একজন ফিনিশারের গল্প

Firoz Mahmud
  • প্রকাশিত সময় : শনিবার, ৩০ মে, ২০২০
  • শেয়ার করুন

  • Facebook

আধুনিক ক্রিকেটের সেরা ফিনিশার কে এই নিয়ে বিস্তর তর্ক হতে পারে৷ বর্তমান প্রেক্ষাপটে এমএস ধোনিকে অনেকেই সেরা মনে করবে৷ নব্বই দশকের মাঝামাঝি সময়ে ক্রিকেটবিশ্বে পরিচিত হয়েছিলো অন্য এক ফিনিশারের।

আধুনিক সীমিত ওভারের ক্রিকেটে ‘ফিনিশার’ কথাটার সঙ্গে আমরা সবাই কমবেশি পরিচিত। কঠিন পরিস্থিতিতে মাথা ঠান্ডা রেখে ম্যাচ বের করে আনতে পারার বিশেষ ক্ষমতার জন্য ফিনিশাররা অন্য সবার চেয়ে আলাদা। একজন ভাল ফিনিশারের বৈশিষ্ট্য হল প্রচন্ড চাপের মুহূর্তেও দ্রুত রান করার ক্ষমতা এবং শেষ পর্যন্ত টিকে থেকে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখার নিশ্চয়তা দেওয়া।

ক্রিকেট অভিধানে ‘ফিনিশার’ শব্দটির প্রবর্তন হয়েছে মাইকেল বেভানের হাত ধরে। অজিদের হয়ে ক্যারিয়ারের প্রায় পুরোটা সময়ই একজন সফল ফিনিশারের ভূমিকায় দেখা গেছে তাঁকে। টেস্ট খেললেও বেভানের মূল পরিচয় মূলত একজন ওয়ানডে স্পেশালিষ্ট।

১৯৯৫/৯৬ সাল, সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে রচিত হয়েছিল অনন্য এক অধ্যায়ের। ক্রিকেট বিশ্ব দেখেছে তার ইতিহাসের সেরা ফিনিশারের মহাকাব্যিক এক ইনিংস।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে পঞ্চম ও শেষ ওডিয়াই ম্যাচ। শেষ দুই ওভারে অস্ট্রেলিয়ার জয়ের জন্য প্রয়োজন ১৬ রান, হাতে ছিলো ৩ উইকেট। ফিল সিমন্সের ইয়র্কার বল কোন মতে ডিফেন্স করলেন পল রাইফেল। দ্বিতীয় বলে শর্ট মিডউইকেটে ক্যাচ দিয়ে ব্যক্তিগত ৩৪ রানে সাজঘরে ফিরেন তিনি। জয়ের জন্য তখনো প্রয়োজন ১০ বলে ১৬ রান। নতুন ব্যাটসম্যান হিসেবে স্ট্রাইকে আসেন শেন ওয়ার্ন। ফিল সিমন্সের করা ওভারের ৩য় বল লো ফুলটস ঘরানার ছিলো। সুইপার কাভারে ঠেলে দিয়েই দু’বারের জন্য জায়গা বদল করেন দুই ব্যাটসম্যান। সমীকরণ নেমে আসে ৯ বলে ১৪ রানে। চতুর্থ বলটা থার্ডম্যান অঞ্চলে পাঠিয়ে একবারের জন্য জায়গা বদল করে স্ট্রাইকে আসেন দ্যা ফিনিশার খ্যাত মাইকেল বেভান। ওভারের পঞ্চম বলে সজোরে লং অনে খেলেন বেভান, মিসড ফিল্ডিংয়ের সুবাদে দুই রান নিয়ে সমীকরণ নামিয়ে আনেন ৭ বলে ১১ রানে। ৪২ তম ওভারের শেষ বলে ( ম্যাচটি ৪৩ ওভারের ছিলো) ডিপ মিডউইকেট দিয়ে চার মেরে লক্ষ্যমাত্রা গিয়ে দাঁড়ায় ৬ বলে ৭ রানে।

