৪ঠা অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

একপেশে ম্যাচে ভারতের কাছে বাজেভাবে হারলো বাংলাদেশ

প্রতিবেদক
মোঃ ইলিয়াস
শনিবার, ২১ জানুয়ারি , ২০২৩ ৪:৩৭

প্রমীলা এশিয়া কাপে নিজেদের চতুর্থ ম্যাচে বড় হারের স্বাদ পেয়েছে বাংলাদেশ দল। ভারত নারী দলের বিপক্ষে কোনো লড়াই দেখাতে পারেনি জ্যোতির দল। বড় হারে সেমিফাইনালের লড়াইয়ে ব্যাকফুটে বাংলাদেশ দল। অর্ধশতক ও দুই উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা হওয়া শাফালি ভার্মা বাংলাদেশকে হারাতে বড় ভূমিকা রাখেন।

সিলেটে হাজার দুয়েক দর্শকের সামনে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স ছিল এককথায় বিতিকিচ্ছিরি। গতবারের এশিয়া কাপের ভারতকে দু’বার হারিয়ে শিরোপা জেতা বাংলাদেশ এদিন যেন খেলার আগেই হেরে বসে ছিল। শক্তিশালী ভারতের সামনে মুখ থুবড়ে পড়েছিল কোচ একেএম মাহমুদ ইমনের ম্যানেজমন্টের গেম প্ল্যানিং। মুখস্থ অধিনায়কত্ব নিয়ে মাঠে খাপছাড়া বোলিং সাজিয়েছিলেন নিগার সুলতানা জ্যোতি। এমন খাপছাড়া পরিকল্পনা নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন কোচ আর ম্যানেজমেন্ট দিয়ে কয়দিন চলবে নারী দল সেটা নিয়ে প্রশ্ন থাকছেই!

এদিন টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় অন্তর্বর্তীকালীন ক্যাপ্টেন স্মৃতি মান্ধানা। এক পরিবর্তন নিয়ে বোলিংয়ে নামে বাংলাদেশ যেখানে ভারত বেশ ক’টি পরিবর্তন আনে। ওপেনার শামীমা সুলতানার জায়গা দখল করেন পেস বোলিং অলরাউন্ডার লতা মন্ডল।

শুরুটা দু’দলের জন্যই ভালো হয়। ৩ ওভারে ২২ রান তোলা ভারত তৃষ্ণার পরবর্তী ওভারে তোলে ১৭ রান। আগের ম্যাচের সেরা বোলার ফারিহা তৃষ্ণা এদিন ২ ওভারে ২৫ রান খরচা করলে তাকে আর বোলিংয়ে ফেরাতে সাহস পায়নি জ্যোতি। পাওয়ারপ্লের শেষ ওভারে নাহিদা দেন ১৭ রান। দুটো বড় ওভারের কল্যাণে ৬ ওভারে ভারত করে ৫৯ রান। রিতু মনির করা দশম ওভারে ১৪ রান নিয়ে ইনিংসের মাঝপথ ভারত পার করে ৯১ রানে। লেগি ফাহিমার প্রথম ওভারেই আসে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য। দুই ওপেনারের ভূল বোঝাবুঝিতে রিতু-ফাহিমার দারুণ ফিল্ডিংয়ে রান আউটের শিকার হন স্মৃতি মান্ধানা। ৯৬ রানের ঝড়ো ওপেনিং জুটি ভাঙে ক্যাপ্টেনের অর্ধশতক মিসে। আরেক ওপেনার শাফালি ভার্মা তুলে নেন ফিফটি। পনেরোতম ওভারে বোলিংয়ে আসেন লেগস্পিন অলরাউন্ডার রুমানা আহমেদ, এসেই ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেয়া স্পেল করেন। শাফালির স্ট্যাম্প উপড়ে ফেলা রুমানা পরের ওভারে নেন আরও দুটি উইকেট। রিচা ঘোষকে ক্যাচ আউট করার পরবর্তী বলে কিরণের স্ট্যাম্প এলোমেলো করে দেন। ওভারের শেষ দুই বলে দুই উইকেট নেয়া রুমানা নিজের তৃতীয় ওভারের প্রথম বলে মিস করেন হ্যাটট্রিক। নিচু হয়ে আসা রদ্রিগেজের ফিরতি ক্যাচ ঠিকমতো হাতের মুঠোয় জমাতে পারেননি রুমানা নিজেই, ফলে হ্যাটট্রিক মিস করে নিজের ভাগ্যকে ছাড়া আর কাউকে যেনো দোষারোপ করার সুযোগ পাননি তিনি! প্রথম দুই ওভারে ১২ রান দেয়া রুমানা শেষ ওভারে ১৫ দিয়ে ফেলেন। শেষ ওভারে মাত্র ৬ রান দিয়ে ইনিংসের পরিসমাপ্তি ঘটান সালমা খাতুন। রুমানা ও সালমা উভয়ই তিনটি করে ওভার হাত ঘুরান। মাঠে ক্যাপ্টেনের বাজে প্ল্যানিংয়ের কারণে ভারত ১৫৯ রানের বিশাল পুঁজি পায়। বাংলাদেশের সামনে দাঁড়ায় ১৬০ রানের বড়সড় লক্ষ্যমাত্রা।

