দ্য ডন, দ্য বয় ফ্রম বোওরাল কিংবা ব্রাডেলস্ নামে পরিচিত পেয়েছেন সবার সামনে। ক্রিকেট মাঠে রানের ছড়াছড়ি তার ব্যাটে। তাকে বলা হয় বিশ্ব ক্রিকেটের সেরাদের সেরা ব্যাটসম্যান। যিনি টেস্ট ৯৯.৯৪ গড়ে রান করে নিজেকে নিয়েছেন অনন্য এক উচ্চতায়, যেখানে তাকে ছুঁয়ে দেখার সৌভাগ্য হবেনা কারো!
সেরা তো সবাই হতে চায়। কিন্তু দিনশেষে সফল হয় ক’জন? নিজের রাজ্যে সবাই সেরা, বিশ্বসেরা হয় ক’জন? রাজ্য বিহীন রাজ্যে রাজা হওয়া তো মুখের কথা নয়! রাজা হতে গেলে নিজেকে যোগ্য করে তুলতে হয়, করতে হয় পরিশ্রম। ভাবতে হয় নিজেকে নিয়ে, স্বপ্ন দেখতে হয় নিজের মতো করে। বিশ্ব বিখ্যাত রাজা ভ্লাদ দ্য ইম্পেলার, কার্লোস, জুয়ানা অব ক্যাসিলি, সুলতান ইব্রাহিম কিংবা সম্রাট শাহাজাহানদের গল্পে তারা ছিলেন রাজা। তারা সিংহাসনে বসে শাসন করিছিলেন বিশ্ব। কিন্তু আজকের গল্পটি কি এদের নিয়ে? না, আজকের গল্পটি একজন বিশ্বসেরা ব্যাটসম্যানকে নিয়ে। যিনি ব্যাট হাতে শাসন করেছিলেন বাইশ গজ, ছিলেন রাজ্যবিহীন রাজ্যের রাজা। তিনি ছিলেন বিশ্ব ক্রিকেটের সেরা ব্যাটসম্যান। তিনি ‘স্যার ডোনাল্ড ব্র্যাডম্যান।’
এই ব্র্যাডম্যানের শুরুর গল্পটা সাফল্যে পরিপূর্ণ ছিলো না, ছিলো কোনো রাজকীয় শুরু। কিন্তু তাতে কি? ক্যারিয়ার শেষে নিজেকে এমন একটা জায়গায় নিয়েছেন যেখানে তার পাশে মাথা তুলে দাঁড়ানোর মতো কেউ নেই। এবার আসুন একজন ব্র্যাডম্যানের জানা-অজানা কিছু গল্প শুনি।
ক্রিকেট ইতিহাস ঘাঁটতে গেলে বিশ্বের বাঘা বাঘা ব্যাটসম্যানদের নাম সামনে চলে আসবে। আসবে রিচার্ডস, গ্রাহাম গুচ, লারা, পন্টিং, শচীনদের মতো বাঘা বাঘা ব্যাটসম্যানদের নাম। কিংবা সাঙ্গা, কোহলি, স্মিথদের নাম সামনে আসবে। কিন্তু আপনাকে যদি প্রশ্ন করা হয় সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যান কে? তাহলে সবার প্রথমে যেই নামটি আসবে সেটি স্যার ডোনাল্ড ব্র্যাডম্যানের নাম। টেস্ট ক্রিকেটে যার ব্যাটিং গড় ৯৯.৯৪ ! এ যেনো এক গোল্ডেন ব্যাটসম্যান! হ্যাঁ, স্যার ডোনাল্ড ব্র্যাডম্যানকে শুধুমাত্র সেরা ব্যাটসম্যানের তকমা দিলে এক প্রকার অপরাধই হবে! কেননা তিনি শুধুমাত্র নিজের সময়ের একজন সেরা ব্যাটসম্যান ছিলেন না বরং তিনি এখন পর্যন্ত সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যান!
