(Photo by Alex Davidson/Getty Images)
ক্রিকেট যদি ভদ্রলোকের খেলা হয় মানুষটি সেখানে নিপাত এক ভদ্রলোক। নতুন কিংবা পুরোনো বল, সুইংয়ে ব্যাটারদের করেন কপোকাত। একটুখানি উল্লাস, নেই কোনো বাড়তি উদযাপন। কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে তৈরি হোন নতুন লক্ষ্যে। এরপর আবার ছুটে আসা, কিউই ক্রিকেটের সুইং রাজাও বলা যায় তাকে। হালের বোল্ট কিংবা ওয়াগনারদের গল্পে যাবোনা আজ। গল্পটা শুধুই টিম সাউদিকে ঘিরে।
সাদা কিংবা রঙিন পোশাক, বল হাতে বাইশ গজে সাউদি এক ভয়ংকর নাম। এমনও দিন গিয়েছে সাউদির বল সুইং করেছে প্রায় ৪৩ সেন্টিমিটার! অফ স্ট্যাম্পের সামান্য বাহিরে পড়া বলটিও ভেঙে দিয়েছে স্ট্যাম্প। ব্যাটার তাকিয়ে অবাক চোখে, ততক্ষণে তার কিছুই করার ছিলোনা। সাউদি তো এমনি, যিনি সুইং বিষে নীল করেছে প্রতিপক্ষের বাঘা বাঘা ব্যাটারদের। সাউদির নাম উঠলেই ভেষে উঠে সোনালী স্মৃতি। যেনো স্মৃতিগুলো বড্ড তরতাজা, কারো কাছে তো অমৃতের মতো।
সুইং বিষে বাইশ গজে সাউদি কখনও চালিয়েছেন স্লাইক্লোন! আবার কখনোবা চালিয়েছেন ধ্বংসলীলা। প্রতিপক্ষের টপ অর্ডার ধ্বসে দিয়েছে মুহূর্তেই। নতুন কিংবা পুরোনো বল, সাউদি সবখানেই যেনো রাজা, সুইংয়ের রাজা। বিশেষ করে ডানহাতি ব্যাটসম্যানদের কঠিন পরীক্ষায় মুখোমুখি হতে হয় সাউদির বোলিংয়ে। সাউদি আউট কিংবা ইন সুইং দুটিই করাতে পারেন বেশ। বাউন্সি কিংবা এশিয়ার স্পিন উইকেটেও সাউদি দুর্দান্তই বটে।৷ সাউদি যেনো মাঠে নামেন নিজেকে প্রমাণের ক্ষুধা নিয়েই।
কিউইদের জার্সিতে বেশকিছু স্মৃতিতে জড়িয়ে সাউদির নাম, ক’দিন আগে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশীপ ঘরে তুলেছিলো কিউইরা, সেখানেও সাউদির অবদান বেশ। রঙিন পোশাকের টি-২০ ফরম্যাটেও নিজেকে নিয়েছেন অনন্য উচ্চতায়, করেছেন উইকেটের সেঞ্চুরি। ওয়ানডে ক্রিকেটেও সাউদি বেশ উজ্জ্বল, বিশ্বমঞ্চেও দুর্দান্ত বলতে হয় সাউদিকে। বোলিংয়ের পাশাপাশি ব্যাট হাতেও দলকে করে থাকেন রক্ষা কিংবা শেষ দিকে এনে দেন লড়াইয়ের পুঁজি। এবার মূল গল্পে ফেরা যাক, যেখানে সাউদির কিছু পুরোনো স্মৃতি নতুন করে জেনে নেওয়া যাক-
• সাদা পোশাকে রঙিন শুরু…
সাদা পোশাকে রঙিন শুরু! এটা কিভাবে সম্ভব? উত্তরে ২০০৮ সালে ফিরতে হয়। সবেমাত্র সাদা পোশাকের অভিষেক ক্যাপ মাথায় চেপেছেন। টগবগে এক তরুণ, বল হাতে দুর্দান্ত শুরু, ভনকে দারুণ এক বলে এলবিডব্লুউয়ের ফাঁদে ফেলে উল্লাস। এটাই তো সাউদির সাদা পোশাকে প্রথম উইকেট। এরপর একে একে আরও চার ব্যাটারকে দেখালেন সাজঘরের পথ। ততক্ষণে নিজের টেস্ট অভিষেকেই স্পর্শ করলেন পাঁচ উইকেটের মাইলফলক। এটাকে স্বপ্নের মতো শুরু বলায় যায়।

