১৩ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

এবিডি; দ্য সুপারম্যান অব ওয়ার্ল্ড ক্রিকেট!

প্রতিবেদক
Arfin Rupok
বৃহস্পতিবার, ১৭ ফেব্রুয়ারি , ২০২২ ১২:২৮

নিশ্চিত পরাজয় সামনে; তবুও হাল ছাড়তে নারাজ তিনি। ক্রিকেটের বাইশ গজে দ্রুতগতির পেসাররাও তার কাছে যেনো খেলার পুতুল! অবিশ্বাস্য শট, দুর্দান্ত ধারাবাহিকতার সাথে উদ্ভাবনী শট খেলে বোলারদের ডুবিয়েছেন হতাশায়। লিখেছেন কাব্য থেকে মহাকাব্য। দ্রুতগতিতে বদলে দিয়েছেন ইতিহাস। তিনি আব্রাহাম বেঞ্জামিন ডি ভিলিয়ার্স; দ্য সুপারম্যান অব ওয়ার্ল্ড ক্রিকেট।

  • সুপারম্যান! আসলেই কি তাই?
  • হয়তো তাই।

ইচ্ছে ছিলো বড় হয়ে ডাক্তার হবেন, মানবসেবায় নিয়োজিত রাখবেন নিজেকে। কিন্তু তা আর হয়েছিলো কই? যেই মানুষটির মানবসেবা করার ইচ্ছে ছিলো সেই তিনিই আবিভূত হয়েছিলেন বোলারদের যমদূত হয়ে! স্কুলের সেরা ছাত্রটি ডাক্তার না হলেও হয়েছেন বিশ্বসেরা ব্যাটসম্যানদের একজন। নামের পাশে যুক্ত করেছেন মিস্টার ৩৬০° তকমা। বাইশ গজে প্রিয় ব্যাটটি প্রায় হয়ে উঠেছিলো খাপখোলা তলোয়ার! ১৪২-৪৫ গতির বলটিও শুয়ে-বসে অবলীলায় পাঠিয়েছেন জনসমুদ্রে। ক্রিকেটের ব্যকরণকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে খেলেছেন উদ্ভাবনী সব শট। অসম্ভবকে সম্ভব করে দলকে জিতিয়েছেন বহুবার। গড়েছেন গৌরবময় কিছু অধ্যায়।

বাইশ গজে ব্যাটিংয়ে সুর তোলা এবিডি শুধু ক্রিকেটেই সীমাবদ্ধ ছিলেন না। দুর্দান্ত ছিলেন রাগবিতেও! সাঁতার প্রতিযোগীতায় জিতেছেন ট্রফি, ব্যাডমিন্টনে স্কুল পর্যায়ে হয়েছিলেন চ্যাম্পিয়ন। টেনিস, গলফ সবকিছুর সাথেই যুক্ত ছিলেন তিনি। সবমিলিয়ে এমন একটা চরিত্রকে সুপারম্যান তকমা কি দেওয়া যায়না? অবশ্যই যায়।

  • তবু্ও কি খটকা লাগছে সুপারম্যান বলতে?
  • আচ্ছা আসুন এবার আপনাদের কিছু গল্প শুনাই।

একটু পিছনে ফিরে যাই। সময়টা ১৮-ই জানুয়ারি ২০১৫ সাল। প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এবিডির ব্যাটিং তাণ্ডব দেখেছেন নিশ্চয়! হ্যাঁ, সেদিন রূপকথার গল্পের মতো বদলে গিয়েছিল ইতিহাস। ৫৯ মিনিটের সেই গল্পে ইতিহাস লিখেছিলেন নতুন করে। ১৬ বলে ফিফটি আর ৩১ বলে তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগারে পৌঁছাতেই জয়াসুরিয়া-এন্ডারসনের কীর্তিগুলো টপকে গিয়ে নতুন ইতিহাস রচিত করেছিলেন তিনি। গড়েছিলেন দ্রুততম ফিফটি এবং সেঞ্চুরির রেকর্ড। সেদিন মাত্র ৫৯ মিনিটে ১৬ ছক্কায় খেলেছিলেন ১৪৯ রানের টনের্ডো ইনিংস।