শেষ ওভার করতে অধিনায়ক কোর্টনি ওয়ালশ দারস্থ হন অপস্পিনার রজার হার্পারের। প্রথম বল ডট। পরের বলে ওয়াইড। ২য় বলে অফ সাইডে ঠেলে দিয়ে সিঙ্গেল নিতে গিয়ে রান আউটের শিকার হোন শেন ওয়ার্ন। এক উইকেট হাতে রেখে জয়ের জন্য দলের তখনো প্রয়োজন ৪ বলে ৬ রান। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে ক্রিজে আসেন গ্লেন ম্যাকগ্রা, স্ট্রাইকে মাইকেল বেভান৷ হার্পারের করা ৩য় বল কাভার অঞ্চল দিয়ে কেবলমাত্র একটা রানই নিতে পারলেন বেভান। স্ট্রাইকে নতুন ব্যাটসম্যান ম্যাকগ্রা। জয়ের জন্য অজিদের দরকার ৩ বলে পাঁচ রান, উইন্ডিজের এক উইকেট। ওভারের চতুর্থ বল, ব্যাট প্যাডের সাথে লাগিয়ে কোনমতে সিঙ্গেল নিয়ে বেভানকে স্ট্রাইক দিলেন ম্যাকগ্রা। দুই বলে চার রান। স্ট্রাইকে মাইকেল বেভান খেললেন সোজা বোলারের হাতে ডট বল। জয়ের জন্য শেষ বলে দরকার চার রান। রজার হার্পারের করা গুড লেংথের বল সোজা আম্পায়ার ও বোলারের মাথার উপর দিয়ে বাউন্ডারি মেরে মাইকেল বেভান ক্রিকেট ইতিহাসে এক ঐতিহাসিক ম্যাচের নায়ক বনে যান তিনি।

১৭৩ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে অজিদের স্কোরকার্ড একটা সময়ে এসে দাঁড়ায় ৩৮/৬। সেখান থেকে লোয়ারঅর্ডার ব্যাটসম্যানদের সাথে নিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে উপহার দিয়েছেন অনবদ্য এক জয়। সত্যিকার্থে ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা ইনিংস গুলোর মধ্যে অন্যতম সেরা ইনিংস ছিলো সেটি। পরবর্তীতে যে ম্যাচটাকে ‘দ্যা বেভান ম্যাচ’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।

দশ বছরের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে খেলা ২৩২ ওয়ানডেতে বেভানের সংগ্রহ ৬ হাজার ৯’শ ৩২ রান। ৪৬ টি হাফ সেঞ্চুরির সাথে আছে ৬টি সেঞ্চুরি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল, ১৯৬ ইনিংসে ব্যাট করে রেকর্ড ৬৭ বার অপরাজিত থেকেছেন তিনি। এখন পর্যন্ত অবসর নেয়াদের মধ্যে ওয়ানডের সর্বোচ্চ ব্যাটিং গড় (৫৩.৫৮) বেভানের। সাকসেসফুল রান তাড়ায় বেভানের ব্যাটিং গড় ৮৬.২৫ যা ওয়ানডে ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। সীমিত ওভারের ক্রিকেটে মাত্র দুজন খেলোয়াড়ের (অন্যজন মাইক হাসি) মধ্যে বেভান একজন যার ক্যারিয়ার গড় কখনোই ৪০ এর নিচে নামে নি!

ওয়ানডেতে ফিনিশার হিসেবে অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলেছেন তিনি। নিশ্চিত হেরে যাওয়া অনেক ম্যাচও প্রায় একা হাতে জিতিয়েছেন ইতিহাসের অন্যতম আন্ডাররেটেড এই বাঁহাতি ব্যাটিং জিনিয়াস।

ইঞ্জুরির কারণে ১৭ জানুয়ারি, ২০০৭ তারিখে মাইকেল বেভান সকল স্তরের ক্রিকেট খেলা থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে তার অবসরের ঘোষণা দেন। ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা এই ফিনিশারের আজ ৪৯ তম জন্মদিন।

শুভ জন্মদিন চাইল্ডহুড হিরো, গ্রেটেস্ট ফিনিশার এভার “মাইকেল গাইল বেভান”। ❤❤

 

মন্তব্য করুন

এই বিভাগের আরো খবর