“For the 14 years of your international career, you have been a true Protea’s warrior, a patriotic South African, a fighter who asks nothing and gives everything.” – Graeme Smith ( about Mark Boucher).
রেকর্ডসংখ্য ১০৮ টেস্ট অধিনায়কত্ব করা প্রোটিয়া অধিনায়ক গ্রায়েম স্মিথ তার সতীর্থ, বন্ধু এবং সহযোদ্ধা মার্ক বাউচারের অবসরের পর এভাবেই তার পুরো ক্যারিয়ারের প্রতিচ্ছবি তুলে ধরেন এই কয়েকটি বাক্যে।
মার্ক বাউচার – এই মানুষটির কাছে ক্রিকেট ছিলো যুদ্ধের মতো। আর মাঠটা ছিলো তার ময়দান। হোক সেটা গ্লাভস হাতে আর হোক সেটা ব্যাট হাতে। সব সময় দলের কোচ, অধিনায়ক কিংবা সতীর্থরা নির্দ্বিধায় ভরসা করতে পারতেন তাকে৷ উইকেটের পেছনে পালন করেছেন অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকা, শুধুমাত্র ডিসমিসাল সংখ্যাই তার জানান দেয়। ব্যাট ব্যাটে ৭/৮ নাম্বারে ব্যাট করে পরিসংখ্যানটাকে অনেক বেশী উজ্জ্বল রাখা যায় না তবে একেবারেই সাদামাটা না হলেও পজিশনের সাথে পরিসংখ্যান মিলালে সেটি তার হয়েই কথা বলবে।
তার চাইতেও বড় ব্যাপার কোচ এবং অধিনায়ক তার উপর যে ভরসা করতেন তার প্রতিদান দিতে পারাটাই। টেস্টে ম্যাচ বাঁচাতে পুরো সেশন বোলার নিয়ে টিকে থাকতে হবে? সেটি করেছেন অনায়াসে। উপরের ব্যাটসম্যানদের সঙ্গ দিয়ে ম্যাচ জিতে আসতে হবে? সেটিও করেছেন বেশ কয়েকবার। ওয়ানডেতে নিচের ব্যাটসম্যানদের নিয়ে জয় নিয়ে ফিরতে হবে? তার বড় উদাহরণ তো সেই জোহানেসবার্গ আর দাপুটে অজিরাই। ওয়ানডেতে শেষের দিকে দ্রুত ৩০/৪০ রান করতে হবে? মার্ক আছে তো৷ ৪৪ বলে ওডিআই সেঞ্চুরিই তার জানান দেয়। যা ওই সময়ে ২য় দ্রুততম সেঞ্চুরি।
সর্বকালের সেরা উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান নিয়ে তর্ক করতে হলে ওয়ানডেতে সেই জায়গাটায় অজি তারকা অ্যাডাম গিলক্রিস্ট, লংকান গ্রেট কুমার সাঙ্গাকারা কিংবা ক্যাপ্টেন কুল ধোনিকে নিয়েই হবে৷ তবে তাদের সময়ে উইকেটের পেছনে রাজত্ব নিয়ে তর্ক করতে গেলে মার্ক বাউচারের নামটা অনায়সে আসবেই। অনেক মাইলফলকের প্রথমেরই তো সাক্ষী। টেস্ট ক্রিকেটের এই তর্কেও গিলি তার ব্যাটিং দিয়ে অনেক বেশী এগিয়ে বাকী সবার চেয়ে তবে হিলি, গিলি আর মার্কের লড়াইটাও বেশ জমবে। পরিসংখ্যান বলে, উইকেটরক্ষক হিসেবে সর্বোচ্চ ডিসমিসালের মালিক মার্ক বাউচার, টেস্টে ক্রিকেটেও সবার উপরে তার নাম। আমরা সে তর্কে আজ যেতে চাই না।
৯৯৯…..