এখানেই শেষ নয়! ক্রিকেট মাঠে ব্যাটিংয়ে ঝড় তুলে ওয়ানডে ক্রিকেট ইতিহাসের দ্রুততম দেড়শোর রেকর্ডটিও রেখেছেন নিজের করে। ক্রিকেট মাঠের চারপাশটা মাতিয়ে রাখা যেনো তার কাছে নিতান্তই সহজ বিষয়! সবমিলিয়ে তাকে সুপারম্যান বলতে গিয়ে দ্বিধাতে ভুগবে এমন মানুষ খুঁজে পাওয়াই কষ্টকর!

আচ্ছা, এবিডির সুপারম্যান হওয়ার পেছনের গল্প কেমন ছিলো?

ভিলিয়ার্স ছিলেন বাবা-মায়ের ছোট সন্তান। বাবা ছিলেন ডাক্তার, পাশাপাশি রাগবিতেও ছিলেন বেশ পটু। সেই ছোট বেলা থেকেই বাবার সংস্পর্শে বড় হওয়া এবি ডি ছিলেন রিয়েল অলরাউন্ডার! উৎসাহ একজন মানুষকে সফলতার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছাতে পারে সেটির বাস্তব উদাহরণ এবিডির বাবা। ছোট বেলায় এবি ডি তার বাবার উৎসাহে এতোটাই প্রভাবিত হয়েছিলেন যে রাগবি, সাঁতার, হকি, ব্যাডমিন্টনের সাথে ফুটবলেও জিতেছিলেন পুরষ্কার। এখানেই শেষ নয়, ক্রিকেটে আগমনের পূর্বেই জিতেছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার সবচেয়ে প্রতিভাবান ক্রীড়াবিদের পুরষ্কার। আহ; এ যে কল্পনাকেও হার মানিয়ে দেয়।

খেলাধুলার পাশাপাশি পড়াশোনাতেও ভিলিয়ার্স ছিলেন বেশ মনোযোগী। স্কুল জীবনে ভিলিয়ার্স একটি আশ্বার্যজনক সাইন্স প্রজেক্ট করে চমকে দিয়েছিলেন সবাইকে, নেলসন ম্যান্ডেলার থেকে পেয়েছিলেন জাতীয় পুরষ্কার। আহ! এবি ডি; দ্য সুপারস্টার।

এবি ডি স্কুল জীবনে সঙ্গী হিসেবে পেয়েছিলেন জ্যাক রুডলফস এবং ডু প্লেসিসকে। সেই স্কুল জীবনেই ক্রিকেটে ঝুঁকে পড়া এবি ডি প্রিয় মায়ের ইচ্ছেকে মূল্যায়ন করে ক্রিকেটকেই বেছে নিয়েছিলেন পেশা হিসেবে। ২০০২ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে মাঠ মাতানো এবিডি ২০ বছরেই গায়ে জড়িয়েছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার সাদা পোশাকের জার্সি; সেই থেকেই শুরু হয়েছিলো নতুন পথচলা। সুগম হয়েছিলো সুপারম্যানের এগিয়ে চলার পথ।

ক্রিকেটকে আঁকড়ে ধরে এগিয়ে চলতে শুরু করা এবি ডি ২০০৫ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার রঙ্গিন পোশাকটিও জড়িয়েছিলেন গায়ে। এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। চলতি পথে বাঁধা এলেও নিজ হাতেই সরিয়েছেন, নিজেকে এগিয়ে নিয়েছেন সামনের দিকে। দিনশেষে তিনি কোটি ভক্তের ভালোবাসা; বিশ্ব ক্রিকেটের উজ্জ্বল নক্ষত্র হিসেবে প্রমাণ করেছেন।

কেমন ছিলো ডি ভিলিয়ার্সের শুরুর গল্প?

