১৯শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

চট্টগ্রামে কার্ডিফ স্মৃতি; তারুণ্যের জয়!

প্রতিবেদক
Arfin Rupok
বুধবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি , ২০২২ ৯:১৮

চ্যাম্পিয়ন ট্রফি, রিয়াদ-সাকিবের মহাকাব্য, এইতো সেদিনের স্মৃতি। চাপকে জয় করে কিউই বধ, বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা জয়। এবারের স্মৃতিটা চট্টলায়, সাগরিকার পাড়ে। এবারের স্মৃতিতে তারুণ্যের জয়, যেখানে নায়ক মিরাজ – আফিফ।

লক্ষ্যমাত্রা ২১৬ রান; যেখানে সহজ জয় পাওয়ার কথা সেখানে লজ্জাজনক হারের শঙ্কা তৈরি! রাতভর মুজিব – রশিদকে নিয়ে সাজানো প্লান মোকাবিলার আগেই ফারুকীর বোলিং তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপ; স্কোরবোর্ডে তখন ৬ উইকেটে ৪৫ রান। তখন জয়ের চিন্তা তো দূরের কথা লজ্জাজনক হার থেকে বাঁচবে কি না বাংলাদেশ সেটির গল্প হচ্ছিলো। কিন্তু পরের গল্পটা যে মহাকাব্যের মতোই।

আফিফের ঠান্ডা মাথার ব্যাটিং, মিরাজও যেনো চলছিলো নিজের মতো। ৭ম উইকেট জুটি তখন দাঁড়িয়ে যাচ্ছিলো আফগান বোলারদের সামনে দেওয়াল হয়ে। একটা সময় আফিফ-মিরাজের জুটি ৪২ বলে ৪২! তখনও লজ্জাজনক হার মেনে নিয়েই খেলা দেখেছিলো হাজারো টাইগার ভক্ত। কিন্তু আজকের দিনটা যে শুধুই মিরাজ-আফিফের। জুটির ফিফটি অতঃপর সেঞ্চুরি; এরপর যেটি হলো সেটি তো জায়গা করে নিয়েছে রেকর্ড বুকে। রান তাড়ায় ৭ম উইকেটে আফিফ-মিরাজের জুটি সবার উপরে; ঠিক ১৭৪* রানের। অবশ্য সবমিলিয়ে ওয়ানডে ক্রিকেটে ৭ম উইকেট জুটিতে এটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।

এবার ফিরি ম্যাচে; মুজিব – রশিদকে নিয়ে পরীক্ষা চালিয়েছে বাংলাদেশ সেটি অল্প হলেও বোঝা গেছে ম্যাচে। তিন জেনুইন স্পিনার; তাদের বলগুলো কি দারুণ ভাবে মোকাবিলা করছিলো আফিফ-মিরাজ। যেনো তাদের পরিকল্পনা ছিলো ওভার বাই ওভার খেলে যাওয়, খেলেছেও তাই। উপরেই প্যারায় ৪২ বলে ৪২ রানের জুটিতে ফেরা যাক, তখনও যেনো তাদের মাথায় জয়ের চিন্তা ছিলো না। কিন্তু জুটির সেঞ্চুরি করতে তারা খরচ করেছিলো ঠিক ১৪২ বল। এখানে তাদের পরিকল্পনা ভিন্ন ছিলো, লক্ষ্য ছিলো জয়ের! যদি তাই না হতো তাহলে ৪২ বলে ৪২ রানের পর পরের ১০০ বলে মাত্র ৫৮ রান আসার কথা নয়! এখানেও মিরাজ – আফিফ দুর্দান্ত, বলের মুভমেন্ট বুঝে ব্যাটিং করে গেছেন। রশিদ-নাবী-মুজিবের বলগুলো দেখেশুনে খেলে সিঙ্গেল বের করেছেন। এখানে তারা চাপমুক্ত হয়ে খেলেছেন আর বাজে বলগুলো ঠিকই পাঠিয়েছে সীমানার ওপারে।

চ্যাম্পিয়ন ট্রফিতে সাকিব-রিয়াদের জুটি দেখেছেন নিশ্চয়ই। সেদিন তারাও খেলেছিলো এমন পরিকল্পনাতেই। ওভার বাই ওভার খেলার সুফলও পেয়েছিলো। আজ মিরাজ-আফিফও এমনটাই খেলেছে। তারা জানতো ননস্টপ বা তাড়াহুড়ো করে ম্যাচ জেতাতে পারবে না। অ্যাটাকিং ব্যাটিংয়ে বড়জোড় কিছু রান বাড়িয়ে নেওয়া যায় কিন্তু এমন চাপের মুখে রেকর্ড গড়া সম্ভব হয়না সবসময়। আজ মিরাজ-আফিফ খেলেছে ভয়ডরহীন, আত্মবিশ্বাসী ছিলেন নিজেদের উপর।

বড় লক্ষ্যে পৌঁছাতে গেলে স্টেপ বাই স্টেপ যেতে হয়, সিঙ্গেল ডাবলসের উপর মনোযোগী হতে হয়, সেটিই করেছে তারা। ওভার বাই ওভার খেলেছে, বাজে বলের পাপ্য আদায় করেছে। মুজিব – রশিদদের ভাসিয়েছে হতাশায়।

চাপের মুখে এমন ম্যাচিউরিটি সম্পূর্ণ ব্যাটিং দেখে আপনি মুগ্ধ হতে বাধ্য। ক্রিকেট জুটির খেলা, ধৈর্য্যর খেলা, বুদ্ধির খেলা। এর সবগুলোই আজ কাজে লাগিয়েছে মিরাজ-আফিফ। দিনশেষে মিরাজ ৮১ ও আফিফ ৯৩ রানে অপরাজিত। তারুণ্যের ছোঁয়ায় অবিশ্বাস্য এক স্মৃতির জন্ম; অভিনন্দন মিরাজ-আফিফ।

, ,

মতামত জানান :