(Photo by Clive Rose/Getty Images)
• সেরা বোলিং ফিগার যখন এশিয়ার মাটিতেই!
শুরুতেই বলেছি, সাউদির সুইং সবখানেই দুর্দান্ত। যদি তাই না হতো তাহলে চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে এই ইনিংসে ভারতের সাত ব্যাটারকে সাজঘরের পথ দেখানোর সৌভাগ্য হতোনা তার। জ্বী ঠিকই পড়েছেন, ২০১২ সালে ভারতের বিপক্ষে মাত্র ৬৪ রানে ৭ উইকেট সংগ্রহ করেছিলেন তিনি। এটিই সাউদির সাদা পোশাকে সেরা বোলিং ফিগার।

(Photo by Gurpreet Singh/Hindustan Times via Getty Images)
• অলরাউন্ডার সাউদি!
সুইং রাজা আবার অলরাউন্ডার কি করে? এমন প্রশ্ন আসতেই পারে। তবে উত্তরটা সাউদি দিয়েছেন ব্যাটে বলে। টেস্টে ফিফটি ও পাঁচ উইকেটের ঘটনা কম নেই। সেখানে সাউদিই বা পিছিয়ে৷ থাকবে কেন? থাকেনও নি। এই গল্পটা একবার নয়, দুই দুইবার করে দেখিয়েছেন তিনি। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২০০৮ সালে ব্যাট হাতে ৭৭* ও বল হাতে ৫৫/৫ উইকেটের পর এই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২০১৮ সালেও এমন কীর্তি গড়েছিলেন তিনি।

(Photo by Sandra Mu/Getty Images)
• ব্যাটার সাউদি দ্বিতীয় যেখানে!
মূলত বোলাট হলেও সাউদি পিছিয়ে নেই ব্যাটিংয়েও। টেস্টে সর্বনিম্ন ১০০০ রান করা ব্যাটার তালিকায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্ট্রাইকরেটে রান করেছেন সাউদি। ৮১ ম্যাচে ৮৪.১৬ স্ট্রাইকরেটে ১৭৩৭ রান করেছেন সাউদি। আহ সাউদি, ইউ বিউটি।

• ছক্কা সাউদি!
টেস্ট ক্রিকেটে ছক্কা দেখা যায়না তেমন, সেখানে এক ইনিংসে ৯ টা! জ্বী হ্যা, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২০০৮ সালে ৭৭ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলা সাউদি ছক্কা হাঁকিয়েছিলেন ৯ টি। যেখানে তার চারের সংখ্যা ছিলো ঠিক চারটি। এখানেই শেষ নয়, টেস্টে এক ইনিংসে সর্বোচ্চ ছক্কা হাঁকানোর তালিকায় সাউদির স্থান নবম। এখানে শেষ হতে পারতো গল্প, কিন্তু চোখ আটকে গেলো আরেক জায়গায়। টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে সর্বোচ্চ ছক্কা হাঁকানো ব্যাটারদের মাঝে ৭৪ টি ছক্কা হাঁকিয়ে সাউদি রয়েছেন ১৫ নাম্বারে। আহ!!

(Photo by Clive Rose/Getty Images)
• সাউদি-ওয়াটলিংয়ের রসায়ন!
টেস্ট ক্রিকেটে কিপারদের ভূমিকা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। সেখানে ওয়াটলিং যেনো সাউদির জন্য এক প্রকার সৌভাগ্য হয়ে এসেছে। কেননা টেস্টে সাউদির বলে কিপার ওয়াটলিং ক্যাচ নিয়েছে ৭৩ টি। এটিকে দুর্দান্ত বলতেই হয়।