শুরুটা মন্দ ছিলোনা নিজের দ্বিতীয় টেস্টেই ফিফটির দেখা পাওয়া ডি ভিলিয়ার্সের। ২০০৪/০৫ সেশনে ১২ ম্যাচে ৩৫.০৬ গড়ে করা ৫৬১ রান সেটির-ই প্রমাণ রাখে। অবশ্য দিনকে দিন নিজেকে ছাড়িয়েই গেছেন তিনি, গেছেন সেরাদের কাতারে।

সাদা পোশাকে ডি ভিলিয়ার্স কেমন ছিলেন?

টেস্ট ক্রিকেটকে বলা হয় ক্রিকেটের সবচেয়ে রাজকীয় ফরম্যাট। এই ফরম্যাটে এবিডি ছিলেন সেরাদের একজন! বর্তমান সময়ে টেস্ট ক্রিকেটে সেরা রান সংগ্রাহকদের তালিকায় আছেন ১৯ নাম্বারে, দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে চতুর্থ সেরা রান সংগ্রাহক! সাদা পোশাকে ভারতের বিপক্ষে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরিয়ানও ডি ভিলিয়ার্স। এছাড়াও ৫ নাম্বার পজিশনে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এভারেজধারি ব্যাটসম্যান এবং চতুর্থ সেরা রানসংগ্রাহক! এবিডি টানা ৭৮ তম ইনিংস ডাক ছাড়া কাটিয়ে দোওয়া এবিডি টানা ১২ ম্যাচে গড়েন ফিফটির রেকর্ড।

সাদা পোশাকে ৯ টি দেশের বিপক্ষে মাঠ মাতানো এবিডির নামের পাশে যুক্ত ঠিক ৮৭৬৫ রান। যেখানে পাঁচটি দলের বিপক্ষেই রয়েছে ১০০০+ রানের রেকর্ড।

প্রতিপক্ষ      ম্যাচ       রান         অস্ট্রেলিয়া     ২৪       ২০৬৮
ইংল্যান্ড       ২০       ১৩৯৩  
ওয়েস ইন্ডিজ   ১৩       ১৩৪৭  
ভারত        ২০       ১৩৩৪ 
পাকিস্তান      ১২       ১১১২         

৯ দলের ৮ দলের-ই বিপক্ষে কমপক্ষে ২০০ রান করেছেন এবিডি। একটি মাত্র দল বাংলাদেশের বিপক্ষে ৬৯ রান করেন এবিডি, যেখানে ম্যাচ খেলেন ৪ টি। এর মাঝে ৫ টি দলের বিপক্ষে ৫০+ গড়ে রান করেন এই কিংবদন্তি!

  প্রতিপক্ষ        গড়   
ওয়েস্ট ইন্ডিজ     ৮৪.১৯
পাকিস্তান         ৬৫.৪১
শ্রীলঙ্কা          ৬২.৮২
অস্ট্রেলিয়া        ৫১.৭০
জিম্বাবুয়ে        ৫১.২৫

মাত্র একটি দলের বিপক্ষে ২০(-) গড়ে রান করেছেন এবিডি। সেটিও বাংলাদেশের বিপক্ষেই। যেখানে ১৭.২৫ গড়ে রান করেন তিনি। এছাড়াও সবচেয়ে বেশী ম্যাচ খেলা অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এবিডির রান ২০৬৮, এবং গড় ৫০.৭৫!

হোম এবং অ্যাওয়ে সিরিজে কেমন ছিলেন ডি ভিলিয়ার্স?

ঘর কিংবা ঘরের বাহিরে দুই জায়গায় এবিডির পারফরম্যান্স চোখে পড়ার মতো। যদিও পরিসংখ্যানে অ্যাওয়ে সিরিজ তথা ঘরের বাহিরেই বেশী সফল এবিডি।

  • হোম সিরিজ: ১০৯ ইনিংস, ৪৭৮৮ রান, ৪৭.৪১ গড়।
  • অ্যাওয়ে সিরিজ: ৮২ ইনিংস, ৩৯৭৭ রান, ৫৫.২৪ গড়।

এখানে ঘরের বাহিরে পরিসংখ্যানে এগিয়ে থাকা এবিডি বেশী সেঞ্চুরি এবং ফিফটির দেখা পেয়েছে ঘরের মাঠেই। যদিও টেস্ট ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংসটি খেলেছিলেন ঘরের বাহিরের মাঠেই।