নাহিদা, রিতু ও তৃষ্ণা সবচেয়ে খরুচে বোলিং করেন, তিনজনেই ১১+ রেটে রান বিতরণ করেন। মেঘলা ও ফাহিমা নিজেদের বোলিং কোটা শেষে মাত্র ২০ ও ২১ রান দেন। ইকোনমিক বোলিং করেন সালমাও।

মুখস্থ ক্যাপ্টেন্সির জন্য বাংলাদেশের বোলিং ভারতের শক্তিশালী ব্যাটিংয়ের সামনে পাত্তাই পায়নি। দুই লেগির একজনকে আট ওভারের আগে এবং উভয়কেই দশ ওভারের ভিতর বোলিংয়ে আনলে হয়তো ভিন্ন ফলাফল দেখা যেতো!

মারকুটে ওপেনার শামীমাকে একাদশের বাইরে রাখাটা যে ভূল সিদ্ধান্ত ছিল তা ভারতের ব্যাটিং দেখে হয়তো বুঝতে পেরেছিলেন ক্যাপ্টেন ও কোচ।
তবুও, দারুণ কিছুর প্রত্যাশা নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করে বাংলাদেশ।

ফারজানা ও মুর্শিদা পাওয়ারপ্লে’টা খেলেন রয়েসয়ে। প্রথম ৬ ওভারে প্রতিপক্ষের চেয়ে প্রায় অর্ধেক রান কম তোলেন দু’জনে, ১৬০ রানের বিশাল লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে পাওয়ারপ্লে ওভারে মাত্র ৩০ তোলেন তারা। দশম ওভারের প্রথম বলে মুর্শিদা আউট হলে প্রথম উইকেটের পতন ঘটে। ওপেনিং জুটিতে আসে ৪৫ রান। ইনিংসের দ্বিতীয় ভাগে শেষ দশ ওভারে বাংলাদেশের প্রয়োজন পড়ে ১১২ রানের! ৩০ রান করে আউট হন ফারজানা হক পিংকি। ১৪ ওভার বাংলাদেশ শেষ করে ৬৮-২ রানে। শূন্য রানে রান আউট হন রুমানা আহমেদ। রিতুর পর পাঁচ বাউন্ডারিতে ৩৬ রান করে স্ট্যাম্পড হয়ে সাজঘরে ফিরেন নিগার সুলতানা জ্যোতি। ফাহিমাকে আউট করে দ্বিতীয় উইকেট নেন শাফালি ভার্মা। শেষ ওভারে লতা আউট হওয়ার পর কোনমতে শতরান স্পর্শ করে ইনিংস শেষ করে বাংলাদেশ। ৫৯ রানের বড় হার দেখে টিম টাইগ্রেস।

এবারের আসরে হট ফেভারিট ভারত এই জয়ে সেমিফাইনালে নিশ্চিত করে নিয়েছে। শেষ ম্যাচে থাইল্যান্ডের সাথে জয় পেলে টেবিল টপার হিসেবে সেমিতে যাবে তারা।
অপরদিকে এই হারে সেমিফাইনালের দৌড়ে একপা পিছিয়ে গেলো বাংলার প্রমীলারা। সমান ৪ পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট টেবিলে বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডের পার্থক্যটা শুধু নিট রান রেটে। চার ম্যাচে সমান দুই জয় ও দুই হার পাওয়া বাংলাদেশের সামনে রয়েছে শ্রীলঙ্কা ও আমিরাতের ম্যাচ। এই দুই ম্যাচে শক্তভাবে কামব্যাকের আশায় থাকবে রুমানা -সালমারা।

স্কোরঃ
ভারত ১৫৯-৫(২০)
শাফালি ৫৫, মান্ধানা ৪৭, রদ্রিগেজ ৩৫*;
রুমানা ২৭-৩, সালমা ১৬-১।
বাংলাদেশ ১০০-৭(২০)
জ্যোতি ৩৬, পিংকি ৩০, হ্যাপি ২১;
শাফালি ১০-২, দিপ্তী ১৩-২, রানা ১৭-১ |

, , , , , , , ,

মতামত জানান :