• ক্রাইস্টচার্চে ওয়াটলিংয়ের সাথে রেকর্ড জুটি!
বোলার সাউটি কিপার ওয়াটলিংকে রেখেছিলেন ব্যস্থ। এবার ব্যাটিংয়েও ছাপিয়ে গিয়েছিলেন ওয়াটলিংকে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দল যখন ধুঁকছিলো মাত্র ৬৪ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে। তখনি সাউদি বনে গিয়েছিলেন ব্যাটার। ওয়াটলিংয়ের সাথে ৭ম উইকেট গড়েছিলেন ১০৮ রানের অসাধারণ এক জুটি। যেটি ক্রাইস্টচার্চে সাদা পোশাকে ৭ম উইকেটে সর্বোচ্চ রানের জুটি।
• ১০ এ সাত!
এবার গল্পটা রঙিন পোশাকে, সেটিও বিশ্বমঞ্চে! ২০১৫ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে কি তাণ্ডবটাই না চালিয়েছিলেন সাউদি! মাত্র ৩৩ রানে পকেটে পুড়েছিলেন সাত উইকেট। এখানেই শেষ নয়, এদি ওয়ানডে ক্রিকেটে ৭ম সেরা বোলিং ফিগার এবং বিশ্বকাপে সাত উইকেট শিকারী চার বোলারের একজন!

(Photo by Mark Kolbe/Getty Images)
• তিনে তিন…
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সাউদির রেকর্ডের কমতি নেই। এবারের গল্পটি ২০ ওভারের ম্যাচে। পাকিস্তানের বিপক্ষে পুরোনো বলেও সাউদি ছিলেন ভয়ংকর, চালিয়েছিলেন স্লাইকোন। টানা তিন বল তিন উইকেট নিয়ে মেতেছিলেন হ্যাটট্রিকের উদযাপনে। যেদি ছিলো টি-২০ ক্রিকেটে তৃতীয় হ্যাটট্রিকের ঘটনা।

(Photo by Phil Walter/Getty Images)
• লর্ডসে অনার্স পাস!
সাউদি সেরা, সাউদি কিংবদন্তি। একজন সেরা বোলার অনার্স পাস করবে না তা কি করে হয়? লর্ডসের অনার্স বোর্ডে নাম লেখানো যে খুব সহজও নয়। তবে সাউদির কাছে যে অসম্ভব কিছুই নেই। ঘটনাটি ২০১৩ সালে, লর্ডসে প্রথম ইনিংসে পাশ করতে গিয়েও পাস করা হয়নি তার। তাতে কি? নিজেকে প্রমাণের ক্ষুধা ঠিকই স্বপ্ন দেখিয়েছিলো সাউদিকে। তাইতো নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে বল হাতে তাণ্ডব চালিয়ে পকেটে পুড়েছিলেন ৬ উইকেট। নাম লিখিয়েছিলেন লর্ডসেড অর্নাস বোর্ডে! সেটিই সাউদির টেস্টে ম্যাচ সেরা বোলিং।

(Photo by Anthony Devlin/PA Images via Getty Images)
এমন অনেক স্মৃতিতে জড়িয়ে আছে সাউদির নাম। রয়েছে তিন ফরম্যাটেই কমপক্ষে ১০০ উইকেটের মাইলফলক। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বর্তমান সময়ের অন্যতম সেরা পেসারদের একজন তিনি। জেনুইন পেসার হয়েও ব্যাট হাতে দলকে এনে দেন লড়াইয়ের পুঁজি কিংবা দ্রুত গতিতে বাড়িয়ে নিতে পারেন রানের চাকা। এছাড়াও কিউইদের নেতৃত্ব দেন সামনে থেকে।
সাদা পোশাকে সেঞ্চুরি না পাওয়া ব্যাটারদের তালিকায় রানের দিক দিয়েসাত নাম্বারে থাকা সাউদি টি-২০ ক্রিকেটে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেটের মালিক। বাইশ গজে কিপারকে ব্যস্থ রাখার কাজে বেশ পটু এই সুইং কিং।
বর্তমান সময়ের অন্যতম সেরা এই ক্রিকেটার ১৯৮৮ সালের আজকের দিনে জন্ম নেন নিউজিল্যান্ডের নর্থল্যান্ড রিজিয়নের হোয়াঙ্গারেই এলাকায়। ৩২ পেরিয়ে ৩৩ এ পা দেওয়া সাউদিকে জানাই জন্মদিনের শুভেচ্ছা।
শুভ জন্মদিন দ্য সুইং কিং!