১৭ বছরের টেস্ট ক্যারিয়ারে ২ বছর ১০০০+ রানের দেখা পেয়েছিলেন এবিডি, ২০০৫ এবং ২০০৮ সালে ১০০০ রানের দেখা পাওয়া এবিডি ১০০০+ রানের দেখা পেয়েছেন দুইটি মাঠে। সবমিলিয়ে সাদা পোশাকে এবিডি যে দুর্দান্ত ছিলো সেটা বলার অপেক্ষা রাখেনা।

ওয়ানডেতে কেমন ছিলেন এবি ডি ভিলিয়ার্স?

ওয়ানডে ফরম্যাটের একজন রাজা বলা যায় ভিলিয়ার্সকে! কিছু ক্ষেত্রে এলিয়েন বলেও চালিয়ে দেওয়া যায়। ১৬ বলে ফিফটি, ৩১ বলে সেঞ্চুরির সাথে দ্রুততম দেড়শোর রেকর্ডটিও তার দখলে। ক্রিকেট ইতিহাসে ২০০+ ইনিংস খেলে সর্বোচ্চ গড়ে রান করা সেরা তিন ব্যাটসম্যানের একজন। চতুর্থ নাম্বার পজিশনে দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহকও তিনি। এছাড়াও ওয়ানডে ক্রিকেটে ২৫ টি সেঞ্চুরির দেখা পাওয়া এবিডি সবগুলো সেঞ্চুরিই স্পর্শ করেন ১০০+ স্ট্রাাইকেটে। অধিনায়ক হিসেবেও রয়েছে ১৩ সেঞ্চুরি। সবমিলিয়ে রঙ্গিন পোশাকে ৯৫৭৭ রান করা এবিডিেকে সেরা একজন ব্যাটসম্যান বলতে দ্বিধা থাকার কথা নয়!

ওয়ানডে ক্রিকেটে এশিয়া একাদশ সহ ১৫ টি দলের বিপক্ষে মাঠ মাতিয়েছেন ডি ভিলিয়ার্স। যেখানে ৪ টি দেশের বিপক্ষে ১০০০+ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেছিলেন তিনি।

প্রতিপক্ষ      ম্যাচ     রান  
পাকিস্তান      ৩২     ১৪২৩
ভারত        ৩২     ১৩৫
ওয়েস ইন্ডি    ২৪     ১২৭৯
অস্ট্রেলিয়া     ২৬     ১২৫০         

এছাড়াও ৫ টি দলের বিপক্ষে কমপক্ষে ৪০০ রান করেছেন তিনি। এর মাঝে সর্বনিম্ন রান ২ টি ম্যাচ খেলা কেনিয়ার বিপক্ষে। এছাড়াও ৯ টি দলের বিপক্ষে ৫০+ গড়ে রান করেছেন তিনি। এর মাঝে আরব আমিরাতে বিপক্ষে একটি মাত্র ম্যাচ খেলে ৯৯.০০ গড়ে রান করেছেন তিনি। এবং সর্বনিম্ন ১৯.৫০ গড়ে রান করেছেন কেনিয়ার বিপক্ষে।

১৪ বছরের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ৩ বছর ১০০০+ রানের দেখা পাওয়া এবিডি অ্যাওয়ে সিরিজে ছিলেন বেশ এগিয়ে। অ্যাওয়ে সিরিজে এগিয়ে থাকলেও হোম সিরজে পিছিয়ে ছিলেন না এবিডি ভিলিয়ার্স। চলুন দেখে নেওয়া যাক:

  • হোম সিরিজ: ৯৭ ইনিংস, ৪০৫৭ রান, ৫২.০১ গড়।
  • অ্যাওয়ে সিরিজ: ১৩১ ইনিংস, ৫৫২০ রান, ৫৫.৬৫ গড়।

পরিসংখ্যানে অ্যাওয়ে সিরিজে এগিয়ে থাকা এবিডি সবচেয়ে বেশী সেঞ্চুরি এবং ফিফটি পেয়েছেন এই অ্যাওয়ে সিরিজেই। এর মাঝে দুর্দান্ত এক রেকর্ড গড়েছেন এবিডি। ঘরের মাঠে ৯৭ ইনিংসের একটিতেও ডাকের মুখ দেখেননি তিনি।

টি-২০ ক্রিকেটে এবিডি ভিলিয়ার্স!