একজন ব্র্যাডম্যানকে নিয়ে জানতে গেলে সামনে চলে আসবে অনেক জানা-অজানা তথ্য। ইতিহাস ঘাঁটতে গেলে বেরিয়ে আসবে ডনের উঠে আসার গল্প, কিংবা পরিসংখ্যান। এবার আসুন একজন ব্র্যাডম্যানকে জানতে থাকি।
সময়টা ২৭ আগস্ট ১৯০৮ সাল। অস্ট্রেলিয়ার কোওটামুন্ড্রায় জর্জ ও এমিলি দম্পতির কোল জুড়ে আসেন তিনি। জর্জ- এমিলির তিন মেয়ে দুই ছেলের মধ্যে সবচেয়ে ছোট ব্র্যাডম্যান ছিলেন সকলের মণিকোঠায়। ছিলেন সবার আদরের। ছোট বেলা থেকেই ডনের ছিলো ক্রিকেটের প্রতি অনেক বেশী আগ্রহ, তাইতো সেই ছোটবেলা থেকেই ক্রিকেটকে মনেপ্রাণে ধারণ করে এগিয়েছেন সামনের দিকে, এবং ক্যারিয়ার শেষে নিজেকে নিয়েছেন সবার উপরে, হয়েছেন সেরাদের সেরা ব্যাটসম্যান। এবার আসুন ডনের ক্রিকেটে উঠে আসার গল্প শুনি…
ক্রিকেটে ডনের আগমন:
ক্রিকেটকে ভালোবেসে সেই ছোট বেলায় স্কুল জীবনকে বিদায় জানিয়েছিলেন ডন। পড়াশোনাকে বিদায় জানিয়ে নিজেকে নিয়ে আসেন ক্রিকেটে। ধূমকেতুর মতো আগমন ঘটে বাইশ গজে। ধূমকেতু বলা কি ভুল হয়েছে? না হয়নি। কেননা, মাত্র ১২ বছর বয়সে ব্যাটহাতে মাঠে নেমেই করেছিলেন প্রথম সেঞ্চুরি, খেলেছিলেন ১১৫ রানের অসাধারণ এক ইনিংস। সেদিন ডনের ব্যাটহাতে ভর করে তার দল সংগ্রহ করেছিল ১৫৬ রান!
বয়স ভিত্তিক ক্রিকেটে রাজত্ব চালানো ডনের স্বপ্ন ছিলো একদিন বিশ্ব মাতাবেন ব্যাট হাতে। স্বপ্ন দেখেছিলেন নিজেকে নিয়ে। ভেবেছিলেন কার্লোস, ক্যালিসিদের মতো তিনিও একদিন রাজ্য সামলাবেন কিন্তু সেটা ব্যাট হাতে। শাসন করবেন বিশ্বের বাঘা বাঘা বোলারদের। সেই স্বপ্নে এগিয়ে যাওয়া ডনের সুযোগ হয় ঘরোয়া ক্রিকেটে ব্যাট মাতানোর। ১৯২৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর মাত্র ১৯ বছর বয়সে নিউ সাউথ ওয়েলসের হয়ে ঘরোয়া ক্রিকেটের পথচলা ডন ব্র্যাডম্যানের। অভিষেক ম্যাচেই করেছিলেন বাজিমাৎ, তুলে নিয়েছিলেন সেঞ্চুরি। সেদিন ক্রিকেট বিশ্বের সামনে বার্তা দিয়েছিলেন বোলারদের শাসন করতে আসছেন তিনি! ক্যারিয়ার শেষে করেছিলেনও তাই।
ঘরোয়া ক্রিকেটে ব্যাট হাতে তাণ্ডব চালানো ডন সময়ের সাথে সাথে পরিণত হয়ে উঠতে থাকে। ঘরোয়াতে তার ব্যাটের কারিশমায় মুগ্ধ হয় অস্ট্রেলিয়ার নির্বাচকরা, মুগ্ধ হয় কোটি ক্রিকেট ভক্ত। সেই সাথে ডনের ভক্তরা অপেক্ষায় থাকে কবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ব্যাট হাতে বিশ্ব মাতাবেন তাদের ডন! অবশেষে সেই অপেক্ষায় সমাপ্তি ঘটে। ডন সুযোগ পেয়ে যান আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ডনের পথচলা:
ঘরোয়া ক্রিকেটে নিজের সেরাটা দিয়ে মন জয় করা ডন ব্র্যাডম্যানের জন্য ১৯২৮ সালের ৩০ নভেম্বর দিনটি ছিলো জীবনের সেরা মূহুর্ত। কেননা এইদিন অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সাদা পোশাকে অভিষেক হয় তরুণ ব্র্যাডম্যানের।
ঘরোয়াতে তাণ্ডব চালানো ডনের দিকে চেয়ে ছিলো অস্ট্রেলিয়ার সমর্থকরা। তাদের আশা ছিলো ঘরোয়ার মতো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও রাজকীয় শুরু হবে ডনের। কিন্তু তা আর হয়েছিলো কই? অভিষেকের প্রথম ম্যাচে ডন ছিলেন নিরব। শুধু তাই নয়, জাতীয় দলের জার্সি গায়ে টানা দুই ইনিংসে ফ্লপ! আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এমন বাজে শুরু হবে সেটা হয়তো ডন ব্র্যাডম্যান নিজেও কল্পনা করেননি!