মার্ক বাউচারের আর্ন্তজাতিক ক্যারিয়ারে ডিসমিসাল সংখ্যা ৯৯৯। টেস্ট ক্রিকেটে রেকর্ড ৫৩২ ক্যাচ আর ২২ স্ট্যাম্পিং, ওয়ানডেতে ৪০৩ ক্যাচ সাথে ২২ স্ট্যাম্পিং। টি টুয়েন্টিতে ১৮ ক্যাচ আর ১ স্ট্যাম্পিং। সব মিলিয়ে ৯৯৯। এক মাত্র উইকেটরক্ষক হিসেবে এক হাজারের এলিট ক্লাবে ঢুকার জন্য দরকার ছিলো আর একটাই মাত্র ডিসমিসাল। হুট করেই অবসরের ঘোষণা দেওয়ায় আর সেটা হয়ে উঠেনি, চোখের ইনজুরির পর আর ফিরতে চাননি ক্রিকেটে।
১০০০……
আগের প্যারায় যেখানে বললাম এক হাজারী ক্লাবে না ঢুকতে পারার আক্ষেপ, এই লাইনে সেই আক্ষেপ কিছুটা ঘুচানোর পালা। জানি না মার্ক এভাবে আক্ষেপ ঘুচিয়েছেন কিনা, তবে ভক্ত হয়ে আমি আক্ষেপটা এভাবেই ঘুচাতে চাই। প্রথম উইকেটরক্ষক হিসেবে ১০০০ ডিসমিসালে কিন্তু মার্ক সংযুক্ত। সেন্ট জোনসে ক্রিস্টোফার হেনরি গেইলের প্রথম ট্রিপল সেঞ্চুরির দিন কোনো ভাবেই অলআউট করা যাচ্ছিলো না ক্যারিবীয়দের। সেদিন অধিনায়ক স্মিথ বল তুলে দেন মার্ক বাউচারের হাতে৷ আর এসেই বাজিমাৎ। পেয়ে গেলেন একটি উইকেট। সেদিনের বোলিং ফিগার ১.২-০-৬-১। তার এই ১ টি উইকেট নিয়ে তিনি নিজেই মজা করে বলেছিলেন- “I still believe I have the best bowling average in South African Test history. Somebody may pass my total dismissals one day, but I bet no-one ever has a lower bowling average than 6!”. আমিও মজা করেই একটা কথা যোগ করে দেই, এতো কম স্ট্রাইক রেটও কোনো প্রোটিয়া বোলারের নেই।
৫৫৫……
প্রথম উইকেটরক্ষক হিসেবে ৫০০* ডিসমিসাল স্পর্শ করেন মার্ক বাউচার। টেস্ট ক্রিকেটে মার্কের ডিসমিসাল সংখ্য ৫৫৫। আশেপাশে নেই অন্য কোনো উইকেটরক্ষক। ৫৩২ ক্যাচ সাথে ২৩ স্ট্যাম্পিং। ১৯৯৭ ডেভ রিচার্ডসনকে হটিয়ে দলে ঢুকা, তারপর পাকিস্তানের বিপক্ষে পাঞ্জাবে অভিষেক সেই থেকে কিউইদের বিপক্ষে বেসিন রিজার্ভে অপ্রত্যাশিতভাবে শেষ টেস্ট। এর মাঝে ম্যাচ খেলেছেন ১৪৭ টি, প্রোটিয়াদের উইকেটের পেছন সামলেছেন ২৮১ বার আর ঝুলিতে ৫৫৫ টেস্ট ডিসমিসাল৷
৪৪……
২০০৬ এর সেপ্টেম্বর এর ২০ তারিখ, পচেফস্ট্রোমে সিরিজের শেষ ম্যাচে মোটামুটি ২য় সারির একাদশ নিয়েই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে মাঠে নামে প্রোটিয়ারা। টপ অর্ডারে দৃঢ়তায় স্কোরবোর্ডে ভালোই রান জমা করে তারা। ১৯৯ রানে ২ উইকেটের পতনের পর ক্রিজে আসেন নিয়মিতই ৬-৮ নাম্বারে ব্যাট করা মার্ক বাউচার। এসেই যার তান্ডব শুরু। মাত্র ৪৪ বলে তুলে নেন ক্যারিয়ারের প্রথম এবং একমাত্র ওয়ানডে সেঞ্চুরি। যা ২০১৪ পর্যন্তও ছিলো ওয়ানডে ক্রিকেট ইতিহাসের ২য় দ্রুততম সেঞ্চুরি। সেঞ্চুরি করেই দমে যাননি তিনি। শেষ পর্যন্ত ১০ ছক্কা, ৮ চারে অপরাজিত থেকে রান তুলেন ১৪৭* (৬৮)।
ঐতিহাসিক ৫০*