ওয়ানডে এবং টেস্টে ব্যাটিং তাণ্ডব চালানো এবিডি টি-২০ পিছিয়ে ছিলেন বেশ। বাকি দুই ফরম্যাটে ৫০+ গড়ে রান এরা এবিডি টি-২০ ক্রিকেটে রান করেন মাত্র ২৬.১৩ গড়ে। এর ফলে তিনি সব ফরম্যাট মিলিয়ে সর্বোচ্চ গড়ে রান করা ব্যাটসম্যাননদের তালিকায় শীর্ষে থাকতে পারেননি। নামের প্রতি সুবিচার করতে না পারলেও ১৩৫.১৬ স্ট্রাইকরেটে ১৬৭২ রান করে হয়ে আছেন দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক।

জয়ী ম্যাচে কেমন ছিলো এবিডির পরিসংখ্যান?

জয়ী ম্যাচে এবিডি ছিলো ভয়ংকর এক নাম। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৪২০ ম্যাচের ২৪৭ ম্যাচেই জয়ের সাক্ষী হয়ে আছেন ডি ভিলিয়ার্স। এই ২৪৭ ম্যাচে ৫৮.৮১ গড়ে ৩৭ সেঞ্চুরিতে ১২৪৬৮ রান করেছেন মি. ৩৬০°

বড়মঞ্চে কেমন ছিলেন ডি ভিলিয়ার্স?

বিশ্বমঞ্চে দক্ষিণ আফ্রিকা এক হতাশার নাম। পেয়েছেন চোকার্স তকমাটিও। তবে এখানে কি ব্যর্থ এবিডি? পরিসংখ্যান কি বলে?

ওয়ানডে বিশ্বকাপ:
ম্যাচ রান গড় সেঞ্চুরি
২৩ ১২০৭ ৬৩.৫২ ৪

টি-২০ বিশ্বকাপ:
ম্যাচ রান গড় সেঞ্চুরি
৩০ ৭১৭ ২৯.৮৭ ০

আইসিসি ট্রফি:
ম্যাচ রান গড় সেঞ্চুরি
১৩ ৩৯৮ ৩৩.১৬ ০

পরিসংখ্যান এবিডির পক্ষে থাকলেও গুরুত্বপূর্ণ সময়ে এবিডি হতাশায় ডুবিয়েছেন দলকে। টুর্নামেন্টের ফাইনালে ৫৭ রানে অপরাজিত থাকা এবিডি সেমি ফাইনালে রান করেছেন ২৭.৪০ গড়ে, এছাড়াও কোয়াটার ফাইনালে তার গড় ঠিক ৩৫.০০!!

দিন/রাত; না-কি দিবারাত্রি ম্যাচে সফল এবিডি?

সবমিলিয়ে ৪২০ টি ম্যাচ খেলা এবিডি দিনের আলোতে খেলেছেন অর্ধেকের বেশী ম্যাচ। স্বাভাবিকভাবে এই আলোতেই সফল তিনি। চলুন দেখে নেওয়া যাক:

ফ্যাক্ট    ম্যাচ   রান  সেঞ্চুরি
ডে-ম্যাচ  ২৪৬  ১৩৮৭৮  ৩৭
নাইট     ২০    ৪৭৮   ০০
দিবারাত্রি  ১৬৪  ৫৬৭৮   ১২

অধিনায়ক না-কি নন অধিনায়ক হিসেবে সেরা এবিডি?

