তো রয়েছেই। সবকিছু ছাপিয়ে ঠান্ডা মাথায় কি দারুণ ব্যাটিং! দিনশেষে ৪৫ স্ট্রাইকরেটে ঠিক ৮০ রানে অপরাজিত মালান। আহ কি অসাধারণ ইনিংস। অ্যাশেজ হয়তো এই কারণগুলোর জন্যই দুর্দান্ত হয়ে উঠে।
আপনি রুটকে দেখুন, শুরুতে কিছুটা এলোমেলো রুট সময়ের সাথে সাথে গুছিয়ে নিয়েছে নিজেকে। কাপ্তানদের যে একটু বেশীই দায়িত্ব, আর সেটি যদি হয় অ্যাশেজে তাহলে দায়িত্বটা যে আরও বেশী। রুটও করেনি হতাশ, গাব্বায় অজি দর্শকদের যেনো চুপ করিয়ে দিয়েছেন ব্যাটিং কারিশমায়। নিজেও এগুচ্ছেন এক ইয়ারে টেস্ট ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশী রানের লড়াইয়ে শীর্ষ স্থান দখলে। লক্ষ্যটা সহজ না হলেও অসম্ভব নয় রুটের কাছে, সেটি প্রমাণ করে দিনশেষে অপরাজিত থেকে মাঠ ছেড়েছেন ৮৬ রানে। অধিনায়কদের তো এমন দায়িত্ব নিয়েই খেলতে হয়!
চলতি বছরে এখন পর্যন্ত রুটের রান ঠিক ১৫৪১! শীর্ষে যেতে দরকার ঠিক ২৪৮ রান দরকার, হাতে এই ইনিংস বাদে ৪ ইনিংস। এই ৮৬ রানের ইনিংসটি যদি বড় করতে পারে তাহলে ম্যাচ জমে উঠার সাথে রুটও এগিয়ে যাবে শীর্ষ স্থানের লড়াইয়ে। এবার ফিরি গাব্বায়।
তৃতীয় উইকেট জুটিতে মালান-রুটের সংগ্রহ ১৫৯ রান, ২৯৪ বলের এই জুটি যেনো ইংল্যান্ডকে রেখেছে ম্যাচে। যদিও হারের লজ্জা থেকে বাহির হবার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। তাতে কি? হারের আগে হার মানতে নারাজ রুট কিংবা মালান, তাইতো নিজেদের শেষ চেষ্টা করে চলছেন গাব্বার বাইশ গজে। ক্যামিন্স-স্টার্কদের দুর্দান্ত বোলিংয়ের বিপরীতে।
তৃতীয় দিনশেষে ইংল্যান্ড পিছিয়ে ৫৮ রানে, রুট-মালান অপেক্ষায় সেঞ্চুরির উদযাপনে। চতুর্থ দিনের সকালটি কেমন হবে সেটিই দেখার বিষয়। সামারের সকালটিও হতে পারে দুই দলের লড়াইয়ের শেষ গল্প; হতে পারে অ্যাশেজের বীরত্বের গল্পও। আপাঃতত তৃতীয় দিনের গল্পটা যাদের ঘিরে তাদের একজন ফিরছেন ব্যাট উঁচিয়ে, আরেকজন যেনো এখনো নিজের সেরাটার খোঁজে….

(Photo by Bradley Kanaris/Getty Images)