অবশ্য ডনকে নিয়ে তখন কারো এতো মাথাব্যথাও ছিলো না। কিন্তু আশা ছিলো অনেক বেশী। ডনও নিজেকে প্রমাণ করতে দেরি করেননি, নিজের দ্বিতীয় টেস্টেই রাজকীয় পত্যাবর্তন ঘটেছিলো ডনের। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টেই করেছিলেন আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে নিজের প্রথম সেঞ্চুরি। সেদিন হয়তো কেউ ভাবেননি এই ডন একদিন বিশ্বের সেরা ব্যাটসম্যান হবেন!
ভাববে বা কি করে! আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেকের ১ বছর পর ১৯৩০ সালে ভারতবর্ষে ভ্রমনে এলে স্থানীয় মানুষজন ডন ব্র্যাডম্যানকে তাদের সঙ্গে ক্রিকেট খেলার আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। আর সেই আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে খেলতে নেমেছিলেন ডন। কিন্তু সেদিন প্রথম বলেই শূন্য রানে আউট হয়ে যান ডন ব্র্যাডম্যান। এতে করে স্থানীয়রা তাকে নিয়ে হাসি-তামাশা করেছিলেন। তাদের ধারণা হয়েছিল ব্র্যাডম্যান ক্রিকেট খেলতে পারেন না। কিন্তু তারা কি জানতো? এই ডন ব্র্যাডম্যান একদিন হবে বিশ্বসেরা ব্যাটসম্যান! যদি এমনটাই ভাবতো তাহলে কি ডনকে নিয়ে এমন কথা বলতেন তারা? না, বলতেন না।
হয়তোবা, সেদিনের পর কোনো এক সময় ডনের ব্যাটিং তাণ্ডব দেখে তারাও মনে মনে বলেছিলেন সেই পুচকে ছেলেটি আমাদের অবহেলার জবাব দিচ্ছেন!
একজন ব্র্যাডম্যানকে নিয়ে তো অনেক কিছুই জানা হলো। এবার ক্রিকেট মাঠে ব্যাটিং তাণ্ডব চালানো ডনের কিছু রেকর্ডে চোখ বুলিয়ে দেখা যাক:
এমন অনেক রেকর্ডের সাক্ষী হয়ে আছেন ডন ব্র্যাডম্যান। আবার ২৯৯ রানে অপরাজিত থাকা একমাত্র ব্যাটসম্যানটিও ডন ব্র্যাডম্যান।
রেকর্ডগুলো দেখে মনে হতে পারে একজন ব্র্যাডম্যান ব্যাটিংয়ে কতোটা মনোযোগী ছিলেন। ডনের ব্যাটিং নিয়ে জানতে গেলে নজরে আসে, ডন কখনোই ক্লান্ত ছিলেন না ব্যাটিংয়ে। এখানেই কি শেষ? না। ডনের ব্যাটিং সম্পর্কে জানতে গেলে বেরিয়ে আসে অনেক অজানা গল্প। বেরিয়ে আসে ক্রিকেট ক্যারিয়ারে মাত্র একবার মাত্র হিট আউট হওয়া ডন জীবনে স্ট্যাম্পড আউট হয়েছিলেন মাত্র একবার! এতেই বোঝা যায় ব্যাটিংয়ে কতোটা মনোযোগী ছিলেন ডন।
অনেক কিছুই তো জানা হলো ডন ব্র্যাডম্যানকে নিয়ে। এবার তার কিছু সেরা ইনিংস নিয়ে আলোচনা করা যাক।
ব্র্যাডম্যান এবং রেকর্ডময় এক দিনের গল্প:
স্যার ডন ব্র্যাডম্যান তখনো স্যার তকমাটি পাননি। আর পাবেই বা কি করে? এ তো ২১ বছরের এক তরুণ। এই তরুণ ডন ১১-ই জুলাই ১৯৩০ সালে শক্তিশালী ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ব্যাট হাতে চালিয়েছিলেন ব্যাটিং তাণ্ডব। গড়েছিলেন বিশ্বরেকর্ড; নিজের নামটি লিখেছিলেন রেকর্ড পাতায়। তৎকালীন সময়ে শক্তিশালী ইংল্যান্ডের লিডসের হেডিংলি স্টেডিয়ামে চলছিলো এ্যাশেজ সিরিজের তৃতীয় টেস্ট। সেই টেস্টে টস জয়ী অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে ব্যাট করতে আসা ২১ বছর ৩১৮ দিনের এক তরুণ ব্যাট হাতে একের পর এক বাউন্ডারিতে সীমানা ছাড়া করছিল ইংল্যান্ডের সেরা বোলারদের। সেই সাথে দিনের প্রথম সেশনেই পৌঁছে যান ৩ অঙ্কের ম্যাজিক ফিগারে।
টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে লাঞ্চের আগেই সেঞ্চুরি করা তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে সেই রেকর্ডে নাম লেখানো ব্র্যাডম্যান সেদিন টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে সবচেয়ে কম সময়ে তুলে নিয়েছিলেন ডাবল সেঞ্চুরি। সেদিন মাত্র ২১৪ মিনিটেই(সেই সময় বলের হিসেব হতো না) সেই রেকর্ড গড়ে ইতিহাসের খাতায় যুক্ত করেছিল নতুন পাতা! কি ভাবছেন, এখানেই শেষ রেকর্ডময় দিনের? না।
দিনের খেলা তখনো অনেকটা বাকি। ইংল্যান্ড শিবিরে তখন ভয়ের কারণ হয়ে ক্রিজে দাঁড়িয়ে থেকে সাবলীল ভঙ্গিতে উইকেটের চারদিকে শট খেলে দর্শকদের মাতিয়ে তুলেছিলেন ডন। প্রথম সেশনে সেঞ্চুরির পর দ্রুততম ডাবল সেঞ্চুরি করা ব্র্যাডম্যান তখনো রানক্ষুধায়! ইংল্যান্ডের বোলারদের সামনে ধারণ করেছিলেন রূঢ়মূর্তি। সেদিন দিনের খেলা শেষ হবার আগেই নিজের নামটি লিখে ফেলেছিলেন রেকর্ড বুকে। টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে একমাত্র ব্যাটসম্যান হিসেবে এক দিনেই খেলেছিলেন ৩০৯ রানের অপরাজিত রেকর্ডময় ইনিংস। এখানেই শেষ নয় রেকর্ডের। সেদিন ব্র্যাডম্যান যেনো হয়ে উঠেছিল এক রেকর্ডের খনি! কেননা সেদিন সেই ইনিংসের মাধ্যমেই তৎকালীন সময়ে সবচেয়ে কম বয়সে ট্রিপল সেঞ্চুরির রেকর্ডও গড়েছিলেন তিনি।
লর্ডসে ডনের বীরত্বে অস্ট্রেলিয়ার জয়:
ফিরে যাবো ১৯৩০ সালের ঘটনায়। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সবেমাত্র ৫ টেস্ট খেলেছেন ডন। ম্যাচ সংখ্যা ৫ টি হলেও ৩ বার সেঞ্চুরির দেখাও পেয়ে গেছেন তিনি। বিশ্ব ক্রিকেটে হৈচৈ ফেলে দেওয়া ডন লর্ডসে খেলতে নামে নিজের ৬ষ্ঠ টেস্ট। আর সেই টেস্টেই বাজিমাৎ করে বসে তরুণ ব্যাটসম্যান ডন। ইংল্যান্ডের বাঘা বাঘা বোলারদের বিপক্ষে দারুণ ব্যাটিংয়ে তুলে নেন টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি। সেই ম্যাচে ২৫৪ রানের ইনিংস উপহার দেওয়া ডন অস্ট্রেলিয়াকে ৭ উইকেটের জয় পেতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।