ক্রিকেট মাঠে সফল অধিনায়কের তালিকা বেশ লম্বা। এখানে এবিডিও ১২৪ টি ম্যাচে পালন করেছিলেন অধিনায়কত্বের দায়িত্ব। ক্যারিয়ারে নন অধিনায়ক হিসেবে প্রায় তিনশটি ম্যাচ খেলা এবিডি অধিনায়ক হিসেবেই সফল ছিলেন ব্যাট হাতে।

ফ্যাক্ট      ম্যাচ   রান   সেঞ্চুরি  
অধিনায়ক  ১২৪   ৫৩৫০   ১৩
নন অধি.  ২৯৬  ১৪৬৬৪   ৩৪
        

• ফিল্ডার এবং উইকেটরক্ষক ডি ভিলিয়ার্স কেমন ছিলেন?

ব্যাট হাতে বাইশ গজে তাণ্ডব চালনো ডি ভিলিয়ার্স উইকেটের পিছনে কিংবা বাউন্ডারি লাইনে! সব জায়গায় ছিলেন সেরা। উড়ন্ত সব ক্যাচ আর দুর্দান্ত স্ট্যাম্পিংয়ে নজর কেড়েছেন ক্রিকেট মাঠে। দিনশেষে ঠিক কোথায় সেরা সেটা না হয় পরিসংখ্যানেই দেখে নেওয়া যাক!

ফ্যাক্ট        ম্যাচ   ক্যাচ
উইকেটরক্ষক  ১০৯   ২০২                
ফিল্ডার      ৩১১   ২৬১

চার সেরার একজন এবিডি; কিন্তু কোথায়?

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কমপক্ষে ৪০০ ম্যাচ খেলেছেন এমন ব্যাটসম্যানদের তালিকায় সর্বোচ্চ গড়ে রান করা সেরা চারজনের একজন তিনি। যেখানে এবিডির সামনে রয়েছে ৫৫.৯২ গড়ে রান করা কোহলি, ৪৯.১০ গড়ে রান করা ক্লাসিক এবং ৪৮.৫২ গড়ে রান করা শচীন। এখানে এবিডির গড় ৪৮.১১!

যেখানে এগিয়ে এবিডি ভিলিয়ার্স?

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তিন ফরম্যাট মিলিয়ে ২০ হাজার রানের দেখা পেয়েছেন ১২ জন ব্যাটসম্যান। এর মাঝে এবিডি সবচেয়ে কম (২০) ম্যাচে ডাক মেরেছেন।

ডাবল রেকর্ডে এবিডি!

দেশের বাইরে সাদা পোশাকে ৫০+ গড়ে ১০০০ বা এর বেশি রান করেছেন ৩১ জন, এছাড়াও ওয়ানডে ক্রিকেটে করেছেন ১১ জন ব্যাটসম্যান। আর এই দুই ফরম্যাটেই করেছেন এবিডি ভিলিয়ার্স।

যেসব রেকর্ডের সাথে যুক্ত রয়েছেন এবিডি ভিলিয়ার্স?

▪️আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ওয়ানডে ফরম্যাটে দ্রুততম ৫০, ১০০ এবং ১৫০ রানের রেকর্ড এবিডির দখলে।

▪️রয়েছে ৫ টি ক্যালেন্ডার ইয়ারে ১০০০+ রানের রেকর্ড।

▪️ওয়ানডে ক্রিকেটে ব্যাট হাতে ৫০+ রান এবং কিপিংয়ে ৪+ ডিসিমিসাল করা ২১ ক্রিকেটারের একজন তিনি।

▪️ওয়ানডে ক্রিকেটে একই ম্যাচে সেঞ্চুরি এবং কিপিংয়ে চারটি ডিসমিসাল করা ৮ ক্রিকেটারের একজন এবিডি।

▪️ওয়ানডে ক্রিকেটে অধিনায়ক হিসেবে তৃতীয় সেঞ্চুরিয়ান এবিডি।

▪️ওয়ানডে ক্রিকেটে ২০০+ ছক্কা হাঁকানো ৮ ব্যাটসম্যানের একজন এবিডি ভিলিয়ার্স।

▪️সাদা পোশাকে দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে দ্রুততম সেঞ্চুরিয়ান এবিডি।

▪️সাদা পোশাকে একই ম্যাচে সেঞ্চুরি এবং কিপিংয়ে ১০ ডিসমিসাল করা একমাত্র ক্রিকেটার এবিডি ভিলিয়ার্স।