জোহানেসবার্গের দ্যা ওয়ান্ডারার্স সেদিন সিরিজের শেষ ওয়ানডেতে প্রথম ইনিংসে ব্যাট করে শক্তিশালী অজিরা ওয়ানডে ইতিহাসের প্রথম ৪০০ রান তোলে। পন্টিং – হাসিদের দাপটে প্রোটিয়াদের টার্গেট দাঁড়ায় ৪৩৫ রানের। ভালোই জবাব দিতে থাকে স্মিথ এবং গিবস। অকল্পনীয় চেজকে অনেকটাই হাতের মুঠোয় নিয়ে আসেন তারা৷ কিন্তু বাকী ব্যাটসম্যানরা যখন হতাশ করছিলো বার বার, তখন শেষের দিকের ব্যাটসম্যানদের নিয়ে লড়াই চালিয়ে যান মার্ক বাউচার। শেষ ওভারে যখন ব্রেট লি বোলিংয়ে আসেন তখন প্রোটিয়াদের দরকার ছিলো ৭ রান, স্ট্রাইকে বাউচার। তিনি সিঙ্গেল নিলেন, পরের বলে এন্ড্রু হল চার হাঁকালেন এবং এরপরের বলেই আউট৷ এনটিনি এলেন এবং থার্ডম্যানের দিকে পুষ করেই এক রান এবং স্কোর লেভেল। মঞ্চে তখন চরম উত্তেজনা, নাটকের আর বাকী নেই কিছুই, শুধু লি’র ম্যাজিক্যাল দুটি বলই নতুন নাটক লিখতে পারবে, এছাড়া আর কিছুই না। পেনাল্টিমেট বল, স্ট্রাইকে বাউচার, বল করলেন ব্রেট লি,
বাকীটা কমেন্ট্রি থেকেই জানা যাক – “Lee to Boucher, FOUR runs, good length delivery, Boucher drives over mid on, it’s all over, SA win with a wicket and a ball to spare – well played SA a miracle!”
এই চারের মারে ততক্ষণে ৫০* রানে মার্ক। ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংসটাই খেলে ফেললেন। অবিস্মরণীয় অর্ধশতক টাও ফেলেন। সাথে অজিদের সিরিজ হারানো, সর্বোচ্চ রানের চেজ, তখনকার সময়ে সর্বোচ্চ ওডিআই রান। সব ওই এক বাউন্ডারিতেই।
ব্যক্তি হিসেবেও খুবই মজার মানুষ ছিলেন মার্ক। একবার ক্যালিসের ব্যাপারে তাকে প্রশ্ন করা হয়। তখন তার উত্তর – ” I thought he was an idiot.” কমেন্টেটর তার অহেতুক সমালোচনার পর সেটা পছন্দ হয়নি, মজার চলে উক্তি ছুড়েন এভাবেই – “To listen to a number 11 batsman talking about technique against the short ball, with such authority, makes me shudder. He probably got hit with every second bouncer he faced, and was probably on his backside for the other ones.”
সামনেই দেড়শো টেস্টে, হাজার ডিসমিসাল, অনেক কিছুরই মাইলফলক ছিলো। ভেবেছিলেন সেবার ইংলিশদের বিপক্ষে সিরিজ শেষ তবে গ্লাভস, প্যাড তুলে রাখবেন কিন্তু সামারসেটের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচে স্ট্যাম্পের বেল তার চোখে আঘাত হানে। সাথে সাথেই মাঠ ছাড়তে হয়, তবে আর ফিরে আসা হয়নি। পরে এক বিবৃতিতে জানান – “It is with sadness, and in some pain, that I make this announcement. Due to the severity of my eye injury, I will not be able to play international cricket again.”
১৯৭৬ সালের আজকের দিনে ইস্ট লন্ডনের, ইস্টার্ন কেপ-এ জন্মগ্রহণ করেন মার্ক ভারডন বাউচার। শুভ জন্মদিন মিস্টার ৫৫৫, শুভ কামনা দ্যা সাইক্লোপস। ক্ষুদে ভক্তের ভালোবাসা রইলো মার্ক ♥