এমন অনেক ইনিংস খেলেছেন ব্র্যাডম্যান। ক্যারিয়ার শেষে তার নামের পাশে রয়েছে প্রতি ৩ ইনিংসে ১টি করে সেঞ্চুরি। আছে ১২টি ডবল সেঞ্চুরি, সাথে ২টি ট্রিপল সেঞ্চুরি! অবশ্য মাঝে মাঝে সমালোচিতও হতে হয়েছিল তাকে। কিন্তু সেই সমালোচনার জবাব ব্যাট হাতেই দিয়েছেন ডন। ডনের জীবনে এমন কিছু সময় এসেছিলো যেই সময়টায় ৫০ করার পর ব্যাট উঁচু করেনি, ১০০ করেও ছিলেন নিরব ভূমিকায়, ১৫০ করে হয়তো স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিলেন আর ২০০ করে নিজের শক্তির প্রমাণ দিয়েছিলেন!
একটি শূন্য কেড়ে নেয় ১০০:
ডনের নামের পাশে কি নেই? টেস্টের অনেক রেকর্ড নিজের করে রেখেছেন ডন। কিন্তু শেষ সময়ে একটি শূন্য তাকে ১০০ করতে দেয়নি। সময়টা ১৯৪৮ সাল, ডন আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে নিজের শেষ ম্যাচ খেলতে নেমেছিলেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। ওভালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ব্যাট করতে নামার সময় ব্যাটিং গড় ১০০ করতে প্রয়োজন ছিল মাত্র ৪ রান! ডনের কাছে সেঞ্চুরি আর ডাবল যেখানে ডাল-ভাতের মতো, সেখানে ৪ রান তো আর খুব বেশী নয়!
ক্রিকেট গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা। যেখানে প্রতি বলে মজা আর নাটক অপেক্ষা করে। কিন্তু সেদিন ডনের জীবনে অপেক্ষা করছিল কঠিন এক সময়! সেটা হয়তো ডন স্বপ্নেও ভাবেননি। কিন্তু কিছু করার ছিলো না, বাস্তবতা যে বড় কঠিন! সেদিন এরিক হলিস নামের অখ্যাত এক লেগ স্পিনার তাকে ডুবিয়েছিল হতাশায়। সেদিনের হতাশা তো আর চাট্টিখানি হতাশা ছিলো না, ছিলো মাত্র ৪ রানের আক্ষেপ! যেটি তাকে ব্যাটিং গড় ১০০ করতে দেয়নি। সেই শূন্যের কারণে ডন ক্যারিয়ার শেষে বুক উঁচিয়ে বলতে পারেননি আমিই একমাত্র ব্যাটসম্যান যার টেস্টে ব্যাটিং গড় ১০০! হয়তো সেই বিদায়ী ঘটনা তাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খেয়েছিল বহু বছর।
ক্যারিয়ার শেষে সফল ব্যাটসম্যান ডনকে নিয়ে লিখলাম অনেক কিছুই। এখন প্রশ্ন জাগতে পারে ডন অনুশীলন করতেন কিভাবে? কিংবা কার অধিনে! এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে যেটি সামনে আসবে সেটি দেখার পর অবাক হওয়া ছাড়া কিছুই করার নেই! কেননা ডনের কোনো কোচ ছিলো না।
এই বিষয়ে ডন জানিয়েছিলেন, আমার কোনো কোচ ছিল না, এমনকি কীভাবে ব্যাট ধরতে হয় সেটাও কেউ আমাকে শেখাননি-ব্র্যাডম্যান।
কোচ না থাকলেও অদ্ভুত কৌশলে অনুশীলন করতেন ডন ব্র্যাডম্যান। এবার সেই অদ্ভুত অনুশীলনের বিষয়টি জানা যাক!