▪️বিশ্বকাপে টানা দুই ম্যাচে সেঞ্চুরির দেখা পাওয়া পঞ্চম ব্যাটসম্যান এবিডি ভিলিয়ার্স।

▪️ আইপিএলে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ছক্কা হাঁকানো ব্যাটসম্যানের নাম এবিডি ভিলিয়ার্স।

এমন অনেক রেকর্ডের সাক্ষী হয়ে আছেন তিনি। ২০২০ সালে ডি ককের ১৭ বলে ফিফটির পূর্বে দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে দ্রুততম টি-২০ ফিফটির রেকর্ড ছিলো এবিডির দখলে। এছাড়াও ২০১৬ সালের আগে তিনিই ছিলেন ওয়ানডেতে দ্রুততম ৭০০০ রানের মালিক। এছাড়াও টেস্টে টানা ৭৮ ইনিংসে শূন্য রানে আউট হওয়া ব্যাটসম্যানটিও এবিডি ভিলিয়ার্স। এমন অনেক রেকর্ডের সাক্ষী হয়ে আছেন দ্য সুপারম্যান।

কখনো কি খারাপ সময় আসেনি এবিডির?

টেস্টে নিজের দ্বিতীয় ম্যাচেই ফিফটির দেখা পাওয়া এবিডির ওয়ানডে ক্রিকেটের শুরুটা ভালো ছিলোনা মোটেও। নিজের ১৭ তম ম্যাচে এসে প্রথম ফিফটির দেখা পান তিনি। ওয়ানডে তে ১৫ তম ম্যাচ শেষে তার ব্যাটিং গড় ছিলো মাত্র ১৭! এছাড়াও টানা ৪ ইনিংসে ডাকের আক্ষেপে পুড়তে হয়েছিলো তাকে। এমন সব বাজে সময়েও নিজেকে হারিয়ে খুঁজতে থাকা এবিডি ক্যারিয়ার শেষে ঠিকই খুঁজে পেয়েছেন নিজেকে, পেরেছেন সেরাদের কাতারে পৌঁছাতে।

আবেগি ভিলিয়ার্স!

বাইশ গজে বোলারদের উপর তাণ্ডব চালানো এবিডি আবেগি ছিলেন না এমনটা নয়! প্রিয় দলকে ফাইনালে তুলতে না পারার আক্ষেপে হয়তো আড়ালে কেঁদেছেন বহুবার। কিন্তু ২০১৫ বিশ্বকাপে বাইশ গজেই আবেগি ভিলিয়ার্সকে দেখেছিলো বিশ্ব! সেদিনের কান্নাভেজা এবিডিকে দেখে যে কারো চোখ ভিজেছিলো সেটা বলায় যায়।

বিদায় বেলা!

বাইশ গজে তখনো বিধ্বংসী এবিডি। বিপক্ষের বোলারদের রাতের ঘুম কেড়ে নেওয়া তখনও ছিলো তার কাছে মামুলি বিষয়। চারপাশের পরিবেশটা যখন ঠিকঠাক এগিয়ে চলছিলো ঠিক তখনি পারিবারিক কারণ দেখিয়ে ক্রিকেটকে না বলে দিয়েছিলেন এই মারমুখী ব্যাটসম্যান। জাতীয় দলের প্রিয় জার্সগুলো আর গায়ে জড়িয়ে মাতাতে দেখা যায়নি বাইশ গজ! বাড়ির আলমারির সবচেয়ে সুন্দর জায়গাটি হয়তো প্রিয় ১৭ নাম্বার জার্সিটি দখল করে আছে এখনো।।

এবিডি ভিলিয়ার্সের জন্ম কবে এবং কোথায়?

১৯৮৪ সালের ১৭-ই ফেব্রুয়ারি দক্ষিণ আফ্রিকার ট্রান্সভাল প্রদেশের প্রিটোরিয়ায় বাবা-মায়ের কোলে আলো হয়ে এসেছিলেন এবিডি। যার মানে আজকের দিনেই পৃথিবীতে আগমন ঘটেছিল এই সুপারম্যানের।

শুভ জন্মদিন মি. সুপারম্যান!

,

মতামত জানান :