অনুশীলনের কৌশল:
আধুনিক ক্রিকেটে ক্রিকেটারদের অনুশীলনকেই ভালো পারফরম্যান্সের চাবিকাঠি হিসেবে ধরে নেওয়া হয়। কিন্তু পুরো ক্যারিয়ারে ডন ব্র্যাডম্যান কখনোই কোনো ক্রিকেটীয় একাডেমিতে অনুশীলন করেননি! অবাক করা ঘটনা হলেও এটাই সত্য।
তবে তিনি যে অনুশীলন করতেন না তা নয়, তিনিও অনুশীলন করতেন কিন্তু সেটা মজার কৌশলে। প্রতিনিয়ত বাড়ির পেছনের দেওয়ালে গলফ বল জোরে ছুড়ে মারতেন। এরপর সেই বল তার কাছে ফিরে আসার আগেই তিনি একটি ক্রিকেট স্ট্যাম্প হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে যেতেন। এরপর ছিটে আসা বলটিকে ক্রিকেট স্ট্যাম্প দিয়ে সজোরে আঘাত করেই ব্র্যাডম্যান ব্যাটিং অনুশীলন করতেন। আর এতেই তিনি ক্যারিয়ার শেষে সেরাদের সেরা ব্যাটসম্যান তকমা পেয়েছেন। ইচ্ছেশক্তি থাকলে সবকিছুই সম্ভব সেটির বাস্তব প্রমাণ হতে পারে ডন ব্র্যাডম্যান।
এবার শেষ করবো। শেষ করার আগে ডনের ক্রিকেটীয় পারফরম্যান্সগুলো একটু দেখে নেওয়া যাক।
ক্যারিয়ারে টেস্ট ম্যাচ ছাড়া অন্য ফরম্যাটে দেখা যায়নি ডনকে। তাতে কি? সাদা পোশাকের ক্রিকেটে যা করেছেন তা তাকে বানিয়ে দিয়েছেন বিশ্বসেরা। সাদা পোশাকের ক্রিকেটে ৫২ ম্যাচের ৮০ ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে ২৯ সেঞ্চুরির সাথে ১৩ ফিফটি, ১২টি ডাবল সেঞ্চুরির সাথে ২ টি ট্রিপল সেঞ্চুরিতে ৯৯.৯৪ গড়ে করেছিলেন ৬৯৯৬ রান।
ওয়ানডে না খেললেও ঘরোয়া লীগে প্রথম শ্রেনীর ২৩৪ ম্যাচের ৩৩৮ ইনিংসে ব্যাটিং করে ১১৭ টি সেঞ্চুরির সাথে সর্ব্বোচ্চ ৪৫২* রানে ৯৫.১৪ গড়ে ২৮০৬৭ রান করেছিলেন তিনি।
ডন ব্র্যাডম্যান থেকে স্যার ডন ব্র্যাডম্যান হবার গল্প:
সাধারণত ক্রিকেটের ইতিহাসে যারা অসামান্য অবদান রেখেছেন তাদেরকে সম্মানসূচক নাইট উপাধিতে ভূষিত করার প্রচলন আছে অনেক আগে থেকেই। দুটি ক্যাটাগরিতে এই উপাধি দেওয়া হয়। প্রথমটি ক্রিকেটে অনন্য সব রেকর্ড গড়ে অবদান রাখার জন্য, আর দ্বিতীয়টি অন্যান্য ক্ষেত্রে অবদান রাখার জন্য। ডন ব্র্যাডম্যান ক্রিকেটে অবদান রাখার কারণেই এই সম্মানে ভূষিত হয়েছে। ১৯৪৯ সালে এই সম্মানে ভূষিত করা হয় ডনকে। এরপর থেকে বিশ্বের সামনে স্যার ডন ব্র্যাডম্যান হিসেবে পরিচিত বিশ্ব ক্রিকেটের সেরা এই ব্যাটসম্যান।
অনেক তো হলো, এবার এই ডনের শুরুর গল্প জানতে চাই। ব্যাট হাতে ক্রিকেটের বাইশ গজে বোলারদের শাসন করা বিশ্বসেরা ব্যাটসম্যান স্যার ডোনাল্ড ব্র্যাডম্যান ১৯০৮ সালের ২৭ আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন।